বন্টননামা (Bantannama) করার নিয়ম কানুন কি? কিভাবে আপনি নিজের বন্টননামা দলিল তৈরি করবেন? বন্টননামা করার জন্য সর্বনিম্ন বয়স কত? কি কি কাগজপত্র লাগে। জানুন বন্টননামা দলিল বা বাটোয়ারা দলিল সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য ও আইনি নিয়ম।
কোন সম্পত্তি, জায়গা, জমি, সেগুলো যদি ভাগাভাগি করতে হয়, সে ক্ষেত্রে অনেকগুলো ব্যক্তির মধ্যে তা ভাগ বাটোয়ারার মধ্যে দিয়ে ভাগ করা হয়, যাকে এক কথায় বন্টনও বলা যায়। আর এসব ক্ষেত্রে যে কাগজপত্র প্রয়োজন হয় তাকে বন্টননামা বলা যেতেই পারে।
একটি আইনি কাগজপত্র যেখানে কোন একজন ব্যক্তি অথবা একজন থেকে অধিক ব্যক্তির নাম লেখা থাকে। এছাড়া বলা যায় যে, কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুবরণ করেন তাহলে তার মৃত্যুর পর তার নিজের নামে থাকা সম্পত্তি কাকে দিতে চাইবেন আর সেই সম্পত্তি কতটা ভাগে ভাগ করতে চাইবেন অথবা বন্টন করতে চাইবেন, সেটাও কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এর জন্য সেই ব্যাক্তি জীবিত অবস্থায় থাকার সময় উকিলের সাহায্যে কাগজপত্র তৈরি করে রাখতে পারেন। আর সম্পত্তির এই ভাগ বাটোয়ারা অথবা বন্টন করার যে কাগজপত্র গুলি কে এক কথায় বন্টন নামা (Bantan Nama) বলা হয়।
কোন সম্পত্তির কাগজপত্রের উপরে যে ব্যক্তির নাম থাকে সেই ব্যাক্তি সেই সম্পত্তি ভাগ করার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করেন, যদি সেই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ব্যবসা অথবা অন্য কোন প্রপার্টির উত্তরাধিকারী হিসেবে মনে করা হয়, যে ব্যাক্তি তৈরি করেন তিনি কিন্তু নিজের ইচ্ছা অনুসারে জীবিত অবস্থায় সেই কাগজপত্রে নাম বদল করতে পারেন।
সুচিপত্র
- বন্টননামা করাটা কি খুবই জরুরী?
- কে করে থাকেন বন্টন নামা?
- বন্টন নামা কত প্রকারের হয়ে থাকে?
- বন্টন নামার পঞ্জীকরণ অথবা রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করবেন?
- বন্টন নামা কতটা সুরক্ষিত হতে পারে?
- বন্টন নামা লেখার জন্য সঠিক বয়স কত?
- বন্টন নামা টাইপ করানো জরুরী হয় কি?
- এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন, তারিখ এবং সাক্ষীর কি ভূমিকা রয়েছে?
- বন্টন নামার আপডেট করা যেতে পারে কি?
- বন্টন নামার উপরে হস্তাক্ষর অথবা সই আর নাম এর ব্যবহার কিভাবে করতে হবে?
বন্টননামা করাটা কি খুবই জরুরী?
বন্টননামা যেহেতু একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আইনি কাগজপত্র, কেননা কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার প্রপার্টি আর রেখে যাওয়া সম্পত্তির বড় প্রমাণ হয়ে থাকে এই বন্টন নামা। এই বন্টন নামা মৃত ব্যক্তির পরিবার আর সন্তানের মধ্যে যাতে ঝগড়া না হয় সেই বিষয়ে অনেকখানি সহযোগিতা করে।
যদি কোন ব্যক্তি অথবা মৃত ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পত্তি নিজের সন্তান ছাড়াও অন্য কোন ব্যক্তিকেও দিতে চান, তখন এমন পরিস্থিতিতে সেই বন্টনামার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়, এক্ষেত্রে বন্টন নামা অবশ্যই অবশ্যই করতে হবে।
কে করে থাকেন বন্টন নামা?
বন্টন নাম যে কোন ব্যক্তি করতে পারেন। যে ব্যক্তির কাছে নিজের অর্জন করা ধন-সম্পত্তি রয়েছে, সেই ব্যক্তি অনায়াসেই বন্টন নামা তৈরি করে রাখতে পারেন। এটি করার জন্য এটা জরুরী যে, সেই ব্যক্তি যেন সম্পূর্ণ রূপে মানসিক দিক থেকে এবং শারীরিক দিক থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সবল থাকেন।
এমন ব্যাক্তি যিনি কিনা অন্ধ, কালা, বোবা সেই ব্যক্তি ও নিজের সম্পত্তির বন্টনামা এই শর্তের উপরে করতে পারবেন, সেই শর্তটি হল- নিজের কাজের পরিণাম আর তার আইনি পরিণাম সম্বন্ধে খুবই ভালোভাবে বুঝতে পারা। তবে ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, খুবই সামান্য রূপে পাগল ব্যাক্তি ও বন্টন নামা তৈরি করতে পারেন।
কিন্তু এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এমনটা তখন করা সম্ভব যখন সেই ব্যক্তি নিজের বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করার যোগ্য থাকবেন। যদি কোন ব্যক্তি এটা না জেনে থাকেন অথবা না বুঝতে পারেন তাহলে সেই ব্যক্তিটি কি করতে যাচ্ছেন সেটা কখনোই বুঝে উঠতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে নিজের সম্পত্তির বন্টননামা তৈরি করা সম্ভব নয়।
বন্টন নামা কত প্রকারের হয়ে থাকে?
সাধারণত বন্টন নামা দুই প্রকারের হয়। প্রথমত বিশেষ অধিকার যুক্ত বন্টননামা আর দ্বিতীয়ত বিশেষ অধিকার লুপ্ত অথবা সুপ্ত বন্টন নামা।
#১) বিশেষ অধিকারযুক্ত বন্টন নামা কে করতে পারবেন?
বিশেষ অধিকার যুক্ত বন্টন নামা সেনা, নৌসেনা, আর বায়ু সেনা দ্বারা তৈরি করা যায়। এটি একটি অনুপ্রচারিক বন্টন নামা, এই বন্টন নামা মৌখিক রূপে অথবা লিখিত রূপে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের দ্বারা করা হয়, যারা নিজেদের জীবন বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন। এমন ব্যক্তিদের দ্বারা একটি অল্প সময়ের নোটিশ দ্বারা তৈরি করা যেতে পারে, এই বিশেষ অধিকার যুক্ত বন্টননামা।
#২) বিশেষ অধিকার লুপ্ত অথবা সুপ্ত বন্টননামা কে করতে পারবেন?
অন্যান্য আর যে সমস্ত বন্টন নামা রয়েছে সেগুলিকে বিশেষ অধিকার লুপ্ত বন্টন নামা বলা হয়।
বন্টন নামার পঞ্জীকরণ অথবা রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করবেন?
যেকোনো বন্টন নামা কে একটি সাদা কাগজের উপরে তৈরি করা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে যেকোনো ধরনের সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্য এই কাগজকে রেজিস্টার্ড করিয়ে নিতে পারেন।
রেজিস্টার করানোর জন্য একটি সাব রেজিস্টার এর কার্যালয়ে সাক্ষীদের সাথে যেতে হবে, প্রতিটি জেলায় এমন কার্যালয় থেকে থাকে যেখানে বন্টন নামা রেজিস্টার হয়ে থাকে, যা যেকোনো বন্টন নামা রেজিস্ট্রেশন করার জন্য সাহায্য করে থাকে। রেজিস্টার্ড করার পর এই বন্টন নামা একটি শক্তিশালী আইনি প্রমাণ হিসাবে আপনার কাছে থাকবে।
বন্টন নামা কতটা সুরক্ষিত হতে পারে?
এই আইনি কাগজপত্র সুরক্ষিত রাখার প্রাবধান ভারতীয় রেজিস্ট্রেশন অধিনিয়ন 1908 তে রয়েছে। এখানে বন্টন কর্তা আর তার এজেন্টের নাম সিল এর সাথে যে কোন রেজিস্টার এর কাছে জমা করানো যেতে পারে। বন্টন নামাকে নিজের ইচ্ছা অনুসারে অথবা ইচ্ছার বিরুদ্ধে খন্ড খন্ড করা যেতে পারে।
অর্থাৎ সেটি ভাগ হয়ে যেতে পারে, আইনি প্রক্রিয়া দ্বারা ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও এই বন্টন নামা যে ব্যক্তি করবেন সে ব্যক্তি যদি বিবাহ করে নেন তাহলে সেটি আপনা আপনি বিখণ্ডিত হয়ে যাবে। শুধুমাত্র প্রথম বিবাহ করার ক্ষেত্রেই এই বিষয়টি প্রযোজ্য নয়, তাছাড়া পরবর্তীতে যদি আরও বিবাহ করে থাকেন সেই ব্যক্তি সে ক্ষেত্রেও কিন্তু এই বন্টন নামা বিখণ্ড হতে পারে।
এছাড়া এখানে একটা কথা জরুরী যে, যদি কোন ব্যক্তি নিজের ইচ্ছা অনুসারে বন্টন নামার সেই কাগজপত্র যতবার পরিবর্তন করে থাকুন না কেন, মৃত্যুর আগে তৈরি করা বন্টন নামাই কিন্তু শেষ বন্টন নামা হিসেবে প্রযোজ্য হবে।
এছাড়াও বলা যেতে পারে যে, বন্টন নামা লেখা আইনি হিসাব অনুসারে একটি বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা এখানে নিজের ধন-সম্পত্তি নিজের ইচ্ছা অনুসারে নিজের ছেলে মেয়েদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করা যেতে পারেন কোনো ব্যক্তি। যার ফলে কোনরকম ঝামেলা সৃষ্টি হবে না। যদি আপনিও আপনার বন্টন নামা লেখার সম্পর্কে ভেবে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া এই বিষয়গুলি সম্পর্কে অবশ্যই অবগত থাকবেন:-
বন্টন নামা লেখার জন্য সঠিক বয়স কত?
আইনি হিসাব অনুসারে বণ্টন নামা লেখার জন্য কোন নির্ধারিত বয়স থাকে না। যদি সেই ব্যক্তি মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে, সুস্থ থাকেন এবং কোনরকম প্রতারণা, ধর্ষণ আর অবৈধ প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে থাকেন এবং সেই ব্যক্তির বয়স যদি ২১ বছর এর বেশি হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি অনায়াসেই বন্টন নামা লিখতে পারবেন।
তাছাড়া সম্পত্তির মালিক নিজের সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করার জন্য নিজের ইচ্ছা অনুসারে এই আইনি কাগজপত্র তৈরি করতে পারবেন। ভবিষ্যতে কোন রকমের ঝগড়া ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য ব্যক্তি নিজের যখন কম বয়স থাকবে তখন থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যখন তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করে থাকবে।
বন্টন নামা টাইপ করানো জরুরী হয় কি?
আইনের দিক থেকে দেখতে গেলে দুই রকম ভাবে এই কাগজপত্র তৈরি করা জরুরী, লিখিতভাবে এবং টাইপ করার মধ্যে দিয়ে। যেকোনো বন্টন নামা লেখার জন্য উকিল এর প্রয়োজন হবে না, আর এর জন্য কোন নিশ্চিত কোন রূপ ও নির্ধারণ করা নেই।
কিন্তু যদি উকিলের সাহায্য নেওয়া হয়, তাহলে কোন ধরনের ভুল বোঝাবুঝি, অথবা প্রতারণার আশঙ্কা কম থাকে, আর এর সাথে আদালতে এই বন্টন নামাকে অবৈধ হওয়ার যে ভয়টা থাকে সেটার আশঙ্কাও অনেকখানি কমে যেতে পারে।
এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন, তারিখ এবং সাক্ষীর কি ভূমিকা রয়েছে?
যখন কোন বন্টন নামা তৈরি করা হবে, সেটি রেজিস্টার করানো জরুরি হয়ে পড়ে না, কিন্তু যদি আপনি কোন রকম প্রতারণা বা এ বিষয়ে ঝামেলা থেকে বাঁচার চিন্তা-ভাবনা করেন, তাহলে আপনি বন্টন নামা রেজিস্টার করে নেবেন অবশ্যই আর এটাই কিন্তু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বন্টন নামা রেজিস্টার করার প্রক্রিয়া খুবই সহজ হয়ে থাকে। যার জন্য আপনাকে একটি নির্ধারিত ফিস রেজিস্টার অথবা উপ রেজিস্টার এর কাছে জমা করতে হবে, নিজের বন্টন নামা রেজিস্টার করার জন্য। যার জন্য আপনাকে দুটি সাক্ষীর সাথে উপস্থিত থাকতে হবে রেজিস্টার অফিসে।
কিন্তু যে দুটি সাক্ষী আপনি নিয়ে যাবেন সেই দুজন সাক্ষী এই বন্টন নামার মধ্যে যেন না থাকেন, অর্থাৎ আপনি যে সম্পত্তি ভাগ করতে চাইছেন তার মধ্যে যেন তারা না থাকেন। সম্পূর্ণ রূপে আলাদা দুজন ব্যক্তি হতে হবে। আর সেই দুজন সাক্ষী কে খুবই ভরসার যোগ্য হওয়াটা জরুরী। বন্টন নামাতে তারিখ থাকাটা খুবই জরুরী, কেননা এটি আইনের চোখে জানা যায় যে, এই বন্টন নামা কখন করা হয়েছে।
বন্টন নামার আপডেট করা যেতে পারে কি?
যে কোন জিনিস সময় সময়ের পর আপডেট হয়ে থাকে। তেমনি এই বন্টন নামার ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। সময় সময়ের উপর নির্ভর করে সেটা আপডেট করতে হয়। বন্টন নামার কর্তাকে এর সাথে সাথে বর্তমান বিত্তীয় পরিস্থিতি অনুসারে সেটি আপডেট ও করা উচিত।
কেননা যদি আপনি বন্টন নামা বানানোর পর কোন সম্পত্তির অথবা কোন শেয়ার কিনে থাকেন, তাহলে পুরানো যে বন্টন নামা তৈরি করেছেন সেটি আবার সেই হিসাবে আপডেট করতে হবে আর সেখানে নতুন সম্পত্তি এডজাস্ট অথবা যুক্ত হবে, এর সাথে সাথে আপডেট করানোর তারিখটাও কিন্তু দিতে হবে।
বন্টন নামার উপরে হস্তাক্ষর অথবা সই আর নাম এর ব্যবহার কিভাবে করতে হবে?
বন্টন নামার উপরে সমস্ত ভাগীদারদের আইনি নাম, তাদের জন্ম তারিখ, ঠিকানা খুবই পরিষ্কারভাবে, স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। বন্টন নামা যিনি লিখবেন সেই ব্যক্তির উপরেও এই নিয়ম জারি থাকবে। এই জন্য যেকোনো সময় এই কাগজপত্রের উপর কোনরকম ডাকনাম অথবা সংক্ষিপ্ত কোন নাম ব্যবহার করা যাবে না। সম্পূর্ণ নাম ব্যবহার করতে হবে যেটা অন্যান্য কাগজপত্রে রয়েছে।
এইভাবে বন্টন নামার উপরে যখন সই করা হবে তখন কিন্তু সংক্ষেপে সই করলে হবে না। সম্পূর্ণরূপে সম্পূর্ণ নামের সই করতে হবে, আর বণ্টননামা তৈরি করার জন্য সাক্ষীদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম জারি থাকবে। নিজের সম্পূর্ণ সই করতে হবে, তার সাথে সাথে এটাও সুনিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পড়ে যে, হস্তাক্ষরের সামনে সেই ব্যক্তির নাম এবং বিবরণ এর উল্লেখ থাকবে।
এছাড়া কোনরকম প্রতারণার শিকার যদি না হতে চান তাহলে এই সমস্ত বিষয়গুলি অবশ্যই খেয়াল করবেন। প্রত্যেক পৃষ্ঠার উপরে আপনার এবং আপনার সাক্ষীদের নাম আর সই থাকতে হবে। কোনভাবে যেন এতটুকু সুযোগ না থাকে এ বিষয়ে কোন ব্যক্তি প্রতারণা করার জন্য।
তো আপনি যদি চান যে আপনার সম্পত্তি আপনার ছেলেমেয়েদের মধ্যে খুবই কম বয়সে, আগে থেকেই ভাগ করে দিতে চাইছেন, তাহলে এমন ভাবে বন্টননামা তৈরি করে রাখতে পারেন। আর তাছাড়া যদি পরবর্তীতে অন্য কোন সম্পত্তি কিনে থাকেন তাহলে আপডেট করার মধ্যে দিয়ে সেটাও বন্টন নামার মধ্যে যুক্ত করতে পারবেন অনাহাসেই।