সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রোল হলে কি করবেন? ট্রোলিং বিরুদ্ধে আইন জানুন

Legal Rules and Measures Against Trolling in Bengali: সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ ট্রোল করলে কি করবেন? কিভাবে ট্রোলিং-এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন | ট্রোল থেকে ভয় না পেয়ে আইন ও নিয়ম জানুন যা আপনাকে ট্রোলিং থেকে বাঁচাতে পারে।

বর্তমান এখন ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ধরনের মিমস থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের ট্রোল হয়ে থাকে। জেনে-বুঝে শুধুমাত্র মজা করার জন্য এই ট্রোল বাস্তবে খুবই অস্বস্তিকর বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রতিনিয়ত ও সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে বিনা কোন কারণে মানুষকে ট্রোলের শিকার হতে হচ্ছে।

সেটা কোন সাধারণ ব্যক্তি হোক অথবা সেলিব্রিটি। প্রতিনিয়ত, প্রতিদিন বলতে গেলে এই ট্রোল থেকে কোন ব্যক্তিই দূরে সরে যেতে পারবেন না। কিন্তু এটাও জানা জরুরী যে, আপনি আইন অনুসারে ট্রোল থেকে কিভাবে বাঁচতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রোল হলে কি করবেন? ট্রোলিং বিরুদ্ধে আইন জানুন
সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রোল হলে কি করবেন? ট্রোলিং বিরুদ্ধে আইন জানুন

চ্যাট শো “কফি উইথ করন” এর এ এপিসোড যদি মনে করতে পারেন, তাহলে দেখতে পারবেন যে সেখানে আলিয়া ভাট বলেছিলেন যে, “পৃথ্বীরাজ চৌহান ভারত এর প্রধানমন্ত্রী?” আর এই একটি ভুল উত্তরের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে অগণিত ভাবে ট্রোল হতে হয়েছে। সাধারণ জনতার কাছে এটা মজাদার হলেও, এমন পরিস্থিতি কিন্তু আলিয়া ভাটের কাছে একটি কঠিন পরিস্থিতি ছিল।

ইন্টারনেট ট্রোল কে হতে পারে?

ট্রোল সাধারণত সেই মানুষ হয়ে থাকেন, যারা সোশ্যাল মিডিয়া আর অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের উপরে অপমানজনক আর টিপ্পনী জাতীয় পোস্ট করার মধ্যে দিয়ে কেবল মাত্র অন্য কোন মানুষকে হয়রানি করার জন্য এমন ট্রোল করা হয়ে থাকে।

এই ধরনের টিপ্পনী কথা বার্তা সোশ্যাল মিডিয়া অথবা অন্য কোন জায়গাতে ট্রোলিং দ্বারা অপর ব্যক্তির ভাবনাকে আঘাত করতে পারে। ভাবনা কে আঘাত করার জন্য দুর্ব্যবহার পূর্ণ উদ্দেশ্যের সাথে পোস্ট করা হয়ে থাকে।

আর সেই ব্যক্তির রাগের পরিসীমা বাড়ানো হয়ে থাকে। তার সাথে সাথে সেই ব্যক্তিকে উত্তেজিত করা হয়ে থাকে। এমন মিমস বানানো হয়, যেখানে সমস্ত সাধারণ মানুষের ধ্যান আকর্ষণ করা হয়। তার সাথে সাথে দৃষ্টি আকর্ষণ তো বটেই।

ট্রোল আপনার পরিবার, বাচ্চা এবং বন্ধু-বান্ধবের সম্পর্কে অপমানজনক আর অশ্লীল বার্তা, ব্যক্তিগত হামলা, আর মিমস পাঠানো থেকে শুরু করে যেকোনো সীমা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। যতদূর পর্যন্ত না মৃত্যুর হুমকি পাঠানো হচ্ছে।

সবথেকে বেশি ট্রোলিং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট যেমন ধরুন, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ব্লগ, ই-মেইল, ইউটিউব ভিডিও, এই সমস্ত প্লাটফর্মের উপর হয়ে থাকে।

ট্রোলিং কি দন্ডনীয় অপরাধ?

এই সম্পর্কে কোনরকম বিশিষ্ট আইন কানুন যদিও নেই। তবে এই সীমা এতটাই বাড়তে শুরু করেছে যে, ভারতীয় আইন যেমন ধরুন ভারতীয় দন্ডবিধি আইন 1860 এর সূচনা সম্বন্ধিত অধিনিয়ম আই টি অধিনিয়ম 2008 একটি অপরাধমূলক বিষয় হিসেবে ট্রোল কে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে কোনো ব্যক্তিকে ট্রোল করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

আপনার জানাটা জরুরী যে, এই ট্রোলিং এর বিরুদ্ধে শুধুমাত্র চুপচাপ বসে না থেকে, আপনি আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন। অনলাইনে সমস্ত মিমস এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আপনাকে অনেক খানি সহযোগিতা করবে এই আইন।

আই টি (IT) অধিনিয়ম: 

এটি কোন ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান করতে পারে, যা কিনা জেনে বুঝে অথবা সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক কোন ব্যক্তিকে নিজের ব্যক্তিগত ছবিকে প্রকাশিত করা অথবা স্থানান্তরিত করা ধারা 66E আইটি অধিনিয়ম অনুসারে কোন ব্যক্তির গোপনীয়তাকে যদি লংঘন করা হয় তার বিনা অনুমতিতে, তাহলে সেটি একটি অপরাধ বলে গণ্য করা হয়।

এইজন্য যদি কেউ ফটো নিয়ে থাকেন আর যদি ভিডিও রেকর্ড করে থাকেন তাহলে কিন্তু আপনার অনুমতি ছাড়া নিজের কোন ক্ষেত্রে সেই ছবি অথবা ভিডিও পোস্ট করতে পারবেন না অথবা কোথাও শেয়ার করতে পারবেন না। না হলে ওই ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত জেল হেফাজতে কাটাতে পারেন।

তার সাথে জরিমানা আছে দু লাখ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া যদি পরিস্থিতি অনেকটা জটিল হয়ে ওঠে, তাহলে তিন বছরের কারাবাস তার সাথে সাথে দু লাখ টাকা জরিমানা দুটো একসাথেই হতে পারে।

ইন্টারনেটে যৌন বিষয়ক আপত্তিজনক বিষয় পোস্ট করা:

যদি কোন ব্যক্তি ইলেকট্রনিক মাধ্যম থেকে যেকোনো যৌন সামগ্রীকে ইন্টারনেটে পোস্ট করে থাকে তাহলে তাকে ধারা 67 আইটি অধিনিয়ম অনুসারে 10 লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। তার সাথে তিন বছরের জেলও হতে পারে। একজন অপরাধীর একটি জরিমানার সাথে সাত বছরের জেল ও পর্যন্ত হতে পারে।

ভারতীয় দণ্ডবিধি আইপিসি: 

যৌন উৎপীড়ন অথবা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট: 

যখন সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর কোন ব্যক্তি দ্বারা খুবই জঘন্য মিমস পোস্ট করা হয়ে থাকে, তাহলে ধারা 354 আইপিসি অনুসারে সেই ব্যক্তির এক বছরের জেল আর জরিমানা দুটো একসাথে দেওয়া যেতে পারে তার শাস্তি হিসেবে।

এতে একজন মহিলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অশ্লীল সামগ্রী পোস্ট করা অথবা মেসেজ করা বা বলতে পারেন কোনরকম খারাপ উদ্দেশ্য পাঠানো, সে ক্ষেত্রে তিন বছরের জেল এবং জরিমানা একসাথে হতে পারে।

যদি কোন ব্যক্তি নিজের কোনো কাজের ক্ষেত্রে কোন মহিলার ছবি দেখে থাকেন অথবা হাতে করে নিয়ে থাকেন আর সেই ছবি অথবা ভিডিও সেটা পোস্ট করে থাকেন, তাহলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধারা 354 আইপিসি অনুসারে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

যদি কোন ব্যক্তি কোন মহিলার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে থাকেন, আর তার ইচ্ছে না থাকা সত্বেও কোন ব্যক্তিগত কথাবার্তা যদি করা হয়ে থাকে, আর ইন্টারনেট ইমেইল অথবা অন্য ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে তাকে হ্যারাসমেন্ট করা হয়, তাহলে ধারা 354 অনুসারে পিছু নেওয়ার অপরাধে সেই ব্যাক্তির জেলের সাজা হতে পারে তিন বছর পর্যন্ত। জেলও হবে জরিমানার সাথে। আর যদি এই ঘটনা জারি থাকে সে ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি কে পাঁচ বছর পর্যন্ত জরিমানার সাথে জেল এর সাজা হতে পারে।

আবার যদি কোন মহিলার সম্মানহানি করার মতো কোনো পোস্ট করা হয়ে থাকে, যেমন ধরুন একজন ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়াতে যেকোনো ঈশারার মধ্য দিয়ে কোন বস্তুর উপরে যৌন মিমস সেটা ছবি হতে পারে, ভিডিও হতে পারে, যদি পোস্ট করে থাকেন, আর সেটা যদি কোন মহিলা দেখেন, বা তাকে দেখানোর উদ্দেশ্যেই পোস্ট করা হয়, সে ক্ষেত্রে ধারা 506 আইপিসি অনুসারে দণ্ডিত করা হয়। আর তার সাথে জরিমানা তো রয়েছেই।

মানহানি: জেনেবুঝে কারোর মানহানি যদি করা হয়, তার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যদি ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে 499 আইপিসি অনুসারে মানহানির মামলা তে সেই ব্যক্তিকে দণ্ডিত করা যেতে পারে।

অপরাধমূলক হুমকি: যে কোন ব্যক্তি যে কোন মহিলার ক্ষতিসাধন করার জন্য হুমকি দিয়ে থাকেন, নিজের পরিচয় গোপন করে, তাহলে কিন্তু তারা 507 আইপিসি অনুসারে দুই বছরের জেল হবে। 

ট্রোলিং এর বিষয়ে আপনার উকিলের প্রয়োজনীয়তা কেন পড়বে?

অনলাইনে ট্রোলের মধ্যে দিয়ে কারোর জীবন দুর্বিষহ করে তোলে, তার সাথে তার কর্ম ক্ষেত্রে, তার প্রতি প্রতিষ্ঠা, জীবন যাত্রা তে অনেকখানি আঘাত করে থাকে। তাই এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আপনি একা কখনোই পারবেন না।

সে ক্ষেত্রে আইন অনুসারে আপনি একজন ভালো উকিল নিযুক্ত করতে পারেন এবং সেখান থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। তিনি খুবই ভালো পরামর্শের মধ্যে দিয়ে আপনাকে এমন খারাপ পরিস্থিতি থেকে খুবই সহজ ও কম সময়ের মধ্যে বার করে আনতে পারবেন।

এছাড়া আইন অনুসারে আপনার এই বিষয়ে অধিকার সম্পর্কে অনেকটা ধারণা হবে। আর আপনার চিন্তাধারার বা চিন্তা করার ক্ষমতা অনেকখানি বৃদ্ধি পাবে।

সে ক্ষেত্রে আপনাকে একজন সক্ষম উকিল নিযুক্ত করতে হবে। যিনি কিনা আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ এর মধ্যে দিয়ে এমন একটি জটিল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।

ট্রোলিং এমন একটি জিনিস যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সাইবার অপরাধ বলা যেতে পারে, ট্রোল ইন্টারনেটের উপর অপরাধ এর একটি নতুন প্রজন্ম বলতে পারেন।

কেননা যেখানে ঘৃণা ভরা পোষ্টের মধ্যে দিয়ে অনলাইনে অপরাধমূলক কাজের মধ্যে দিয়ে, শেয়ার করার মাধ্যমে কিছু মানুষের খুশি তো মেলে, কিন্তু তার জন্য কিছু মানুষের জীবন একেবারে শেষ হয়ে যায়। তাই ট্রোলিং এর বিষয়টা একেবারেই এড়িয়ে যাওয়া চলবে না। তার বিরুদ্ধে লড়াই করাটা জরুরী।

তাই আপনার সাথে যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে troll’s থেকে একেবারেই ভয় পাবেন না। এর বিরুদ্ধে আপনি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন, দেখবেন অপরাধী খুবই কম সময়ের মধ্যে জেল হেফাজতে থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top