সংসার খরচ কমিয়ে জমা করুন অনেক টাকা এই আকর্ষণীয় উপায় অবলম্বন করে

আপনি চাইলে কমিয়ে ফেলতে পারেন আপনার সংসারের খরচ, সেই টাকা দিয়ে আপনি পূরণ করতে পারেন আপনার ছোট ছোট স্বপ্ন গুলো। আসুন জেনে নিন কিছু আকর্ষণীয় উপায়।

দৈনন্দিন জীবনে যতদিন যাচ্ছে আমাদের প্রয়োজনীয়তা এবং চাহিদা পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। মন থেকে চাইলেও কোনমতেই কমানো যাচ্ছে না সংসারের খরচ, তাইতো ! আগের তুলনায় ব্যয় হয়ে পড়েছে বেশি।

সেই কারণেই মাস শেষ হতে না হতেই মাথায় হাত পড়ছে অনেকেরই। কিন্তু আপনি চাইলেই, চেষ্টা করলে সংসারের খরচ যেমন কমিয়ে আনতে পারেন, তেমনি সেই বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে ভবিষ্যতে কোনো কাজে লাগাতে পারেন।

নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদেও যে হারে মূল্যবৃদ্ধি বেড়ে চলেছে সেই তুলনায় আয় এর অনুপাত কিন্তু কমেছে অনেকাংশে। তাই অনেকেই মন চাইলেও খরচ কিছুতেই কমাতে পারছেন না।

সংসার খরচ কমিয়ে জমা করুন অনেক টাকা এই আকর্ষণীয় উপায় অবলম্বন করে
সংসার খরচ কমিয়ে জমা করুন অনেক টাকা এই আকর্ষণীয় উপায় অবলম্বন করে

সেই ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে এমন কিছু উপায় অবলম্বন করা জরুরী যার জন্য সংসার খরচ অনেকটাই কমে আসবে আপনার। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক সংসার খরচ কমানোর সেই আকর্ষণীয় উপায়গুলো –

১. ঋণ শোধ করুন:

কোন কারণে হয়তো আপনার কোন কাজে ব্যবহৃত করার জন্য এই ঋণ নিয়ে থাকতে পারেন সেই ক্ষেত্রে মাসে বেতন পাওয়ার সাথে সাথেই ঋণ শোধ করার চেষ্টা করুন। যদি টাকার পরিমাণটা বেশি হয় তাহলে অল্প হলেও শোধ করার চেষ্টা করুন। সম্পূর্ণ ঋণ শোধ করতে না পারলেও। ঋণ শোধ না করে সঞ্চয় এর পথে ভুল করেও পা বাড়াতে যাবেন না।

নতুন করে ঋণে  জড়াতে যাবেন না। অনেকেই আছেন ঋণ করে হলেও ভালো মন্দ খেতে হবে, ভালো-মন্দ পরতে হবে, শো অফ করতে হবে, তারপর এই ঋণ শোধ করতে গেলে দেখা যাচ্ছে দিনদিন টাকা বেড়ে পরিমাণটা হয়েছে অনেক। তখন আর কোনরকম রাস্তা খুঁজে পাবেন না। তাই আপনার যেটুকু আছে সেটুকু দিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করুন। ঋণ করে ভাল-মন্দ খাবার কোন মানে নেই।

২. প্রতিদিন কিছু কিছু করে জমানো:

প্রতিদিন কিছু হলেও টাকা জমানোর চেষ্টা করুন। সেটা হতে পারে ১০ টাকা অথবা ১০০ টাকা। আপনার যেমন হাতে থাকবে তেমনটা আপনি জমাতে পারেন। অনেকেই ভান্ডার ব্যবহার করে সেখানে দুই টাকা থেকে দশ টাকার কয়েন পর্যন্ত তারা জমিয়ে থাকেন। এটাও কিন্তু একটা ভাল কাজ। আপনার অসময়ে এই টাকাটাই আপনাকে ভরসা যোগাবে।

যত ছোটই টাকা হোক না কেন সেটা জমানোর চেষ্টা করুন, তারপর তার কথা বেমালুম ভুলে যান। যতই অসুবিধা আসুক না কেন সেই টাকায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। যে উদ্দেশ্যে টাকাটা আপনি জমিয়েছেন সেই উদ্দেশ্যেই টাকাটা খরচ করুন।

৩. সন্তানকে ও সঞ্চয় করতে শেখান:

বাবা-মায়ের দেখাদেখি সন্তান ও তাদের আচার-আচরণ আয়ত্ত করতে শেখে। তাই আপনি যখন অল্প হলেও টাকা জমাতে থাকবেন সেটা দেখে আপনার সন্তানও কিন্তু সঞ্চয় এর বিষয়টা বুঝতে পারবে।

সে ক্ষেত্রে সে অযথা বেকার কাজে টাকা নষ্ট করবে না। তার পরিবর্তে সে সেই টাকাটা জমিয়ে রাখতে শিখবে। সন্তানকে ছোট্ট একটা পিগি ব্যাংক কিনে দিন। সেটা মাটির হতে পারে অথবা প্লাস্টিকের।

এখন বাচ্চাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অনেক রকমের পুতুল আকৃতির ভান্ডার কিনতে পাওয়া যায় সেগুলো কিনে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে তাদের উৎসাহ টা অনেকটা বৃদ্ধি পাবে, এবং তাকে সেই ভান্ডারে টাকা জমাতে উৎসাহিত করুন।

৪. কিছু কেনার আগে ভেবে দেখুন:

নিত্যপ্রয়োজনীয় আমাদের অনেক কিছু জিনিসের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে আমরা অনেক কিছু কেনাকাটা করে থাকি। তবে প্রয়োজনীয় ছাড়াও অপ্রয়োজনীয় জিনিস আমাদের কেনাকাটায় অনেক ক্ষেত্রে বেশি হয়ে যায়।

যেটা বাড়িতে নিয়ে এসে দেখা যাচ্ছে দুদিন পরে ঘরের এক কোণে পড়ে আছে কোন ব্যবহারেই আসছে না। অনেকের আবার এরকম অভ্যেস আছে যে, কোন দোকানের সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে কোন কিছু পছন্দ হলে হুট করে কিনে ফেলা। এক্ষেত্রে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে ঘর ভর্তি হয়ে যায়।

বাইরে বেরোলে অনেক জিনিসই পছন্দের মধ্যে পড়বে তাহলে প্রত্যেকটা জিনিস কিনে ফেলা সম্ভব নয়। তাই কোন কিছু কেনার আগে একবার অন্তত ভেবে দেখবেন যে সেই জিনিসটা আদৌ কি আপনার প্রয়োজন আছে ! যদি এমনটা হয় তাহলে সময় নিন, দরকার হলে দুদিন পরে কিনুন।

৫. লিস্ট তৈরি করুন:

কেনাকাটা করতে যাওয়ার আগে আপনার কি কি প্রয়োজন, সংসারে কী কী প্রয়োজন, ঘরের কি কি প্রয়োজন, কি কি জামাকাপড় আপনি কিনবেন, কোনটা আছে, আর কোনটা নেই, সবকিছু মিলিয়ে একটা লিস্ট তৈরি করুন। তারপর কেনাকাটা করতে যান।

লিস্টের বাইরে একটা জিনিসও কেনাকাটার প্রয়োজন আপনার হয়তো নাও হতে পারে। লিস্ট অনুযায়ী কেনাকাটা করে ফিরে আসলে আপনার অনেক টাকা বেঁচে যাবে। যখন আপনি এই লিস্ট ছাড়া কেনাকাটা করতে যাবেন তখন কিন্তু অতিরিক্ত অনেক জিনিস আপনার কেনা হয়ে যাবে।

৬. লক্ষ্য ঠিক করুন:

জীবনে অনেকের অনেক কিছু স্বপ্ন থাকে। সব স্বপ্ন একেবারে পূরণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তাই আপনার ভবিষ্যতে বড় রকমের খরচ কি কি আছে তার লিস্ট তৈরি করে লক্ষ্য ঠিক করে রাখুন। যেমন কারো বাইক অথবা গাড়ির স্বপ্ন থেকে থাকলে কত বছর পর কিনতে পারবেন সেটা  লক্ষ্য স্থির করুন।

তারপর সেই অনুযায়ী খরচ করার চিন্তা-ভাবনা নিন, এক বছর পর টিভি, এক মাস পরে মাইক্রোওভেন,তার জন্য আপনাকে এখন থেকেই টাকা জমানো প্রয়োজন। এ অনুযায়ী চললে আপনার ছোট ছোট স্বপ্নগুলো পূরণ করতে বেশি কষ্ট পেতে হবে না। ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে, তা অনায়াসেই করতে পারবেন আপনি।

৭. বাজেট অনুযায়ী চলা:

কত টাকার মধ্যে আপনার ভালভাবে সংসার খরচ চালিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাবে সেটার একটা বাজেট তৈরি করুন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। তার বাইরে অতিরিক্ত খরচ নয়। সুবিধা অসুবিধার জন্য আলাদা কিছু বরাদ্দ রেখে একটা বাজেট তৈরি করে নিলে বছর শেষে যেটা আপনার বাঁচবে সেটা আপনার সঞ্চয়ের খাতায় জমা হয়ে থাকবে।

৮. খরচের হিসাব রাখা:

প্রতিদিন কোথায় কত খরচ হয়েছে তা যদি আপনি হিসাব করে রাখেন এবং মাসের শেষে সেই হিসাব টা নিয়ে বসেন, তাহলে দেখতে পাবেন কোন কোন খাতে আপনার বেশি খরচ হয়েছে। তারপর থেকে সেই সব খাতে খরচ কমানোর চেষ্টা করুন।

৯. বাইরে খাওয়ার প্রবণতা কমানো:

অনেকেরই এই রেস্টুরেন্ট বা বাইরে খাওয়ার প্রবণতা থেকে থাকে প্রচুর। তারা ঘরের খাবারের থেকে বাইরের খাবার খেতে বেশি পছন্দ করেন। বাজারে নতুন রেস্টুরেন্ট চালু হয়েছে, সেজন্য পরিবারকে সাথে নিয়ে সেই রেস্টুরেন্টে খেতে যেতেই হবে এমন তো কোন মানে নেই।

এই প্রবণতা থাকলে কমানোর চেষ্টা করুন। যেখানে প্রতি সপ্তাহে বাইরে খাওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে, তাহলে সেটা কমিয়ে মাসে ১ বার করার চেষ্টা করুন। মাসের শেষে হিসাব করলে আপনিই বুঝতে পারবেন যে, কি পরিমান টাকা আপনি বাঁচাতে পেরেছেন।

১০. ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমান:

আপনার ক্রেডিট কার্ড আছে, তাই শপিংয়ে যাওয়ার সময় ক্রেডিট কার্ডটা সাথে নিয়ে চলে গেলেন, ব্যস আর কোন কথা নেই। এক্ষেত্রে শপিংয়ে যাওয়ার আগে ক্রেডিট কার্ড টা কে বাড়িতে ভুলে চলে যাওয়ার চেষ্টা করুন। এর জন্য আপনার মন চাইলেও আপনি ইচ্ছামত টাকা খরচ করতে পারবেন না। এভাবেও আপনার টাকা আপনি বাঁচাতে পারেন।

১১. ব্র্যান্ডের নেশা ত্যাগ করুন:

বন্ধু-বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে অযথা ব্রান্ডের নেশায় ভুগবেন না। আপনাকে মানাবে এমন পোশাক এবং এক্সেসরিজ ব্যবহার করুন। সেটা কম দামি হলেও কোন ক্ষতি নেই। কমদামি পোশাকেও আপনি ট্রেন্ডিং এ থাকতে পারেন। কেননা আপনি নিজের মানানসই মতো পোশাক আর এক্সেসরিজ ব্যবহার করেছেন যে।

তবে অকারনে আর সবসময় ব্র্যান্ডেড জামাকাপড় না পরে, কিছু ব্র্যান্ডেড জামাকাপড় কিনে রাখতে পারেন বিশেষ কোন অনুষ্ঠানের জন্য। এতে আপনার টাকা এবং স্ট্যাটাস দুটোই বজায় থাকবে।

১২. ছাড়ের সময় জিনিসপত্র কিনুন:

জুয়েলারি থেকে পোশাক বছরের বিশেষ কোনো সময়ে দামে ছাড় দেয়া হয়। চেষ্টা করুন সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপরে এই ছাড়ের সময় জিনিসটা কেনার। এর ফলে আপনার অনেকটা টাকা বাঁচাতে পারবেন যেটা অন্য কাজেও ব্যবহার করতে পারবেন আপনি।

১৩. ঘরের জল, বিদ্যুৎ, গ্যাস এর অপচয় বন্ধ করুন:

দরকার না থাকলে ঘরে জলের কল, ইলেকট্রিক জিনিস, গ্যাস অযথা চালিয়ে রাখবেন না। লাইন অফ করে রাখুন। অনেকে টিভির সুইচ অফ করা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র টিভিটা কে বন্ধ করেন এক্ষেত্রে কিন্তু অনেকটাই কারেন্ট ওই বন্ধ টিভিতেও পুড়তে পারে। যেহেতু টিভির সুইচ অন আছে। এর কারণে আপনার কারেন্ট বিল অনেক কম আসবে। ইলেকট্রিসিটি না থাকলে মোমবাতির পরিবর্তে চার্জার লাইট ব্যবহার করুন।

দিন দিন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রথমেই চেষ্টা করার পরও যখন খরচ কমাতে পারবেন না, তখন কিন্তু হাল ছেড়ে দেবেন না। চেষ্টা করুন অবশ্যই পারবেন। নিজেকে ঠান্ডা রাখতে, সংযত রাখতে হবে এবং জিনিসপত্রের লোভ থেকে একটু হলেও দূরে থাকতে হবে। খরচ কমানো এমন কিছু কঠিন কাজ নয়, আপনার কষ্ট করে উপার্জন করা টাকার ওপর মায়া, আপনার সদিচ্ছা ও সর্তকতাই যথেষ্ট।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top