নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জীবনী 2023 – ইতিহাস, পরিবার এবং বিপ্লবী কার্যক্রম

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কিভাবে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন? ওনার বাবা-মা কে? ওনার জীবন কেমন ছিল? এছাড়াও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সম্পর্কে জানা-অজানা তথ্য জানুন (Biography of Subhas Chandra Bose in Bengali)।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু শুধুমাত্র ভারতেই নয়, সমস্ত পৃথিবীর সশস্ত্র আন্দোলনের ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন একটি স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যেভাবে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে মরনপন সংগ্রাম চালিয়েছিলেন তা আজও আমাদের মনে বিস্ময় এর সৃষ্টি করে।

তার সেই আজাদ হিন্দ ফৌজের সুদক্ষ পরিচালনা থেকে শুরু করে ব্রিটিশের চোখে ধুলো দিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া, পৃথিবীর প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া, বারবার ছদ্মবেশ ধারণ করে ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়া, সব কাজেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন একেবারে দক্ষ খিলাড়ি। তবে তিনি রাজবিহারী বসুর থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সেটা জানাই যায়।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জীবন পরিচয় - Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জীবন পরিচয় – Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali

এছাড়া নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নাম শুনবেন না, এমন ভারতীয় নেই বললেই চলে। এমনকি মহাত্মা গান্ধীর মত নেতার বিরুদ্ধেও লড়াই করে তিনি জয় যুক্ত হয়েছিলেন। এক সময় ভারতের তরুণ সমাজের নয়ন মনি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তার কথায় যুবকরা দেশের জন্য কিছু করার সাহসিকতা দেখিয়েছিল।

তবে তার মৃত্যু নিয়ে এখনো পর্যন্ত রহস্য রয়েছেই। অনেকে বলে থাকেন বিমান দুর্ঘটনায় নাকি তার মৃত্যু হয়েছে। আবার অনেকে বলেন শেষ পর্যন্ত তাকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ব্রিটিশরা নিয়ে গিয়েছিলেন। আবার অনেকের কথায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সাইবেরিয়াতে রুশদের হাতে বন্দি ছিলেন, কোনটা সঠিক তা আজও পর্যন্ত অমীমাংসিত।

তাছাড়া বলা যায় এমন বীর ব্যক্তিদের কখনোই মৃত্যু হয় না। তাঁরা মৃত্যুঞ্জয়, এমন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মনের মনিকোঠায় উজ্জ্বল প্রদীপের মত জ্বলজ্বল করছেন।

তবে এই বীর যোদ্ধার জীবনী সম্পর্কে চলুন একটু ধারণা করি: 

কে ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু?

আমরা সকলেই জানি যে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন একজন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু হলেন একটি উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র। যিনি সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে সমগ্র জীবনকে উৎসর্গ করে গিয়েছেন ভারত কে স্বাধীন করার জন্য।

সুভাষচন্দ্র বসু দুইবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন কিন্তু গান্ধীজীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা টিকা এবং বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করার জন্য তাকে পদত্যাগ করতে হয়। সুভাষচন্দ্র মনে করতেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা এবং সত্যাগ্রহের নীতি ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়।

এই কারণে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র বসু ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন।

ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাকে ১১ বার বন্দী করেছিল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বিখ্যাত সেই উক্তি নিশ্চয়ই কারো অজানা নয়, “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব” অর্থাৎ দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করো, স্বাধীনতা নিশ্চয়ই আসবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরেও তার মতামত অনুসারে কোন পরিবর্তন ঘটেনি।

যুদ্ধের সূচনাকালে তিনি লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানি ও জাপান ভ্রমণ করেন ভারতের ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যান। সেখানে জাপানিদের সহযোগিতায় আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং পরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নেতৃত্ব প্রদান করেন এই বাহিনীর। এই বাহিনীর সৈনিকরা ছিলেন মূলত ভারতীয় যুদ্ধ বন্দী এবং ব্রিটিশ হিমালয়, সিঙ্গাপুর সহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের কর্মরত মজুর।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন সম্পর্কে জানা যাক:

  • সম্পূর্ণ নাম: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু,
  • জন্মস্থান: কটক, ওড়িশা, ভারত
  • জন্ম তারিখ: ২৩ শে জানুয়ারি ১৮৯৭ সাল
  • পিতার নাম: জানকীনাথ বসু
  • মাতার নাম: প্রভাবতী দেবী
  • জাতীয়তা: তিনি ভারতীয়
  • রাজনৈতিক দল: ফরওয়ার্ড ব্লক, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
  • স্ত্রীর নাম: এমিলি শেঙ্কল
  • সন্তান: অনিতা বসু পাফ (কন্যা)
  • পরিচিতির কারণ: ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগঠক ও সর্বাধিনায়ক।
  • মৃত্যু: তার মৃত্যু আজও অমীমাংসিত, তবে ১৫ ই আগস্ট ১৯৪৫ সাল, ভারত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত যে তিনি এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম: 

মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন নায়ক বলা যায়, বীরশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম হয়েছিল কটক শহরে ১৮৯৭ সালের ২৩ শে জানুয়ারি।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পিতা মাতা সম্পর্কে জানা যাক:

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পিতার নাম ছিল জানকীনাথ বসু এবং মায়ের নাম ছিল প্রভাবতী দেবী, বাসভূমি ছিল ২৪ পরগনার কোদালিয়া গ্রামে। অভাব অনটনের মধ্য দিয়েই বড় হয়ে ওঠেন জানকীনাথ, পরে কটক শহরে গিয়ে আইন ব্যবসা শুরু করেন, কয়েক বছরের মধ্যে নিজের যোগ্যতায় কটকের সবথেকে নামকরা উকিল হয়ে ওঠেন। অবশেষে সরকারী উকিলের পদ লাভ করেন। তিনি ছিলেন খুবই সৎ এবং দৃঢ়চেতা মানুষ।

স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ার জন্য সরকারি উকিলের লোভনীয় সেই পদকে তিনি অবিলম্বে ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু উকিল হিসেবে আইনের মধ্যেই তিনি তার প্রতিভা ও কর্মশক্তিকে আবদ্ধ করে রেখে জনসাধারণের কল্যাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও নিজেকে জড়িত করেছিলেন।

বিভিন্ন রকম জনহিতকর কর্মের জন্য সমস্ত ওড়িশায় বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন জানকীনাথ বসু। বিভিন্ন রকম গঠনমূলক কাজের জন্য জানকীনাথ বসু ইংরেজ সরকারের কাছ থেকে রায় বাহাদুর খেতাবও অর্জন করেছিলেন।

দেশে যখন আইন অমান্য আন্দোলনের সময় সরকারের দমননীতির প্রতিবাদে জানকীনাথ সরকারের দেওয়া রায় বাহাদুর খেতাব বর্জন করে লাঞ্ছিত দেশ ভক্তদের শ্রদ্ধা অর্জন করেন। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, তিনি দেশের জন্য নিঃশব্দে সবকিছু পরিত্যাগ করেছেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মা ও ছিলেন তার পিতার মতোই আত্মসচেতন মহিলা। সকল ব্যাপারে তার আত্মমর্যাদা জ্ঞান এবং তেজস্বীতা সকলের মনে বিশেষ ভাবে জায়গা করেছিল। প্রতিবেশী ও অন্যান্য সকল শ্রেণীর মানুষের দুঃখ দূর করা, নরম হৃদয় ভরা সহানুভূতি ও দয়া, এই দম্পতিদের মধ্যে খুবই ভালোভাবে লক্ষ্য করা যেত। এখানে একটা কথা বলে রাখা জরুরি যে, সুভাষচন্দ্রের মা ছিলেন প্রভাবতী দেবী এবং তিনি ছিলেন উত্তর কলকাতার হাটখোলার ঐতিহ্যপূর্ণ দত্ত পরিবারের কন্যা।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শৈশবকাল:

শুভ চন্দ্র বসু তিনি যে শৈশবকালে খুবই তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন শিশু ছিলেন সেটা তার কর্ম দেখেই বোঝা যায়। সব সময় মা-বাবাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন এবং বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জানার জন্য তার মধ্যে অধীর আগ্রহ ছিল।

সাধারণ পরিবারের শিশুদের মতো তাকেও প্রাথমিক শিক্ষার জন্য কটকের প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপিয়ান স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল। স্কুলটি ব্রিটিশ ধারায় পরিচালিত, এই জন্য দেশি স্কুলগুলিতে পাঠরত সঙ্গী দের তুলনায় সুভাষচন্দ্র ইংরেজি শিক্ষায় অনেকটাই এগিয়েছিলেন।

তাছাড়া এই ধরনের স্কুলে পড়াশোনা করার সাথে সাথে অতিরিক্ত আরও অন্যান্য শিক্ষাও অর্জন করা যায়। সঠিক আচার ব্যবহার, প্রতিটি কাজে পরিচ্ছন্নতা, নিয়ম-শৃঙ্খলা সবকিছু থাকা সত্ত্বেও সাহেবী স্কুলের পরিবেশ সুভাষচন্দ্র বসুর কোনমতেই ভালো লাগতো না।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এখানে তাকে একটি কৃত্রিম জগতের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। সব সময় তার মনে হতো যে স্কুলের চার দেয়ালের বাইরে বিশাল ভারতবর্ষে পড়ে আছে, আর সেই ভারতবর্ষ তাকে আহবান করছে। সেই ভারতের অধিকাংশ মানুষ যারা কিনা নিরক্ষর, নিরন্ন।

তাদের কথা সবচেয়ে আগে চিন্তা করতে হবে, এমনটাই ভেবেছিলেন শৈশবকালে সুভাষচন্দ্র বসু। তারপর ১৯০৯ সালে সুভাষচন্দ্র যখন ১২ বছরের একটি বালক, তখন ইউরোপিয়ান মিশনারী স্কুল ছাড়ার সময় হয়ে এসেছে এই খবরের সুভাষচন্দ্র খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষা জীবন: 

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষা জীবন সম্পর্কে জানতে গেলে জানা যায় যে, তিনি কোন কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন:-

  • ব্যাপটিস্ট মিশন’স প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় স্কুল, কটক, ১৯০২ থেকে ১৯০৯ সাল,  র‍্যাভেনশো কলেজিয়েট স্কুল কটক ১৯০৯ থেকে ১৯১২ সাল।
  • প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা, ১৯১২ থেকে ১৯১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৬ সাল, স্কটিশ চার্জ কলেজ কলকাতা ২০ শে জুলাই ১৯১৭-১৯১৯ সাল।
  • ফিটজ উইলিয়াম হল, নন – কলেজিয়েট স্টুডেন্টস বোর্ড, কেমব্রিজ, ১৯১৯ থেকে ১৯২২ সাল।

স্কুল জীবনের শেষে কলকাতার একটি দলের বার্তাবহ এক দূত তার সঙ্গে কটকে দেখা করেন, তার মাধ্যমে সুভাষচন্দ্র বসু রাজনৈতিক জগতের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। তরঙ্গ আবহাওয়ার মধ্যে বসেও শহর কলকাতার উদ্দীপনা পূর্ণ পরিবেশের খবর রাখতে তিনি পারেননি।

ওই দূতের মাধ্যমেই সবকিছু শুনতেন। আর সেই কারণে কলকাতায় আসার জন্য তিনি একেবারে ছটফট করছিলেন। অস্থির হয়ে উঠেছিলেন, নিজেই সবকিছু পর্যবেক্ষণ করার জন্য।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কর্মজীবন: 

কলকাতা এসে তিনি বুঝতে পারলেন যে, সমাজসেবা হলো মানুষের জীবনের অন্যতম কাজ। ভারতের বিভিন্ন মানুষের সাথে সংযোগ রক্ষা করতে হবে, তাই ভারতের কর্মস্থান এবং ঐতিহাসিক স্থান গুলি তিনি ভ্রমন করতে শুরু করেন।

এই সময় সুভাষ চন্দ্রকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল অরবিন্দ ঘোষ। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে অরবিন্দ বামপন্থী চিন্তাধারা তুলে ধরেছিলেন। পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিও তিনি তুলেছিলেন। সুভাষচন্দ্র বোস অরবিন্দ কে জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে শ্রদ্ধা ও করতেন।

এমন সব পরিস্থিতির মধ্যে ইন্দ্র দাস বাবাজি নামে এক পাঞ্জাবী সাধুর সাথে তার পরিচয় হয়। সুভাষচন্দ্রের মনে হলো তখন যে, সন্ন্যাস জীবনের মধ্যেই আছে মুক্তির সন্ধান। ১৯১৪ সালের গুরুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন ঘুরে বেড়ালেন  হরিদ্বার, মথুরা, বৃন্দাবন। কোথাও তিনি তার মনের মত গুরু পেলেন না। বেনারসে এসে দেখা হল রামকৃষ্ণদেবের শীর্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দের সাথে।

ব্রহ্মানন্দের সাথে সুভাষচন্দ্র বসুর পিতা জানকীনাথের আগে থেকেই পরিচয় ছিল। তাই তিনি সুভাষচন্দ্র কে চিনতেন। তাই নানাভাবে বুঝিয়ে তাকে আবার ঘরে ফিরে যাওয়ার কথা বললেন। এর কয়েকদিন পরে টাইফয়েডে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। এই অসুস্থতার সময়ই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কটকে যাওয়া: 

এমন সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যখন তিনি যাচ্ছিলেন তখন সুভাষচন্দ্র বসু বাধ্য হয়েছিলেন কটকে ফিরে আসতে। কেননা তাঁকে কলেজ থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছে। এখন দিন কাটছে অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। তবুও সামাজিক কাজগুলির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন।

অবশেষে এক বছর পর বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের চেষ্টাতে ১৯২৭ সালের জুলাই মাসে অনার্স নিয়ে স্কটিশ চার্জ কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।

কলেজে আবার নতুন করে পড়াশোনা শুরু করার কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারত রক্ষা বাহিনীর একটি শাখায় যোগ দেওয়ার সুযোগ এসে পড়ে। সুভাষচন্দ্র চার মাস সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করলেন এবং শিবির জীবন যাপন করলেন, ১৯১৯ সালে দর্শন শাস্ত্রে অনার্সে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করা: 

কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই সুভাষচন্দ্র বসু ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করে বাংলার বিপ্লবী দলগুলিকে সংগঠন করার চেষ্টা করেছিলেন। কংগ্রেস দল থেকে তাকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কৃত করা হয়েছিল।

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্রের একটি অস্থায়ী জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানান, এই সময় হলো ওয়েল মনুমেন্ট অপসারণের দাবিতে সত্যাগ্রহ শুরু করেন এবং গ্রেফতার হয়ে পড়েন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর দেশ গৌরব উপাধি পাওয়া: 

সুভাষচন্দ্র বসুর ছাত্র জীবন কেটে যাওয়ার পর, আই সি এস পরীক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে তিনি চলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে এসে দেশবন্ধুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই ভারতে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। আর এই সময়ে এই সুভাষচন্দ্র মহাজাতি সদন প্রতিষ্ঠার আয়োজন করেছিলেন।

বৃত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে এসে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুভাষচন্দ্রকে দেশ গৌরব উপাধি দেন। এরপর সুভাষচন্দ্র কলকাতার পৌরসভার মেয়র হন, অনেক গঠনমূলক কাজও করেছিলেন তখন তিনি।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর দেশ ত্যাগ করা:

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কারাগারে অনশন করতে শুরু করলে তাকে মুক্তি দিয়ে গৃহের অভ্যন্তরীণ অবস্থায় রাখা হয়। বিশ্বস্ত কিছু সহযোগীর সহযোগিতায় পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে জানুয়ারি ছদ্মবেশে দেশ ত্যাগ করেছিলেন।

সুভাষচন্দ্র বসু উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মধ্যে দিয়ে কাবুল হয়ে, রাশিয়া হয়ে, জার্মানিতে পৌঁছান। এখানে একটি শক্তিশালী বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে প্রচারকার্য চালাতে থাকেন। দেশ ত্যাগ করলেও দেশের জন্য আন্দোলন কিন্তু তার থেমে থাকে নি।

এর মধ্যেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে মহা বিপ্লবী রাজবিহারী বসু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি অস্থায়ী স্বাধীন ভারত সরকার সংগঠন করেছিলেন আর এই সময় তরুণ সুভাষচন্দ্র কে তিনি তার কাজ সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন। আর এই দায়িত্ব সুভাষচন্দ্র বসু খুবই সুনিপুণভাবে সামলেছেন। একটার পর একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা তিনি জনগণের জন্য উপহার দিয়েছেন।

তিনি দেশের জন্য সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ অনায়াসেই গ্রহণ করেছেন এবং সেটি নিজের দক্ষতা অনুসারে পরিচালনা করেছেন। এভাবেই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে সমস্ত অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।

তার সেই উক্তি এখনো জনসাধারণের মনে এবং বিশেষ করে তরুণ ছেলে মেয়ে এবং সেনাদের মনে ব্যাপকভাবে গেঁথে রয়েছে “তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।” এমনই স্বাধীনতা সংগ্রামে যে সুষ্ঠুভাবে স্বাধীনতা পাওয়া সম্ভব নয়, সেটা তিনি অনেক আগেই ভালো করে বুঝে গিয়েছিলেন। আর এই স্বাধীনতা পেতে যে অনেক রক্ত ঝরবে সেটা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আগে থেকেই জানতেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু রহস্য:

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজ আর আমাদের মধ্যে নেই, তবে নেই মানে তিনি জীবিত নেই, তার মৃত্যু ঘিরে রয়েছে অনেক রহস্য। তবুও প্রতিবছর ২৩ শে জানুয়ারি তার জন্ম মুহূর্ততে আমরা তাকে স্মরণ করে থাকি, শ্রদ্ধাঞ্জলি দি, স্বাধীনতা দিবসে তাকে ছাড়া যেন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন সম্পূর্ণই হয় না। এভাবে সুভাষচন্দ্র আমাদের মনের মনিকোঠায় উজ্জ্বল প্রদীপের মতো বেঁচে আছেন।

তবে ১৫ আগস্ট ১৯৪৫ সাল তিনি একটি বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এমনটাই কিন্তু সকলেই জানেন, আর তার এই মৃত্যু ভারত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত করা হয়েছিল। তবে আজও পর্যন্ত তার মৃত্যুর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি অর্থাৎ তার মৃত্যুটা রহস্যই থেকে গেছে আর আজও পর্যন্ত তা অমীমাংসিত।

যেভাবে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সুদক্ষভাবে পরিচালনার মধ্যে দিয়ে আন্দোলন করেছেন এবং ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে দেশ ছেড়েছেন, সাবমেরিন নিয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে পৃথিবীর আর এক প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন তথ্য জোগাড় করার জন্য। এমনই দুঃসাহসিক এক বিপ্লবীর অমীমাংসিত মৃত্যু রহস্য আজও মনে করায় যে তিনি জীবিত আছেন, কিন্তু তিনি অমর হয়ে থাকবেন, মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে থাকবেন, সমগ্র ভারতবাসীর কাছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top