ডিভোর্সের জন্য মানসিক অত্যাচার কিভাবে প্রমাণ করবেন? আইন জানুন

যদি কোন রকম মানসিক অত্যাচার বা মানসিক নিষ্ঠুরতা হলে সেই ক্ষেত্রে কিভাবে ডিভোর্স নেবেন? এবং আদালতে অত্যাচার কিভাবে প্রমাণ করবেন? বিস্তারিত জেনে নিন।

আমরা সবাই জানি যে, বিবাহ একটি সুন্দর বন্ধন। আর এই বন্ধন থেকে কিছু বছরের মধ্যে যদি কোনো দম্পতি ডিভোর্সের জন্য মনস্থির করে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে যে সেই সম্পর্কের মধ্যে কোন রকম বোঝাপড়া অথবা ভালোবাসা নেই বললেই চলে।

ডিভোর্সের জন্য মানসিক অত্যাচার কিভাবে প্রমাণ করবেন?
ডিভোর্সের জন্য মানসিক অত্যাচার কিভাবে প্রমাণ করবেন?

না হলে একে অপরের সঙ্গে সারাজীবন কাটানোর মত সিদ্ধান্ত নিয়েও আবার তা থেকে সরে আসার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন বিষয়। তখন একমাত্র, মানুষের নিষ্ঠুরতা মানুষকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দিয়ে থাকে। যার কারণে এমন বিবাহ সম্পর্ক ডিভোর্স পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়।

মানসিক নিষ্ঠুরতা আসলে ক?

হিন্দু বিবাহ অধিনিয়ম 1955 ধারা 13 (I) A তে এক রকম মানসিক নিষ্ঠুরতা এই ডিভোর্স এর ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে উপলব্ধ হতে পারে অথবা পরিচিত হতে পারে।

যখন কোন পক্ষ তা সেটা হতে পারে ছেলেপক্ষ অথবা মেয়েপক্ষ দ্বারা মানসিক অত্যাচার যা কিনা চরমসীমায় গিয়ে পৌঁছায়, যেটা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বন্ধন কে একেবারে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। যার পরিণাম স্বরূপ একটি পক্ষের জন্য অন্য পক্ষের সাথে একসাথে বসবাস করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে ওঠে।

এছাড়া মানুষের নিষ্ঠুরতা হোক অথবা মানসিক অত্যাচার সবকিছু কিন্তু সমাজের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে বেশি পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। যে সমাজে বসবাস করেন তথা তাদের সামাজিক মূল্য স্থিতি এবং পর্যাবরণ রয়েছে যার মধ্যে, তারা থাকতে পারেন।

মানসিক নিষ্ঠুরতা অথবা মানসিক অত্যাচার আসলে কি করে থাকে?

ছেলেপক্ষ হোক অথবা মেয়ে পক্ষ, দুই পক্ষের মধ্যে যেকোনো এক পক্ষ থেকে ব্যবহার, আচার আচরণ খুবই খারাপ এবং গম্ভীর হয়ে থাকে তাহলে এমন পরিস্থিতিতে মানসিক অত্যাচার অথবা মানুষের নিষ্ঠুরতা বলা যায়। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে যেটা, দৈনন্দিন জীবনে একটা মানুষের পক্ষে সহ্য করা সীমাহীন হয়ে পড়ে।

আলাদা আলাদা বিবাহ মামলাতে এই বিবাহ মামলার উপর নির্ভর করে মানসিক নিষ্ঠুরতা হোক অথবা মানসিক অত্যাচার ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এই জন্য সবক্ষেত্রে কিন্তু একই রকম ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।

ভারতের সর্বোচ্চ বিচারালয় অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা বর্ণিত অনুসারে মানুষের নিষ্ঠুরতাকে পরিচিত করার জন্য উদাহরণ হিসেবে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো:-

১) কোন পক্ষ তার মানসিক অত্যাচার এমন পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে যা কিনা স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনকে ভেঙে দিতে পারে। যার পরিণাম স্বরূপ একজন আর একজনের সাথে সারাজীবন থাকা তো দূরের কথা, কয়েক মাসের জন্যও একসাথে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে ওঠে।

২) দুই পক্ষের সম্পূর্ণ বৈবাহিক জীবন এর উপর নির্ভর করে মূল্যায়ন করার উপর এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, যে পক্ষ এমন নিষ্ঠুরতা প্রকাশ করছেন তার আচরণে অপরপক্ষ এতটাই ভেঙে পড়েন যে একসাথে থাকা কোন মতেই সম্ভব হয়ে ওঠেনা।

৩) শান্ত ভাব অথবা স্নেহ, ভালোবাসা কমে যাওয়া তার সাথে অত্যাচার দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যাওয়া। তবুও যদি সহ্য করা অবস্থায় একসাথে থাকার কথা চিন্তা করা যায়, তবে প্রতিনিয়ত খারাপ ভাষায় কথা বলা, এমনকি উদাসীনতা, উপেক্ষা করা যা কিনা সীমাহীন হয়ে পড়ে।

যার মধ্যে দিয়ে একজন স্বামী অথবা স্ত্রী সেই বৈবাহিক জীবন সম্পূর্ণ করার জন্য একেবারে তৈরি থাকেন না। শেষে বাধ্য হয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে তাদের দুজনকে আলাদা থাকতে হবে।

৪) মানসিক নিষ্ঠুরতা অথবা মানসিক অত্যাচার হলো মনের একটি অবস্থা বা পরিস্থিতি। কোন রকম রোগের কারণে বা হতাশাগ্রস্ত হয়ে এমন ভাবনা চিন্তা মানুষের মাথায় চলে আসে। যেটা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের ভাঙ্গন ধরায়, যা কিনা একটি সুন্দর বৈবাহিক জীবন ভেঙে যেতে বেশিদিন সময় নেয় না।

৫) অপমানজনক ব্যবহার, কোন স্বামী অথবা স্ত্রীর জন্য জীবনের সবথেকে বেশি যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি। এক্ষেত্রে কষ্ট দেওয়া এবং বদনাম করে কথা বলাও কিন্তু এর মধ্যে শামিল রয়েছে।

৬) প্রতিনিয়ত অন্যায় ভাবে আচরণ করা, আর একজন জীবন সাথীর ব্যবহার যা কি না বাস্তবে কোন স্বামী অথবা স্ত্রীর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে। বলতে গেলে দু’রকম স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে।

এক্ষেত্রে আচার আচরণের অভিযোগ আর এর পরিণাম খুবই ভয়ঙ্কর হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এগুলি খুবই পর্যাপ্ত আর ভারী হওয়া প্রয়োজন, যার ফলে আপনি এমন ডিভোর্স নিতে পারবেন।

৭) প্রতিনিয়ত কোন পক্ষকে নিন্দা করা ঘৃনা করা, এমনকি খুবই খারাপ আচরণ করা, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদাসীনতা, বিবাহিত সম্পর্কের মধ্যে যে কর্তব্য, দায়িত্ব গুলি রয়েছে সেগুলি সম্পর্কে উদাসীনতা প্রকাশ করা, মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি থেকে শুরু করে আরো অন্যান্য শারীরিক অসুখ দেখা দিতে পারে।

সেই কারণে ডিভোর্সের প্রয়োজন মনে করেন অনেকেই। আর এ সমস্ত বিষয়ের জন্য অনেকেই হতাশা গ্রস্ত হয়ে এমন মানসিক নিষ্ঠুরতা অথবা মানসিক অত্যাচার করে থাকেন।

৮) আচরণ যদি হিংসা, স্বার্থ, অধিকার এর থেকে বেশি হয়ে থাকে, যা কিনা দুঃখ আর অসন্তোষ এর কারণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কোন পক্ষ অপর পক্ষকে ডিভোর্স দিতে পারবেন না। কেননা এগুলি উপর নির্ভর করে ডিভোর্স কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কেননা পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে এগুলোও পরিবর্তন হতে পারে।

৯) মানসিক অত্যাচারের উপর নির্ভর করে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত বিরক্ত করা ঝগড়া, ঝামেলা, সামান্য রূপে বিবাহিত জীবনের যে ছোটখাট সমস্যা যা কিনা দৈনন্দিন জীবনে সবার জীবনেই ঘটে থাকে। এটা কিন্তু কখনোই পর্যাপ্ত নয় ডিভোর্সের জন্য।

১০) বিবাহিত জীবনের সম্পূর্ণ সমীক্ষা অবশ্যই করা জরুরি, আর কিছু বছরের মধ্যে কিছু আলাদা আলাদা উদাহরণ যা কিনা এরকম নিষ্ঠুরতা হিসেবে মনে করা হয় না। এটা খুবই লম্বা প্রসেস, যেখানে আপনার স্বামী অথবা স্ত্রী আপনার জন্য অনেক ভালো কিছু কাজ করেছেন, যার জন্য আপনার জীবনে অনেক খানি পরিবর্তন ঘটেছে। সামান্য কিছু দিনের ঝগড়া ঝামেলার জন্য আপনি হঠাৎ করেই ডিভোর্সের চিন্তা করতে পারেন না।

১১) যদি কোন স্বামী কোনরকম বৈধ কারণ ছাড়া স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া কোন কাজ করে থাকেন যেটা স্ত্রীর কোনভাবেই পছন্দ নয় এবং অপর পক্ষে দেখা যায় যদি কোন স্ত্রী কোন বৈধ কারণ ছাড়া অথবা তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া বা তার অজ্ঞাতে কোন রকম কাজ অথবা গর্ভপাত করিয়ে থাকেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে মানসিক নিষ্ঠুরতার কারণ বলা যেতে পারে।

১২) বিয়ের পর কোন স্বামী অথবা স্ত্রী দ্বারাও বাচ্চা জন্ম না দেওয়ার একতরফা নির্ণয় নিষ্ঠুরতা হতে পারে।

আদালতে মানুষের নিষ্ঠুরতা অথবা মানসিক অত্যাচার কিভাবে প্রমানিত করবেন?

মানুষের নিষ্ঠুরতার মামলা দায়ের করার জন্য প্রত্যেক মামলার তথ্য আর পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। তবেই কিন্তু অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন, তাছাড়া নিম্নলিখিত বেশকছু পদ্ধতি রয়েছে যা আপনি বিচারালয় এ মানসিক নিষ্ঠুরতা প্রমাণ করতে পারবেন।

  • আপনার মৌখিক অথবা লিখিত প্রমাণ পত্র স্বরূপ মানসিক নিষ্ঠুরতা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট।
  • আপনার মৌখিক এবং লিখিত সাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে নিষ্ঠুরতার উদাহরণ, যেমন ধরুন অবৈধভাবে বা আপনার বিনা অনুমতিতে শারীরিক সম্পর্ক।
  • মৌখিক ভাবে / লিখিত ভাবে শারীরিক অত্যাচার, প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার সবকিছুতে উদাসীনতা এসব কিছু এই পরিস্থিতিতে শামিল রয়েছে।
  • এছাড়া অডিও রেকর্ড অথবা ভিডিও  সবথেকে ভালো এবং শক্তিশালী প্রমাণ পত্র বলা যেতে পারে এই পরিস্থিতিতে। আর এতে আদালতে খুবই সহজ ভাবে আপনি প্রমাণিত করতে পারবেন যে, আপনার উপরে মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে।
  • আপনি প্রমান পত্রের সাথে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণের সাথে ও আপনার এই মামলা মজবুত করতে পারেন। তবে অবশ্যই একজন সুদক্ষ উকিলের সাথে পরামর্শ করুন, তিনি আপনাকে এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সহজেই সাহায্য করবেন, তাছাড়া বৈবাহিক সম্পর্ক হল একটি সুন্দর সম্পর্ক, যেখানে একে অপরকে সম্মান করা, খেয়াল রাখা, এমনকি ব্যবহার যেন সুন্দর হয় তবেই না একসাথে সারা জীবন থাকার মতো প্রতিশ্রুতি দেওয়া যায়, তাই না ! না হলে এমন সম্পর্ক জীবনকে বিষিয়ে তোলে। সেখানে একা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন অনেকেই, এভাবে মানসিক অত্যাচারিত হয়ে বাঁচার থেকে একা থাকা অনেক ভালো।

Leave a Comment