মোহরানা বা মোহর কি? তালাকের সময় মোহর দেওয়ার আইনি নিয়ম জানুন

মুসলিম আইন অনুসারে মোহরানা বা মোহর কি? তালাকের জময় মোহর দেওয়া কি জরুরি? এই বিষয়ে মুসলিম আইন কি বলে? জানুন তালাকের সময় মোহর দেওয়ার আইনি নিয়ম ও পদ্ধতি।

মুসলিম আইন কানুন অনুসারে বিভিন্ন রকমের বিষয়ের উপর নির্ভর করে তালাক প্রথা হয়ে থাকে। যেখানে মোহর শুধুমাত্র স্ত্রী পক্ষ পেতে পারেন, সেটা কে মোহরানা অথবা মোহর বলা হয়ে থাকে।

মোহর আসলে কি?

মুসলিম আইন কানুন অনুযায়ী মোহর অথবা যৌতুক, যার মানে হল সম্পত্তি অথবা টাকা পয়সা যা কিনা ভরণ পোষণের জন্য স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী পেয়ে থাকেন।

মোহরানা বা মোহর কি? তালাকের সময় মোহর দেওয়ার আইনি নিয়ম জানুন
মোহরানা বা মোহর কি? তালাকের সময় মোহর দেওয়ার আইনি নিয়ম জানুন

আর এই মোহর অথবা যৌতুক স্বামীর উপরে লাগানো হয়ে থাকে যা কিনা সেই স্বামী তার স্ত্রীকে সারা জীবনের মতো ভরণ পোষণ করার এবং সমস্ত দিক থেকে দেখভাল করার দায়িত্ব নিয়ে থাকেন।

সেই স্বামীর মৃত্যুর পর যাতে সেই স্ত্রী অসহায় না হয়ে পড়েন অথবা তালাকের মাধ্যমে বিয়ের সমাপ্তি না ঘটে সেই বিষয়টার জন্য মুসলিম আইন অনুযায়ী এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অপরাধী প্রক্রিয়া সংবিধান 1973 এর ধারা 125 অনুসারে রক্ষণাবেক্ষণের মাত্রা নির্বাচন করতে অথবা করার সময় মোহরের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভাবে মানা হয়ে থাকে।

তাছাড়া এই মোহর মুসলিম পার্সোনাল ল অনুসারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিভিন্ন মামলার ক্ষেত্রে ভারতের বিভিন্ন উচ্চ বিচারালয় এবং সুপ্রিম কোর্ট সম্বন্ধিত বিভিন্ন ধারণা প্রদান করে থাকে।

মুসলিম আইন অনুসারে তিন তালাক কি? কিভাবে হয় তালাক?

যদি তালাকের পরিস্থিতিতে স্বামী দ্বারা মোহরের টাকা না দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তালাক এর বৈধতা কি?

মুসলিম আইন কানুন অনুসারে স্বামী এবং স্ত্রী এর মধ্যে একটি বিশেষ বিষয় হলো এই তালাক আর মোহর। যা কিনা স্ত্রী এর ভর পাই করতে হবে স্বামীকে এবং সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভাবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়ে থাকে।

বিচারাধীন ভর পাই এর মামলাতে এই বিষয়টিকে অমান্য ঘোষিত করা হয়ে থাকে। যদি মোহর এর টাকা দেওয়া না হয়, তাহলে তালাক কোনভাবে সম্ভব নয়। একটি মোহর বিবাহিত মুসলিম মহিলাদের অধিকার বলতে পারেন।

তাছাড়া যদি কোন মহিলা এই মোহরের টাকা না পেয়ে থাকেন এবং তার স্বামী যদি না দিতে চান, সে ক্ষেত্রে সেই মহিলা তার নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেন।

মোহরের ভর পাই এর মামলাতে স্ত্রীর অধিকার কি?

১) মোহর ঋণ অথবা দেনা বলতে পারেন, আর স্বামী বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার আগে তার স্ত্রীকে এই অ্যামাউন্ট দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে থাকেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই সম্পত্তি অথবা মোহর না দেওয়া হয়, সেই স্ত্রী এর স্বামীর সাথে সহবাস করার বিরোধ করার অধিকার রয়েছে।

২) যদি স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি দখল করে থাকেন তাহলে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই দখল করে রাখা বজায় রাখতে পারবেন বা অধিকার রয়েছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত মোহরের ভর পাই না করা হয়ে থাকে।

৩) স্ত্রী স্বামীর উত্তরাধিকারীর জন্য স্বামীর উত্তরাধিকারীর মামলা করতে পারেন।

৪) মোহর হলো একটি আইনত এবং ব্যক্তিগত অধিকার, আকস্মিক অধিকার কখনোই নয়। এই রকম ভাবে স্ত্রীর মৃত্যুর পর ও তার উত্তরাধিকারীর এই সম্পত্তির দাবি করতে পারেন।

৫) যদি বিবাহের সময় যৌতুক অথবা মোহর এর ওপর সম্মতি না দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে আদালতে স্বামীর পরিস্থিতি স্ত্রীর সারা জীবনের খরচ, স্ত্রীর সম্পত্তি কে খেয়াল রাখার পাশাপাশি সমস্ত রকম খরচ এর অ্যামাউন্ট নির্ণয় করা যেতে পারে।

মুসলিম আইন কি? বিভিন্ন নিয়ম কানুন ও মুসলিম আইনের ঐতিহ্য

একজন স্ত্রী কে কি ধরনের মোহর দেওয়া যেতে পারে? 

একটি মোহর সাধারণত দুই রকমের হয়ে থাকে:-

শীঘ্র মোহর: এই মোহরের মানে হল যখনই বিবাহ সম্পন্ন হবে, সেখানে স্বামীর সই করার মধ্যে দিয়ে একটা এমাউন্টের টাকা অথবা কোন সম্পত্তি বিবাহ সম্পন্ন করার আগে স্ত্রীর নামে দিয়ে দেওয়া।

স্থগিত মোহর: এই মোহর সময় সাপেক্ষ বলা যেতে পারে, সেখানে স্বামীর মৃত্যুর মাধ্যমে অথবা বিবাহ বিচ্ছেদ এর সময় সেই স্ত্রীকে দেওয়া হয়ে থাকে। যেকোনো স্থগিত মোহর যা কিনা কোন অঘটন এর সময় অবৈতনিক হয়ে থাকে, যেটা আগের স্বামীর সম্পত্তির বিরুদ্ধে ঋণ হয়ে যেতে পারে।

একজন স্ত্রী মোহরের অধিকার ছেড়ে দিতে পারেন কি?

একজন স্ত্রী নিজের স্বামীর পক্ষ নিয়ে সেই মোহরের অধিকার ছেড়ে দিতে পারে। তাছাড়া স্বামীর প্রতি ভালবাসা দেখিয়ে যে, তার যেমন সম্পত্তি হতে পারে যে, যা কিছু স্বামীর আছে, সবকিছুই তো স্ত্রীর।

সেই মনোভাব নিয়ে অনেক স্ত্রী এই ভেবে মোহরের অধিকার ছেড়ে দিয়ে থাকেন। স্ত্রী নিজের নির্দিষ্ট মোহরের সম্পূর্ণ অথবা কেবলমাত্র একটি অংশ বাদ দিতে পারেন।

কথায় আছে ভালোবাসা কখনোই টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। তাই অনেক বুদ্ধিমত্তার সাথে এমন মুহূর্ত থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন, স্বামীর কাছ থেকে স্নেহ ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এমনটা করে থাকেন।

বেশিরভাগ মহিলা এই সামান্য কিছু অ্যামাউন্ট সারা জীবনের ভালোবাসার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। তাই যদি সামান্য কোন অ্যামাউন্ট অথবা সম্পত্তির জন্য মোহর আদায় করা হয়ে থাকে, তাহলে সেই স্বামী স্ত্রীর প্রতি একটা আলাদা মনোভাব সৃষ্টি হয়।

এর ফলে দাম্পত্য জীবন অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যেখানে মনের কোথাও না কোথাও একটা বিদ্বেষ তৈরি হয়, যার ফলে সে সম্পর্ক মধুর হওয়া ছাড়া তিক্ত হতে শুরু করে।

আর স্বামীর সবকিছুতেই যখন স্ত্রীর অধিকার রয়েছে, তখন সামান্য এই মোহর না নিলেই বা কি যায় আসে। সেই কারণে বেশিরভাগ শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমতী মহিলা মোহর অথবা এরকম যৌতুকের বিষয় বিশ্বাস রাখেন না। সারা জীবনের সমস্ত সম্পত্তি এবং স্বামীর সবটুকু ভালবাসা পেয়ে সারা জীবন সুখে শান্তিতে কাটাতে চান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top