Karwa Chauth Vrat 2023: পূজার বিধি ও ব্রত পালনের নিয়ম সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য

স্বামীর মঙ্গল কামনা করে দেশজুড়ে বিবাহিত মহিলারা করবা চৌথ ব্রত পালন করেন, স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করার পাশাপাশি সংসারে সুখ শান্তি বজায় থাকার প্রার্থনা করে থাকেন। সকল বিবাহিত মহিলারা উপবাস রেখে পূজা করে থাকেন তারা। তার জন্য তাদেরকে অনেকটা সময় ব্যয় করে সুন্দর করে সাজতে হয়, লাল, হলুদ, রঙের শাড়ি পরতে হয়। এই দিন তাদের নববধূর মতো দেখতে লাগে।

সকাল থেকেই চলে পূজার প্রস্তুতি, তাছাড়া এই উৎসবের দিন টির জন্য অপেক্ষা করে থাকা হয় সারা বছর ধরে। নির্জলা উপবাস রেখে তারপর সারা দিনের পর চাঁদ উদয় হওয়ার পরে চাঁদকে অর্ঘ্য দিয়ে চালুনিতে চাঁদ ও স্বামীর মুখ দেখে এই ব্রত ভঙ্গ করেন তারা।

করবা চৌথ ব্রত পূজার বিধি ও ব্রত পালনের নিয়ম সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য
করবা চৌথ ব্রত পূজার বিধি ও ব্রত পালনের নিয়ম সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য

তবে এই করবা চৌথ ব্রত পালনের ক্ষেত্রে অনেকখানি নিয়ম কানুন পালন করতে হয়। সেগুলির মধ্যে দিয়ে সকল বিবাহিত এবং বিবাহ স্থির হয়ে রয়েছে এমন মেয়েরাও এই উপবাস পালন করেন হবু স্বামীর জন্য। সুন্দর করে সাজাতে হয় পূজার থালি, সাজতে হয় সুন্দর করে নিজেদের কেও।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, করবা চৌথ ব্রত পালনের নিয়ম ও পূজা বিধি সম্পর্কে:

১) সুন্দর করে সাজান পুজোর থালা:

প্রতিটি সুন্দর জিনিস যেমন দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তেমনি পূজার ক্ষেত্রে ও অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি পুজোর জন্য সবচেয়ে যেটা জরুরী সেটা হল করবা। যা কিনা মাটির একটি পাত্র এই পাত্র খুবই জরুরী, এর মধ্যে খাবার ভরে রাখা হয়।

এটা ছাড়াও পুজোর জন্য সিঁদুর, শুকনো মেওয়া, রোলী ও খাবার তৈরি করে রাখা জরুরি। পূজার থালাতে মাটির প্রদীপ অবশ্যই প্রয়োজন, যা কিনা চাঁদ দর্শন করার সময় এটি জ্বলন্ত অবস্থায় রাখতে হয়, আর এই প্রদীপের আলোতেই স্বামীর মুখ দর্শন করতে হয়।

এছাড়া পুজোর থালাতে ফুল, চাল, সাজ সামগ্রী রাখারও নিয়ম রয়েছে। এই দিন বাড়িতে তৈরি হয় লুচি, হালুয়া এবং আরো অন্যান্য মিষ্টি। তাছাড়া অনেকেই এই দিন ঘরেতে গৌরী গণেশের মূর্তি নিয়ে আসেন, যা কিনা অনেক খানি শুভ বলে মনে করা হয়।

২) করবা চৌথ এর তিথি ও শুভ মুহূর্ত:

প্রতিটি উৎসবের শুভ মুহূর্ত অনুযায়ী সেই উৎসব পালন করা হয়, তেমনি করবা চৌথ কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে পালন করা হয়। সেই অনুযায়ী এই বছর কার্তিক মাসের কৃষ্ণ চতুর্থী তিথি শুরু হবে বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৩ ই অক্টোবর রাত ১ টা ৫৯ মিনিটে।

তারপর সেই তিথি শেষ হবে ১৪ ই অক্টোবর বিকেল তিনটে ৮ মিনিটে। তবে এক্ষেত্রে একটা জিনিস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, অদিয়া তিথির কারণে এ বছর করবা চৌথ ব্রত পালন করা যাবে শুধুমাত্র ১৩ ই অক্টোবর

৩) করবা চৌথ ব্রত তে সারগি:

সারগি একটি আশীর্বাদ স্বরূপ বলা যেতে পারে, প্রত্যেকটি শাশুড়ি তাদের নিজের পুত্রবধূকে এই সারগি দিয়ে আশীর্বাদ করেন, সেক্ষেত্রে সেই সারগি থাকে ১৬ সিঙ্গার অর্থাৎ সাজগোজের ১৬ রকম জিনিসপত্র, শুকনো ফল, মিষ্টি, শাড়ি এবং আরও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

সারগি তে রাখা সে সমস্ত খাবার খেয়েই এই উপবাস শুরু করতে হয়। যেটা সূর্য উদয়ের আগে খেতে হয় করবা চৌথ ব্রত পালনের দিন।

আবার অনেকের ক্ষেত্রে শাশুড়ি মা থাকেন না, সেক্ষেত্রে শাশুড়ি সম্পর্ক এর মধ্যে যারা আছেন তাদের মধ্যে যে কেউ এই সারগি দিয়ে দিতে পারেন।

৪) সারগি খাওয়ার সঠিক সময়:

যেহেতু আমরা জানলাম যে, উপবাস পালন করার আগে সূর্য উদয়ের আগে এই খাবার খেতে হয়। তবে সেটা ভোর ৪ টে থেকে ৫ টার মধ্যে হলে খুবই ভালো হয়। এই ব্রত অথবা উপবাস পালন করার জন্য সারগি তে কখনোই তেল মশলা যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়, কেননা সারাদিন নির্জলা উপবাসে থাকতে গেলে এক্ষেত্রে শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর এর ফলে উপবাসের ফল ভালো পাওয়া যায় না।

৫) করবা চৌথ ব্রত পালন করার বিধি ও নিয়ম:

১) প্রতিটি উৎসব প্রতিটি উপবাস কোন না কোন নিয়ম মেনে পালন করা হয়। সেই মতো করবা চৌথ ব্রত পালনের দিন সকালে সূর্য ওঠার আগে উঠে স্নান সেরে সারগি খেয়ে নিতে হবে। এই সার্গির মধ্যে ফল, দুধ, মিষ্টি অথবা যেকোনো ড্রাই ফ্রুট আপনার পছন্দমত খেতে পারেন।

২) তারপরে শিব ও পার্বতীর সামনে এই ব্রত করার সংকল্প করতে হবে অর্থাৎ সারাদিন নির্জলা উপবাস থেকে এই ব্রত পালন করার জন্য তৈরি হতে হবে। তবে অনেকে নির্জলা উপবাস থাকতে পারেন না, সেক্ষেত্রে যখন সংকল্প করবেন তখন নির্জলা না সাধারণত উপবাস পালন করবেন তা সংকল্পের সময় মনে মনে বলে নেওয়াটা জরুরী।

৩) এরপর শিব ও পার্বতী, কার্তিক, গণেশ কে রোলি, চাল, চন্দন, ফুল এবং আরো অন্যান্য নৈবেদ্য দিয়ে পূজা সম্পন্ন করতে হবে।

৪) ষোড়শ উপাচার এর নিয়ম অনুযায়ী পূজা অর্চনা সম্পন্ন করুন।

৫) তারপরে নিজের স্বামীর দীর্ঘায়ু এবং রোগমুক্ত জীবন পাওয়ার কামনা করতে হয়।

৬) তারপরে করবা চৌথ ব্রত পাঠ করতে হয় অথবা শুনতে হয়।

৭) একটি তামা বা মাটির পাত্রে চাল, সিঁদুর, বিউলির ডাল, টিপ, চুড়ি, টাকা ইত্যাদি রেখে শাশুড়ি অথবা বয়সে বড় যে কোন বিবাহিত মহিলাকে দিতে পারেন। তারপরে তার আশীর্বাদ গ্রহণ করুন।

৮) রাতে পূর্ণ চন্দ্র উদয়ের পর চালুনির মধ্য দিয়ে প্রদীপের আলোতে চাঁদ দেখে তারপরে সেই চালুনির মধ্যে দিয়ে স্বামীর মুখ দেখতে হয়।

৯) চন্দ্রকে অর্ঘ্য নিবেদন করে আরতি করার নিয়ম রয়েছে এই ব্রত পালনের মধ্যে দিয়ে।

১০) তারপরে স্বামীকে চন্দনের টিকা লাগিয়ে, তার আশীর্বাদ নিয়ে, স্বামীর হাতে জল পান করে, এই করবা চৌথ এর উপবাস ভঙ্গ করতে হয়। এরপরে যেকোনো খাবারই আপনি খেতে পারেন।

করবা চৌথ ব্রতর দিন কি করবেন আর কি করবেন না :

এবার তাহলে জানা যাক, করবা চৌথ ব্রত পালন করার দিন কি করবেন আর কি করবেন না :

#১) ব্রত পালনের সময় প্রথমত সূর্য উদয়ের আগে উঠে সারগি খাওয়ার পর সারাদিন আর কোন কিছুই খাওয়া যাবে না। সারাদিন শেষে চাঁদ উদয়ের পর চাঁদকে অর্ঘ্য দিয়ে তারপরে জল গ্রহণ করতে হবে।

#২) এই ব্রত পালন করা হয় স্বামীর মঙ্গল কামনা করে, তাই উপবাসের দিন স্বামীর সঙ্গে কোন কিছু নিয়ে ঝগড়া করা যাবে না বা কোন অপশব্দ ব্যবহার করা যাবে না, ঘরেতে রাখতে হবে সর্বদাই হাসিখুশি ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।

#৩) এই পূজার সময় কালো, সাদা অথবা নীল রঙের কোন পোশাক পরা যাবে না। এই দিন উজ্জ্বল রঙের যেমন ধরুন লাল, গোলাপি, হলুদ এবং এই ধরনের আরো অনেক রং রয়েছে যেগুলো খুবই উজ্জ্বল রঙের, শুভ বলে মনে করা হয়, সেগুলি পরতে পারেন।

#৪) এই দিন কাউকে সাদা কাপড়, সাদা মিষ্টি, চাল, দুধ, দই অথবা সাদা জিনিস দান করা যাবে না। একটু খেয়াল করল দেখবেন যে, চাল, দুধ, দই সব কিছুর রংই কিন্তু সাদা। তাই এগুলি কখনোই করবা চৌথ ব্রত পালনের দিন কাউকে দান করবেন না।

#৫) এই উৎসবের দিনে নিজেকে সুন্দর করে সাজাতে ভুলবেন না, হাতে মেহেন্দি, সেই মেহেন্দির মধ্যে মনের মানুষটির (যাদের বিবাহ স্থির হয়ে রয়েছে) / স্বামীর নাম, উজ্জ্বল রঙের শাড়ি অথবা লেহেঙ্গা এবং সুন্দর অলংকারে নিজেকে সাজিয়ে তুলুন।

#৬) নিজেকে যেমন নববধূর মত সাজিয়ে তুলবেন, তেমনি ঘরবাড়ি ও সাজিয়ে তুলুন সুন্দর করে।

সারা বছর ধরে বিভিন্ন রকমের উৎসব, পূজা অনুষ্ঠানে অনেক উপবাস পালন করা হয় ঠিকই, সব কিছুতেই থাকে স্বামীর মঙ্গল কামনা এবং সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করার মনষ্কামনা ও প্রার্থনা।

তবে এই করবা চৌথ ব্রততে শুধুমাত্র স্বামী মঙ্গল কামনা এবং তার ব্যবসা হোক অথবা চাকরি সবকিছুতে উন্নতি সাধন হওয়ার জন্য এই ব্রত পালন করে থাকেন দেশের সমস্ত বিবাহিত মহিলা ও অবিবাহিত মেয়েরা।

সঠিক নিয়ম মেনে পালন করুন করবা চৌথ ব্রত। সকলের ব্রত হোক সু-সম্পন্ন, উপবাস কাটুক সুস্থভাবে, সকল স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন হোক সুখ ও শান্তিতে ভরপুর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top