ঘরোয়া অত্যাচার বা হিংসা থেকে কিভাবে বাঁচবেন? সঠিক আইনি পদ্ধতি জানুন

ঘরোয়া হিংসা অথবা ঘরোয়া অত্যাচার থেকে সুরক্ষিত ও বাঁচার উপায় কি? এর জন্য কি করতে হবে? জানুন ঘরোয়া অত্যাচার বা হিংসা থেকে বাঁচার সঠিক আইনি পদ্ধতি।

ভারতে এমন ঘরোয়া হিংসা অথবা অত্যাচার দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে এবং এটি খুবই বিপদজনক বিষয় প্রমাণিত হচ্ছে। এছাড়া ভারতীয় মহিলাদের বিরুদ্ধে এই অত্যাচার বৃদ্ধির বাস্তবিকতা দেখলে অবাক হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ধারা জারি করা রাষ্ট্রীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা এন এইচ এফ এস – ৪ (NHFS-4) এই রিপোর্ট অনুসারে ১৫ বছর এর বয়সের পর থেকে প্রত্যেক তৃতীয় মহিলা দেশে বিভিন্ন রূপে ঘরোয়া হিংসা অথবা অত্যাচারের শিকার হয়েছেন।

ঘরোয়া অত্যাচার বা হিংসা থেকে কিভাবে বাঁচবেন? সঠিক আইনি পদ্ধতি জানুন
ঘরোয়া অত্যাচার বা হিংসা থেকে কিভাবে বাঁচবেন? সঠিক আইনি পদ্ধতি জানুন

সমীক্ষা অনুসারে ভারতের ১৫ বছরের বয়স থেকে ২৭% মহিলা শারীরিক অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। এছাড়া শহরের মহিলাদের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় মহিলাদের মধ্যে শারীরিক অত্যাচারের অনুভব সব থেকে বেশি। অত্যাচারের মামলাতে যেখানে মহিলারা গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলে শারীরিক শোষণ এর রিপোর্ট করেছেন ক্রমশ ২৯% এবং ২৩% এর উপর ছিল।

ঘরোয়া হিংসা / অত্যাচার অ্যাক্ট (act): 

ঘরোয়া অত্যাচারের থেকে মহিলাদের সংরক্ষণ অধিনিয়ম 2005 (PWDVA)  অত্যাচার এর একটি পরিভাষা প্রদান করা হয়, যা কিনা ব্যাপকভাবে আর শারীরিক, মৌখিক, যৌন এবং আর্থিক অত্যাচার ও এই অত্যাচার এর মধ্যে শামিল রয়েছে। আর এই রকমের অত্যাচার এর বিপদ বাস্তবিক গতিবিধি দুই ক্ষেত্রেও কিন্তু শামিল করা যেতে পারে।

এছাড়াও PWDVA বৈবাহিক ধর্ষণ কেও যুক্ত করা হয়ে থাকে। যা কিনা বে-আইনি যৌতুক চাওয়ার বিষয়টিও যুক্ত করা যেতে পারে। এছাড়া যৌতুক বিষয় নিয়ে মহিলাদের উপর দুর্ব্যবহার করা এই অত্যাচারের মধ্যে শামিল আছে।

অপরাধী ঘরের মধ্যেই, ঘরোয়া অত্যাচারের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ স্বামীরাই অপরাধী হয়ে থাকে:

৩১% বিবাহিত মহিলা নিজেদের স্বামীর দ্বারা শারীরিক, যৌন এবং মানসিক অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। সবথেকে সামান্য প্রকার শারীরিক অত্যাচারের মধ্যে ২৭% এছাড়া মানসিক অত্যাচারের মধ্যে ১৩% বলা যেতে পারে।

সমীক্ষা তে বলা হয়েছে যে, যে বিবাহিত মহিলা ১৫ বছর বয়সে শারীরিক অত্যাচারের শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে ৮৩% তাদের বর্তমান স্বামীর অত্যাচারের অপরাধের রিপোর্ট করেছেন। তাছাড়া যে সমস্ত মহিলারা বিবাহ করেন নি তাদের জন্য শারীরিক অত্যাচারের অনুভব সবথেকে সাধারণ অপরাধের মধ্যে পড়ে।

যেখানে মা অথবা সৎ মা দ্বারা অত্যাচারিত হওয়ার ক্ষেত্রে ৫৬%, বাবা অথবা সৎ বাবা ৩৩% বোন অথবা ভাই ২৭%, শিক্ষক ১৫ %, শামিল রয়েছে এই অত্যাচারের মধ্যে।

এছাড়া সবথেকে চিন্তা করার বিষয় হলো, প্রায় মহিলাদের বিবাহের পর শারীরিক আঘাতের অনুভব হয়েছে অথবা এমন অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে। যেখানে ৮% শামিল রয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে অনেক মহিলা চোখে আঘাত পেয়েছেন, হাতে অথবা পা এ আঘাত পেয়েছেন।

আবার শারীরিক অত্যাচারের ফলে আঘাত খুবই গভীর, হাড় ভাঙ্গা, দাঁত ভেঙে যাওয়া, এছাড়া অন্য কোনো গুরুতর চোট লেগে গিয়েছে, তবুও এই অত্যাচারের শিকার হওয়া কেবল মাত্র ১৪% মহিলাই এই অত্যাচারকে থামানোর জন্য সাহায্য চেয়েছেন।

কিন্তু তাদের উপর হওয়া অত্যাচারের থামানোর জন্য যে চেষ্টা, সেটাই শুধুমাত্র চিন্তা করার বিষয় নয়। ভারতীয় মহিলাদের আশ্চর্যজনক ভাবে এই ঘরোয়া অত্যাচারের সমর্থক ও আছেন অনেক মহিলা।

সমীক্ষা অনুসারে জানা যায় যে, ভারতের ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সের মধ্যে মহিলাদের ঘরোয়া অত্যাচারের সবথেকে বেশি সমর্থক ছিলেন। যার মধ্যে চুক্তি অথবা বোঝাপড়ার মধ্যে ৫৪.৮% মহিলা ছিলেন।

এছাড়া কম বয়সী মহিলাদের সংখ্যা খুবই কম ছিল। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭.৭% মেয়েরা স্বামীর দ্বারা এই অত্যাচার কে সহমত জানিয়েছেন।

ঘরোয়া অত্যাচারের প্রতি মহিলাদের দৃষ্টিকোণ এই সামান্য ভেদাভেদ, শহর অঞ্চল এবং গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত্রে দেখা গিয়ে থাকে। যেখানে সারাদেশে সবমিলিয়ে শামিল আছে ৫৪.৪% গ্রামীণ মহিলা ধর্ষণ এর জন্য সহমত ব্যক্ত করেছেন। কেবল ৪৬.৮% শহরাঞ্চলে মহিলা এই ধরনের অত্যাচারকে সমর্থন করেছেন।

ঘরোয়া অত্যাচার এবং যৌন অত্যাচার: 

যৌন অধিকার ভারতীয় মহিলাদের জন্য একটি গুরুতর চিন্তার বিষয়। স্বীকার করার মধ্য দিয়ে ভারতে ৬% মহিলা নিজেদের জীবন কালে যৌন অত্যাচারের শিকার হওয়ার সূচনা দিয়েছেন।

৮৩% থেকে আরও বেশি যৌন অত্যাচারের শিকার হওয়া বিবাহিত মহিলাদের বর্তমান স্বামী আর ৯% অপরাধী দের আগের স্বামীর রিপোর্ট করা হয়েছে। মহিলাদের দ্বারা সবথেকে বেশি যৌন অত্যাচারের মাত্রা এই ছিল যে, মহিলাদের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও স্বামী জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক রাখার জন্য শারীরিক অত্যাচার করেছে।

প্রায় ৪% মহিলারা বলেছেন যে, যৌন সম্পর্ক রাখার জন্য বিভিন্ন রকমের হুমকি এবং আরো অন্যান্য পদ্ধতি অবলম্বন করে মহিলাদের বাধ্য করা হয়েছে। আর ৩% মহিলা বলেছেন যে, তাদের স্বামী তাদের অন্যান্য যৌন ক্রিয়া কর্ম করার জন্য বাধ্য করেছেন, যা কিনা সেই মহিলারা কখনোই করতে চাইতেন না।

ভারতীয় দণ্ডবিধি আই পি সি (IPC) ধারা 375 বিবাহের জন্য জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক কে অপরাধ হিসেবে মানা হয়, যখন স্ত্রীর বয়স ১৫ বছরের কম হয়ে থাকে। বৈবাহিক ধর্ষণ এর সমাধান করার জন্য ঘরোয়া অত্যাচার অধিনিয়ম 2005 (PWDVA) মহিলাদের সুরক্ষার জন্য অবলম্বন হতে পারে।

PWDVA যাও 2006 তে জারি করা হয়েছে, যা বৈবাহিক ধর্ষণের বিষয়কে রেখাঙ্কিত করে থাকে। তাছাড়া এই অপরাধের জন্য কেবলমাত্র নাগরিকদের সচেতন থাকতে হবে।

ঘরোয়া অত্যাচারের অভিযোগ: 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) 2017 নভেম্বরে নিজের রিপোর্টে পাওয়া ভারতে যৌন অত্যাচারের শিকার মহিলাদের বিচার এবং গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সহযোগিতা প্রাপ্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাধা বিপত্তি সম্মুখীন হতে হবে।

রিপোর্ট এভরিওয়ান ব্লেমস মি” অনুসারে ভারতে যৌন অত্যাচার থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের জন্য বিচার এবং সহযোগিতা তেও অনেক রকম বাধা রয়েছে।

ধর্ষণ এবং আরো অন্যান্য যৌন অত্যাচার থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য বা সুরক্ষিত থাকা মহিলারা এবং মেয়েরা সাধারণত পুলিশ স্টেশন আর হাসপাতলে বিভিন্ন রকমের অপমান সহ্য করে থাকেন।

ভারতীয় আইন কানুন অনুসারে যৌন অত্যাচারের অভিযোগ দায়ের করতে যদি অস্বীকার করেন কোন পুলিশ আধিকারিক, তাহলে দুই বছরের জেল এর সাজা হতে পারে।

এছাড়া হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তে পুলিশ সবসময় প্রথম সূচনা রিপোর্ট অর্থাৎ এফ আই আর যদি না করেন, পুলিশের বিষয়টি খতিয়ে দেখা শুরু করার প্রথম পদক্ষেপ হবে। বিশেষ করে কোনো ক্ষেত্রে যদি অভিযোগকারী পীড়িত, আর্থিক এবং সামাজিক ভাবে খুবই দুর্বল হয়ে থাকেন।

ভারতের ঘরোয়া অত্যাচার, যৌন অত্যাচার এবং বৈবাহিক ধর্ষণের অধিকাংশ মামলাতে কখনোই কোন রিপোর্ট করা হয় না। এই আধারের উপর নির্ভর করে রাষ্ট্রীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা আর রাষ্ট্রীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো (NCRB) এর মধ্যে তুলনা করার সময় এই মামলাতে খুবই কম রিপোর্ট করা হয়ে থাকে।

প্রশিক্ষিত পরামর্শদাতা দের অভাব, যা কিনা ঘরোয়া দুর্ব্যবহার এর শিকার হওয়া মহিলাদের সাহায্য করতে পারে। আর আইনি সহযোগিতা পর্যন্ত তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একজন প্রশিক্ষিত পরামর্শদাতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অনেকখানি।

ঘরোয়া অত্যাচারকে থামানোর জন্য শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা:

ঘরোয়া অত্যাচারের কারণ হতে পারে যে বিষয়টি সেটি হল সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, শিক্ষা যা কিনা কোন উপার্জন অথবা আয় অথবা বয়সের এর থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, শারীরিক এবং যৌন অত্যাচারের অনুভব স্কুল শিক্ষার শিক্ষার সাথে সাথে ঘটতে পারে।

স্কুলের শিক্ষা চলাকালীন শারীরিক অত্যাচারের রিপোর্ট মহিলাদের ১২% ১২ বছরের বেশি শিক্ষাপ্রাপ্ত করা মহিলাদের মধ্যে ৩৮% থেকে কম এমন অত্যাচারের শিকার হয়েছেন।

এই ভাবে যৌন অত্যাচারের অনুভব ১২% অথবা ১২ বছরের বেশি বয়স্ক মহিলাদের স্কুলের শিক্ষার সাথে সাথে ১% থেকে ৩% পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষার সাথে সাথে দ্রুতগতিতে ঘটতে পারে।

তবে এমন পরিস্থিতিতে আপনি সহজেই পুলিশ স্টেশনে অথবা আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। আপনার সাথে হওয়া এই সমস্ত অত্যাচারের বিরুদ্ধে। যার ফলে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে আপনি সঠিক বিচার পাবেন আর অপরাধীরাও পাবে শাস্তি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top