এফিডেভিট আসলে কি? এফিডেভিটের প্রকার এবং বানানোর পদ্ধতি

What is Affidavit? How to Make an Affidavit in Bengali: এফিডেভিট শপথ পত্র কি? এফিডেভিটের বিভিন্ন প্রকার গুলি কি কি? এফিডেভিট বানানোর পদ্ধতি কি? | জেনে নিন কিভাবে এফিডেভিট বানাবেন? উকিলের সহযোগিতা কিভাবে নেবেন এফিডেভিট বানাতে।

বিভিন্ন কাজের জন্য, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ কিছু এফিডেভিট শপথ পত্র অথবা কাগজ পত্র প্রয়োজন হয়। আইন অনুসারে হতে হবে, যার জন্য যে ব্যক্তি এই শপথপত্র সই করবেন, সে ব্যক্তিটির বিশ্বাস থাকবে যে এফিডেভিট শপথ পত্র অনুযায়ী চলাফেরা করতে পারবেন তিনি।

এফিডেভিট শপথ পত্র আসলে কি?

এফিডেভিট শপথ পত্র এক প্রকার লিখিত কাগজপত্র অথবা ডকুমেন্টস বলতে পারেন। কোন আদালত অথবা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা নিযুক্ত এফিডেভিট শপথ পত্র আধিকারিকের সম্মতি অনুসারে এফিডেভিট শপথ পত্র নিজের সহমতি অর্থাৎ বিভিন্ন রকম বিষয়ের ক্ষেত্রে শপথপত্র বা প্রতিজ্ঞা পত্র হয়ে থাকে। সেখানে লিখিতভাবে কিছু বিষয় লেখা থাকে প্রমাণপত্র হিসেবে।

এফিডেভিট আসলে কি? এফিডেভিটের প্রকার এবং বানানোর পদ্ধতি
এফিডেভিট আসলে কি? এফিডেভিটের প্রকার এবং বানানোর পদ্ধতি

এফিডেভিট শপথ পত্র সেই ব্যাক্তি সমস্ত সত্যি বিষয়গুলি উল্লেখিত থাকতে হবে। যার উপরে পূর্ণ বিশ্বাস থাকবে, এই শপথপত্রে দেওয়া সমস্ত তথ্য সেই ব্যক্তির নিজের বয়ান সম্পূর্ণ সত্য আর সঠিক হতে হবে।

আপনি এই এফিডেভিট শপথ পত্র প্রাপ্ত করার জন্য এই বিষয়ের ক্ষেত্রে আদালত অথবা অনলাইনের মাধ্যমে বানাতে পারবেন। আপনার শপথপত্র বানানোর জন্য এই বিষয়ের আদালত এ যেতে হবে, আর সেখানে গিয়ে যেকোন বিষয়ের মাধ্যমে একটি শপথপত্র বানাতে হবে।

যাকে এফিডেভিট ও বলা হয়। তারপর সেই শপথপত্র টি আধিকারিক দ্বারা করাতে হবে। তারপরে কিন্তু সেই এফিডেভিট শপথ পত্রটি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন যেকোন ক্ষেত্রে।

এফিডেভিট শপথ পত্র কত প্রকারের হয়ে থাকে?

আইনের চোখে অথবা আইন অনুসারে শপথপত্র বিভিন্ন রকমের হয়, যেমন কিছু অবশ্যই প্রয়োজনীয় শপথপত্র এর বিবরণ নিচে দেওয়া হল:-

১) প্রথম এফিডেভিট শপথ পত্র টি হল, যেটি আমরা সাধারণত কোন সরকারি কার্যালয় অথবা বেসরকারি কার্যালয়ে শপথ এর রূপে দিয়ে থাকে। সরকারি কার্যালয় অথবা বেসরকারি কার্যালয়ে এই এফিডেভিট শপথ পত্র বিয়ে, বয়স, রেশন কার্ড, অথবা অন্য কোন বিষয় সম্বন্ধিত হতে পারে।

২) এই প্রকার শপথপত্র সাধারণত কোর্ট অথবা বিচারালয় এ দেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রকার এফিডেভিট শপথ পত্র আবার দুই রকমের হয়ে থাকে। যার মধ্যে কোর্টের আদেশ অনুসারে ব্যক্তিকে নিজের কথা লিখে দিতে হবে।

এর মধ্যে প্রথম শপথপত্র টি হল, যা কিনা কোর্টে সাক্ষ্য-প্রমাণ অথবা প্রমাণ অনুসারে দেওয়া হয়ে থাকে। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চেক বাউন্স হওয়ার কেস অথবা সিভিল কেস এর মামলাতে দেওয়া হয়।

এটি সাধারণ শপথপত্র এর মতোই হয়ে থাকে। কিন্তু এর উপর সেই কোর্টের নাম লেখা থাকে যেখানে এটি বানানো হয়েছে অর্থাৎ এটি নতুন কেস অথবা আবেদন এর সাথে করতে দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় এফিডেভিট শপথ পত্র টি হল, যেটি কোর্টে সাক্ষ্য প্রমাণ দেওয়ার জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রকার শপথপত্রে ব্যক্তি নিজে কোর্ট এর প্রমান পত্র লিখে থাকেন, তথা এর উপরে শুধুমাত্র শপথপত্র এর জায়গায় “শপথপত্রে সাক্ষ্য” লেখা বিষয়টি থাকে। আর এই শপথপত্র টি সমস্ত রকমের কোর্ট এ মান্য হয়ে থাকে।

৩) এই রকম শপথপত্র যেমন হয়ে থাকে, সেটি হল, যে এফিডেভিট শপথ পত্রে নাম থেকে শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট এ দেওয়া হয়। এই শপথপত্রে ব্যক্তি নিজের বক্তব্য হাইকোর্ট অথবা সুপ্রিম কোর্টে লিখিত হিসেবে দিয়ে থাকেন।

এফিডেভিট শপথ পত্রের উদ্দেশ্য:

এফিডেভিট শপথ পত্র অথবা এফিডেভিট এর উদ্দেশ্য হল নিজের কোনো কথা অথবা বক্তব্য লিখিত হিসেবে সরকারি অথবা বেসরকারি আধিকারিক অথবা কোর্টের সমক্ষে লিখিতভাবে প্রমাণ স্বরূপ বলা।

যাতে আপনার একটি বিশ্বাস থাকে যে আপনি যে কথাগুলো বলছেন তার লিখিত প্রমাণ রয়েছে। এছাড়া এই বিষয়টিকে সত্যি হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই বিষয়টিকে সম্পূর্ণরূপে সত্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকে হাইকোর্ট অথবা সুপ্রিম কোট।

অ্যাক্ট 1969 অনুসারে এটি নির্ধারণ করা হয়েছে যে, যেকোনো বয়ান এফিডেভিট এ দেওয়া যেতে পারে আর সেটি সত্যি হয়ে থাকে। এফিডেভিট এর ব্যবহার ও হতে পারে আর কমিশন অথবা কোন অন্য অথরিটি এর সামনে দেওয়া যেতে পারে এম. সি. ডি., ডি. ডি. এ. (M.C.D. / D.D.A.) ইত্যাদি।

এফিডেভিট শপথ পত্রে অথবা এফিডেভিট এ ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য শাস্তি:

যদি কোন ব্যক্তি জেনে বুঝে শপথপত্রে মিথ্যে বয়ান দিয়ে থাকেন, তাহলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে উচিত আইনি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এফিডেভিট শপথ পত্রের সম্বন্ধে এটি মানা হয় যে, সেই ব্যক্তির সম্পূর্ণ বয়ান সত্যি হবে।

কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি অন্য কিছুর পরিবর্তে এফিডেভিট এর উপর সই করে দিয়ে থাকেন, আর সেই এফিডেভিট শপথ পত্রটি সম্পূর্ণরূপে ভুল প্রমাণিত হয় অথবা ভুল কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে ধারা 419 (পরিচয় বদল করে ঠকানো) এর মামলা হতে পারে। অতএব অ্যাক্ট 1969 অনুসারে নির্ধারিত করা হয়েছে যে, যেকোন বয়ান এফিডেভিট শপথ পত্রে যেটা দেওয়া হয় ও সম্পূর্ণ রূপে সত্যি হয়ে থাকে।

যদি কোন ব্যক্তি দ্বারা মিথ্যে শপথপত্র আদালতে বিচার চলাকালীন সেখানে জমা করা হয়ে থাকে, তাহলে আদালত সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রমাণ বয়ান জমা করার অপরাধে মামলা অথবা মোকদ্দমা চালানোর আদেশ দিতে পারে। আর এইভাবে কিন্তু সেই ব্যাক্তিটির তার কর্মফল এর উচিত শাস্তি পেতে পারেন অথবা তার অপরাধের উচিত শাস্তি হতে পারে।

এফিডেভিট শপথ পত্রের স্ট্যাম্প পেপার এর ফিস:

প্রত্যেক রাজ্যের নিজস্ব আলাদা আলাদা স্ট্যাম্প ডিউটি অধিনিয়ম থাকে। এই কারণে সমস্ত রাজ্য তে স্টাম্প পেপার ফিশ কখনো সমান হয় না। এফিডেভিট শপথ পত্রের জন্য ন্যূনতম ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত স্ট্যাম্প পেপার এর উপর এফিডেভিট তৈরি করতে পারেন অর্থাৎ সম্বন্ধিত অথরিটি এর ডিমান্ড এর হিসাব অনুসারে এফিডেভিট এর জন্য স্ট্যাম্প পেপার এর ব্যবহার করা যেতে পারে।

এফিডেভিট শপথ পত্রের ভাষা:

এফিডেভিট শপথ পত্রকে ইংরেজি, হিন্দি অথবা আপনার রাজ্যের যে ভাষা, সেই ভাষা তে তৈরি করতেই পারেন, কিন্তু সমস্ত রাজ্যের উচ্চবিচারালয় আর ভারতের সর্বোচ্চ বিচারালয় এ এফিডেভিট শপথ পত্র টি ন্যূনতম ইংরেজি ভাষায় লেখার নিয়ম রয়েছে।

এফিডেভিট শপথ পত্র তৈরি করার জন্য একটি উকিল কিভাবে নির্বাচন করবেন ?

আইনি বিষয়ে যে কোন কাজ করার জন্য একটি ভালো উকিল আপনাকে অনেকটাই সাহায্য করতে পারে। বলতে গেলে যে কোন কঠিন পরিস্থিতি অনায়াসেই সহজ করে তুলতে পারেন।

মামলার জটিলতা উপর নির্ভর করে একটি সাধারণ মানুষের জন্য এফিডেভিট শপথ পত্রের বিষয়ে বিভিন্ন রকমের তথ্য এক জায়গায় করা এবং সেটা তৈরি করা এবং সেটি বোঝার ক্ষেত্রে অনেকটাই সমস্যা তৈরি হতে পারে।

আর এটা বাস্তবে অসম্ভব মনে হতে পারে অনেকের কাছে। আইন অনুসারে একটি শপথপত্র তৈরি করার জন্য শপথপত্র অধিকারী থেকে সমস্ত রকমের সত্যি তথ্য গ্রহণ করে তার উপরে উল্লেখ করাটা জরুরী।

তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে এমন হওয়া সম্ভব যে, আপনার পক্ষে একটি উকিল আছেন, আর এ বিষয়ে সমস্ত কিছু বোঝার জন্য আপনাকে সম্পূর্ণরূপে সাহায্য করছেন।

আর একটি এফিডেভিট শপথ পত্র সঠিক ভাবে তৈরি করার জন্য আর সেটি স্বীকৃতি লাভের জন্য আপনাকে সব দিক থেকে প্রচুর পরিমাণে সাহায্য করছেন। তাহলে কিন্তু খুবই সহজ ভাবে এই শপথপত্র টি সঠিক রূপে আদালতে জমা করতে পারবেন।

আর সেই কারণেই এই বিষয়ে যদি আপনার সঠিক ধারনা না থাকে, তাহলে এফিডেভিট শপথ পত্র বিষয়ক অথবা যে কোন একজন ভালো উকিলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন অনায়াসেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top