কার্গিল বিজয় দিবস 2023: কার্গিল যুদ্ধের আশ্চর্যজনক তথ্য ও ইতিহাস

Kargil Vijay Diwas: কার্গিল বিজয় দিবসে ভারতের মানুষ তার শহীদদের স্মরণ করে। কারগিল যুদ্ধের বীরদের গল্প ভারত কখনই ভুলবে না। জানুন কার্গিল বিজয় দিবসের ইতিহাস, তাৎপর্য, এবং আরও জানা-অজানা তথ্য যা আপনার জানা উচিত।

কার্গিল বিজয় দিবস (Kargil Vijay Diwas): এই দিনটির গুরুত্ব অন্যান্য সাধারণ দিনের তুলনায় অনেকখানি বেশি। প্রতিবছর ২৬ শে জুলাই দেশ জুড়ে পালিত হয়ে আসছে কার্গিল বিজয় দিবস। সম্মান জানানো হয় সেই সমস্ত বীর সৈনিকদের, যারা এই বিজয় উৎসবের কারণ হয়েছিলেন।

২৬ শে জুলাই এমন একটি দিন, যেদিন ভারতের বীর সৈনিকরা জাতির জন্য লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন। আজ থেকে ঠিক ২৩ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৯ সালের এই দিনটিতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কার্গিল যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল ভারত।

Kargil Vijay Diwas in Bengali- কার্গিল বিজয় দিবস
Kargil Vijay Diwas in Bengali- কার্গিল বিজয় দিবস

এছাড়া এই কার্গিল যুদ্ধ অথবা লড়াইকে অপারেশন বিজয় নামেও উল্লেখ করা হয়। প্রায় দুই মাস ধরে চলা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই কার্গিল যুদ্ধ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভারতের জন্য। জম্মু এবং কাশ্মীরের কার্গিল দ্রাস সেক্টরে হয়েছিল এই যুদ্ধ।

তবে এই যুদ্ধ অনেক মায়েদের কোল শূন্য করে দিয়েছে, তার সাথে সাথে দেশের অনেক বীর সৈনিক আত্মত্যাগ করেছেন, এই বিজয় অপারেশন এর ফলে বহু ভারতীয় সেনা শহীদ হয়েছেন। আর সেই কারণে এই যুদ্ধের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই প্রতি বছর ২৬ শে জুলাই দেশ জুড়ে এই বিজয় দিবস গর্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে।

এই যুদ্ধ চলাকালীন প্রায় ৫৩০ জন ভারতীয় সেনা, বীর এর মতো নিজেদের জীবন বলিদান দিয়েছিলেন। তার পাশাপাশি আহত হয়েছিলেন প্রায় ১৩০০ এরও বেশি ভারতীয় সেনা। ভারতীয় ইতিহাসে এই দিবসটির গুরুত্ব কিন্তু অনেকখানি।

কারগিল বিজয় দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানা যাক: 

কারগিল বিজয় দিবস এর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে জানা যায় যে, ১৯৯৯ সালের লাহোর ঘোষণার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরে সেই বছরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী গোপনে নিয়ন্ত্রণ রেখা (LOC) লংঘন করে ভারতে ঢুকে পড়ে ছিল। আর সেখানেই তাদের শিবির স্থাপন করেছিল। নিয়ন্ত্রণ রেখা হল ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত রেখা, যেটাকে আমরা বর্ডার হিসেবে চিনি।

এই খবর ভারতের কাছে আসার পর ভারতের সেনারা ভীষণভাবে রেগে যান, আর সেই কারণে নিজের মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য তারা কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়েন। পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারী দের ফলে কোনরকম ক্ষতি যেন নিজের ভূমিতে না হয়, সেই কারণে তাদের আটকানোর জন্য অপারেশন বিজয় অর্থাৎ কার্গিল যুদ্ধ শুরু হয়। অপরদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে “অপারেশন-বদ্রি” শুরু করা হয়।

সাহসের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে ভারতীয় সেনারা ফিরিয়ে আনেন জম্মু-কাশ্মীরের কার্গিল জেলার বেদখল অঞ্চলগুলি আর ভারতীয় সেনাদের এই সাহসিকতার কাছে হার মেনে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের সেনারা। জয় হয় ভারতীয় সেনাদের। তবে শুধুমাত্র এই জয় খুবই সহজ ছিল না, অনেক বীর সেনা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত যুদ্ধ করে তাদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, তারপরেই এই বিজয় হাসিল করা যেতে পেরেছে।

ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের সহযোগিতায় ভারতীয় সেনারা দু মাসের মধ্যে তাদের দখল করা অঞ্চলগুলি ৭৫% থেকে ৮০% পুনরায় দখল করেন এবং বাকি ২০% থেকে ২৫%  আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে পাকিস্তান ভারতে কে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়।

কার্গিল জয়, মাইনাস (-১০°) ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসেও লড়াই করেছিলেন ভারতীয় সেনারা:

প্রতিটি বিজয়ের পেছনে থাকে কঠোর পরিশ্রম আর আত্মত্যাগ, যখন কারগিল যুদ্ধ চলছিল সেই সময়ে সেই এলাকার তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১০ ডিগ্রী। এই প্রবল ঠান্ডায় লড়াই করেও জয় হয়েছিল ভারতীয় সেনাদের।

তার পাশাপাশি সাম্প্রতিক যুদ্ধের ইতিহাসে এত উচ্চতায় আগে কখনো যুদ্ধ অথবা লড়াই হয়নি। তাই সবদিক থেকে এই কার্গিল বিজয় দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।

কার্গিল বিজয় দিবসের বিশেষ কিছু উক্তি: 

সকলকে কারগিল বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা, আসুন সেই সকল বীর সেনাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করি, যারা আমাদের মহান দেশকে সুরক্ষিত করার জন্য চূড়ান্ত বলিদান দিয়েছেন। জয় ভারত।

মনের মধ্যে স্বাধীনতা, কথায় বিশ্বাস, আমাদের হৃদয়ের গর্ব, আমাদের আত্মার স্মৃতি, জয় ভারত, জয় কার্গিল দিবস।

যারা আসল হিরো তাদের জার্সির পেছনে কোন নাম থাকে না, তারা দেশের পতাকা পরে থাকেন।

ভারতের আসল হিরোদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। একজন মা, বোন, বাবা, বন্ধু, ভাই, স্ত্রী তাদের কাছের মানুষকে হারিয়েছেন। আমরা তাদের কখনোই ফেরত দিতে পারব না। কিন্তু আমরা অবশ্যই তাদের জন্য থাকতে পারি, যারা আমাদের জন্য প্রাণ বলিদান দিয়েছেন। তাদের নামে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে আমরা তাদের উপস্থিতির জানান দিতে পারি। শুভ কার্গিল বিজয় দিবস।

আসুন আমরা সেই সকল বীর যোদ্ধাদের স্যালুট করি যারা কিনা দিনরাত আমাদের রক্ষা করে এসেছেন আর এখনো পর্যন্ত তারা তাদের সমস্ত সুখ, স্বাচ্ছন্দ ত্যাগ করে আমাদের রক্ষা করে থাকছেন।

আসুন তাদের লড়াইকে স্মরণ করি, শ্রদ্ধা করি।  আমাদের দেশের পতাকা হাওয়া বয় না বলে ওড়ে না, সেটা  ওড়ে আমাদের প্রত্যেক সেনার শেষ নিঃশ্বাসে।

কার্গিল দিবসে জাতীয় নায়কদের জানাই শত শত নমন ও সালাম।

২৬ শে জুলাই ১৯৯৯ সাল, আজকের এই দিনটিতে পাকিস্তানের সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করেছিলেন ভারতীয় সেনারা। কার্গিল ওই যুদ্ধের জয় হয়েছিল, ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ভারতীয় সেনারা। তার সাথে সাথে পাকিস্তানের সেনাদের বুঝিয়ে দেন যে, ভারতীয় সেনারা সমস্ত কিছুর সাথে লড়াই করে জয় হাসিল করতে পারে।

কেননা যুদ্ধ চলাকালীন সেই জায়গার তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আরো কিছু কিছু জায়গায় এর থেকেও আরো কম তাপমাত্রা ছিল। সেটার সাথেও লড়াই করে ভারতীয় সেনারা এই যুদ্ধ জয় করেছিলেন।

আজ ২৬ শে জুলাই ২০২২, বীর সেনাদের স্মরণ করে তাদের উদ্দেশ্যে এই কারগিল বিজয় দিবসটি পালন করা হয়। শহীদ হয়েছেন বহুসেনা। তাদের স্মরণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া আমাদের কাছে খুবই গর্বের বিষয়। এই বীর সেনারা আছেন বলেই আমরা নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করতে পারছি, তারা ঢাল হয়ে আমাদেরকে রক্ষা করছেন দেশের সীমান্তে দাঁড়িয়ে।

প্রতিবছর এই দিনটিকে কারগিল বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে বহু সেনা প্রাণ হারিয়েছেন এবং বহু সেরা আহত হয়েছিলেন। ১৪ হাজার থেকে ১৮ হাজার ফুট উচ্চতায় চলেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই দেশ রক্ষা করার যুদ্ধ। ভারতীয় সেনাদের শুধুমাত্র পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করতে হয়নি, তার সাথে সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছিল তখনকার পরিস্থিতির সাথে।

এতটা উচ্চতায় যুদ্ধ তার সাথে সাথে অতিরিক্ত ঠান্ডার বিরুদ্ধে ও তাদেরকে লড়াই করে থাকতে হয়েছে। সেই কারণে তাদের বীরত্ব- এর প্রতি স্যালুট জানাতে প্রতিবছর ২৬ শে জুলাই এই দিনটি বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধা ও গর্বের সাথে পালন করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top