ভারতে ভোক্তা আদালতে মামলা করার পদ্ধতি কি? জেনে নিন

ভোক্তা আদালতে বা কনজিউমার কোর্ট-এ কিভাবে মামলা করা হয়? যে কোন উপভোক্তা কিভাবে ভোক্তা আদালতে মামলা করতে পারবেন? আসুন জেনে নিন ভোক্তা আদালতে মামলা করার সম্পূর্ণ পদ্ধতি।

ভোক্তা আদালত গ্রাহকদের ক্রয়কৃত ভোগ্যপণ্য সংক্রান্ত অভিযোগ এবং অভিযোগ সম্পর্কিত মামলাগুলি পরিচালনা করে। ভোক্তারা অর্থ দিয়ে ভোগ্যপণ্য ক্রয় করেন নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য।

কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে তারা মানহীন পণ্য পাচ্ছেন, বা বিক্রেতা কতৃক প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন। ভোক্তাদের এই ভোগান্তি দূরীকরণে ভারতীয় আইনে ভোক্তা আদালত চালু করা হয়েছে যাতে ভোক্তারা মানসম্মত পণ্য ব্যবহার করতে পারেন।

ভোক্তা অধিকার রক্ষার জন্য ভারত সরকার কর্তৃক বিচার বিভাগীয় শুনানির ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে অসন্তুষ্ট ভোক্তারা বিক্রেতার বিরুদ্ধে হয়রানি বা ত্রুটিযুক্ত পণ্য বা পরিসেবাদি সরবরাহের কারণে ভোক্তা আদালতে মামলা করতে পারবেন।
একজন ভোক্তা নগদ অর্থে নিজে ভোগ করার জন্য পণ্য ক্রয় করে থাকেন।

ভারতে ভোক্তা আদালতে মামলা করার পদ্ধতি কি?
ভারতে ভোক্তা আদালতে মামলা করার পদ্ধতি কি?

পণ্য প্রচারের সময়, মোড়কে অথবা বিক্রেতা কতৃক পণ্যের যেসব গুনাগুন বলে পণ্য বিক্রয় করা হয়, তার সাথে যদি পণ্যের মানের, গুণের অথবা কার্যকারিতায় মিল না থাকে এবং ভোক্তা এতে ক্ষতিগ্রস্থ হন, তবে তিনি ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী ভোক্তা আদালতে মামলা করতে পারবেন।

ভারতে ভোক্তা আদালতে কীভাবে মামলা করতে হয় সে সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন দেরী না করে আলোচনা শুরু করা যাক। ভোক্তা আদালতে মামলা করার পদ্ধতি জেনে নিন:-

ভারতে গ্রাহক আদালত কী?

কনজিউমার কোর্ট বা ভোক্তা আদালত হল ভারতে ভোক্তা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে পণ্য সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি ও বিচারের জন্য ১৯৮৬ সালের গ্রাহক সুরক্ষা আইন, এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত একটি আদালত। এই আদালতগুলি তিনটি স্তরে অর্থাৎ জেলা, রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়।

অভিযোগের ভিত্তি এবং গুরুত্ব অনুসারে মামলা নেওয়া হয়। ভোক্তার ক্ষতির পরিমাণ, বিক্রেতার অপরাধ ইত্যাদি বিষয় প্রমাণ সাপেক্ষে যাচাই করে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বা শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরছে ক্রেতাদের কেন্দ্র করে।

তারা যখন অর্থ দিয়ে একটি পণ্য ক্রয় করছেন তখন তারা আশা করেন পণ্যটি দাম এবং বিক্রেতার দেওয়া তথ্যনুযায়ী ভাল মানের হবে। এছাড়া পণ্যের সাথে যেসব গ্যারান্টি, ওয়ারেন্টি এবং অন্যান্য শর্তাবলি আছে সেগুলো যদি না মানা হয় তখন ভোক্তার স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়।

এসব বিষয়ে বিরক্ত হয়েই মূলত একজন ভোক্তা, ভোক্তা আদালতে মামলা করে থাকেন। অনলাইন ওয়েবসাইট, টেলিকম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ভোক্তা আদালতে মামলার সংখ্যা বেশী। এছাড়া অন্যান্য সব পণ্যের বেলাতেই ক্রেতা অসন্তোষ রয়েছে।

ভোক্তা আদালতে মামলার যোগ্যতা ও শর্তাবলি

যেকেউ যেকোন ইস্যু নিয়ে ভোক্তা আদালতে অভিযোগ জানাতে পারবে না। এরজন্য কিছু শর্ত প্রযোজ্য। এই যোগ্যতা এবং শর্তগুলো হচ্ছে, প্রথমেই অভিযোগকারীকে অবশ্যই ভোক্তা হতে হবে।

ভোক্তা হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যে কিনা ব্যক্তিগত ব্যবহারের উদ্দেশ্য নিয়ে পণ্য ক্রয় করেছেন। পুনঃবিক্রয় বা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য নিয়ে পণ্য ক্রয় করে কোন প্রতারণা ও অসন্তোষের বিষয় ঘটলে তা নিয়ে ভোক্তা আদালতে মামলা করা যাবেনা।

ভোক্তাকে অবশ্যই পণ্য ক্রয় করতে হবে। উপহার বা অন্যভাবে পাওয়া পণ্যের গুনগতমান বা শর্তাবলি নিয়ে কোন অভিযোগ প্রযোজ্য নয়। ভোক্তা যদি ক্র‍য়কৃত পণ্য থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী, বিজ্ঞাপন বা বিক্রেতা কতৃক বর্ননাকৃত সুবিধা বা মান না পান তখন তিনি ভোক্তা আইনে অভিযোগ জানাতে পারেন।

যেমন বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়েছে ১০০ টাকাতে আপনি ২০ জিবি ইন্টারনেট পাবেন। মেয়াদ থাকবে ১৫ দিন। আপনি রিচার্জ করে পেলেন ৫ জিবি ১০ দিন মেয়াদে। এখানে বিজ্ঞাপনে যদি শর্ত প্রযোজ্য না থাকে তাহলে আপনি প্রতারিত হয়েছেন এই মর্মে প্রথমে সংশ্লিষ্ট পক্ষ এবং তাতে কাজ না হলে ভোক্তা আদালতে মামলা করতে পারেন।

মূলত অভিযোগের আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, পণ্য বিক্রয়ের আগে পণ্যের যেসব গুনাবলি বলা হয়েছে তার ব্যতিক্রম বা অধিক প্রতারণা ঘটলে যেন অভিযোগ জানানো হয়।

তা না হলে অকারণ বা মনগড়া অভিযোগ করলে উল্টো অভিযোগকারীকে জরিমানা করা হয়। ভোক্তা চাইলে নিজে অথবা তার আইনজীবীর মাধ্যমে ভোক্তা আদালতে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারেন।

তিনস্তর বিশিষ্ট ভোক্তা আদালতে অভিযোগ যেভাবে করবেন

পন্য ক্রয় করার পর যেসব অসঙ্গতি থাকলে আপনি অভিযোগ জানাতে পারবেন সেগুলো হচ্ছে- পণ্যের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অধিকমূল্য দাবি করা, নিকৃষ্ট মানের পণ্য সরবরাহ, বর্নিত শর্তানুযায়ী গ্যারান্টি ওয়ারেন্টি না দেয়া, পণ্যের ত্রুটি থাকলে পরিবর্তন অথবা সার্ভিসিং না করে দেয়া।

কোম্পানি থেকে বাজে ব্যবহার, যে পরিমাণ পণ্য সরবরাহ করার কথা তা না করা ইত্যাদি কারণ ঘটলে একজন ভোক্তা, ভোক্তা অধিকারে মামলা করতে পারবেন। জেলা গ্রাহক বিরোধ নিষ্পত্তি ফোরাম (ডিসিডিআরএফ), প্রতিটি জেলায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

এতে প্রতিটি অভিযোগ গ্রহনকারী কমিটিতে ৩ সদস্য রয়েছেন। যদি ক্ষতিপূরণের দাবির মূল্য ২০ লাখ অবধি থাকে তবে জেলা ভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে ডিসিডিআরএফের মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার ক্ষুন্ন বিষয়ে অভিযোগ করা যেতে পারে।

রাজ্য গ্রাহক বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (এসসিডিআরসি), প্রতিটি রাজ্যে এ ধরনের ভোক্তা অভিযোগকেন্দ্র অবস্থিত। যদি ভোক্তার ক্ষতিপূরণ দাবির মূল্য ২০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে হয়, এসসিডিআরসি-এর মাধ্যমে জাতীয় ভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের কাছে আবেদন করা যেতে পারে।

জাতীয় ভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (এনসিডিআরসি), নয়াদিল্লিতে অবস্থিত এটি গ্রাহক সুরক্ষা আইনের অধীনে ত্রি-স্তরীয় প্রতিকার ব্যবস্থাতে সর্বোচ্চ ফোরাম। ভোক্তার ক্ষতিপূরণ দাবির মান ১ কোটি ছাড়িয়ে গেলে এই ক্ষেত্রে জাতীয় ভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের মাধ্যমে অভিযোগ করা যাবে।

শেষ কথা

ভোক্তা অধিকার ক্ষুন্ন হলে এবং যৌক্তিক কারণ থাকলে অবশ্যই একজন ভোক্তা, ভোক্তা আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন। অর্থের বিনিময়ে কেনা পণ্যের গুনগতমান এবং পণ্যের সাথে বিজ্ঞাপিত সুবিধা পাওয়ার অধিকার প্রতিটি ভোক্তারই রয়েছে।

জেলা, রাজ্য এবং জাতীয় পর্যায়ের কমিশনে নিজে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে ক্ষতির পরিমাণ অথবা ক্ষতিপূরন দাবির পরিমাণ অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। আশা করি ভারতে ভোক্তা আদালতে অভিযোগ করার নিয়ম সম্পর্কে জানানোর আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।

সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top