ঘরে মাছির উপদ্রব? এই উপায়ে ঘর থেকে বিদায় করুন মাছি

মাছির উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন? বিরক্তিকর এই মাছি থেকে পরিত্রান পেতে নিজেদেরই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। ঘরের ভিতরে তাদের প্রবেশের পথ সবদিক দিয়ে বন্ধ করার জন্য তৎপর হতে হবে আমাদের।

মাছি যে কতটা বিরক্তিকর এক পতঙ্গ, তা কিন্তু সকলের কমবেশি জানা আছে। তাদের উপদ্রবে একেবারে পাগলপ্রায় হওয়ার অবস্থা হয়। সে যেমন বিরক্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে তেমনি বহন করে নিয়ে আসে যতসব রোগজীবাণু। তাই ঘরকে রোগমুক্ত এবং মাছি মুক্ত রাখতে মানুষের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাছি মুক্ত ঘর যেমন সুন্দর তেমনি বাইরের রোগজীবাণু ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেনা।

আমাদের ঘরে মাছির প্রবেশ আমাদের ভুলের কারণেই হয়ে থাকে। মাছি সব সময়ের জন্য নোংরা পরিবেশ পছন্দ করে, ঘর যদি নোংরা থাকে তাহলে সেই ঘরে প্রবেশ করতে তাদের আনন্দের সীমা থাকে না। এতটাই অসহ্য কর যে তাকে মারা বা তাড়ানো হয়ে ওঠে অসাধ্য কাজ।

ঘরে মাছির উপদ্রব? এই উপায়ে ঘর থেকে বিদায় করুন মাছি
ঘরে মাছির উপদ্রব? এই উপায়ে ঘর থেকে বিদায় করুন মাছি

তবে এমন কিছু উপায় অবলম্বন করে ঘর থেকে একেবারে বিদায় করতে পারেন মাছি। আর কখনো এই ঘরমুখো হবে না তারা। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক মাছি তাড়ানোর কিছু উপায় –

১. মাছির খাবারের উৎস ঘরে রাখবেন না:

যেখানে আবর্জনা, যেখানে নোংরা, সেখানেই গিয়ে তাদের পার্টি শুরু হয়। মহানন্দে চলে তাদের উৎসব। তাই ঘরে এমন কিছু জিনিসপত্র রাখবেন না যেগুলোতে তারা আকর্ষিত হয়ে ঘরে প্রবেশ করতে পারে অনায়াসেই।

নোংরা থালা, বাসন, গ্লাস, বাটি, ফেলে দেওয়া কোন ড্রিংস এর বোতল, পোষা প্রাণীর খাবারের পাত্র, ইত্যাদি মাছি কে আমন্ত্রণ জানায়। তাই মাছির উপদ্রব দেখা দিলে আগে খুঁজে দেখুন সারা ঘর বাড়িতে কোথায় এমন জিনিস পড়ে আছে। খুঁজে বের করে যেগুলো ফেলে দেওয়ার ফেলে দিন, যেগুলো আবার ব্যবহার করার সেগুলো দ্রুত পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন।

আর এই কাজটা একদিন করলে হবে না সবসময়ের জন্য এই দিকটা খেয়াল রাখা জরুরী। যেখানে খাওয়া-দাওয়া করা হয় সেই জায়গাটাকে খাওয়া-দাওয়ার পর ভালোভাবে মুছে নিন, চাইলে ডেটল অথবা কোনো ফ্লোর ক্লিনার দিয়ে মুছে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে কিন্তু মাছি এই ঘরের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়বে।

২. পোষা প্রাণীর আবর্জনা পরিষ্কার করুন:

অনেকেই বাড়িতে হাঁস, মুরগি, পাখি, কুকুর, বিড়াল, নানারকম পোষ্য পুষে থাকেন। সেক্ষেত্রে আপনি তাদের মলমূত্র, তাদের করা আবর্জনা, নিশ্চয়ই নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে থাকেন। পরিষ্কার পরিছন্নতা করছেন কিন্তু আপনি জানেন কি একটু দেরি হলে আপনার সেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর কাজে আসে না, যদি বলেন কেন, তাহলে শুনুন, এই সব আবর্জনা তে, পোষ্য প্রানীর মলমূত্র তে মাছিরা বংশ বিস্তার করার জন্য বিপুল সুযোগ পেয়ে যায়।

আর এইসব প্রাণীদের মল মাছিদের ডিম পাড়ার একেবারে উপযুক্ত জায়গা। মাছিরা একবারে ৭৫ থেকে ১৫০ টা ডিম পাড়ে, আর সেই ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে মাত্র ২৪ ঘন্টা। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, একটা দিন অবহেলা করে আপনি এগুলো পরিষ্কার না করলে এই ১৫০ টা মাছিকে কিন্তু নিজের ঘরেই আমন্ত্রণ জানিয়ে বসে আছেন।

পাখির খাঁচা রাখুন সবসময় জন্য পরিষ্কার, দরকার হলে নিচ কিছু পেতে রাখুন, তারপর সেটা প্রতিদিনই পাল্টে ফেলার চেষ্টা করুন, একদিন আলসেমি করে ফেলে রাখা নয়, প্রতিদিনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রতিদিন বজায় রাখার চেষ্টা করুন।

৩. ঘরে রাখুন বিশেষ কিছু গাছ:

সবুজ গাছপালা যেমন ঘরকে সুন্দর রাখে, দেখতে সুন্দর লাগে, তেমনি রোগজীবাণু থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় আর এই মাছি তাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু গাছ বেশ উপকারী তবে গাছ মানে একেবারে বড় গাছের কথা বলছিনা। আর পতঙ্গভুক গাছও নয়, এমন কিছু চেনা গাছ যেগুলো আপনার উপকারে আসার পাশাপাশি মাছিকে ঘরে ঢুকতে বাধা সৃষ্টি করে।

যেমন ধরুন তুলসী, লেমনগ্রাস, পুদিনা, বাড়ির আশেপাশে জায়গা থাকলে সেখানে তুলসি, লেমনগ্রাস, পুদিনা, অনেকটা জায়গা জুড়ে লাগিয়ে রাখতে পারেন। তাছাড়া বাড়ির আশেপাশে নিমগাছ ও তেজপাতা গাছ থাকলে ঘরে মাছি ঢুকতে পারে না।

তার সাথে সাথে আশপাশটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাটাও জরুরি শুধু গাছ থাকলেই হবে না। সামনের দিকে দরজা এবং পিছনের দিকে দরজার আশেপাশে এই গাছগুলো রাখার ক্ষেত্রে মাছি ঘরে ঢুকতে না পারার একেবারে মোক্ষম ওষুধ। আপনার ঘরের জানালার পাশে রাখতে পারেন, ব্যালকনিতেও রাখতে পারেন।

৪. মাছি ধরার প্রাকৃতিক ফাঁদ পাতুন:

মাছিকে ধরতে গেলে কিন্তু অনেকটা কসরত করতে হয়, তাই  প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতে মাছিদের ধরে নিতে পারেন অনায়াসেই। ফাঁদ পাতার জন্য লাগবে ভিনিগার, একটা কাচের শিশি। কাচের শিশি তে অল্প পরিমাণ ভিনেগার ঢেলে তারপর সেই শিশির মুখে কাগজের একটা ফানেল তৈরি করে সেখানে রেখে দিন।

ভিনিগার এর গন্ধে পাগল হয়ে একেবারে আছড়ে পড়বে শিশির মুখে ফানেলের ভিতর। তারপর শিশির মধ্যে ঢুকে গেলেও বেরিয়ে আসার আর কোন রাস্তা থাকবে না। তাছাড়া অর্ধেক লেবুর গায়ে লবঙ্গ গেঁথে রাখতে পারেন, যেখানে মাছির আনাগোনা বেশি।

কোথাও কোন মিষ্টি বা বাচ্চাদের খাবার যেকোনো কিছু মেঝেতে পড়ে  থাকলে সেটা যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করে মুছে নেওয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে সেই খাবারের গন্ধ না পেলে মাছিদের আর ঘরের দিকে আসার কথা মনে পরবে না।

৫. যেসব ফল মাছি দের আমন্ত্রণ জানায়:

মাছি হল বেহায়া এক অতিথি, নিমন্ত্রণের দরকার পড়ে না একটু গন্ধ পেলেই আপনার বাড়িতে এসে হাজির হয়। তবে ঘরে আম, কাঁঠাল, তাল এইগুলো আপনারা খেলেন অথচ সাথে হাজির হলো এইসব বেহায়া অতিথি গুলো তাই যতটা সম্ভব আমের খোসা, কাঁঠালের খোসা, তালের খোসা, যেগুলো বাদ দেওয়া হয় সেগুলো যতটা সম্ভব ঘরের একেবারে অনেকটা দূরে সঙ্গে সঙ্গে ফেলে আসা জরুরি।

একবার এই গন্ধে মাছি ঘরে প্রবেশ করলে এরা আর ঘর থেকে যেতেই চায়না, তখন অন্য খাবারেও তারা আক্রমণ করে।

৬. নষ্ট করা খাবার যেখানে-সেখানে ফেলা নয়:

যেসব বাড়িতে বাচ্চা আছে তাদের খাবার অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয় আবার অনেক বড়রাও আছেন, প্রতিনিয়ত খাবার নষ্ট করেন আর সেই খাবারগুলো এখানে সেখানে ফেলে দেওয়া হয়, তার ফলে পোষ্য সেগুলো খাওয়ার আগেই মাছিরা সেখানে হাজির হয়ে যায়। তাই যেখানে সেখানে খাবার না পেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ঘর থেকে অনেকটা দূরে ফেলে আসাটা জরুরি। যেখানে থেকে ঘরে মাছির প্রবেশ একেবারে অসম্ভব।

৭. ঘরের আশপাশ পরিষ্কার:

ঘরের ভেতরটা পরিষ্কার পরিছন্ন তো আপনি রাখলেনই, কিন্তু ঘরের আশেপাশে অনেক সময় অনেক পাখি, পশু মরে পড়ে থাকতে পারে, অথবা কোন কিছু জমতে পারে, সে ক্ষেত্রে বাড়ির আশপাশটাও খেয়াল রাখা জরুরী।

কোথাও কোন আবর্জনা নোংরা জমা হচ্ছে কিনা সে দিকটা খয়াল রেখে নিয়মমতো বাড়ির চারিদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা প্রয়োজন। তখন দেখবেন যেখানে মাছিরা আপনার ঘরের আশে পাশেই আসতে পারছেনা তো আপনার ঘরের ভিতরে আসা তো দূরের কথা, তাই না।

মাছির উপদ্রব এ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এতদিন, এবার এই প্রাকৃতিক উপায় গুলি দিয়ে মাছি তাড়ানোর ব্যবস্থা করে দেখুন। এই “বিন বুলায় মেহমান” কোনদিনও আপনার ঘরমুখো হবে না। রোগজীবাণু আপনার ঘরে ওদের সাথে সাথে প্রবেশ করতে পারবে না।

এতটাও কষ্টকর কিছু নয়, এটা আপনার কাজের রুটিন এর ভিতরে ফেলতে পারেন। যখন দেখবেন ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে শুধু মাছি আনাগোনা বন্ধ নয় আরো অনেক রকম সুবিধা আপনি পেতে পারছেন। তখন এমনিতেই ভাল লাগবে, এসব গুলো করতে। তখন আর কষ্ট মনে হবে না আপনার। বাড়ির সবার স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এই কাজটা এতটাও কঠিন কাজ নয়।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আপনি তো এমনিতেই বজায় রাখছেন, তার সাথে মাছির বিষয়টাও মাথায় রাখাটা জরুরি। কেননা এরা না শান্তিতে খেতে দেয়, না শান্তিতে ঘুমাতে দেয়, এদের জন্য অনেক সময় দিনের বেলাতেও মশারিও খাটাতে হয়েছে অনেকের। তাহলে একবার ভাবুন, এই ছোট্ট প্রাণী কতটা বিরক্তিকর, আর আমাদের স্বাস্থ্যের সাথেও খেলা করে।

Leave a Comment