নাতি-নাতনিদের উত্তরাধিকারের অধিকার (Inheritance Rights of Grandchildren): দাদুর সম্পত্তির ওপর নাতি-নাতনিরা কি অধিকার নিতে পারে? নাতি কি দাদুর সম্পত্তিতে অধিকার দাবি করতে পারে? জেনে নিন পৈতৃক সম্পত্তি বিভাজনে দাদুর সম্পত্তিতে নাতি-নাতনিদের অধিকার সম্পর্কে।
পৈতৃক সম্পত্তি বেশিরভাগ মানুষ পেয়ে থাকেন, সেটা হতে পারে জমি, বাড়ি ফ্ল্যাট এবং আরো অন্যান্য ব্যবসায়ীক সম্পত্তি। তবে অনেকেই পেয়ে থাকেন তাদের বাবার বাবা অর্থাৎ তাদের দাদুর সম্পত্তি।

এছাড়া যদি অধিকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তাহলে দাদুর সম্পত্তি কেমন ধরনের সেই পৈতৃকির উপর নির্ভর করে নাতি সেই সম্পত্তির ভাগিদার হতে পারবেন। অর্থাৎ সেই সম্পত্তির পৈতৃক সম্পত্তি নাকি নিজে থেকে অর্জিত সম্পত্তি।
পৈতৃক সম্পত্তি কি ?
যে সম্পত্তি এক পিতা থেকে আর এক পিতা পেয়ে থাকেন অর্থাৎ বলতে গেলে পিতার পিতা, তাঁর পিতা, তাঁর পিতা থেকে প্রাপ্ত যে সম্পত্তি সেটা হল প্রাকৃতিক অথবা পৈতৃক সম্পত্তি। বলতে গেলে এমন সম্পত্তির উপর অধিকার জন্ম থেকে অর্জিত হয়ে যায়।
তাছাড়া এই সম্পত্তির অধিকার যখন সেই সম্পত্তির মালিক মৃত্যুবরণ করেন তখনই কিন্তু তার অথবা সম্পত্তির ভাগাভাগি ও অধিকার নিয়ে কথা হয়।
পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার একজন ব্যক্তির উপরে নির্ধারিত করা হয়। প্রতি ব্যক্তি অনুসারে নয়। এই জন্য প্রত্যেক প্রজন্মের একটা ভাগ প্রথম থেকেই নির্ধারিত করা হয়। তারপর তার পরের প্রজন্ম সেই অনুসারে সেই সম্পত্তির অধিকার পেয়ে থাকেন।
আর যদি সেই সম্পত্তির পৈতৃক সম্পত্তি হয়ে থাকে তাহলে নাতিপুতিদের সমান অধিকার হয় সেই সম্পত্তির উপর।
দাদুর নিজের থেকে অর্জন করা সম্পত্তির উপরে নাতি পুতিদের অধিকার:
আরেকরকম সম্পত্তি হলো, কোনো ব্যাক্তি যদি নিজের যোগ্যতা এবং পরিশ্রম দিয়ে অর্জন করে থাকেন কোন রকম সম্পত্তি তাকে স্ব – প্রাপ্ত সম্পত্তি বলা হয়। এক্ষেত্রে কিন্তু জন্ম থেকে সম্পত্তির ওপর অধিকার থাকে না। যদি সেই সম্পত্তি বাবার পরিবারের থেকে ভাগাভাগির সময় আইন অনুসারে কোন নাতি-পুতির নামে করা হয়।
সে ক্ষেত্রে পেতে পারেন অধিনিয়ম ১৯৫৬ অনুসারে। তাছাড়া এই সম্পত্তির উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার থাকবে দাদুর, সেই দাদুর মত অনুযায়ী যাকে ইচ্ছা তাকে সম্পত্তি স্থানান্তরিত করতে পারেন।
এছাড়া যদি কারো নামে সেই সম্পত্তি দেওয়ার আগে তাঁর মৃত্যু হয়, সে ক্ষেত্রে আইন অনুসারে তার স্ত্রী, পুত্র এবং কন্যা দের মধ্যে সেই সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া অথবা তাদের অধিকার রয়েছে এই সম্পত্তির উপর।
এইভাবে সেই সম্পত্তি স্ত্রী পুত্র এবং কন্যা দের নিজের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সেখানে অন্য কোনো ব্যক্তির অধিকার থাকবে না।
আর যদি দাদুর মৃত্যুর আগে কোন ছেলে অথবা মেয়ের মৃত্যু হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে সেই ছেলে অথবা মেয়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে যারা রয়েছে তারা এই সম্পত্তির ভাগীদার হয়ে যাবেন। যে সম্পত্তি প্রথম থেকেই সেই ছেলে অথবা মেয়ের পাওনা ছিল।
দাদুর নাতিদের কেবল মাত্র নিজের বাবার সম্পত্তির অধিকার রয়েছে, আর যদি বাবা জীবিত থাকেন, সে ক্ষেত্রে কোনোভাবেই সেই সম্পত্তির অধিকার পাবে না।
ডিভোর্স হলে সন্তানের আইনি অধিকার কে পাবে? মা না বাবা? জেনে নিন
রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ধরলে কি করবেন? আপনার ট্রাফিক অধিকারগুলি জানুন
দাদুর সম্পত্তি পাওয়ার জন্য আইন অনুসারে উকিলের প্রয়োজনীয়তা কেন হয় ?
ভারতের বিচারালয় এ বেশিরভাগ মামলা সম্পত্তি সম্পর্কিত হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সম্পত্তির কেস পৈতৃক সম্পত্তি সম্বন্ধিত হয়। সাধারণত পৈতৃক সম্পত্তি পাওয়ার জন্য মানুষকে বিভিন্ন রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
যদি আপনি এই কাজ কোন উকিল এর সাহায্য নিয়ে করতে পারেন তাহলে খুবই সহজ ভাবে এবং কম সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
কেননা কেবলমাত্র সম্পত্তি সম্পর্কিত উকিল যারা রয়েছেন, তাঁরাই বিভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে এই সমস্ত বিষয়ের উপরে আলোক পাত করতে পারবেন।
যদি কোন উকিল এই সম্পত্তি সম্পর্কিত মামলার বিষয়ে খুবই দক্ষ এবং অভিজ্ঞ সে ক্ষেত্রে এই উকিলের সাহায্য নিয়ে সম্পত্তি বিষয়ক বিভিন্ন রকমের সমস্যার সমাধান করতে পারবেন অনায়াসেই।
তো এইভাবে দু’রকম সম্পত্তির উপরে দুই রকম ভাবে অধিকার থাকতে পারে নাতি পুতিদের অর্থাৎ দাদুর পূর্বপুরুষ থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তির উপরে স্বাভাবিক ভাবেই পরবর্তী প্রজন্মের সমানভাবে অধিকার থাকে।
তেমনি অন্যদিকে দেখতে গেলে দাদু যদি নিজের পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে সম্পত্তি অর্জন করে থাকেন, সেক্ষেত্রে কিন্তু সে সম্পত্তি দাদু অনুযায়ী কোন নাতির নামে দিতে পারবেন তার ইচ্ছা অনুসারে। সেখানে কোনো রকম অধিকার অথবা জোর করা যাবে না।
তাছাড়া স্বাভাবিক ভাবে দাদুর মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির উপরে ঠাকুরমা এবং তাদের ছেলে মেয়েদের অগ্রাধিকার থাকে এবং তা থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তি নাতি পুতিরা পেতে পারে।
তবে বর্তমানে বেশিরভাগ পরিবারেই এই সম্পত্তি নিয়ে বেশ ঝামেলা ও জটিল সমস্যা তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে সম্পত্তি সম্পর্কিত উকিল ধরে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন খুবই কম সময়ের মধ্যে।
নিজে কোনরকম হস্তক্ষেপ না করে আইন অনুসারে যেটা উচিত সেই মত কাজ করলে সব কিছুই সহজভাবে এবং সরল ভাবে করতে পারবেন। সেখানে কোনো রকম অপ্রিয় পরিস্থিতি তৈরি হবে না।
এক্ষেত্রে যদি দাদুর একটাই মাত্র পুত্র সন্তান এবং সেই বাবার একটাই মাত্র পুত্র সন্তান হয়ে থাকে তাহলে তো আর কথাই নেই, সমস্ত সম্পত্তি এমনি থেকেই সেই ছেলে এবং ছেলের থেকে নাতি, নাতি থেকে পুতির অর্থাৎ সরাসরি দাদু থেকে নাতির নামেও সম্পত্তি দিতে পারবেন সেই দাদু।
এমন অনেক পরিবার রয়েছে দাদু ভালোবেসে তার যে কোনো নাতি কে তার নামের সম্পত্তি থেকে বেশ কিছু সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান অনেক আগে থেকেই। বলতে গেলে অনেক সময় দেখা যায় জন্ম হওয়ার পরে পরেই তার নামে উইল করে যান অনেক দাদু। সেক্ষেত্রে বলতে পারেন তার অর্জিত সম্পত্তি থেকে তার মন অনুযায়ী যেকোনো নাতিকে তার সম্পত্তির ভাগীদার বানিয়েছেন।