ভারতে নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যাবহার এবং পান করার আইন ও শাস্তি

Liquor and Alcohol Drinking Laws in Bengali: ভারতনেশা জাতীয় দ্রব্য ও পানীয় ব্যাবহারের আইন কানুন ও নিয়ম | ভারতে মাদক দ্রব্য এবং মাদক দ্রব্য পান করার আইনি নিয়ম | আসুন জেনে নিন ভারতে মাদক দ্রব্য পান করার জন্য শাস্তি ও আইনি নিয়ম।

নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সেটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আপনি কি জানেন, মানব শরীরে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে ১৩ টি খনিজ পদার্থ প্রয়োজন পড়ে সেটা কিন্তু এই মাদকদ্রব্যের মধ্যেই পাওয়া যায়। তাছাড়া আপনার এটাও জানতে হবে যে, এই মাদক দ্রব্যের কারণে ভারতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে।

ভারতে মাদক দ্রব্যের উপর আইন সম্বন্ধে কোনরকম নির্দিষ্ট আইন-কানুন নেই। আর এটি একটি রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সেটা হতে পারে মাদক দ্রব্য সেবন করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বয়স, তার সাথে মাদক দ্রব্য বিক্রি করার নিয়ন্ত্রিত কোন আইন কানুন।

ভারতে নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যাবহার এবং পান করার আইন ও শাস্তি
ভারতে নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যাবহার এবং পান করার আইন ও শাস্তি

নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করার জন্য সেই সমস্ত জায়গাকে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে। যেখানে রাজ্য তে এই সমস্ত পানিয় ও মাদক দ্রব্য বিক্রি করা হয়ে থাকে যেখানে কিছু রাজ্যে ভাড়া করা জিনিসপত্র, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ফার্ম হাউস এ সমস্ত জায়গাতে নেশা জাতীয় পানীয় বিক্রি করা হয়।

তাছাড়া এমন কিছু পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে বা জায়গা রয়েছে যেখানে বিশেষ আইনের উপর ভিত্তি করে সমুদ্র বিচে, হাউস বোর্ড এর ওপর এই সমস্ত মাদক জাতীয় দ্রব্য এবং পানীয় বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে। কিছু রাজ্যতে সম্পূর্ণ রূপে এসমস্ত পানিও বিক্রি করার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ভারতে নেশা জাতীয় পানীয় এর আইন কানুন:

১) মাদক দ্রব্য এমন একটি জিনিস যার চাহিদা আর বিক্রি কখনোই কমে যায় না। বিপরীতে সেটা সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে। ভারতে মাদক দ্রব্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের আইন-কানুন আছে। তবে সেখানে একই রকম বিধি নিষেধ থাকে না বললেই চলে।

২) ভারতে এই সমস্ত মাদক দ্রব্য অথবা মাদক পানীয় বিষয়ে ভারতের সংবিধানের ৭ অনুসূচী অনুসারে রাজ্য সূচিও শামিল রয়েছে। এইভাবে মাদক দ্রব্য বিক্রি আর আর প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত করার জন্য আইন কানুন আলাদা আলাদা রাজ্যে আলাদা আলাদা রকমের হয়ে থাকে।

৩) এছাড়া এই নেশা জাতীয় পানীয় বিক্রি করার জন্য লাইসেন্স এর প্রয়োজনীয়তা পড়ে। আর কিছু বিশেষ রাজ্যেতে এর চাহিদা অনেক খানি। সেই কারণে উপভোক্তা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।

সাধারণত এই সমস্ত পানীয় ও মদের দোকান, ক্লাব, ডিসকো, বার, পাব, হোটেল, রেস্তোরাঁ, নেশা জাতীয় পানীয়, বিক্রি করার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়ে থাকে।

৪) এছাড়াও সমুদ্র বিচে হাউসবোটে পর্যটক কেন্দ্র নেশা জাতীয় পানীয় বিক্রি করার জন্য লাইসেন্স পাওয়া যেতে পারে। মাদক দ্রব্য বিক্রি করার জন্য বিক্রেতার কাছে লাইসেন্স থাকাটা অবশ্যই রূপে প্রয়োজনীয়। তাছাড়া এই মাদক দ্রব্য বিক্রি করা অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে।

নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ড্রাইভিং করার আইন কানুন: 

মোটর-যানবাহন অধিনিয়ম 1988 এ ধারা 185 অনুসারে যদি কোন ব্যক্তি নেশা জাতীয় পানীয় পান করে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কোন যানবাহন চালিয়ে থাকেন, অথবা চালানোর চেষ্টা করেন, আর সেক্ষেত্রে রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা বি এ এল 3 মিলিগ্রাম এর বেশী হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রতি 100 মিলিলিটার রক্তে পাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এই বিষয়ে জানা যেতে পারে।

যে ব্যক্তিটি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন এবং ড্রাইভিং করছেন তাহলে কিন্তু সেই ব্যক্তি যে অবশ্যম্ভাবী যেটা ছয় মাস পর্যন্ত জেল হতে পারে। তার সাথে সাথে জরিমানাও রয়েছে যা কিনা ২,০০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হতে পারে। সাথে সাথে জেল-জরিমানা দুটো একসাথেও হতে পারে।

এই আইন মাদক দ্রব্য ছাড়াও অন্য কোন ওষুধপত্র এর উপরেও জারি করা হয়েছে। যার প্রভাবে ব্যাক্তি যানবাহনের উপরে উচিত নিয়ন্ত্রণ রাখার সামর্থ্য রাখতে পারে, যার ফলে কোনো রকম দুর্ঘটনা যেন না ঘটে।

এছাড়াও আগের এই একই অপরাধের জন্য তিন বছরের মধ্যে সেই অপরাধীর দ্বারা মাদক দ্রব্য পান করে গাড়ি চালানোর অপরাধ যদি আবার দ্বিতীয়বার করে থাকেন, তাহলে সেই অভিযুক্ত অপরাধীকে জেল এর সময়সীমা দুই বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

তার সাথে সাথে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। যেকোনো একটা হতে পারে, তার সাথে সাথে জেল জরিমানা দুটোই হতে পারে।

এছাড়া বিশৃংখল ভাবে গাড়ি চালানো যার মধ্যে এইভাবে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় গাড়ি চালানোও কিন্তু সামিল রয়েছে। যা কিনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ভারতীয় দণ্ড বিধান 1860 ধারা 279 অনুসারে দণ্ডনীয় অপরাধ।

জনবহুল জায়গাতে মাদক দ্রব্য গ্রহণ করা:

জনবহুল জায়গাতে যদি কোন ব্যক্তি মাদকদ্রব্য সেবন করে থাকেন, তাহলে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা লাগানো যেতে পারে। আর যদি সেই অপরাধী নেশাগ্রস্ত অবস্থায় উপদ্রব করতে থাকেন, তাহলে জরিমানা ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তার সাথে ৩ মাসের জেল ও হবে।

যে সমস্ত রাজ্য তে মাদক দ্রব্য গ্রহণ করার বয়স 18 বছর: 

১) আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ উৎপাদন নিয়ম 2012 ধারা 24 উৎপাদন নীতি-নিয়ম 14

২) হিমাচল প্রদেশ মাদক দ্রব্য লাইসেন্স নিয়ম 1986 নিয়ম 16।

৩) কেরল অধিনিয়ম 1077 ধারা 15 A আর 15 B।

৪) মিজোরাম মাদক দ্রব্য নিষেধ আর নিয়ন্ত্রণ বিধেয়ক 2014 ধারা 58।

৫) পন্ডিচেরি, পন্ডিচেরি 1970 ধারা 35।

৬) রাজস্থান 1950 ধারা 22।

৭) সিকিম, গৃহ রক্ষক বিধায়ক 1992 খন্ড 20।

যে সমস্ত রাজ্য তে মাদকদ্রব্য সেবন করার বয়স 21 বছর: 

  • অন্ধ্রপ্রদেশ বিদেশি মাদকদ্রব্য ও ভারতীয় মাদক দ্রব্য, বিয়ার এর ক্ষেত্রে হোলসেল ব্যবসা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বেনিয়ম অধিনিয়ম 1993।
  • অরুণাচল প্রদেশ
  • ছত্রিশগড়
  • দাদরা
  • গোয়া
  • জম্মু এন্ড কাশ্মীর
  • ঝাড়খন্ড
  • কর্ণাটক
  • উড়িষ্যা
  • তামিলনাড়ু
  • তেলেঙ্গানা
  • ত্রিপুরা
  • উত্তরপ্রদেশ
  • উত্তরাখণ্ড
  • পশ্চিমবঙ্গ

যে সমস্ত রাজ্যের মাদকদ্রব্য সেবন করার বয়স 25 বছর: 

  • চন্ডিগড়
  • দিল্লি
  • হরিয়ানা
  • মেঘালয়
  • পাঞ্জাব

যে সমস্ত রাজ্যে মাদক দ্রব্য সেবন করা অবৈধ:

  • বিহার
  • গুজরাট
  • লাক্ষাদ্বীপ
  • মনিপুর
  • নাগাল্যান্ড

এই বিষয়ে একজন উকিল আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারেন?

আইনের ভাষা অনেকের কাছে একেবারে না বোঝার মত উপস্থাপিত হয়। সেই জন্য এই রকম মাদক দ্রব্য জনিত কোন অপরাধের কাছে আইনী পদক্ষেপ অনেক সময় মানুষের বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে। তাছাড়া আইন বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন রকম ভাবে লক্ষ্য করা যায়।

তাই এই বিষয়ে যদি কোনরকম সমস্যা তৈরি হয়, তাহলে একজন উকিল নিযুক্ত করতে পারেন। যিনি তার অভিজ্ঞতা দিয়ে সমস্ত রকম সমস্যার সমাধান ঘটিয়ে আপনাকে সব দিক থেকে সহযোগিতা করতে পারবেন।

একজন দক্ষ উকিল আপনাকে এই বিষয়ে ভালো পরামর্শ দিয়ে কোনরকম অপরাধমূলক কাজ এর বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য বিষয়কে সহজ করে তুলে আপনার সমস্যা সমাধান করতে পারবেন।

এছাড়া এখন ডিজিটাল যুগ তাই অনলাইনের মাধ্যমে কোন দলের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন তার সাথে সাথে পরামর্শ নিতে পারবেন এ বিষয়ে।

মাদক দ্রব্য গ্রহণ করা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনত হলেও বা লাইসেন্স থাকাকালীন মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে শুরু করে বিক্রি করা এবং এর প্রচলন থাকলেও বা বিজ্ঞাপন চললেও এটি শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর বিষয়।

যা মাদক দ্রব্য ব্যবহার অথবা পান করার ফলে আপনার শরীরে অনেক সমস্যা তৈরি হতে পারে। এছাড়া ভারতে প্রতিবছর এই মাদকদ্রব্য সেবন এর জন্য কত মানুষ মৃত্যুবরণ করেন তা আমাদের কিছুটা হলেও নিশ্চয়ই জানা আছে।

এছাড়া মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে অথবা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে অনেকেই জেলে গিয়েছেন এবং বেশ ভালো এমাউন্টের টাকা জরিমানা হিসেবে দিতে হয়েছে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা অবশ্যই জরুরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top