লিভ ইন রিলেশনশিপ এর অধিকার কি দেওয়া হয়েছে? আইনি নিয়ম ও সঠিক পদ্ধতি কি লিভ ইন রিলেশনশিপ এ থাকার জন্য? জানুন লিভ ইন রিলেশনশিপ এর অধিকার ও আইনি নিয়ম সম্পর্কে সবকিছু।
ভারতে লিভ ইন রিলেশনশিপ এর মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যেখানে বিবাহ ছাড়া প্রেমিক-প্রেমিকা একসাথে একই ছাদের নিচে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
আর এই ক্ষেত্রে কিন্তু অনেক খানি দায়িত্ব এবং কর্তব্যও শামিল রয়েছে। যে বিষয়ে অবগত থাকা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সুচিপত্র
লিভ ইন রিলেশনশিপ আসলে কি?
১) একটি অবিবাহিত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং একটি অবিবাহিত প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা একসাথে থাকার মৌলিক প্রকারের সম্পর্কের দিক থেকে এই সম্পর্ককে রিলেশনশিপ অথবা লিভ ইন রিলেশনশিপ বলা হয়।
২) তাছাড়া বলা যেতে পারে, অবিবাহিত প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার সাথে একজন বিবাহিত ব্যক্তির ঘরে প্রবেশ।
৩) একজন বিবাহিত মহিলার সাথে একজন বিবাহিত প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ঘরোয়া প্রবেশ।
উপরে দেওয়া দুটি সম্পর্ক জীবন সাথী ছাড়া অবিবাহিত ব্যক্তি ইচ্ছা অনুসারে সম্ভব অনুসারে হয়ে থাকে। আর ভারতীয় দণ্ডবিধি আই পি সি ধারা 497 অনুসারে 5 বছর পর্যন্ত জেল হেফাজতের সাজা হয়ে থাকে।
একজন অবিবাহিত প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা আর একজন বিবাহিত পুরুষ এর মধ্যে সহবাসের মধ্যে দিয়ে বৈবাহিক স্থিতিকে জানা ছাড়া এটাও কিন্তু আই পি সি অনুসারে দণ্ডনীয় অপরাধ।
লিভ ইন রিলেশনশিপ কি আইনি?
বিভিন্ন রকমের নির্ণয়ের মধ্যে দিয়ে সর্বোচ্চ বিচারালয় অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করেছে যে যখন একজন দম্পতি কয়েক বছর থেকে স্বামী স্ত্রীর মত একই সাথে একই ছাদের নিচে বসবাস করেন, আর এমন পরিস্থিতিতে যদি তাদের কোনো বাচ্চা থেকে থাকে, তাহলে আইন প্রণালী এটা বিচার করে যে, সেই প্রেমিক-প্রেমিকা বিবাহিত ছিলেন আর এই জন্য বৈবাহিক আইন জারি করা হয়।
এছাড়া একটি আলাদা মামলাতে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে, কিছু কাপল প্রেমের মধ্যে দিয়ে আর এক সাথে থাকার ইচ্ছা প্রকাশের মধ্যে দিয়ে এটা প্রমাণিত হয় যে, এক সাথে থাকার এই সম্পর্ক তাদের জীবনের একটি অধিকার। তাছাড়া কোনো “পাপ” নয়। যার মধ্যে দিয়ে লিভ-ইন রিলেশনশিপের ক্ষেত্রে বৈধতা প্রাপ্ত হয়ে থাকে।
মহিলাদের সুরক্ষা কিভাবে হবে?
লিভ-ইন রিলেশনশিপের বৈধ করার জন্য প্রথমে মহিলাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন এবং সুরক্ষা প্রদান করতে হবে। বিচারালয় এর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল এই যে, এই বিষয়টি কিছু আইনের দিক থেকে বাড়ানো হয়েছে, উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে,
মহিলা সাথীর রক্ষণাবেক্ষণ:
ভারতীয় আইন অনুসারে রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার কেবল মাত্র স্ত্রী দের সমস্ত রকম ব্যক্তিগত পরিবার / তালাক আইন অনুসারে উপলব্ধ হয়ে থাকে।
আর যখন থেকে কোন ধর্ম অবমাননা দিয়ে থাকে, লিভ ইন রিলেশনশিপ মহিলাদের যে কোন উপায় স্বীকার না করার ক্ষেত্রে ভারতীয় বিচারালয়ের অপরাধ মূলক প্রক্রিয়া সংবিধান সি আর পি সি ধারা 125 অনুসারে মহিলা অংশীদারকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য বলা হয়ে থাকে।
ঘরোয়া অত্যাচার:
ঘরোয়া অত্যাচার অধিনিয়ম এর মৌখিক, শারীরিক, আর্থিক এবং মানসিক শোষণ, সমস্ত প্রকার অপমানজনক বৈবাহিক সম্বন্ধের বিরুদ্ধে মহিলাদের সুরক্ষা প্রদান করার জন্য এই আইন করা হয়েছে। কিন্তু ধারা 2 (f) অনুসারে এটি বিবাহিত অবিবাহিত জুটি দুই পক্ষের উপরে কিন্তু জারি করা হয় অর্থাৎ বিবাহ হয়ে গিয়েছে এমন জুটির ক্ষেত্রেও কিন্তু এমন আইন জারি করা হয়েছে।
এই জন্য এই সমস্ত বিষয় গুলি খেয়াল রাখার মধ্যে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন মামলাতে লিভ ইন রিলেশনশিপ কে আইন এর মধ্যে আনার জন্য শামিল করা হয়েছে।
লিভ-ইন রিলেশনশিপের মধ্যে বাচ্চারা সুরক্ষিত কি?
বাচ্চাদের বৈধতা আর সম্পত্তির অধিকারের পরিস্থিতি:
হিন্দু বিবাহ অ্যাক্ট এর ধারা 16 অনুসারে বাচ্চাদের সম্পত্তির অধিকার প্রদান করা হয়েছে যেখানে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে, বে-আইনি রূপ থেকে বাচ্চাদের জন্য বৈধতা আইন দায়ের করা হয়েছে অর্থাৎ ঐতিহ্যর জন্য অধিকার দেওয়া হয়েছে।
নিজের থেকে কেনা এবং পৈত্রিক সম্পত্তি দুই ক্ষেত্রেই কিন্তু তার অধিকার রয়েছে সমানভাবে, এবং সেই অধিকার উপলব্ধ করানো যেতে পারে।
বাচ্চাদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং হেফাজতের অধিকার:
বিবাহের বাইরে অথবা বিবাহ ছাড়া যদি কোন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে থাকে, তাহলে তার ভরণপোষণের অধিকার এর জন্য আলাদা আলাদা ব্যক্তিগত বিবাহ আইন অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে পিতার কাছে হিন্দু আইন অনুসারে বাচ্চা কে স্বীকার করার দায়িত্ব রয়েছে, যখন সেই পিতাকে মুসলিম আইন অনুসারে একটি মাত্র দায়িত্ব থেকে মুক্ত করা হয়ে থাকে, যে বাচ্চা ব্যক্তিগত আইন অনুসারে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি করতে পারে না, সে ক্ষেত্রে সি আর পি সি 125 অনুসারে একটাই দাবী করতে পারে যে, দুজনেই কিন্তু সেই বাচ্চা রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন।
এছাড়া লিভ-ইন রিলেশনশিপের মধ্যে অনেক রকম বিষয়ে জড়িয়ে থাকে, যেগুলো প্রেমিক-প্রেমিকাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। তবে দুজনের আগে কোথাও বিবাহ যদি থেকে থাকে তাহলে সেটা আইনত অপরাধ হিসেবে শাস্তিযোগ্য।
আর মহিলা সাথীর জন্য বিশেষ করে রক্ষণাবেক্ষণ, তার ভবিষ্যত এবং সন্তান জন্ম হওয়ার পর সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ, ভরণপোষণ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সব কিছু দায়িত্ব সহকারে পালন করতে হবে একজন স্বামী স্ত্রীর মতই। কেননা লিভ ইন রিলেশনশিপ বিবাহ ছাড়া স্বামী স্ত্রীর মতোই বলা যেতে পারে।
যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকা দের ইচ্ছা অনুসারে, তবে অবশ্যই তাদের প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। একই ছাদের নিচে বসবাস করার মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করেন, শুধুমাত্র বিবাহ ছাড়া। তাই এটাকে সম্পূর্ণরূপে বৈধ বলে মনে করা হয়। আর এ ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর মতোই দায়িত্ব পালন করার আবশ্যিকতা রয়েছে।
এছাড়া মহিলার সাথে বিভিন্ন রকমের অধিকার সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন। এই রিলেশনশিপ এ থাকার আগে সবকিছু ঠিক করার পর তবেই এমন সম্পর্কে থাকা জরুরী। তা না হলে বিবাহের মত কোন সার্টিফিকেট এখানে থাকে না। আর দুই পক্ষের মধ্যে যেকোনো একটি পক্ষ প্রতারিত হতে পারেন, তাই সেদিকটা মাথায় রেখে আইনের সাহায্য নিতে পারেন।