ভারতে কি গাঁজা ও মারিজুয়ানা সেবন বৈধ? আইনি নিয়ম জানুন

নেশা জাতক দ্রব্য গাঁজা ও মারিজুয়ানা সেবন বৈধ না অবৈধ? ভারতে কি গাঁজা ও মারিজুয়ানা ব্যাবহার করা আইনি অপরাধ? আসুন জেনে নিন ভারতে গাঁজা ও মারিজুয়ানা সেবন বৈধ না অবৈধ? এবং আইনি নিয়ম।

আপনি কি গাঁজা বা মারিজুয়ানা সেবন করেন? আপনি যদি ভারতীয় নাগরিক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকে জানতে হবে ভারতে মারিজুয়ানা বা সমজাতীয় নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন বৈধ নাকি অবৈধ।

আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্মে প্রথাগতভাবে গাজা, চরস, ভাং ইত্যাদি সেবন করার ইতিহাস ও প্রথা রয়েছে। তবে যখন এসব সেবনের মাত্রা অধিক হয়ে যায় তখন তা ব্যবহারকারীর জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। আর এ বিষয়ে ভারতে আইন রয়েছে।

ভারতে কি গাঁজা ও মারিজুয়ানা সেবন বৈধ? আইনি নিয়ম জানুন
ভারতে কি গাঁজা ও মারিজুয়ানা সেবন বৈধ? আইনি নিয়ম জানুন

সুপ্রিয় পাঠক, একটি বিষয়ের আইনগত বৈধতা বা অবৈধতা অনেক সময় এক কথায় বলাটা কঠিন। এজন্য প্রয়োজন বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা৷ চলুন জেনে নেওয়া যাক ভারতে মারিজুয়ানা সেবন বৈধ কিনা। ভারতে কি গাঁজা এবং মারিজুয়ানা সেবন বৈধ?

গাঁজা ও মারিজুয়ানা সেবনের আদি ইতিহাস

আগাছা, গাঁজা, ভাঙ, চরস, গেঞ্জা ইত্যাদি, হাজার হাজার বছর ধরে ভারতে নেশাজাতীয় দ্রব্য হিসেবে পরিচিত এবং বিভিন্ন ধর্ম ও গোষ্ঠীর মানুষ এগুলো সেবন করেন।

বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে ও এগুলো সেবনের প্রথা রয়েছে। গাঁজার অসংখ্য নাম দেওয়া হয়েছে। গাঁজা বা মারিজুয়ানা সেবন ভারতের ধর্মীয় প্রথার একটি অংশ হয়ে উঠেছে, বিশেষত হিন্দু ধর্মে, চরস (রজন), ভাঙ্গ (বীজ) এবং গঞ্জা (গাঁজার ফুল) আকারে ব্যবহৃত হয়।

ভারতে গাঁজার সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় মহল্লার শিখ উৎসব, এবং অন্যান্য উৎসব,যেমন হোলি ও শিবরাত্রির দিনে হিন্দু উৎসবগুলিতে ব্যবহৃত হয়, গাঁজার বীজ এবং পাতাগুলিযুক্ত দুধের সাথে মিশিয়ে ‘ঠান্ডাই’ তৈরির জন্য ভাঙ আকারে তৈরি করা হয় যা খুবই সুস্বাদু পানীয়। নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জাগছে,তবে কি ভারতে মারিজুয়ানা বৈধ?

গাঁজা বা মারিজুয়ানা সম্পর্কে আইন কী বলে?

কেন্দ্রীয় আইন যা ভারতে গাঁজার (আগাছা বা গাঁজা) নিয়ে কাজ করে সেটা হচ্ছে নারকোটিক ড্রাগস এবং সাইকোট্রপিক সাবস্টেন্স অ্যাক্ট, ১৯৮৫ (১)।

তবে মারিজুয়ানা বা গাঁজা সেবন, সংরক্ষণ, বিক্রয় বা ক্রয় সম্পর্কিত বিভিন্ন রাজ্যের নিজস্ব আইন রয়েছে। সাধারণভাবে, ভারতে, এই ড্রাগগুলি ক্রয়-বিক্রয় বা সেবন করা একটি অপরাধমূলক কাজ হিসাবে বিবেচিত হয়।

অতএব বুঝতেই পারছেন আপনি যদি এই জাতীয় ড্রাগসে আসক্ত হন তবে তা আপনাকে গুরুতর আইনি সমস্যায় ফেলতে পারে। কতবে গাঁজা বা মারিজুয়ানা ভারতের কিছু অঞ্চলে চাষ করার আইনী অনুমতি রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ওড়িশা এমন একটি রাজ্য যেখানে মারিজুয়ানা আইনসম্মত এবং এখানকার জনগণ সাধারণত রাজ্যের ভূখণ্ডের মধ্যে ধূমপানের জন্য ‘চিল্লুম’ ব্যবহার করে। উত্তরাখণ্ড হচ্ছে ভারতের প্রথম রাজ্য যেখানে হ্যাম্পের বাণিজ্যিক চাষের অনুমতি দেওয়া হয়।

হেম্প এমন একটি সমৃদ্ধ ফসল যার জন্য খুব কম পরিমাণে জল প্রয়োজন, অন্যান্য অনেক পার্বত্য রাজ্যগুলিতে হেম্প এবং গাঁজার চাষ করা হয়। পাহাড়ি অঞ্চলগুলিতে কম জল লাগে এমন ফসলের চাষ করা সুবিধাজনক। এজন্য পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে গাঁজা উৎপাদনের অনুমতি রয়েছে।

গাঁজা গাছের ফুল বা ফলের শীর্ষস্থান থেকে গাঁজা পাওয়া যায়, যার মধ্যে থেকে রেজিন বের করা হয়না। ফল থেকে বীজ এবং পাতা বাদ দিয়ে গাঁজা তৈরি করা হয়।

এই প্রক্রিয়া অনুসারে, ‘ভাঙ’ গাঁজা গাছের একটি অংশ হিসেবে ধরা হয় না এবং তাই ‘ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে প্রকাশ্যে ভাঙ্গ খাওয়া হয়।

এনডিপিএস আইন অনুযায়ী গাঁজার সংজ্ঞা

চরস, অপরিশোধিত বা পরিশোধিত, গাঁজা গাছ থেকে প্রাপ্ত একটি পৃথক রেজিন এবং এতে ঘন তরল বা হ্যাশিশ তেল নামক রেজিন অন্তর্ভুক্ত থাকে। গাঞ্জা, ফুল বা ফলের শীর্ষ, গাঁজার বীজ এবং পাতা বাদ দিয়ে তৈরি করা।

চরস বা গেঞ্জা দিয়ে কোনও পানীয় বা মিশ্রণ তৈরি করা যায়, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের রাতে খাওয়া হয়। এনডিপিএস আইনের অধীনে গাঁজা গাছ হতে ভাঙ্গ পাওয়া গেলেও ভাঙ্গকে গাঁজা হিসেবে ধরা হয় না।

এনডিপিএস অ্যাক্ট অনুযায়ী গাঁজা রেজিন এবং ফুলের বিক্রি ও উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবে গাঁজা গাছের পাতাগুলি এবং বীজের ব্যবহার আইনত বৈধ, তবে বিভিন্ন রাজ্যগুলোতে এগুলো উৎপাদনের জন্য রাষ্ট্রীয় বিধি মেনে উৎপাদন করতে হবে। অনুমোদন ব্যতীত গাঁজা গাছের কোন অংশ উৎপাদন বা চাষ করলে সেই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হবে।

আসামে গাঁজা এবং ভাঙ্গ নিষিদ্ধ আইন, ১৯৫৮ (২) অনুযায়ী গাঁজা ও ভাঙের বিক্রয়, দখল, ক্রয়, ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বোম্বাই নিষিদ্ধকরণ (বিপি) আইন, ১৯৪৯ (৩) অনুযায়ী মহারাষ্ট্রে লাইসেন্স ব্যতীত ভাঙ ও ভাঙ-যুক্ত পদার্থের উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

গাঁজা সেবন করে ধরা পড়লে যে শাস্তি হবে

ভারতে নিষিদ্ধ ঔষধ (আগাছা বা গাঁজা) রাখাও এনডিপিএস আইনের অধীনে একটি অপরাধ। ড্রাগগুলি যদি সেবনের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য যেমন ঔষধ তৈরি অথবা অন্য কোন গবেষনা কার্যে ব্যবহার করা হয় তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবেনা।

কিন্তু গাঁজা বা ভাঙ দিয়ে যদি কেউ নেশা করার চেষ্টা করে তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে একজন ড্রাগ এডিক্ট ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনার চেয়েও তার ড্রাগ-আসক্তি দূর করাকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়।

এজন্য গাঁজা বা ভাঙ বা মারিজুয়ানায় আসক্ত কোন ব্যক্তি যদি পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর স্বেচ্ছায় রিহ্যাব বা নেশা ছাড়ার জন্য চিকিৎসা করাতে রাজী হয় তবে তাকে শুধুমাত্র গাঁজা সেবনের জন্য গ্রেপ্তার বা আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবেনা।

শেষ কথা

মারিজুয়ানা, গাঁজা, ভাঙ এগুলো ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, অনুষ্ঠানে সেবন করা হয় বিধায় অনেকেই এটাকে বৈধ মনে করেন। প্রকাশ্যে গাঁজা বা ভাঙ সেবনকে ভারতে আইনত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে গাঁজার বীজ ও পাতা নেশাজাতীয় দ্রব্য হিসেবে স্বীকৃত নয়।

এছাড়া গবেষণা, ঔষধ তৈরি, এবং অন্যান্য ব্যতিক্রমী কাজে এগুলোর ব্যবহার আইনত দন্ডনীয় নয়। কিছু কিছু অঞ্চলে গাঁজা ও মারিজুয়ানার চাষ বৈধ। এগুলো ছাড়া গাঁজা বা মারিজুয়ানা চাষ এবং সেবন অবৈধ এবং আইনত দন্ডনীয়। আশা করি মারিজুয়ানা এবং গাঁজা সেবন যে ভারতে নিষিদ্ধ সে সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।

সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top