Legal status of Live-in Relationships in Bengali: লিভ ইন রেলেশনশিপ কি? ভারতে লিভ ইন রেলেশনশিপ বৈধ না অবৈধ? জানুন লিভ ইন রেলেশনশিপ নিয়ে ভারতের আইনি নিয়ম।
আমরা সবাই জানি যে বিবাহ একটি সুন্দর পবিত্র সম্পর্ক, বলতে গেলে দুটি মানুষের ভালোবাসার পবিত্র পরিনাম। যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিবাহ একটি আইনি পরিণাম হিসেবে গণ্য করা হয় সমাজে। তাছাড়া লিভ ইন সম্পর্ক ভারতীয় পরম্পরা অনুযায়ী নয়, এটা কোন বিদেশী এবং পশ্চিমের দেশের গ্ল্যামার দুনিয়ার অন্তর্গত।
তবে ইদানিং কিছু বছর আগে থেকে লিভ ইন এর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভাবে দেখা হয়েছে। যেখানে এই বিষয়ে আদালতে প্রগতিশীল রূপে দেখা হয়ে থাকে লিভ ইন সম্পর্ককে।
সুচিপত্র
লিভ ইন সম্পর্ক আসলে কি ?
বর্তমানে এই লিভ ইন এর মানে নতুন করে বোঝাতে হবে না নিশ্চয়ই, যে সম্পর্কে একটি অবিবাহিত কাপল অথবা জুটি একই ছাদের নিচে একই সঙ্গে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বসবাস করতে পারেন। যা কিনা বিবাহ সম্পর্কের মতোই দেখায় কিন্তু এটা একটা অন্যরকম সম্পর্ক হিসেবে মানা হয়ে থাকে।
যেখানে বিয়ের কোন নাম গন্ধই নেই। এইভবে এই সম্পর্কের মধ্যে একজন মহিলা ও একজন পুরুষ তাদের ইচ্ছা অনুসারে একই জায়গায় একই সঙ্গে দম্পতির মত বসবাস করতে পারেন বিয়ে না করেও।
তাছাড়া এই সম্পর্ক বিবাহ হিন্দু বিবাহ অধিনিয়ম 1955 অথবা যে কোনো অন্য বৈধ আইন অনুসারে মান্যতা প্রাপ্ত করতে পারে নি।
যেখানে বিবাহ একটি সামাজিক প্রথা অনুযায়ী সকলেই জানতে পারেন যে এই দম্পতি একে অপরকে বিবাহ করেছেন। তাছাড়া লিভ ইন সম্পর্ক সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং স্ব-ইচ্ছায় সম্পন্ন করা যায়।
কেবলমাত্র ঘরেলু হিংসা অধিনিয়ম 2005 থেকে মহিলাদের সংরক্ষণ অনুসারে আইন সংরক্ষণ আর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রদান করা হয়ে থাকে। যেখানে একজন নিপীড়িত জীবিত সাথীকে ছেড়ে দেওয়া অথবা লক্ষ্যভ্রষ্ট করার অধিকার থেকেই যায়।
ভারতে লিভ ইন এর সম্পর্কের আইনি পরিস্থিতি:
ভারতে এমন কোনো আইন নেই লিভ ইন সম্পর্কে। কিন্তু আমাদের আদালতে এমন সম্পর্ক কে কিছু মান্যতা দেয়া হয়ে থাকে।
যেখানে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা অর্থাৎ একজন স্বামী ও স্ত্রী এর রূপে একসাথে থাকতে পারবেন, কোনরকম বিবাহ ছাড়াই, এটা কিন্তু আইন হিসেবে মানা হয়ে থাকে।
যতক্ষণ না পর্যন্ত এই লিভ ইন সম্পর্কে বিপরীত কোন কিছু স্পষ্টরূপে প্রমাণিত না হয়ে থাকে, যে এই সম্পর্ক একটি বৈধ বিবাহ এর পরিণাম অনুসারে তারা দুজন একসাথে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে থাকছেন কি না।
স্বাধীনতার পর থেকে একটি মামলার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বৈধ বিবাহ হিসাবে লিভ ইন সম্পর্ককে প্রাধান্য দিয়েছে। এবং বলা যেতে পারে যে এই লিভ ইন সম্পর্ক কোনরকম অবৈধ সম্পর্ক নয়।
লিভ ইন সম্পর্কের মধ্যে মহিলা সঙ্গীর অধিকার:
ভারতীয় আদালত বিভিন্ন মামলাতে এই নির্ণয় দিয়েছেন যে লিভ ইন সম্পর্কের মধ্যে মহিলা সাথীর অধিকার ও রক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে পুরুষ সাথী এবং সেই মহিলা সাথীর, অনেক রকম অধিকার ও থাকতে পারে। ঘরেলু হিংসা অধিনিয়ম 2005 মহিলাদের সুরক্ষা এবং পরবর্তীতে তাকে বিবাহ করার মতো প্রতিশ্রুতি প্রদান করা।
মহিলা এবং বাল বিকাশ মন্ত্রণালয় এর আবেদন অনুযায়ী মহিলাদের জন্য রাষ্ট্রীয় আয়োগ সি আর পি সি এর ধারা 125 অনুসারে রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার এর জন্য লিভ ইন মহিলা ভাগীদার কে শামিল করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
লিভ-ইন সম্পর্কের মধ্যে জন্ম নেওয়া বাচ্চার অধিকার:
লিভ ইন সম্পর্কের মধ্যে যদি কোন বাচ্চা জন্ম নিয়ে থাকে, তাহলে সেই বাচ্চার অধিকার সম্বন্ধিত আইন এখন অস্পষ্ট নয়, হিন্দু বিবাহ অধিনিয়ম 1955 অনুসারে এই সম্পর্ক বিয়ের বাইরে হওয়া সত্বেও এই সম্পর্কের মধ্যে জন্ম নেওয়া বাচ্চার অধিকার সম্পর্কে সম্পূর্ণ রূপে বৈধ হিসাবে গণনা করা হয়েছে, তবে বাচ্চর অধিকার নিয়ে আইনি অধিকার থাকলেও এই সম্পর্ক কখনোই বিবাহ সমতুল্য করা সম্ভব নয়।
আর সেই কারণে লিভ ইন সম্পর্কের মধ্যে জন্ম নেওয়া বাচ্চার অধিকার সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই অর্থাৎ সেই বাচ্চার ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি এখনো পর্যন্ত ধন্দ্বের মধ্যেই রয়েছে।
তাছাড়া ইদানিং সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলাতে জানিয়েছে যে, লিভ ইন সম্পর্কের মধ্যে জন্ম নেওয়া বাচ্চার বাবা মায়ের সম্পত্তির অধিকার সেই বাচ্চার থাকতে পারে। তবে হিন্দু পিতৃ সাম্রাজ্যঃ সম্পত্তিতে তার কোন অধিকার আছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।
যে কোনো সম্পর্ক একটি সামাজিক স্বীকৃতি পেলে তার মর্যাদা আলাদা রকমের হয়। যে কোনো ভালোবাসার সম্পর্ক এর পরিণতি যদি সামাজিক বিবাহ, আইনি বিবাহ হয়ে থাকে তাহলে সবদিক থেকে সুরক্ষা ও ভবিষ্যতেও কোনো রকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় না। তার সাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনেকটাই সুরক্ষিত থাকে। তাদের আইনি অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না।
তা সত্ত্বেও অনেকেই এই বিবাহ বিষয়টির উপরে একেবারে বিশ্বাস রাখেন না, সেই কারণে লিভ ইন সম্পর্ককে বেছে নিয়েছেন। এমনকি সম্পর্কের মধ্যে বেশ কিছুদিনের মধ্যে দুজন মানুষের ছাড়াছাড়ি এবং সম্পূর্ণরূপে দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার ঘটনা নেহাত কম নয়।
তার সত্বেও লিভ ইন সম্পর্কে মর্যাদা অথবা মান্যতা দিয়েছে আদালত। সেই কারণে বর্তমানে লিভ ইন এ থাকা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
তাছাড়া অনেকেই মনে করেন যে, একটা মানুষকে বিয়ে করার আগে তাকে ভাল করে চিনে এবং তার সম্বন্ধে আরও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য লিভ-ইন সম্পর্ক এ থাকাটা বেশ লাভ দায়ক অর্থাৎ একটা মানুষকে ভালোভাবে জানার জন্য তার সাথে সময় কাটানো টা জরুরী।
তবে অনেকেই বিবাহ না করেই শুধুমাত্র লিভ ইন সম্পর্কে থেকে সেই সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে আবার অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে থাকেন, এমন ঘটনা ভারতে বহুবার ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে। তাছাড়া সমাজ লিভ ইন সম্পর্ককে বাঁকা চোখে দেখে থাকে, তাই নয় কি ! যদিও এই লিভ ইন সম্পর্কে আদালত কোনরকম বিধি-নিষেধ জারি না করে থাকলেও।