কার্তিক মাসের অমাবস্যায় কালী পূজা বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক বিশেষ উৎসব। তবে এই কালীপূজার সাথে জড়িয়ে রয়েছে আরো অনেক কিছু খুঁটিনাটি বিষয়।
যেগুলি মেনে চললে সংসারে আসে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। যা কিনা সারা বছরে আর অন্য কোন সময় করা যায় না। একটি হলো কালী পূজার অমাবস্যায় অলক্ষী তাড়ানো।
যে কোনদিন অলক্ষিকে তাড়ানো যায় না কিন্তু, এর জন্য বছরের মধ্যে একটি বিশেষ দিন ঠিক করা আছে। আর সেই দিনটি হল কালী পূজার অমাবস্যা।
বছরের মধ্যে ওই একটি দিন, সেই কারণে কোনোরকম ভাবে এই দিনটিকে হাতছাড়া করা যাবে না। আর এই দিনে প্রতিটি বাড়ি অলক্ষিকে তাড়িয়েই ছাড়ে।
অলক্ষী, লক্ষ্মীর একেবারে সম্পূর্ণ বিপরীত, তাই সকলে লক্ষ্মী কে সারা জীবনের জন্য নিজের ঘরে রেখে দেওয়ার জন্য আর অলক্ষীকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই প্রথা মানেন। তবে তার এই বিশেষ দিনটি হল কালী পূজার অমাবস্যার দিন।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
তাই কোনমতেই এই দিনটি নষ্ট করা যাবে না। কিন্তু কিভাবে অলক্ষী তাড়াবেন, জানা আছে কি?
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কালীপূজার এই অমাবস্যায় কিভাবে অলক্ষী তাড়াবেন:
সুচিপত্র
১) অলক্ষ্মীর পূজা:
হয়তো অবাক হচ্ছেন, যাকে তাড়াবো তাকে আবার পূজা কেন করব? তাই তো! বলা যেতে পারে অলক্ষী পূজা আপনি কিভাবে করবেন?
যার ফলে অলক্ষী আপনার ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবেন। অলক্ষীর পূজা অভক্তি এবং তাচ্ছিল্যভাবে করতে হবে।
যেমন কোন অতিথিকে যদি গুরুত্ব না দিয়ে তাচ্ছিল্য করা হয়, সেই অতিথি কিন্তু আপনার ঘরে এক মুহূর্ত থাকতে চাইবেন না। পালিয়ে বাঁচবে আর কখনো আসবেও না। ঠিক তেমনটাও ভাবতে পারেন। এইভাবে অলক্ষ্মীর পূজা করলে আপনার ঘর ছেড়ে পালাতে পথ পাবে না সে।
২) পূজার উপকরণ:
পূজার উপকরণ গুলির নাম শুনলে আপনার হাসি পেলেও পেতে পারে।
যেমন ধরুন প্রদীপের পরিবর্তে কেরোসিনের প্রদীপ, আসনের পরিবর্তে পাপোশ, তারপরে ধুপ ধুনার পরিবর্তে লঙ্কা দিয়ে ঘুঁটের ধোঁয়া
ঠাকুর ঘরের পরিবর্তে আপনি ঘরের বাইরে যেকোনো জায়গায় পূজা করতে পারেন, ফলের নৈবেদ্যর বদলে ফলের খোসা, শাঁখ ঘন্টা ইত্যাদির পরিবর্তে ভাঙা টিন, ভাঙ্গা কুলো যা দিয়ে চাল ঝাড়া হয়
সেগুলি বাজিয়ে, ডান হাতের পরিবর্তে বাম হাতে পিছন ফিরে বাসি ফুল অর্পণ করা ইত্যাদি ইত্যাদি। তার সাথে এই পূজায় আপনার ভক্তি যেন এতোটুকুও না থাকে।
৩) অলক্ষ্মীর বর্ণনা:
অলক্ষ্মীর বর্ণনা দিতে গেলে বলা যেতে পারে, তিনি হলেন কুচকুচে কালো বর্ণের, খুবই রাগী এবং কলহপ্রিয়া, তিনি লোহার আবরণ ও মলিন বস্ত্র পরে থাকেন।
সারা গায়ে তেল মাখেন, বাম হাতে ঝাঁটা ও ডান হাতে কুলো নিয়ে গাধার উপর বসে থাকেন, এই হল অলক্ষ্মীর রূপ।
৪) অলক্ষী বিদায়:
কালী পূজার অমাবস্যার অন্ধকারে কালী পূজার দিন গোবর দিয়ে তৈরি করতে হবে এই অলক্ষীর মূর্তি, চোখ, নাক তৈরি করুন, মাথায় দিন নোংরা ছেঁড়া চুল, দেখতে খুবই কুৎসিত হয়ে থাকে।
তারপর একটি কলা গাছের বাকলের উপরে বসিয়ে কেরোসিনের প্রদীপ দিয়ে সেটা ভাঙা টিন, ভাঙা কুলো বাজিয়ে বাজিয়ে শোরগোল করে করে এমন জায়গায় গিয়ে রেখে আসতে হবে সেটা যেন আবর্জনায় এবং জঙ্গলে ভরপুর থাকে।
সেখানে সেটা রেখে দিয়ে পিছন ফিরে চলে আসতে হবে। আর কখনো এই অলক্ষী বিদায় হওয়ার পর তার রূপ মনেও আনবেন না।
৫) মহা লক্ষ্মীর ঘট স্থাপন:
যাক বাবা, অলক্ষ্মী তো বিদায় হল, তারপর ঘরে এসে সুন্দর করে হাত মুখ ধুয়ে গঙ্গাজল ছিটিয়ে পবিত্র হয়ে মহালক্ষীর ঘট পাতুন আপনার বাড়ির ঠাকুরঘরে, উত্তর পূর্ব অথবা ঈশান কোণে সেই ঘট স্থাপন করতে হবে।
এরপর মনের সম্পূর্ণ ভক্তি রেখে শুদ্ধ চিত্তে প্রাণ ভরে মহা লক্ষ্মীর পূজা করুন। স্তব- স্তোত্র কবচ পাঠ করে দুর্ভাগ্য রূপি অলক্ষ্মীর বিদায় করে, সুখ, শান্তি, সৌভাগ্য রূপিনী মহালক্ষীকে প্রতিষ্ঠা করুন নিজের ঘরে এবং ঠাকুরঘরে।
৬) বাড়ি থেকে অনেক দূরে রেখে আসুন অলক্ষ্মীর মূর্তি:
খুবই কোলাহল ও টিন, কুলো বাজিয়ে, বাড়ি থেকে অলক্ষ্মী কে বার করে অনেক দূর গিয়ে তবে সেখানে রেখে দিয়ে আসতে হয়। যেন কোনমতেই সেই অলক্ষ্মী আর ঘরে ফিরে আসতে না পারে।
এতটাই তুচ্ছ, তাচ্ছিল্যভাবে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে হবে, যেন কখনোই আর সে বাড়িমুখো না হতে পারে।
অলক্ষী বিদায়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:
যেহেতু বছরের অন্য কোন সময়ে এই অলক্ষী বিদায় করা যায় না, তাই কালীপূজার দিন এই অমাবস্যার অন্ধকারে অলক্ষী বিদায় করতে তৎপর হয়ে ওঠেন সমস্ত বাড়ির সদস্যরা। বিশেষ করে মেয়েরা এই অলক্ষ্মী বিদায় করতে বিশেষভাবে উৎসাহিত হয়ে থাকেন।
সংসারের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি আসার পাশাপাশি সমস্ত রকম কলহ, ঝগড়া, ঝামেলা দূর করতে অলক্ষী বিদায় একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি বলা যায়, এই কালী পূজাতে। অলক্ষী বিদায় করার সাথে সাথে ঘরে এসে মহালক্ষ্মীর পূজায় মেতে ওঠেন সকলেই।
আর সেই কারণেই তো বলা হয় কালী পূজার সময় দেবী লক্ষ্মী আবার সকলের ঘরে পূজিতা হন। বলা যেতে পারে অলক্ষ্মী পুজোর মাধ্যমে আমাদের মনের ঈর্ষা, মলিনতা, অহংকার এবং তার ফলে আশা আসন্ন দুর্ভাগ্যকে দূর করে ধন-সম্পদ সৌভাগ্যের দেবী লক্ষ্মীর বন্দনা করে তাকে আমাদের গৃহে সারা জীবনের জন্য স্থাপন করা হয়।
সবাই চাইবেন যে, ঘরে মা লক্ষ্মী সারা জীবন অধিষ্ঠিত থাকুক। তাইতো তাকে সন্তুষ্ট করতে প্রতিটি গৃহস্থ বাড়ি প্রতিটি বৃহস্পতিবার থেকে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা থেকে এমনকি কালী পূজার এই অমাবস্যাতে মহা লক্ষ্মীর পূজা অর্চনা করতে কোন ভাবেই বিরত থাকেন না। সকলের জীবনে আসুক সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। সমস্ত অশুভ শক্তি কেটে গিয়ে সবার সংসারে আসুক শুভ শক্তি।