রূপচর্চায় ব্যবহৃত দারুন কিছু প্রাকৃতিক গাছ গাছড়া জানলে অবাক হবেন

সৌন্দর্য চর্চায় প্রাকৃতিক গাছ গাছড়া ও জড়িবুটি কে কাজে লাগিয়ে নিজেকে করে তুলুন আরো বেশি অপরুপা, অনন্যা। তবে শুধু নারীদের জন্য নয়, পুরুষদের জন্যও প্রযোজ্য। যার ব্যবহারে রূপে যোগ করবে এক আলাদা মাত্রা

প্রাচীনকালে এখনকার মত এত বাজার চলতি প্যাকেটজাত সৌন্দর্য প্রসাধন সামগ্রী ছিল না। রূপচর্চার ক্ষেত্রে তখনকার দিনের নারীরা নির্ভরশীল হয়ে ছিলেন প্রকৃতির ওপর। প্রকৃতিও দুহাত ভরে ভালোবাসা দিয়েছে সবাইকে। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। তখন নারীদের সৌন্দর্য্যে ছিল হীরের মত চমক। ত্বকের কোনো সমস্যা তারা জানতেনই না। পুরোপুরি প্রকৃতির উপর নির্ভর হওয়ার জন্য তাদের রূপ সৌন্দর্য যেন কথা বলতো। তাদের রূপে মুগ্ধ হতে বেশিক্ষণ লাগবেনা।

বাজার চলতি রূপচর্চার প্রোডাক্ট এ হয়তো ব্যবহারের সাথে সাথে চেহারার মধ্যে একটা আলাদা সৌন্দর্য প্রকাশ পায় কিন্তু প্রতিনিয়ত এর ব্যবহার আমাদের ত্বকে খারাপ প্রভাব ফেলতে থাকে। এর মধ্যে থাকা ক্ষতিকর কেমিক্যাল আমাদের ত্বকের বন্ধু তো হতে পারে না। প্রাকৃতিক কোন কিছু কাজ করতে হয়ত সময় নেয় কিন্তু এর ফলাফল এতটাই ভাল ও মন মতো হয় যে একে ভালো না বেসে উপায় নেই।

রূপচর্চায় ব্যবহৃত দারুন কিছু প্রাকৃতিক গাছ গাছড়া জানলে অবাক হবেন
রূপচর্চায় ব্যবহৃত দারুন কিছু প্রাকৃতিক গাছ গাছড়া জানলে অবাক হবেন

সৌন্দর্য প্রসাধনসামগ্রীর বিপুল সম্ভার আমাদের প্রকৃতিতেই রয়েছে এর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হলে এদের পরিচয় ও গুনাগুণ জানা দরকার পৃথিবীতে যেমন অনেক জড়িবুটি আছে তেমনি আছে নানা সবজি, মসলা, সুগন্ধি ফল, ঔষধি ইত্যাদি।

এইসব প্রাকৃতিক জড়িবুটি ও গাছপালার উপর অনেকেই এখনও ভরসা করে নিজেদের সৌন্দর্য চর্চা করে চলেছেন। অনেকেই হয়তো এদের ব্যবহার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এসবের বাইরে তারা কোনো কিছুকে নিজের সৌন্দর্য চর্চায় জায়গা দিতে চান না।

এমন কিছু প্রাকৃতিক জড়িবুটি, গাছপালা ও মসলা রয়েছে যা আমাদের সৌন্দর্য চর্চায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। কি সেই উপাদান গুলি চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক-

১. চন্দন:

চন্দন কাঠ অনেকেই রূপচর্চায় ব্যবহার করে থাকেন। তাছাড়া প্রতিটি হিন্দু ঘরের ঠাকুর ঘরে চন্দন তো অবশ্যই থাকে, হালকা হাতে পরিষ্কার মুখে এই চন্দনের প্রলেপ মুখে মেখে শুকানো পর্যন্ত রেখে দেওয়ার পর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিলে মুখে একটা আলাদা সৌন্দর্য প্রকাশ পাবে। যেটা অন্য কাউকে বলতে হবেনা নিজেই আয়নায় মুখ দেখলে বুঝতে পারবেন।

চন্দন এক প্রকার জীবানু ও রোগনাশক উদ্ভিদ যেকোনো ধরনের ক্রিম তৈরিতে চন্দন ব্যবহার করা হয়। তার উপর ফুসকুড়ি, ঘামাচি, দানা দানা হলে তাতে চন্দনগুঁড়ো অত্যন্ত ভালো কাজ করে। তাহলে আর কি একেবারে এক কাজে দুই কাজ। চন্দনের প্যাক ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

২. চামেলী বা লেভেন্ডার:

এর সুগন্ধের জন্য অনেকেই ল্যাভেন্ডার কে ভীষণ পছন্দ করেন। ল্যাভেন্ডার এসেন্সিয়াল অয়েল অনেকের ড্রেসিং টেবিলে খুঁজলে পাওয়া যায়। তবে এটি একটি সৌন্দর্য প্রসাধন দ্রব্যের মধ্যে অন্যতম। ত্বকের যত্নে অত্যন্ত উপকারী প্রাকৃতিক উপাদান। সৌন্দর্যমন্ডিত করে, ত্বককে তরতাজা করে তোলে।

৩. গমের অংকুর:

অনেকেই গমের আটার রুটি খেয়ে থাকেন। তবে জানেন কি এই গমের অংকুর ত্বকের ক্ষেত্রে কতটা উপকারী! তা জানলে হয়তো আজ থেকেই সেটা করতে শুরু করে দেবেন। গমের অংকুর এর মধ্যে থাকে ভিটামিন এ, যা ত্বকে বলিরেখা, ভাজ পড়াকে রোধ করে, ত্বককে সুস্থ রাখতে, এবং ত্বকের দাগ সারাতে ব্যবহার করা হয়। ত্বকের পুষ্টি বর্ধক যে ক্রিম বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, তার মধ্যেও কিন্তু গমের অঙ্কুশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৪. লবঙ্গ:

লবঙ্গ তার ঝাঁজ এর জন্য অনেকের কাছে প্রিয়। এটা শুধু রূপচর্চায় নয় অনেক রোগের উপশম করে। শরীরকে তরতাজা রাখতে অনেকেই লবঙ্গের চা পান করে থাকেন। তবে লবঙ্গ শরীরের সুস্থতার পাশাপাশি সৌন্দর্যচর্চায় অনেকখানি ভূমিকা পালন করে। লবঙ্গের মধ্যে জীবানুনাশক ক্ষমতা আছে। লবঙ্গ শরীরে সতেজতা এনে দিতে সাহায্য করে, এটি দাদ, একজিমা, ইত্যাদি দূরে রাখে ও মলমে অনেকাংশে ব্যবহৃত হয়। দাঁতের ব্যথা নিবারণ করে, দাঁতে পোকা লাগতে দেয় না। নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করতে লবঙ্গ অত্যন্ত উপকারী।

৫. মৌরি:

মৌরি কে আমরা সাধারণত হজমি কারক হিসেবে চিনি। চাপ করে খাওয়া হয়ে গেলে হজমের জন্য অনেকেই মৌরি, খাওয়ার পরে খেয়ে থাকেন। অনেকেই আবার খাওয়ার পরে মুখশুদ্ধি হিসেবে মৌরি খান। তবে এছাড়াও মৌরির আরো অনেক গুণ আছে। মৌরি ফোলা বা শোথ রোগ দূর করে ত্বকের লোমকূপ কে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। মৌরি গুঁড়োর করে জলে মিশিয়ে মাথা ধোয়ার কাজে ব্যবহার করলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি লাভ করে।

৬. লেবুর পাতা ও লেবু:

লেবু পাতাতে ভিটামিন এ থাকে। ঘামের দুর্গন্ধ নিরাময় করে সতেজতা প্রদান করে।  লেবুর রস স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী ও সৌন্দর্য প্রসাধন উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লেবুর রস ত্বকের স্বাভাবিক অম্লতা কে না কমিয়ে তাকে শুদ্ধ ও সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। ত্বককে মসৃণ রাখতে সাহায্য নিতেই পারেন লেবুর।এর মধ্যে অনেক গুণ থাকার ফলে ক্রিম, সাবান, মলম ইত্যাদি প্রসাধন সামগ্রীতে ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হয়।

৭. গোলাপ:

গোলাপ ভালবাসেনা এমন মানুষ হয়তো খুজলে পাওয়া যাবে না। প্রাচীনকাল থেকে গোলাপের কদর। এর ফুল, পাতা, পাপড়ি নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। গোলাপের পাপড়ি থেকে তৈরি হয় গোলাপজল, গোলাপজল সৌন্দর্যচর্চায় টনিক হিসেবে কাজ করে। গোলাপজলে শুষ্ক ও খসখসে ত্বক মোলায়েম ও মসৃন হয়। বাজারে নানান ক্রিম লোশন ইত্যাদিতে গোলাপজল ব্যবহৃত হয়, গোলাপের সুগন্ধ তো জগদ্বিখ্যাত।

৮. বাদাম:

বাদাম অনেকেই খেতে পছন্দ করেন তবে জানেন কি বাদাম সৌন্দর্যচর্চায় কতটা অপরিহার্য! বাদামের ব্যবহার আমাদের দেশে বহুকাল আগে থেকে হয়ে আসছে। বাদাম ত্বককে কোমল করে, ভাঁজ পড়া কে রোধ করে  খুব সহজে এবং খুব তাড়াতাড়ি কাজ করতে পারে, ত্বকের নমনীয়  করে রাখতে সাহায্য করে।

তেমনি ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। মুখের ক্রিম তৈরিতে বাদাম একটি উৎকৃষ্ট উপাদান। চোখের নিচে কালি মুছে ফেলতে ত্বকের কালচে ভাব বিনষ্ট করে স্বাভাবিক করে এই বাদাম ।

৯. পুদিনা পাতা:

পুদিনার শরবত, পুদিনা পাতা অনেকেই খেতে পছন্দ করেন। তবে এর পাশাপাশি রূপচর্চায় এর অবদান অনেক। পুদিনা পাতার রস স্বাস্থ্যকর ও রোগ নিরাময় তো বটেই, সেই সঙ্গে ত্বকের দাগ দূর করতে ভীষণ কার্যকরী। ত্বকের শীতলতা, সতেজতা ফিরিয়ে আনতে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা যেতেই পারে।

১০. কর্পূর:

এককথায় কর্পূর তার গন্ধের জন্য এবং তার গুণাগুণ এর জন্য সকলের কাছে ভীষণ প্রিয়। কর্পূর গাছের রোগ নিরাময় ক্ষমতা সবারই কমবেশি জানা। প্রাচীনকাল থেকে নানা রোগ নিরাময়ে এর ব্যবহার হয়ে আসছে। মাথার ত্বককে সুস্থ রাখতে এবং চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে। কর্পূরের ব্যবহারের ফলে চুল কালো করা সম্ভব হয়।

১১. খুবানি:

খেজুরের মতো দেখতে একটি ফল। প্রচুর ভিটামিন এ এই ফলে পাওয়া যায়। ত্বকে নতুন জীবন দান করতে, ত্বকের দাগ নষ্ট করতে, এবং ত্বক টান হওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। হাত ও মুখের জন্য নানারকম ক্রিমে এটিকে ব্যবহার করা হয়। মুখের মলম তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় কর্পূর কে।

১২. দারুচিনি:

দারুচিনি সাধারণত রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে এর গুনাগুন রূপচর্চা পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে। দারুচিনির তেল ম্যাসাজ করার কাজে লাগে, এই তেল রোদে ঝলসানো ত্বক এ খুবই উপকারী। এছাড়া এর তেল দাঁতের রোগে খুব উপকারী।

এইসব প্রাকৃতিক উপাদান গুলি আমাদের ত্বকে এতটাই প্রভাব ফেলে যে, কোনো দামি প্রোডাক্ট তা করতে পারবে না। এক রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আমাদের শরীর ও সৌন্দর্যকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলে এইসব প্রাকৃতিক উপাদান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top