মানি লন্ডারিং কি? মানি লন্ডারিং কিভাবে করা হয়? – Money Laundering in Bengali

(Money Laundering) মানি লন্ডারিং কি? অবৈধভাবে মানি লন্ডারিং বা অর্থপাচার কিভাবে করা হয়ে থাকে? অবৈধ টাকাপাচার করা অপরাধ কি? কিভাবে টাকাপাচার করলে তা মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসাবে ধরা হয়? জানুন সবকিছু এখানে।

মানি লন্ডারিং শব্দটি সংযুক্ত রাজ্য আমেরিকাতে উৎপন্ন হয়েছিল। মাফিয়া দের বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মের ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা এবং সেটি বৈধভাবে সকলকে দেখানো বিষয়টিকে বুঝিয়ে থাকে। আমেরিকাতে প্রায় ১৯৮০ দশকে একটি খুবই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

মানি লন্ডারিং কি? মানি লন্ডারিং কিভাবে করা হয়? - Money Laundering in Bengali
মানি লন্ডারিং কি? মানি লন্ডারিং কিভাবে করা হয়? – Money Laundering in Bengali

মানি লন্ডারিং এর শব্দটি ভারতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বেড়ে চলেছে। তাছাড়া এর জনপ্রিয়তা অবৈধভাবে লেনদেন এর হিসাবে জানা যেতে পারে। ভারতে এটি সবথেকে জনপ্রিয় ১৯৯০ এর দশকে এটি মানুষের মধ্যে বেশ প্রভাব বিস্তার করে।

তবে অনেকেই হয়তো এই মানি লন্ডারিং এর বিষয়টি জানেন না, সে ক্ষেত্রে চলুন এই মানি লন্ডারিং আসলে কি সে সম্পর্কে জানা যাক:

মানি লন্ডারিং কি?

মানি ল্যান্ডিং হল অবৈধভাবে যে ধন-সম্পত্তি উপার্জন করে লুকিয়ে রাখার পদ্ধতি কে বোঝায়। সম্পত্তি এমন সব কাজ এবং ইনভেসমেন্টে লাগানো যেতে পারে যেখানে অনুসন্ধানকারী এজেন্সি রা ও সেই সম্পত্তির মুখ্য সোর্স অর্থাৎ কোথা থেকে এই সমস্ত সম্পত্তি উপার্জিত হয়েছে সেটা কখনোই ধরতে পারে না।

যে ব্যাক্তি এই সমস্ত ধন-সম্পত্তির লেনদেন বা এখানকার সম্পত্তি নিয়ে আরেক জায়গায়, আরেক জায়গায় সম্পত্তি নিয়ে আরেক জায়গায় এভাবে Launderer করে থাকেন সে ক্ষেত্রেও এ সমস্ত বিষয়কে মানি লন্ডারিং বলা হয়। এই বিষয়ে অবৈধ মাধ্যমে উপার্জন করা কালো টাকা বৈধ হয়ে আসল মালিকের কাছে বৈধ মুদ্রা হিসেবে ফেরত আসে।

মানি লন্ডারিং যেভাবে করা হয় - Money Laundering Cycle in Bengali
মানি লন্ডারিং যেভাবে করা হয় – Money Laundering Cycle in Bengali

সমাজে সব মানুষ ভালো হবে এমনটা কিন্তু নয়, তাই মানি লন্ডারিং বলতে অসাধু উপায়ে অর্জন করা টাকা কে রূপান্তরিত করা, আসলে কোনো অবৈধ উপার্জিত আয় কে আইনের চোখে এমন ভাবে উপস্থিত করা হয়, যেন মনে হয় যে তার সেই উপার্জন করা অর্থটি প্রকৃতভাবে বৈধভাবে উপার্জন করা হয়েছে।

সাধারণত বলা যেতে পারে, এক জায়গার টাকা আরেক জায়গায় নিয়ে সেই টাকা আবার আরেক জায়গায় নিয়ে বিষয়টি এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় যে মূল উৎস খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হয় যে, টাকাটি আসলে কোন জায়গা থেকে উপার্জন করা হয়েছে। ফলে আইনের লোকজনের পক্ষে খুবই অসম্ভব কাজ হয়ে দাঁড়ায় যে, সেই অবৈধ উৎস টি খুঁজে পাওয়ার জন্য।

তবে এরকম করার কারণ হলো এই পথ ছাড়া কোন অবৈধ অর্থের মালিক সেই টাকা খরচ করতে কখনোই পারবেন না। কারণ সে ক্ষেত্রে সে আইনের হাতে ধরা পড়ে যেতে পারে। সাধারণত অসৎ রাজনৈতিক নেতা বা সরকারি আমলারা মাদক দ্রব্য, কার, বাড়ি এই সমস্ত পন্থার আশ্রয় নিয়ে যে সমস্ত মানুষ উপার্জন করে থাকেন তারা তিনটি পর্যায়ে মানি লন্ডারিং করে থাকেন। এই অপরাধের বিরুদ্ধে আইনত তদন্ত করা হয়, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) এই অপরাধের তদন্ত করে থাকে।

মানি লন্ডারিং প্রকার

যে তিনটি পর্যায়ে তারা মানি লন্ডারিং করে থাকেন সেগুলি নিচে আলোচনা করা হলো:-

প্রথমতঃ প্লেসমেন্ট: 

এই প্লেসমেন্ট পর্যায়ে অবৈধভাবে উপার্জন করা টাকা সরাসরি অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করানো হয়। সাধারণত এক্ষেত্রে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার মাধ্যমে এটি শুরু করা হয়, তবে এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হয়।

মানি লন্ডারিং স্থান নির্ধারণ - Money Laundering Placement in Bengali
মানি লন্ডারিং স্থান নির্ধারণ – Money Laundering Placement in Bengali

আর সমস্ত বড় মাপের কাজে লেনদেনের পরিমাণ খুবই বড় হয়। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকে এমনই বেশি অংকের টাকা জমা দিতে গেলে বিভিন্ন রকমের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

দ্বিতীয়তঃ লেয়ারিং: 

দ্বিতীয় পর্যায়টি হল লেয়ারিং, এই পর্যায়ে সেই টাকাকে অর্থাৎ অর্থকে বিভিন্ন পন্থায় একটি খাত থেকে আরেকটি খাতে পাঠানো হয়, এমন ক্ষেত্রে টাকা এক হিসাব থেকে আরেক হিসাবে এবং এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের হিসাবে, এমনকি এক দেশ থেকে অন্য দেশেও পাঠিয়ে লেনদেনের একটা জটিল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়, যাতে লেনদেন করার বিষয়গুলি অনুসরণ করা না যেতে পারে।

মানি লন্ডারিং লেয়ারিং করা - Money Laundering Layering in Bengali
মানি লন্ডারিং লেয়ারিং করা – Money Laundering Layering in Bengali

অর্থাৎ এক কথায় বলা যেতে পারে, কোন লেনদেনের পর কোন লেনদেন করা হয়েছে তা বের করা খুবই মুশকিল কাজ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে মূল যে উৎস টি সেটা বের করতে সত্যিই ঘাম ঝরাতে হয় প্রচুর। তবুও অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না সে মূল উৎস টি বের করা।

তৃতীয়তঃ ইন্ট্রিগেশন: 

তৃতীয় পর্যায়ে এবং শেষ পর্যায়, এই পর্যায়ে অর্থ আবারও মূল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রবেশ করে, তবে এবার অবৈধ অর্থ হিসেবে নয়, যেখান থেকে অবৈধ হিসেবে টাকাটি এতগুলো পদক্ষেপ পার করে এসেছে আবার সেই টাকা বৈধ অর্থ হিসেবে আবার সেই জায়গায় ফিরে যাবে।

মানি লন্ডারিং উপাদানে একীকরণ করা - Money Laundering Integration in Bengali
মানি লন্ডারিং উপাদানে একীকরণ করা – Money Laundering Integration in Bengali

এক্ষেত্রে আগের প্রমাণ না থাকলে এই অর্থের উৎস বের করা বলতে গেলে প্রায় অসম্ভব। সাধারণ হিসাবে ব্যাঙ্কে এই অর্থ জমা করে রাখা হয়।

এতক্ষণে জানলেন যে মানি লন্ডারিং আসলে কি? তো এবার জানা যাক মানি লন্ডারিং এর অপরাধ গুলো কি কি?

মানি লন্ডারিং এর অপরাধ

  • অপরাধ সংক্রান্ত সম্পত্তি জেনেবুঝে স্থানান্তর, রূপান্তর, অথবা হস্তান্তর করা।
  • বৈধ অথবা অবৈধ উপায়ে অর্জিত যে সম্পদ বা অর্থ নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদেশে পাচার করা।
  • এটি গোপনের উদ্দেশ্যে অর্জিত সম্পত্তি বিদেশে পাচার করা কিংবা বিদেশ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা।
  • অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত উপার্জনের অবৈধ প্রকৃতি, অবস্থান, মালিকানা, উৎস, নিয়ন্ত্রণ সবকিছু গোপন করে রাখা।
  • কোনরকম আর্থিক লেনদেন এমন চতুরতার সঙ্গে সম্পাদন করা, যা জাতীয় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তা কখনোই ধরা না পড়ে অর্থাৎ অভিযুক্ত না হয়।
  • অপরাধজনিত কাজ থেকে অর্জিত সম্পত্তি গ্রহণ করা, দখল করা এবং সেটি সম্পূর্ণরূপে ভোগ করা।
  • অপরাধ সংগঠনে উৎসাহ দেওয়া অথবা সাহায্য করার উদ্দেশ্যে কোন বৈধ বা অবৈধ সম্পদের রূপান্তর করা, স্থানান্তর করা অথবা হস্তান্তর করা।

উপরের এই সমস্ত অপরাধ গুলির সাথে কোন ভাবে জড়িত থাকা, যেমন ধরুন প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ, ষড়যন্ত্র, পরামর্শ, প্ররোচনা ইত্যাদি এই সমস্ত কিছু দেওয়ার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করলেও কিন্তু একইভাবে অপরাধী।

এছাড়া মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০২ তে অধিনিয়মিত করা হয়েছিল কিন্তু এখানে তিনবার সংশোধন করা হয়েছে, ২০০৫, ২০০৯ আর ২০১২। ২০১২ এর শেষ সংশোধন কে ৩ রা জানুয়ারি করা হয়েছিল। ২০১৩ তে রাষ্ট্রপতির অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল, আর এই আইন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জারি করা হয়েছে। আইন অনুসারে নিম্নলিখিত অপরাধ গুলোর মাধ্যমে অর্জন করা অর্থ অথবা কোন সম্পদ লন্ডারিং করা বা করার চেষ্টা করাও মানি লন্ডারিং এর অপরাধ বলে মনে করা হয়।

সেই অপরাধ গুলি হল: 

  • মুদ্রা অথবা দলিল, কাগজপত্র জাল করা বা নকল করা।
  • দুর্নীতি ও ঘুষ, জোর করে চাঁদাবাজি, সংঘবদ্ধ অপরাধ।
  • প্রতারণা অথবা জালিয়াতি।
  • মাদক দ্রব্য ও নেশা দ্রব্যের ব্যবসা ও চোরাই এবং অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, অবৈধভাবে কাউকে আটকে রাখা।
  • কোন বন্দি করা, অপহরণ করা, যৌন নিপীড়ন।
  • যৌতুক নেওয়া, কাউকে ভয় দেখিয়ে তার মাধ্যমে অর্থ আদায় করা,
  • চুরি, ডাকাতি, খুন, দিনে দুপুরে ডাকাতি, শারীরিক ক্ষতি।
  • নারী পাচার, মানব পাচার, শিশু পাচার।
  • দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচার করা, সন্ত্রাস সৃষ্টি করা,
  • কর সংক্রান্ত অপরাধ, শুল্ক অপরাধ।
  • যেকোনো পণ্যের ভেজাল এর আইন লঙ্ঘন করা, ভেজাল ভাবে পণ্য উৎপাদন করা।
  • পুঁজি ও শেয়ার বাজারে অনৈতিক সুবিধাগুলি কাজে লাগানো এবং
  • পরিবেশগত অপরাধ।

পি এম এল এ (PMLA) ২০০২ তে আর বি আই সেবি  আর বিমা বিনিয়োগ আর বিকাশ প্রাধিকরন (IRDA) কে পি এম এল এ অনুসারে আনা হয়েছে আর এই জন্য এই অধীন নিয়ম এর মধ্যে সমস্ত বৃত্তীয় সংস্থা, ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ড, বীমা কোম্পানি, আর এদের বৃত্তীয় মধ্যস্থ এর উপর জারি করা হয়েছে।

তবে বলা যেতে পারে যে, মানি লন্ডারিং এর প্রক্রিয়া খুবই জটিল আর খুবই চালাকির সাথে করা হয়, যেটা থামানোর জন্য সরকারকে বেশি পরিমাণে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ভরপাই করার জন্য ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর বিকাশ করাটা জরুরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top