প্রতিবছরের মত এ বছরও মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পুজো হবে খুবই আড়ম্ভরপূর্ণ ভাবে। তার আর বেশি বাকি নেই, হাতে গোনা কয়েকটা দিন পরেই চলে আসবে সেই মিষ্টি ময়ুর দিনটি। সরস্বতী পূজার এই দিনটি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। এই তিথিতে পুজোর আয়োজন করা হয় বসন্ত পঞ্চমীর, কামদেব ও রতী দেবীর।
এই শুভ তিথিতে ঘরে ঘরে, স্কুল, কলেজ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যার দেবী সরস্বতী আরাধনা করা হয় খুবই বড় আকারে। এছাড়াও বসন্ত পঞ্চমীতে বৃক্ষ রোপণ করাও খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। তাই তো এমন দিনে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বৃক্ষরোপন করার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়।
তবে এই শুভদিনে কি ধরনের গাছ আপনি বাড়িতে রোপন করবেন, সেটা নিয়েও আছে অনেক রকম বিষয়। যে গাছগুলি এই শুভদিনে আপনি রোপণ করতে পারবেন সেগুলিও কিন্তু আপনার বাড়ির এবং পরিবারের সকল সদস্যর জন্য মঙ্গলজনক।
মনে করা হয় বাড়িতে এই সমস্ত গাছ লাগালে দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ পাওয়া যায় সারা বছর। শাস্ত্র মতে এই গাছ লাগালে সরস্বতী ও লক্ষ্মীর আশীর্বাদ সবসময় বজায় থাকে সংসারে।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই শুভদিনে আপনি কোন গাছ বাড়িতে লাগাতে পারেন:
সরস্বতী পূজাতে বাড়িতে রোপন করে ফেলুন এই মঙ্গলজনক গাছটি:
স্বাস্থ্য অনুসারে এমন অনেক গাছ রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, সংসারে উন্নতি, আরো অন্যান্য শুভ দিকগুলি সুন্দরভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে, আবার অনেক গাছ আছে যেগুলো আমাদের সংসারের জন্য অতটাও মঙ্গলজনক নয় এবং সেগুলি বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে রোপন করলে বেশ ভালো হয়।
বাস্তু শাস্ত্র অনুযায়ী বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে ময়ূরপঙ্খ গাছ বাড়িতে লাগানো উচিত বলে মনে করা হয়। এর ফলে সরস্বতীর আশীর্বাদ বজায় থাকে। এই গাছে সরস্বতী খুবই খুশি হন, তাই যে বাড়িতে এই গাছ থাকে সে বাড়িতে সরস্বতীর অধীষ্ঠান হয় বলে ধারণা করা হয়।
এটি বিদ্যাদায়ী গাছ হিসেবেও চিহ্নিত। মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে অর্থাৎ সরস্বতী পূজার দিনে বাড়ির উত্তর দিকে এই গাছটি রোপন করুন। এই গাছের পাতা বইয়ের মধ্যে রাখলে সরস্বতীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
বাড়িতে এই গাছ রাখাটাও কিন্তু ইতিবাচক শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি করে, তার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা বিকশিত হয়। তবে এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হল, কখনোই ভুলেও বাড়ির দক্ষিণ দিকে এই গাছ লাগাবেন না।
শাস্ত্র মতে এই গাছ উত্তর দিকে লাগালে পরিবার ধন সম্পদ, সুখ, শান্তিতে ভরে ওঠে। ব্যাক্তি ভাগ্যের সহযোগিতা লাভ করে। জ্ঞান, বুদ্ধির জোরে ব্যক্তির সমস্ত কাজ সুসম্পন্ন হয় ও সুখ-সমৃদ্ধির আগমন ঘটে। এছাড়াও আর্থিক উন্নতির জন্য এই গাছ অনেকখানি শুভ।
তবে এই গাছের সঠিক যত্ন নিলেই তবেই কিন্তু আপনি এর শুভ ফল লাভ করতে পারবেন। কখনো এই গাছকে অবহেলা করা যাবে না এবং কখনো শুকিয়ে যেতে দেবেন না, সর্বদা তার যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
বসন্ত পঞ্চমী বা সরস্বতী পূজার দিন হলুদ রঙের পোশাক পরার কারণ:
বিভিন্ন রঙের মধ্যে হলুদ রং খুবই উজ্জ্বল এবং ইতিবাচক, নতুন রশ্মি এবং নতুন শক্তির প্রতিক হিসেবে এই রংটিকে খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি হলুদ রঙ মা সরস্বতীর প্রিয় রং।
তাই বসন্ত পঞ্চমীতে এই উৎসবে পূজায় অংশগ্রহণ করতে বা এই শুভদিনে হলুদ কাপড় পরা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। এমনটা করলে মা সরস্বতী খুবই প্রসন্ন হন বলে জানা যায়। যদিও মা সরস্বতী সাদা রঙের পোশাক পরিহিতা থাকেন। তিনি সাদা রঙ খুবই পছন্দ করেন।
বসন্ত পঞ্চমীর দিন দেবী সরস্বতীর আরাধনা করার সময় তার আসনেও একটি হলুদ রঙের কাপড় বিছিয়ে রাখতে হয়। এছাড়া হলুদ রঙের ফুল ও তাকে নিবেদন করতে হয়। এর পাশাপাশি তাকে দিতে হয় বোঁদের লাড্ডু বা বেসনের লাড্ডু, যার রং হলুদ।
দেবীকে নিবেদনের পর সেই প্রসাদ নিজে গ্রহণ করা উচিত এবং সবাইকে বিতরণ করা উচিত। তাই সব দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে দেবী সরস্বতীর পছন্দের রং হলো হলুদ। তাই এই শুভদিনে তার আরাধনা করার পাশাপাশি তার পছন্দের হলুদ রঙের পোশাক পরা খুবই শুভ।
এই সমস্ত সাধারণ বিষয় গুলির পাশাপাশি আপনাকে থাকতে হবে সব সময় অ্যাক্টিভ। যাতে আপনার শিশুরা পড়াশোনায় খুবই ভালো ফলাফল করতে পারে, তাদেরকে যেভাবে গড়ে তোলা হবে তারা কিন্তু সেভাবেই গড়ে উঠতে থাকবে।
প্রতিবছর সরস্বতী পূজায় অংশগ্রহণ করা অথবা বাড়িতে পূজা করার মধ্যে দিয়ে দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ সবসময় সেই বাড়িতে থাকে এমনটাই মনে করা হয় শাস্ত্র অনুসারে। সকল বাড়িতে বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান ও ধন সম্পদের আগমন ঘটুক দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদে।
দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ পাওয়ার সমস্ত উপায়:
দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য আরও যে সমস্ত উপায় গুলি আপনি অবলম্বন করতে পারেন:
ঘরেতে বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান সবকিছু সুন্দরভাবে বজায় থাকুক এমনটা কে চাইবেন না বলুন তো ? সকলেই চান তার সন্তানরা লেখাপড়ায় খুবই ভালো হোক, উন্নতি করুক জীবনে, যে কোন কর্ম ক্ষেত্রে বুদ্ধি ও জ্ঞানের মধ্যে দিয়ে উন্নতি হোক কর্মজীবনে।
সেই জন্য ছোট থেকে বড় সকলের বিদ্যা, বুদ্ধি আর জীবনের উন্নতির জন্য দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি যে সাধারণ ও সহজ উপায় গুলি অবলম্বন করতে পারেন, সেগুলি হল:
১) পূর্ব দিকে অথবা উত্তর দিকে মুখ করে পড়াশোনা করা উচিত, এমনটা মনে করা হয় শাস্ত্র অনুসারে। আবার বাচ্চার পিঠ যাতে দেয়ালের দিকে থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। তবে শিশুদের পড়াশোনার জন্য বাড়ির আরও অন্যান্য সদস্যদের ভূমিকা থাকে অনেক অংশে বেশি।
২) পরিশ্রম সত্বেও ভালো ফলাফল লাভ করতে না পারায় পশ্চিম দিকে বসে পড়াশোনা করা উচিত বলে মনে করা হয়। মনে করা হয় এই উপায়ে অনুরূপ ফলাফল লাভ করতে পারবেন সমস্ত পড়ুয়ারা।
৩) ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা যেখানে পড়াশোনা করে, সেখানে এমন ভাবে সরস্বতী দেবীর ছবি লাগাতে হবে যাতে পড়ার সময় সেই ছবির দিকে চোখ যায় এবং ভক্তি ও শ্রদ্ধার উপর ভিত্তি করে এই পড়াশুনায় তাদের মনোযোগ আরো বেশি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে সন্তানের পড়াশোনায় একাগ্রতা বৃদ্ধি পাবে। স্টাডি টেবিলেও সরস্বতীর মূর্তি রাখতে একেবারেই ভুলবেন না।
৪) পড়াশোনার সরঞ্জাম, বই, খাতা, পেন্সিল, কলম, এগুলি যে দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ প্রদত্ত সেগুলি সম্পর্কে শিশুদের ভালো মতো বোঝাতে পারলেই তাদের মধ্যে একটা শ্রদ্ধা ভাব কাজ করে। সে ক্ষেত্রে পড়াশুনার প্রতি তাদের একটা মনোযোগ সৃষ্টি হয়। আর পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার ক্ষেত্রে তাদের আরো বেশি আগ্রহ প্রকাশ পায়।
৫) ভক্তি তে থাকে অনেকখানি শক্তি। তাই ভক্তি ভরে কোন কিছু করলে সেটা কখনোই বিফলে যায় না। দেবী সরস্বতীর পূজা থেকে শুরু করে পড়াশোনা সব কিছুতেই যদি মনোযোগ ও ভক্তি থাকে, তাহলে অবশ্যই জীবনে অনেক উন্নতি করা সম্ভব হবে।