ধর্ষণের শিকার হলে কি করবেন? ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ

Laws against Rape in Bengali: ধর্ষণের শিকার হলে কি করবেন? ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনি নিয়ম ও পদক্ষেপ | আসুন জেনে নিন ধর্ষণের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের কখন করা উচিত? আর কিভাবে ধর্ষণের মামলা করবেন?

ধর্ষণের মতো অপরাধ বর্তমানে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। তাছাড়া ভারতমহিলাদের বিরুদ্ধে এই ধর্ষণের মতো অপরাধ হলো চতুর্থ সবথেকে সাধারণ অপরাধ। নিউজ চ্যানেল থেকে খবরের কাগজ, সমস্ত জায়গায় আপনি প্রতিদিন এমন ঘটনা পেতে পারেন।

তবু কিন্তু যারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন তাদের জন্য আইন কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও স্বাভাবিক ভাবে প্রথমত তাকে কলঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এমন পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই মামলার রিপোর্ট করা হয় না। আর ভারতে এটি হলো একটি জটিল সামাজিক পরিস্থিতি।

ধর্ষণের শিকার হলে কি করবেন? ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ
ধর্ষণের শিকার হলে কি করবেন? ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ

যার সাথে এমন ঘটনা ঘটেছে এমনটা অনুভব করতেই পারেন যে, ধর্ষণের মতো ঘটনার জন্য একমাত্র সে নিজেই দায়ী। আর এর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার জন্য, মামলা করার জন্য, যে ব্যর্থতা পেয়েছেন সেটাও শুধুমাত্র তার জন্যই।

তবে দেখা যায়, যদি সঠিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তাহলে ধর্ষিতাকে সঠিক বিচার পাইয়ে দেওয়া যেতে পারে। এমন অনেক মামলাতে ধর্ষকের উপযুক্ত শাস্তি এবং তার সাথে পীড়িত সেই মহিলার সঠিক বিচার হয়েছে।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের কখন করা উচিত?

১) ধর্ষণের মামলাতে এই বিষয়টি ফেলার জন্য পীড়িত মহিলার সহমতি ছাড়া অথবা বে-আইনি ভাবে প্রাপ্ত সহমতির সাথে সহবাস করা হতে হবে, তা ছাড়া এরমধ্যে নাবালিকা অর্থাৎ 18 বছরের কম বয়সের মেয়ে অথবা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সেই মহিলার সহমতিও শামিল নেই।

২) ১৮ বছরের কম বয়সের মেয়ের সাথে সহবাস করা আইনত অপরাধ, তবে পি ও সি এস ও (POCSO) (যৌন অপরাধ থেকে বাচ্চাদের সংরক্ষণ) অধিনিয়ম অনুসার তার সাথে সাথে বর্তমান উপলব্ধ আইন অনুসারে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না।

যদি বর্তমান আইন অনুসারে একজন মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকেন তো:

১) সমস্ত সরকারি এবং প্রাইভেট হসপিটালের জন্য ধর্ষিতাদের ফ্রিতে প্রাথমিক চিকিৎসা আর চিকিৎসা ক্ষেত্রে দেখভাল দেওয়ার জন্য অনিবার্য করা হয়েছে।

২) হাসপাতালে সেই পীড়িত মহিলার চিকিৎসা করা হবে এবং তার সাথে সাথে এই ঘটনার উপরে সম্পূর্ণ সত্য প্রমাণ পত্র এক জায়গায় জড়ো করার জন্য।

সেই ধর্ষণের শিকার হওয়া মহিলাটি রিপোর্ট তৈরি করার জন্য অথবা অভিযোগ দায়ের করার জন্য, সেই মহিলা / মেয়েটি তৈরি আছে নাকি নেই অথবা তিনি রিপোর্ট করতে চান নাকি চান না।

তবে এর কোন আবশ্যিকতা নেই কেননা অনেকেই ধর্ষিতার পরিচয় সবার সামনে আনতে চান না। সে ক্ষেত্রে হাসপাতাল, পুলিশ অথবা মিডিয়া দ্বারা ধর্ষণ পীড়িত মহিলার পরিচয় পত্র যে কোনো পরিস্থিতিতে সবার সম্মুখে না আনতেও পারেন।

৩) এফ আই আর (FIR) একজন মহিলা পুলিশ আধিকারিক অথবা কোন মহিলা আধিকারিক দ্বারা দায়ের করা যেতে পারে, আপনি অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

৪) এমন ধরনের মামলাতে প্রত্যেকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা কোনরকম দেরি না করে সম্পূর্ণ করতে হবে। আর একটি রিপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা করতে হবে শীঘ্রই।

৫) যদি আপনি মামলা রিপোর্ট করার নির্ণয় নিয়ে থাকেন, তাহলে পুলিশকে সাথে সাথে একটি পূর্ণ এফ আই আর দায়ের করতে হবে। আর আপনাকে আইনি উকিলের অধিকার সম্পর্কে সূচিত করতে হবে।

যদিও রেজিস্ট্রেশন এর অনুরোধ অসাময়ীক হয়ে থাকে, কেননা এর কিছু কারণ রয়েছে। যে কোন মহিলা তাড়াতাড়ি এর রিপোর্ট কেন করতে পারবেন না ! এফ আই আর-এর সুবিধা অভিযোগ কর্তাকে ফ্রীতে দেওয়া হয়ে থাকে।

৬) সাধারণত একটি পুলিশ স্টেশনে এফ আই আর (FIR) দায়ের করা অবশ্যই উচিত। যা কিনা অপরাধমূলক ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া ধর্ষন এর শিকার হয়েছেন এমন মহিলা সারাদেশে যে কোন পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এটিকে জিরো এফ আই আর নিয়ম বলা হয়ে থাকে।

৭) পীড়িত মহিলার একটি মেডিকেল টেস্ট অনিবার্য হয়ে থাকে এমন পরিস্থিতিতে। আর সরকার দ্বারা সঞ্চালিত চিকিৎসা ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দ্বারা সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাটা জরুরি। যদি উপলব্ধ না থাকে, তাহলে অন্য কোন রেজিস্টারড ব্যবসায়ী মহিলার অনুমতির সাথে পরীক্ষা করতে হবে।

৮) সারাদেশে ফাস্ট ট্র্যাক কোটা এর সাথে ধর্ষণের রায় কিছু মাস থেকে কিছু বছর পর্যন্ত নিয়ে থাকে, শুধুমাত্র রায় শোনানোর জন্য। তাছাড়া এই বিষয়টি ধর্ষণ পীড়িত এবং অপরাধী দুজনের জন্য ন্যায় এর রূপে কাজ করার থেকে কোনো ভাবেই আটকানো যায় না।

৯) কিছু হেল্পলাইন নাম্বার রয়েছে, যেখানে আপনি এমন পরিস্থিতিতে সাহায্য চাইতে পারেন। উদাহরণ এর জন্য দিল্লি সরকার একটি হেল্পলাইন নাম্বার দিয়ে রেখেছে (24370557) যেটা ২৪ × ৭ উপলব্ধ রয়েছে, হেলপ্লাইন নাম্বারটি হল :- (181) এই নাম্বারে কল করে এই বিষয়ে সাহায্য চাইতে পারেন।

ধর্ষণের মতো অপরাধের জন্য শাস্তি কি?

১) যে মামলাতে হামলা অথবা আক্রমণ বাড়ার কোনরকম সম্ভাবনা নেই, সে ক্ষেত্রে সাত (৭) বছরের কম কারাবাস তো নয়ই, তার সাথে জরিমানা রয়েছে এবং যাবজ্জীবন কারাবাস পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

২) আর যদি কোন মামলাতে হামলা অথবা আক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে, সে ক্ষেত্রে ১০ বছরের কম তো নয় এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, তার সাথে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে সেই শাস্তি।

৩) ধর্ষণের পরিনাম স্বরূপ যদি সেই মহিলার যদি মৃত্যু হয় অথবা স্থায়ীভাবে পঙ্গু হওয়ার মত অবস্থা হয়ে থাকে, তাহলে কারাবাস কুড়ি (২০) বছরের কম নয়, আর যাবজ্জীবন কারাবাস অথবা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে এই শাস্তি।

৪) সাধারণ মেয়ের সাথে সহবাস এর মামলাতে কম করে দশ (১০) বছরের কারাবাস।

৫) একটি সাধারণ ছেলে যে কিনা নাবালিকা মেয়ের সাথে সহবাস করেছে, তাহলে তিন বছর পর্যন্ত হোম এ পাঠানো যেতে পারে।

ধর্ষণের মামলা তে আইন এত কড়া হওয়া সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত ধর্ষণের মতো মামলা অথবা ঘটনা বেড়েই চলেছে। তবে ধর্ষিতাকে সঠিক ভাবে আইন অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে ধর্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে হবে। তার সাথে সাথে নিজের দিকে খেয়াল রেখেই পরবর্তী স্টেপ নেওয়া উচিত।

তার সাথে একজন ভালো উকিলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, যিনি আপনার এই মামলা খুবই সহজভাবে লড়তে পারবেন। ধর্ষণের মামলা তে পারদর্শী কোন উকিল কে নিযুক্ত করুন, আর সমস্ত রকম তথ্য, প্রমান পত্র দিয়ে আপনি সেই অপরাধীকে শাস্তি দিতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top