ব্যাংক একাউন্ট থেকে ঠকিয়ে টাকা বের করে নিলে কিভাবে ফেরত পাবেন?

How to Recover Money After a Fraud Transaction in Bengali: যদি কেউ আপনার একাউন্ট থেকে ঠকিয়ে টাকা বের করে নিলে কি করবেন? কিভাবে ফেরত পাবেন আপনার টাকা? জেনে নিন ব্যাঙ্ক থেকে ঠকিয়ে টাকা বের করে নিলে ফেরত পাওয়ার উপায়।

শুধুমাত্র কাগজপত্রের উপর নির্ভর করে কোন কিছু লেন-দেন করা কেনা-কাটা সবকিছু এখন অতীত। বর্তমান এখন ডিজিটাল যুগ। তাই অনলাইনের মাধ্যমে সিনেমা দেখা, হোটেল বুক করা, ফ্লাইট টিকিট বুক করা, খাবার অর্ডার করা, জামা কাপড় শপিং করা এবং আরো অন্যান্য দৈনন্দিন জীবনের কাজ তো রয়েছেই।

এর সাথে সাথে ক্যাব বুক করা, ফোন কেনা, এমনকি ঘর কেনার জন্য আগে থেকে বুক করা হয়ে থাকে। এই অনলাইনের মাধ্যমে শুধু মাত্র একটি ক্লিকের উপরে নির্ভর করে এ সমস্ত বিষয় গুলি।

ব্যাংক একাউন্ট থেকে ঠকিয়ে টাকা বের করে নিলে কিভাবে ফেরত পাবেন?
ব্যাংক একাউন্ট থেকে ঠকিয়ে টাকা বের করে নিলে কিভাবে ফেরত পাবেন?

আর এই একটি ক্লিক এর উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। যেমন ধরুন অনধিকৃত লেন-দেন আপনার হাতের মাধ্যমে কিন্তু লেন-দেন হয় না। এক্ষেত্রে অনেক সময় অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে।

সাধারণ অনলাইন টাকা পয়সা ঠকানোর ক্ষেত্রে ও শামিল রয়েছে: 

আপনার ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) শেয়ার করা: 

টাকা-পয়সা লেনদেনের ক্ষেত্রে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড / ও টি পি (OTP) এর প্রয়োজনীয়তা হয়। যা কিনা আপনার রেজিস্টার করা মোবাইল নাম্বারে এসে থাকে। আপনার এই ও টি পি যিনি আপনার ফোন কলে রয়েছেন তাকে দেওয়া অথবা অন্য জায়গায় শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

যাতে এই রকম ঠকানোর মতো পরিস্থিতি থেকে বাঁচার উপায় হলো এটা। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ, এছাড়া প্যান কার্ড, আধার কার্ড এর মত আপনার প্রমান পত্রের ফটোকপি ও যেখানে সেখানে শেয়ার করা উচিত নয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঠকানোর মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেটা হল সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, যার অর্থ হলো কোন অন্য ব্যক্তিকে এমনভাবে প্রভাবিত করা, তার জন্য সেই ব্যক্তির টাকা-পয়সা চুরি করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

এ টি এম (ATM) ক্লোনিং: 

আজকাল এ টি এম (ATM) ক্লোনিং এতটাই সাধারণ বিষয় হয়ে গিয়েছে যে যা কিনা যেকোন মুহূর্তে হতে পারে। যেমন ধরুন এই এ টি এম কার্ড আপনি এ টি এম-এ লেনদেনের জন্য ব্যবহার করছেন অথবা আপনার বিল এর ভর পাই করার সময় ব্যবহার করছেন সেই সময়ে এমন পরিস্থিতি হতে পারে।

হ্যাকিং:

বর্তমান যুগ এখন টেকনিকের উপর নির্ভরশীল হ্যাকিং হল, যে কোন ব্যক্তির থেকে টাকা-পয়সা চুরি করার একটি সুবিধাজনক পদ্ধতি বলতে পারেন। সমস্ত ব্যক্তিকে একটি ব্যক্তির মোবাইলে অথবা কম্পিউটারে হ্যাক করা, আর নিজের ব্যাংক একাউন্টে সেই সমস্ত ব্যক্তি সমস্ত অ্যামাউন্ট তার সাথে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস চুরি করা হয়ে থাকে।

চুরি করার ধরন:

বিষয় চুরি করার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেখানে ইম্পোর্টার কোন অন্য ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে থাকেন, যাতে সেই ব্যক্তি ব্যাংক একাউন্টের সমস্ত রকম তথ্য সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলির মধ্যে রয়েছে, যার উপর ভিত্তি করে ঠকবাজ সেই ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। আর সেই অনুসারে সেই ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা কাটতে থাকে অথবা খরচ হতে থাকে।

মোবাইল ঠকবাজি (Smailing): 

অনেক সময় দেখা যায় মোবাইলে অনেক মেসেজ আসে, যা কিনা একেবারেই সত্য নয়। অনেক সময় দেখা যায় কোন ব্যক্তি সেই মেসেজের লিংকে ক্লিক করে সেই বিষয়ে জানার চেষ্টা করেন। তখনই কিন্তু এমন ঠকানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়।

তাই মোবাইলে অযথা কোনো ম্যাসেজ আসলে সেই মেসেজের কোন লিংক অথবা সেই মেসেজটি খুলে কোন ফোন নাম্বারে ফোন করতে বললে সেখানে ফোন কখনোই করবেন না, বা লিংকে ক্লিক করবেন না।

মোবাইলের মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তিকে মূর্খ বানিয়ে কোন এস এম এসের মাধ্যমে তাকে ঠকানো যেতে পারে। আর এই এস এম এস নোটিশ করে থাকে যে, আপনি আপনার একাউন্ট আবার সক্রিয় অথবা আনলক করতে পারেন।

  • উপলব্ধ সেই ফোন নাম্বারে কল করা এবং
  • মেসেজের মধ্যে ইন্টারনেট সাইট লিঙ্ক করা এই সমস্ত বিষয় আপনাকে ঠকানোর জন্য উপযুক্ত।

ফিক্সিং আর ঠকানোর মতো ই-মেইল: 

যা কিনা কোন অপরিচিত ব্যবহারকারী ব্যক্তি কে পাঠানো ই-মেইল ব্যবহার করা যেতে পারে। যেখানে কার্ড নাম্বার, পাসওয়ার্ড এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ডেটা চুরি করা হয়ে থাকে।

মেইল ওয়্যার আর ভাইরাস: 

ঠকানোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলতে পারেন। যেখানে অবাঞ্চিত ইমেইল এর ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে ঠকানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আর এটা তখনই সম্ভব যখন আপনি কিছু ওয়েবসাইটের উপরে যান, সেখান থেকে কিছু ভিডিও আর ফাইল ডাউনলোড করেন।

কেননা হাজার হাজার মানুষ প্রায় প্রতিটি মুহূর্তে এমনই ঠকবাজের পাল্লায় পড়ে থাকেন। সরকারও কিন্তু এই বিষয়ের উপরে বেশ চিন্তিত। তাই এই বিষয়টি যাতে আর না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে বিশেষভাবে।

দেশের প্রায় সমস্ত জেলায় সাইবার সেল এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে এই সমস্ত বিষয় গুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এথিকাল হ্যাকার দের কাজে লাগানো হয়েছে।

এছাড়া অনলাইন কোন টাকা পয়সা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঠকবাজ দের কাছ থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন রকমের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ধরুন ইমেইল এড্রেস, ঘরের ঠিকানা, ডেট অফ বার্থ, সমস্ত জায়গায় দেওয়াটা একেবারেই উচিত নয়।

আর কখনোই ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড এর ব্যক্ত করা কোনোভাবেই সঠিক নয়। আপনার জন্য অনলাইন কোন কিছু বেচা-কেনার উপর। কেননা ঠকবাজ ব্যাংক এর কর্মচারী হওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতে পারেন।

কে কখন এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী?

এই মামলাতে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে গ্রাহকদের, কেননা গ্রাহকদের অসচেতনতার কারণে এমন ক্ষতি হয়ে থাকে। অনধিকৃত লেন-দেন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমন মামলাতে যখন ব্যাংকের দিক থেকে অসতর্কতার মত পরিস্থিতি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কিন্তু গ্রাহকের ক্ষতি পূরণ করার জন্য ব্যাংক সম্পূর্ণ রূপে দায়ী থাকে।

তাছাড়া আপনি যদি ঠকবাজের দ্বারা ঠকে থাকেন তাহলে এক্ষেত্রে একেবারে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। কিন্তু আপনার কার্ড কে ব্লক করে আর কিছু সরল উপায় এর উপরে খেয়াল রেখে আগে যেন কোনরকম ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সে বিষয়ে ক্ষতি থেকে বাঁচতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ যদি আপনি কার্ড এর মাধ্যমে ঠকে থাকেন তাহলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করতে পারেন:-

১) ব্যাংক এ এস এ পি (ASAP) কে নোটিশ করা: 

ভুক্তভোগী ব্যাক্তি কে  খুব তাড়াতাড়ি ব্যাংকে গিয়ে অপরাধের সূচনা দিতে হবে অধি মান 3 দিনের মধ্যে এই নোটিশ করতে হবে। যাতে ব্যাংক খুবই তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে অ্যাকশন নিতে পারে।

২) চুরির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা: 

যদি অনলাইনের মাধ্যমে চুরি করা হয়ে থাকে, যেমন ধরুন কোন ব্যক্তি অনলাইন লেন-দেন করেছেন যার কারণে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটা হয়েছে, তাহলে আপনার কাছাকাছি সাইবার সেলে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

আর যদি অন্য কোন মাধ্যমে আপনার একাউন্ট থেকে টাকা কাটা হয়ে থাকে, যেমন ধরুন এ টি এম কার্ড এর বিবরণ, তাহলে আপনার কাছাকাছি পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

এছাড়াও সরকার এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করার জন্য হেল্পলাইন নাম্বার দিয়ে রেখেছে যেটি হল:-  8691960000. তার সাথে সাথে এর জন্য ওয়েব পেজ ও রয়েছে sachet.rbi.org.in আপনার অভিযোগগুলি জানানোর জন্য এখানে যোগাযোগ করতে পারেন।

পীড়িত ব্যক্তি যে সমস্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে পারেন সেগুলি হল:-

১) আপনার ব্যক্তিগত বিবরণ যেমন ধরুন ব্যাংক একাউন্ট বিবরণ, পিন নাম্বার, পাসওয়ার্ড, ও ঘরের ঠিকানা, সুরক্ষা পত্র এই সমস্ত বিষয়গুলি সুরক্ষিত রাখার জন্য, আর এগুলি কারো সাথে বিশেষ করে কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সাথে শেয়ার না করাই উচিত।

২) আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোন লেন-দেন এর উপরে কড়া নজর রাখার জন্য প্রত্যেক বার যখন আপনি লেন-দেন করেন তখন কিন্তু আপনাকে সজাগ থাকতে হবে। এছাড়াও খুব শীঘ্রই যেকোন সন্দেহ জনক গতিবিধির উপর রিপোর্ট ব্যাংকে দিতে হবে।

৩) যদি আপনি কোন চুরির শিকার হয়ে পড়েন, তাহলে ব্যাংকের লেন-দেনের বিবরণ দিতে হবে আর খুব তাড়াতাড়ি এই সম্বন্ধিত বিষয়ে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

৩) আপনার জন্ম তারিখ / ডেট অফ বার্থ, পাসওয়ার্ড শেয়ার করা থেকে বাঁচুন। কেননা এর মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি যেকোনো ক্ষেত্রে এর খারাপ ব্যবহার করতে পারবেন খুবই সহজে।

ব্যাংকের মাধ্যমে যে সমস্ত উপায় গুলি অবলম্বন করা হয়: 

গ্রাহক যখন এই ঠকানোর রিপোর্ট দিয়ে থাকে ব্যাংকে এবং সেটি প্রাপ্ত করার পর ব্যাংক একাউন্টের এরকম ঠকানোর পরিস্থিতি যাতে না আগে বাড়তে পারে, সেটা থামানোর জন্য খুব তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।

আর এই পরিস্থিতিকে আরও বেশি সুবিধাজনক বানানোর জন্য ব্যাংকে ব্যাঙ্কিং এস এম এস, ইমেইল আইডি, আর ইত্যাদি রকমের বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে গ্রাহকদের ২৪/৭ পরিষেবা দেওয়া হয়ে থাকে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আর তার সাথে সাথে গ্রাহক যেন যে কোনো সন্দেহজনক গতিবিধি এর সূচনা খুব তাড়াতাড়ি ব্যাংকে দিয়ে থাকেন।

ঠকানোর এই রিপোর্ট প্রণালী সুরক্ষিত করার জন্য রেজিস্টার করা অভিযোগ সংখ্যার সাথে অভিযোগ স্বীকার করা গ্রাহকদের খুব শীঘ্রই প্রতিক্রিয়া পাঠানো হয়। তাছাড়া ব্যাংকে এই ঠকানোর মত পরিস্থিতির রিপোর্টিং করার ৯০ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা অবশ্যই প্রয়োজন।

তাহলে, যদি এমন ঠকবাজ এর পাল্লায় পড়ে থাকেন, তাহলে খুব শীঘ্রই সতর্ক হন। আর পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করুন। তার সাথে সাথে ব্যাংকে রিপোর্ট করতে ভুলবেন না।

তবে প্রতিবারই লেন-দেনের সময় সজাগ থাকতে হবে। আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সঠিকভাবে টাকা-পয়সা ডেবিট হচ্ছে কিনা অথবা কাটা হচ্ছে কিনা। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনাকে ঠকানো হচ্ছে কিনা।

অযথা চিন্তিত না হয়ে, সাথে সাথে আপনার কার্ড ব্লক করে তার সাথে সাথে আরো অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। যার ফলে ভবিষ্যতে আরও বড় ক্ষতির মুখ থেকে আপনি বাঁচতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top