ভারতে কিভাবে মামলার জন্য আইনি নোটিশ পাঠানো হয়? জানুন পদ্ধতি

মামলার জন্য কোন ব্যাক্তিকে কিভাবে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়? আইনি নোটিশ পাঠানোর নিয়ম কি? আসুন জেনে নিন কোন মামলার জন্য আইনি নোটিশ পাঠানোর পদ্ধতি। 

চুক্তিসংক্রান্ত নোটিশ, বৈবাহিক সমস্যা বিষয়ক, আলোচনার সত্যতা ও প্রমাণাদি হিসেবে এবং নাগরিক বিষয়ে দেশের মানুষ আইনি নোটিশ প্রায়শই একে অন্যের নিকট প্রেরণ করে থাকে।

এটি একটি সাধারণ বিষয়। আইনি নোটিশ মূলত সতর্কীকরণ একটি বার্তা, যা কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের পূর্বে প্রাপককে সতর্ক করতে পাঠানো হয়। এর আগে অবশ্যই মৌখিকভাবে সতর্ক করতে হবে।

ভারতে কিভাবে মামলার জন্য আইনি নোটিশ পাঠানো হয়?
ভারতে কিভাবে মামলার জন্য আইনি নোটিশ পাঠানো হয়?

আইনি নোটিশ পাঠাতে হলে বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে, কেন নোটিশ পাঠানো হল তা সংক্ষেপে কিন্তু যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আর এই বিষয়গুলো বিশদভাবে বর্ননা করার জন্যই আমাদের আজকের আয়োজন।

চলুন প্রিয় পাঠক দেরী না করে আজকের মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। ভারতে যেভাবে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়:-

আইনি নোটিশ কী?

আইনি নোটিশটি মূলত একটি অভিযোগ,যা স্পষ্ট ও সহজ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তথ্য এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা হয়। এখানে অভিযোগের মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা সত্তা অন্য ব্যক্তি বা সত্তাকে কিছু নির্দিষ্ট কাজ করতে বা না করার জন্য আদেশ বা নিষেধ বা অনুরোধ করে থাকে।

আইনি নোটিশ প্রেরণকারীকে আইনগত বিধি মেনে তারপর প্রাপককে পাঠাতে হবে। সাধারণ কথায়, এটি একটি আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ যেখানে আপনি অন্য ব্যক্তিকে নোটিশের মাধ্যমে বলছেন যে আপনি তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আপনার মামলা দায়ের করার আগে এটি একটি সতর্কীকরণ পদক্ষেপ। যে ব্যক্তি নোটিশ পাঠায় তাকে প্রেরক এবং যাকে নোটিশ পাঠানো হয় তাকে প্রাপক বা ইংলিশে এড্রেসী বলা হয়।

একটি নোটিশ এ জন্য দেওয়া হয়, প্রাপক বা এড্রেসী যাতে একটি যৌক্তিক পদ্ধতিতে তার কাজের পক্ষে যুক্তি এবং কারণ উপস্থাপন করার সুযোগ পান। আর যখন কোন সমাজ বিরোধী বা অসুবিধাজনক কাজ বারবার কেউ করে তখন তাকে সতর্ক করতেই মূলত আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।

আইনি নোটিশ বেশ কিছু বিষয়ে পাঠানো হয়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

সম্পত্তি সম্পর্কিত বিরোধ, বিবাহ সংক্রান্ত সমস্যা, বাদ্যযন্ত্র, গান-বাজনা বা উচ্চশব্দ নিয়ে সমস্যা, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি,
বেতন না দেওয়া, বীমা দাবী ইত্যাদি প্রদান সম্পর্কিত ইস্যু ইত্যাদি।

কীভাবে আইনি নোটিশ খসড়া করবেন?

উপরে উল্লিখিত বিভিন্ন ইস্যুর জন্য আইনি নোটিশ দাখিল করা যেতে পারে। তবে যদি কেউ সরকারের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা দায়ের করতে চায় তবে সেই ব্যক্তিকে দেওয়ানী মামলা দায়েরের আগে সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থাকে আইনি নোটিশ দিতে হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, আইনি নোটিশ প্রদানের পূর্বে মৌখিক বা লিখিত সতর্কতা জানাতে হবে। নাগরিক কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ৮০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যদি কেউ কোন সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কোন কাজের জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায় তবে সরকার বা সরকারী কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ প্রেরণের বিধান রয়েছে।

এক্ষেত্রে নোটিশের উদ্দেশ্য হল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তার ক্রিয়াকলাপটি পুনরায় বিবেচনার জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত সময় প্রদান করা অথবা উক্ত কাজের জন্য নোটিশ প্রেরণকারীর যে ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া।

আইনি নোটিশ তৈরির পদক্ষেপগুলি হল:

প্রথমত, একজন আইনজীবির সাথে যোগাযোগ করা: একজন আইনজীবির মাধ্যমে একটি আইনি নোটিশ পাঠাতে হবে এবং প্রথমে অবশ্যই আইনজীবীর কাছে বিষয়টি নিয়ে দেখা করে পরামর্শ চাইতে হবে।

দ্বিতীয়ত- তথ্য ভাগাভাগি করা: সমস্ত তথ্য আইনজীবির কাছে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা, যেমন কার কাছে নোটিশ যাবে তার নাম, ঠিকানা, সমস্যা, অভিযোগ এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ যা চাওয়া হবে।

তৃতীয়ত – আইনি নোটিশ প্রদানের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করা,নোটিশ দাখিলের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি আইনজীবীর কাছে সরবরাহ করতে হবে যাতে তা নোটিশে উল্লেখ করা যায়।

চতুর্থত – কেন উকিল নোটিশটি প্রেরণ করা হচ্ছে, পূর্ববর্তী যোগাযোগ সম্পর্কিত তথ্য, এবং কতদিনের মধ্যে মামলা দায়ের করা হবে, বা কোন সতর্কতা বাস্তবায়ন করতে বলা হচ্ছে সেই নির্দিষ্ট সময়টি নোটিশে উল্লেখ করতে হবে।

যেমন এলাকায় উচ্চশব্দে গান-বাজনা বা মাইক বাজানো ৭ দিনের মধ্যে বন্ধ করার আইনি নোটিশ।

পঞ্চমত – নোটিশটি প্রেরণের আগে, প্রেরক এবং আইনজীবিদের দ্বারা যথাযথভাবে স্বাক্ষরিত হতে হবে এবং নিরাপদে পোস্ট অফিস বা কুরিয়ারের মাধ্যমে আইনি নোটিশটি প্রাপকের ঠিকানায় পাঠাতে হবে।

ভবিষ্যত তথ্য-প্রমাণের জন্য নোটিশের একটি অনুলিপিও আইনজীবীর কাছে রক্ষিত থাকা প্রয়োজন।

আইনি নোটিশে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-

আইনি নোটিশের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য অবশ্যই আগে আইনজীবীর কাছে জমা দিতে হবে। আইনি নোটিশ পাঠানোর সময় নোটিশে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করা উচিত।

প্রাথমিক তথ্য হিসেবে প্রেরকের নাম, ঠিকানা এবং বিবরণ নোটিশে সঠিকভাবে এবং স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। নোটিশ পাঠানোর কারণ সম্পর্কিত বিবৃতি নোটিশের সাধারণত অনুচ্ছেদে লিখতে হবে এবং প্রতিটি অনুচ্ছেদে অভিযীগের কারণকে সমর্থন করে যুক্তি বা বিবৃতি দিতে হবে।

এর মধ্যে অভিযোগের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং প্রাপকের বিরুদ্ধে প্রেরকের যে অভিযোগ ছিল তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ক্ষতিপূরন চাইতে হলে তা শেষ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করতে হবে এবং কেন ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হয় সে বিষয়ে প্রেরকের যুক্তি যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

শেষ কথা

দেশের নাগরিকদের অধিকার, সুবিধা-অসুবিধা, ব্যক্তিগত ক্ষতি, পারিবারিক বা ব্যবসায়িক সমস্যা, ব্যাংক, বীমা সংক্রান্ত আর্থিক সমস্যা ইত্যাদি কারণে এক পক্ষ অপর পক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে থাকে।

মামলা দায়েরের পূর্বে এটা সর্তকীকরণ। যাতে অভিযোগের কারণ, যূক্তি, ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়। আইনি নোটিশ আইন মেনে যথাযথ যুক্তি এবং তথ্য, প্রমানাদি সহকারে প্রাপককে প্রেরণ করতে হয় এবং তা অবশ্যই একজন আইনজীবীর মাধ্যমে পাঠাতে হবে।

তাই কাউকে কোন যোক্তিক বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠাতে চাইলে তথ্য প্রমাণ, দলিল সহকারে আইনজীবীর সাথে দেখা করতে হবে। এবং সমস্ত নিয়ম মেনে আইনি নোটিশ পাঠাতে হবে। সুপ্রিয় পাঠক আশা করি আইনি নোটিশ কি, কেন পাঠানো হয় এবং পাঠানোর নিয়ম সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।

সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top