দেখতে দেখতে আবার বসন্ত এসে গেছে, সামনেই দোল উৎসব, তার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে আবির রং প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতাদের। প্রতিটি উৎসবের সাথে জড়িয়ে থাকে বেশ কিছু নিয়ম-কানুন।
যেগুলি মানলে যেমন জীবনে উন্নতি সাধন করা যায়, তেমনি প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় দোল উৎসব, গোটা দেশেই রঙের উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে সকল মানুষ। এমন উৎসবের দিনেও কিছু নিয়ম থাকে যেগুলি মেনে চলতে হয়।
বিশেষ করে যারা বিবাহ করেছেন, সদ্য বিবাহিতদের জন্য দোল পূর্ণিমার দিনটি অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। যেহেতু দোল উৎসব এক প্রেমের উৎসব। তাই এটি সদ্য বিবাহিতদের জীবনে নিয়ে আসবে এক নতুন মোড়।
বিবাহিত জীবনের প্রথম দোল উৎস তাদের নতুন জীবনকে আরো বেশি রঙিন করে তোলে, আনন্দময় করে তোলে। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, তা হলো দোলের দিন নতুন যাদের বিয়ে হয়েছে তাদের কয়েকটি কাজ করা একেবারেই উচিত নয়।
এগুলি যদি নিষ্ঠা ভরে মেনে চলা যায়, তাহলে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় আর সংসারে উন্নতি সাধনের পাশাপাশি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক দৃঢ় ও মধুর হয়ে ওঠে।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এমন কিছু বিধি-নিষেধ সম্পর্কে, যেগুলি সদ্য বিবাহিত দের মেনে চলতে হবে, তার সাথে সাথে অন্যান্য দেরও:
সুচিপত্র
১. জীবনের প্রথম হোলিকা দহন শ্বশুরবাড়িতে নয় (মেয়েদের ক্ষেত্রে):
বিবাহিত জীবনের প্রথম হোলি শ্বশুরবাড়িতে না কাটানোই শুভ বলে মনে করা হয় প্রতিটি মেয়েদের জীবনে। মনে করা হয় বিয়ের পর প্রথম বছর হোলিকা দহনের আগুন শাশুড়ি মা এবং বৌমার একসঙ্গে দেখা উচিত নয়। এর ফলে সংসারে আগুন লাগে বলে সেটা প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে অনেকে আজও বিশ্বাস করেন।
তাই বিবাহিত জীবনের প্রথম দোল উৎসব প্রতিটি মেয়েরা যেন তাদের স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়িতে গিয়ে পালন করেন। এছাড়াও স্বামী-স্ত্রী দুজনে অন্য কোথাও গিয়ে এই দোল উৎসব উদযাপন করতে পারেন।
দোলে ভেষজ আবীর ব্যবহার করুন, বাড়িতে বানানোর পদ্ধতি জানুন
২. ন্যাড়াপোড়া অথবা হোলিকা দহনের দিনে কালো রঙের পোশাক নয়:
ন্যাড়া পোড়া অথবা হোলিকা দহন যা দোল উৎসবের সঙ্গে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত। এটি ছাড়া দোল উৎসব যেন অসম্পূর্ণ। তবে এই শুভদিনে তার পাশাপাশি দোল পূর্ণিমার দিনে ও কালো রংয়ের পোশাক একেবারেই পরবেন না। কারণ দোলের দিন গায়ে সব রঙের ছোঁয়া লাগলেও কালো রংয়ের ব্যবহার এই দিনে অশুভ বলে মনে করা হয়।
এছাড়া কালো রঙের পোশাক পরে দোল খেললে আপনার চারপাশের নেগেটিভ এনার্জি ঘিরে থাকবে বলে বিশ্বাস করা যায়। দোলের দিন অন্যরা সাদা রঙের পোশাক পরলেও নতুন বিয়ে হওয়া মহিলারা লাল অথবা হলুদ রঙের পোশাক পরতে পারেন।
এটি যেমন তাদের নতুন বিবাহিত জীবনকে আরো বেশি উজ্জ্বল করে তুলবে, তেমনি প্রতিটি রং সেই পোশাকের রংকে আরো বেশি রঙিন করে তুলবে। সম্পূর্ণ সাদা পোশাক বিবাহিত মহিলাদের জন্য শুভ নয়, তাই চেষ্টা করুন একটু রঙিন ধরনের কোন পোশাক পরতে অথবা সাদা রঙের পোশাকে অন্য কোন রং যেন যুক্ত থাকে।
৩. বিয়েতে পাওয়া উপহার আত্মীয়-স্বজন দের দিতে নেই:
এমন বিষয় অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়। যেমন ধরুন অনেক মেয়েরা বিয়েতে বিভিন্ন ধরনের উপহার পেয়ে থাকেন, সেই উপহার আত্মীয় স্বজনকে দিয়ে দেন নতুন বিবাহিত মহিলারা। হোলিকা দহন এর আগে বিয়েতে পাওয়া কোন কিছু কাউকে দিতে বারণ করা হয় শাস্ত্র অনুসারে।
না হলে আপনার জীবনে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিয়ের পর প্রথম বছর হোলিকা দহন না দেখাই ভালো। এটি যেহেতু হোলিকার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তাই এই অনুষ্ঠানে কোনভাবেই সদ্য বিবাহিত মহিলাদের থাকা উচিত নয়।
দোল আর হোলি কি এক? জানুন রঙের সঠিক ইতিহাস
৪. স্বামীর সাথে সাথে থাকা:
সদ্য বিবাহ হয়েছে এমন মহিলাদের কখনোই এই উৎসবে স্বামীদের ছেড়ে থাকতে নেই। যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, তাদের সাথে যাওয়াটাই শুভ বলে মনে করা হয়।
বিবাহিত জীবনের প্রথম দোল উৎসব একসাথে কাটানো টা যেন অনেকের কাছে এক বিশেষ পাওয়া। সারা জীবন প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ থাকার জন্য এই প্রথম দোল উৎসব অর্থাৎ বিবাহিত জীবনের প্রথম দোল উৎসবটি দুজনে একসাথে কাটানোর চেষ্টা করুন।
৫. কোনো কিছু নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি নয়:
যে বাড়িতে সর্বদাই অশান্তি হয় সেই বাড়িতে লক্ষ্মী বিরাজ করেন না, তা তো আমরা সকলেই জানি। তবে সদ্য বিবাহ হয়েছে তার মধ্যে অনেক ভুল বোঝাবুঝি বা কোন বিষয় নিয়ে অভিমান হতেই পারে।
তবে এই বিষয়টা যেন দোল পূর্ণিমার এই শুভদিনে না হয়। না হলে জীবনে অনেক বিপদ নেমে আসতে পারে এবং লক্ষ্মী রুষ্ট হয়ে গিয়ে জীবন থেকে চলে গেলে সব থেকে বড় বিপদ কিন্তু আপনাদের জীবনেই আসবে। তাই এই বিষয়টি এড়িয়ে চলুন।
শুভ দোল পূর্ণিমার শুভেচ্ছা বার্তা – Dol Purnima Bengali Status
৬. সবার সাথে ভালো ব্যবহার:
যেহেতু বিয়ের পর প্রথম এই দোল উৎসব প্রতিটি মেয়েদের বাপের বাড়িতে পালন করা শুভ, তাই বাপের বাড়িতে গিয়ে এই উৎসবের দিনে এবং উৎসবের আগে ও পরের দিন গুলিতেও কোনভাবেই কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করা উচিত নয়।
শুধু এই দিনেই কেন, কখনোই কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করা শুভ ফলদায়ক হয় না। তার সাথে সাথে ভালো ব্যবহার করে চলুন, এর ফলে সকলের আশীর্বাদ থাকবে আপনাদের মাথার উপর। আর মা লক্ষ্মীর কৃপা দৃষ্টি সর্বদাই বর্ষিত হবে আপনাদের উপরে।
এই ছোটখাটো বিষয়গুলি যদি মেনে চলা যায় তাহলে জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান করা যায় বলে শাস্ত্র অনুসারে জানা যায়। সদ্য বিবাহিতদের জন্য এগুলি খুব বিশেষ করে নিষেধ করা হয়েছে। আর এগুলি মেনে চললেই জীবনে লক্ষ্মীর আগমন ঘটে। আর মা লক্ষ্মী সন্তুষ্ট থাকলে তাহলে তো সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি সর্বদাই বিরাজ করবেই, তাই না !