Sawaswati Pujo 2024: পূজার দিন এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না

সরস্বতী পুজো: দেব দেবীদের মধ্যে দেবী সরস্বতী পড়ুয়াদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বিদ্যার দেবী, জ্ঞান এর দেবী রূপে তিনি সকলের কাছে পুজিতা, সরস্বতী পুজোর সময় শীতের বিদায় নিয়ে বসন্তের সূচনা হয়। সেই সময় চারিদিকে সুন্দর মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়।

সরস্বতী পুজো: সরস্বতী পূজার দিন এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না
সরস্বতী পুজো: সরস্বতী পুজোর দিন এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না

আর তাইতো হিন্দুদের বিশ্বাস অনুসারে যখন দেবী সরস্বতী মর্ত্যে পদার্পণ করেছিলেন তখন ব্রহ্মাণ্ডে হলুদ, লাল এবং নীল আবহাওয়া বিকশিত হয়েছিল। তার মধ্যে হলুদ এর ভাগটা সবচেয়ে বেশি ছিল। সেই কারণে সরস্বতী পুজোর সময় হলুদ রং অথবা বাসন্তী রঙের পোশাক পরাটা আজও রীতি ও প্রথা হয়ে রয়েছে।

দেবী সরস্বতী:

ছোটবেলা থেকে কচিকাচাদের কাছে সরস্বতী পুজো যেন একটা বড় উৎসব। এই উৎসবের জন্য সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকতে হয়। পড়াশোনার বই খাতা সবকিছু মায়ের পায়ে অর্পণ করে বিদ্যা, বুদ্ধি দান করার জন্য প্রার্থনা করা হয়। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার মানস কন্যা সরস্বতী যিনি আবার দেবাদিদের মহাদেব ও দেবী দুর্গার প্রিয় কন্যাও বটে।

তিনি বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য-সংগীত-কলা বিভাগের দায়িত্ব একা হাতেই সামলাচ্ছেন। শ্রী পঞ্চমীর দিন খুবই জাকজমকপূর্ণ ভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে এবং সর্বজনীন পূজা মন্ডপে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়, যা কিনা সকলে চোখে পড়ার মতো।

এই সরস্বতী পুজো উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সার্বজনীন পূজা মন্ডপগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যা কিনা চলে আসছে অনেকদিন আগে থেকেই। বিশেষ করে এই সমস্ত অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা থাকে সবচেয়ে বেশি।

সেই কারণে তাদের কাছে সরস্বতী পুজো খুবই স্পেশাল। এই দিনে তারা সকাল সকাল উঠে স্নান সেরে উপস্থিতে বাগদেবীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য, প্রস্তুত হন, বিদ্যাবুদ্ধি জ্ঞানের প্রার্থনা করেন দেবীর কাছে।

তবে এই সবকিছুর পাশাপাশি এমন অনেক কাজ রয়েছে যেগুলি সরস্বতী পুজোর দিন কোনভাবেই করা যাবে না, যেগুলি করলে দেবী সরস্বতী কিন্তু আপনাদের উপরে অসন্তুষ্ট হতে পারেন।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত কাজ গুলি সম্পর্কে:

এই বিশেষ শুভদিনে ছোট ছোট বাচ্চাদের পূজা করা ছাড়াও কোনো নতুন কাজ শুরু করা, অন্নপ্রাশন, সংস্কার, গৃহপ্রবেশ, বাচ্চাদের মুণ্ডন, শিশুদের হাতে খড়ি, এই সমস্ত শুভ কাজ গুলি সম্পন্ন করা হয়।

আর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকা হয় সারা বছর এই শুভ কাজগুলি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে। বসন্ত পঞ্চমী কে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়, সেই কারণে এই দিনটি বেছে থাকেন অনেকেই এই শুভ কাজ গুলি করার জন্য।

১) হলুদ রং অথবা বাসন্তী রঙের পোশাক:

আমরা আগেই জেনেছি সরস্বতী পুজোয় হলুদ রঙের পোশাক পরাটা খুবই জরুরী। এটা একটা প্রথা হিসেবে চলে আসছে বহুদিন আগে থেকেই। বসন্ত পঞ্চমীর সঙ্গে হলুদ রং যেন একেবারে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত। আসলে হলুদ রং হলো সমৃদ্ধি, আলো ও ইতিবাচক শক্তির প্রতীক, আর সরস্বতী পুজোর সময় শীত বিদায় নিয়েছে মানে বসন্তের সূচনা হয়ে গিয়েছে।

চারিদিকে যেমন পরিবেশ সেজে উঠেছে তেমনি হিন্দুদের বিশ্বাস অনুসারে ব্রহ্মাণ্ডে লাল, হলুদ, নীল আভার পাশাপাশি তার মধ্যে হলুদের ভাগ ছিল সবচেয়ে বেশি। সেই কারণে সরস্বতী পুজোয় হলুদ রং কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।

২) গাছ কাটা উচিত নয়:

সবুজ গাছপালা আমাদের পরিবেশকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখে, তার সাথে আমাদের বেঁচে থাকার রসদও যোগায়। আর আমরাই যদি সেই গাছপালা কেটে সর্বনাশ করে দিই তাহলে আমরাই নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছি।

বসন্ত, পঞ্চমীর দিন থেকেই শুরু হয়, এই অবস্থায় গাছ গাছালিতে নতুন করে নতুন নতুন পাতা এবং ডাল গজাতে শুরু করে, এমন পরিস্থিতিতে এই বিশেষ দিনে গাছ-গাছালি কাটা একেবারেই উচিত নয়।

৩) কালো অথবা লাল রং নয়:

সরস্বতী পুজোয় হলুদ রং কতটা শুভ তা তো আমরা আগেই জানলাম, তবে শাস্ত্র অনুসারে জানা যায় বসন্ত পঞ্চমীর দিনে হলুদ রঙের পোশাক পরা অতীব শুভ। এছাড়া এই দিনে ভুল করেও কালো রং অথবা লাল রঙের পোশাক পরা একেবারেই উচিত নয়।

৪) আমিষ খাওয়া যাবেনা:

যেকোনো পূজা মানে সেই দিন বাড়িতে উপোস, নিরামিষ খাওয়া এবং শুদ্ধ হয়ে থাকার বিষয়টা অনেকেই গুরুত্ব দেন। তেমনি বসন্ত পঞ্চমীর দিন বাড়িতে যেন কেউ মাংস না খেয়ে থাকেন এমনকি মাছ মাংস বাড়িতে তোলাও নিষেধ, সেই কারণে সরস্বতী পুজোর দিন প্রায় প্রতিটি বাড়িতে নিরামিষ খিচুড়ি রান্না হয়, যা কিনা অতীব সুস্বাদু।

৫) স্নানের আগে খাওয়া নয়:

স্নান করা মানে শরীর শুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি মনও ভালো থাকে। আর সরস্বতী পুজো মানেই আলাদা বিষয়, বসন্ত পঞ্চমীর দিনে স্নান না করে কখনোই খাবার খাওয়া উচিত নয়, এটি করা মানে অশুভ বলে মনে করা হয়।

এই দিনে সবাইকে স্নান করতেই হবে এবং তারপরে উপবাস ভঙ্গ করে খাবার গ্রহণ করতে হবে। যদি উপবাস না রাখেন তাহলে খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই স্নান করে নেবেন।

৬) অন্যের খারাপ ভাবা উচিত নয়:

সকলের মুখে শোনা যায় যদি কেউ অন্য কারোর ভালো চায়, তাহলে ঈশ্বর সেই অন্য কারোর ভালো চাওয়া ব্যক্তি কে এতটাই প্রদান করেন যে তা ধারণার বাইরে। সেই অনুসারে বসন্ত পঞ্চমীর দিন জ্ঞানের দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা হয়, তাই কারো খারাপ ভাবা বা খারাপ করা একেবারেই উচিত নয়। এর ফলে আপনি নিজেই বিপাকে পড়বেন।

৭) ফসল কাটা উচিত নয়:

কোন ফসল কাটার সময় হলে সেটাতো কেটে নিতেই হবে, তবে এই সময় অর্থাৎ সরস্বতী পুজোর দিন কোনভাবেই ফসল কাটা উচিত নয়। বাড়ির যে কোন গাছ কাটা উচিত নয়, শাস্ত্রে মানা হয় যে এই সময় গাছেরাও উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে। তাই এই দিন বাড়িতে গাছ লাগানো খুব শুভ বলে মনে করা হয়।

৮) চুল ও নখ কাটতে নেই:

চুল ও নখ কাটা একটি অতি সাধারণ বিষয় হলেও সরস্বতী পুজোর দিন হাত, পায়ের নখ ও চুল কাটা একেবারেই অশুভ। যদি খুব প্রয়োজন হয় তাহলে আগের দিন বা পরে দিন কেটে নেওয়া উচিত, সরস্বতী পুজোর দিনে এগুলি করা থেকে বিরত থাকুন। আর হ্যাঁ সরস্বতী পুজোর দিন সেলাইয়ের কোনরকম কাজ একেবারেই করবেন না।

৯) প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখুন:

যেকোনো পূজায় জ্বলন্ত প্রদীপ নিভে যাওয়া মানে অশুভ লক্ষণ। তাই সরস্বতী পুজোর সময় যে প্রদীপ জ্বালানো হয় সেই দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা জরুরী। তা যেন কোনভাবেই পূজা চলাকালীন নিভে না যায়।

১০) রাগ সংবরণ করুন:

জীবনে এমন অনেক কিছুই ঘটে যার জন্য রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়, তবে সরস্বতী পুজোর দিন কাউকে রাগের মাথায় কু- কথা বলা যাবে না, এই দিন দেবী সরস্বতী আমাদের জিহ্বায় অবস্থান করেন, তাই কাউকেই কুকথা বলতে নেই, এই দিন নিজের রাগ সংবরণ করতে চেষ্টা করুন।

১১) দেবীর পায়ে বিদ্যার ডালি:

পড়াশোনা করার জন্য বই খাতা কলমের প্রয়োজন হয়, সেগুলিতে দেবী সরস্বতী বসবাস করেন, সরস্বতী পুজোর সময় অবশ্যই পড়ার বই সঙ্গীতের কোন জিনিসপত্র থাকলে তা দেবীর সামনে নিয়ে গিয়ে রেখে দেবেন। যতদিন না পর্যন্ত পূজা শেষ হচ্ছে বা দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত সেখানেই রেখে দিন, এর ফলে দেবীর আশীর্বাদ পড়বে এগুলির উপর।

১২) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন:

শুধু পূজা বলেই নয়, ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাটাও শুভ বলে মনে করা হয়। যেমন মা লক্ষ্মী বসবাস করেন তেমনি দেবীর সরস্বতীও কিন্তু আপনার ঘরে সর্বদাই থাকবেন।

এই দিন ঘরের কোনায় কোনায় কোনরকম যেন ধুলো ময়লা না জমে থাকে। পূজার আগে থেকে ঘর গুলি ভালো করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখুন। দেবী সরস্বতী খুবই সৌখিন দেবী। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা খুবই পছন্দ করেন।

১৩) খালি পায়ে ঘুরুন:

সরস্বতী পুজোর দিন আরও একটি বিশেষ বিষয় হল খালি পায়ে ঘোরাঘুরি করা। কেননা প্রতিনিয়ত পূজার জোগাড় থেকে শুরু করে আরো অন্যান্য কাজে নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখতে হয়। তাই কখনোই পূজার জায়গায় বা যেখানে প্রতিমা রাখা হয়েছে সেই জায়গার আশেপাশেই জুতো পড়ে ঘুরাঘুরি করবেন না, তাই চেষ্টা করবেন খালি পায়ে ঘোরাঘুরি করার।

⭐ শিক্ষা, শিল্প-কলা এবং সংগীতের দেবী হলেন সরস্বতী জ্ঞানের দেবী তিনি। আমাদের মনের সকল অন্ধকার দূর করে শিক্ষার আলো জ্বালানোর জন্য আমাদের ঘরে ঘরে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়। সঠিক বিধি অনুসারে পূজা করলে দেবীর কৃপা লাভ করা যায় সহজেই।

তবে শাস্ত্র অনুযায়ী কিছু কাজ আছে যা সরস্বতী পুজোর দিন একেবারেই করা যাবে না। সেগুলি সম্পর্কে তো অবগত হওয়াই গেল, আর এগুলি খেয়াল রাখলেই দেবী সন্তুষ্ট হবেন প্রতিটি ভক্তের উপরে। এর ফলে বিদ্যার দেবী সকলের নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়া থেকে বিরত রাখবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top