মেয়ে তার পিতা থেকে কতদিন পর্যন্ত ভরণ-পোষণ পেতে পারেন? অধিকার জানুন

একটি মেয়ে তার পিতা থেকে কতদিন পর্যন্ত ভরণ-পোষণ পেতে পারেন? এই বিষয়ে কি কি আইন আছে? আসুন জেনে নেওয়া যাক একটি মেয়ে তার পিতার কাছ থেকে কতদিন পর্যন্ত ভরণ-পোষণ নেওয়ার অধিকারী থাকবে?

ভারতের আইন সবার জন্য সমান, এটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। এমন নয় যে পার্লামেন্টে কোনরকম আইন তৈরি করে তার ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি। ভরণ-পোষণ এমন ব্যক্তিকে দিতে হয়, যে ব্যক্তির ওপর অন্য কোন মানুষ আশ্রিত অথবা আশ্রিতা রয়েছেন।

দন্ড প্রক্রিয়া সংহিতা এর অধ্যায় 9 তে একজন পুরুষের ওপর এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যে, সেই পুরুষ নিজের বাচ্চাদের, স্ত্রী তথা আশ্রিত বাবা, মা এর ভরণ-পোষণ করবেন।

ভরণ-পোষণ এ সাথে সম্বন্ধিত আইন-কানুন ঘরোয়া হিংসা বা ঘরোয়া অত্যাচার অধিনিয়ম তে ও পাওয়া যায়। যেখানে মহিলাদেরকে ভরণ-পোষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর সাথে সাথে হিন্দু বিবাহ অধিনিয়ম এর অন্তর্গত ভরণ-পোষণের বিষয়টি পাওয়া যায়।

মেয়ে তার পিতা থেকে কতদিন পর্যন্ত ভরণ-পোষণ পেতে পারেন? অধিকার জানুন
মেয়ে তার পিতা থেকে কতদিন পর্যন্ত ভরণ-পোষণ পেতে পারেন? অধিকার জানুন

যার উপর একজন স্ত্রী তার স্বামীর থেকে ভরণপোষণ চাইতে পারবেন। তার সাথে হিন্দু এডাপশন এন্ড মেইনটেনেন্স অ্যাক্ট এর অন্তর্গত রয়েছে যে, বাচ্চারা ও তাদের পিতার থেকে ভরণপোষণ চাইতে পারবে।

দন্ডবিধি আইন 1973 এর ধারা 125 ভরণপোষণের মামলা তে এটি একটি প্রসিদ্ধ ধারা বলা যেতে পারে। এই ধারার অন্তর্গত যে কোন সন্তান, যে কিনা নিজের পিতার উপরে আশ্রিত আছে, আর যে সন্তান আঠারো (১৮) বছর বয়স সম্পন্ন করে নি, সেই সন্তান কিন্তু তার পিতার কাছ থেকে ভরণপোষণ প্রাপ্ত করার অধিকারী রয়েছে।

এই ধারার অন্তর্গত কেবলমাত্র সন্তানরাই ভরণপোষণ প্রাপ্ত করার অধিকারী থাকবে না, তার সাথে সাথে স্ত্রী আর বাবা-মা ও এই ধারার অন্তর্গত আইন হিসাবে ভরণপোষণ প্রাপ্ত করার অধিকারী রয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে তার স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ প্রাপ্ত করার অধিকারী থাকবেন, যখন একজন স্ত্রী তার স্বামীর থেকে আলাদা বসবাস করেন।

মাতাপিতাও কিন্তু তার পুত্র অথবা কন্যার কাছ থেকে ভরণপোষণ প্রাপ্ত করার অধিকারী হয়ে থাকেন। একজন কন্যাও কিন্তু তার বাবা-মায়ের ভরণপোষণ করা থেকে কখনোই ছাড় পাবেন না।

তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে এবং আইন হিসাবে তারাও কিন্তু তাদের পিতা-মাতার ভরণ পোষণ করবেন। আইন এই বিষয়ের উপরে ও নিজেদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে ভরণ-পোষণ করার দায়িত্ব দিয়েছে।

বাচ্চাদের ভরণ-পোষণ:

একজন পিতার থেকে সেই পিতার বাচ্চারা ভরণপোষণ প্রাপ্ত করার অধিকারী হয়ে থাকে। যদি কোনো পিতা ভরণপোষণ না করে থাকেন, তখন দন্ড বিধান অনুসারে ধারা 125 এর অন্তর্গত আইন অনুযায়ী সেই পিতার থেকে ভরণপোষণ প্রাপ্ত করা যেতে পারে।

এর সাথে সাথে হিন্দু এডাপশন এন্ড মেইনটেনেন্স অ্যাক্ট এর ধারা 20 এর অন্তর্গত আইন অনুসারে বাচ্চারা তাদের পিতার থেকে ভরণপোষণ প্রাপ্ত করতে পারবে।

যেকোনো পুত্রসন্তান ১৮ বছর বয়সের কম বয়সী যদি হয়ে থাকে, তাহলে তার পিতার কাছ থেকে ভরণপোষণ প্রাপ্ত করার অধিকারী হবে। ছেলেদের মামলাতে এমন পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট, যতক্ষণ পর্যন্ত সেই ছেলে ১৮ বছর বয়সের না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বা ততদিন পর্যন্ত ভরণপোষণ প্রাপ্ত করতে পারবে তার বাবার কাছ থেকে, অথবা পিতার কাছ থেকে।

যখনই সে আঠারো বছর বয়স পূর্ণ করবে অথবা তার কাছে পিতার কাছ থেকে ভরণপোষণ প্রাপ্ত করার অধিকার সমাপ্ত হয়ে যাবে। সেই পরিস্থিতিতে আইন সেই ছেলের কাছ থেকে এই আশা করতে পারে যে, সেই পুত্র নিজের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিজেই যেন নিয়ে থাকে।

আঠারো বছর বয়স হওয়ার পর একজন পুত্র লেখাপড়ার জন্য যে খরচ হয় সেটাও কিন্তু তার পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত করার অধিকারী আর থাকে না। এটা বলা যেতে পারে না যে, সেই ছেলের পড়াশুনার জন্য যে খরচা হচ্ছে, সেটি তার পিতার দ্বারা আদায় করতে পারবে, কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে পরিস্থিতি কিন্তু একটু অন্যরকম।

মেয়েদের মামলাতে ভরণপোষণ:

দন্ডবিধি আইন অনুসারে ধারা 125 এর অন্তর্গত যে ভরণপোষণ এর উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে কোনরকম ভেদাভেদ করা হয়নি। ছেলে এবং মেয়ে দুই পক্ষে কিন্তু ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পিতার উপরই বর্তায়। আর সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এরপর পিতার উপরে তাদের ভরণপোষণ করার জন্য কোনরকম দায়িত্ব থাকবে না। অর্থাৎ আঠারো (১৮) বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর নিজেদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিজেদেরকেই নিতে হবে।

কিন্তু হিন্দু এডাপশন এন্ড মেইনটেন্যান্স অ্যাক্ট এর ধারা 20 (3) অন্তর্গত একটি বর্গের বিবাহিত মেয়ে মামলাতে, আইন এটা বলে যে, যদি সে নিজের ভরণ পোষণ করার জন্য অসমর্থ হয়ে থাকে, তখন তার পিতা অথবা বাবার দায়িত্ব হবে যে তার ভরণপোষণ করার।

ভারতের উচ্চতম বিচারালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ণয় দিয়েছে, যেমন ধরুন আশা ভার্সেস প্রকাশ এর নামে পরিচিত এই বিষয়টি স্পষ্ট ভাষায় জানায় যে, যে কোন অবিবাহিত মেয়ে যদি নিজের ভরণপোষণ করার জন্য সমর্থ না হয়ে থাকেন, তাহলে নিজের পিতার থেকে তার নিজের ভরণপোষণ প্রাপ্ত করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সেই মেয়ে ৫০ বছর বয়সী হয়ে গেলেও তবুও কিন্তু তার পিতার কাছ থেকে ভরণপোষণ প্রাপ্ত করার অধিকারী থাকবেন।

আবার যদি পিতা না থেকে থাকেন, এমন পরিস্থিতিতে সেই মেয়ে যে কোনো জায়গা থেকে ভরণপোষণ প্রাপ্ত করার অধিকারী থাকবে না। আর এমনটা কখনোই সম্ভব নয়, এই মেয়ে তার ভাই দের থেকে ভরণপোষণ প্রাপ্ত করার মধ্যে দিয়ে বিচারালয়ের সমক্ষে কোন প্রকারের যদি কোন কথা নিয়ে আসে, তখন একটাই কথা বলা যেতে পারে যে, ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কিন্তু কেবলমাত্র পিতার উপরেই বর্তায়। যখনই সেই মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায় তখনই কিন্তু তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পিতার উপর থেকে সম্পূর্ণরূপে সমাপ্ত হয়ে যায়।

এ ছাড়া যেকোনো বিবাহিত মহিলা ভরণপোষণের জন্য মামলা-মোকদ্দমার নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে নিয়ে আসেন। যতদূর পর্যন্ত একজন বিবাহ বিচ্ছেদ করা মহিলাও নিজের স্বামীর থেকে ভরণপোষণ নিতে পারেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তার দ্বিতীয় বিয়ে না হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু নিজের পিতার বিরুদ্ধে ভরণপোষণের জন্য কোনরকম মামলা করা যাবে না। অবিবাহিত মেয়ে তার নিজের ভরণপোষণের জন্য নিজের পিতার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন।

তাহলে বোঝা গেল যে, ১৮ বছরের আগে পর্যন্ত একটা ছেলে অথবা একটা মেয়ে তার পিতার কাছ থেকে ভরণপোষণের জন্য অধিকারী থাকবেন কিন্তু ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেদেরকে করে নিতে হবে।

তবে যদি কোন বাবা-মা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য ১৮ বছর কেন, ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্তও যদি ভরণ পোষণ করেন, সেটা আলাদা কথা।

তবে আইন অনুসারে একটা ছেলে অথবা মেয়ে তার পিতার কাছ থেকে ভরণপোষণ নেওয়ার জন্য শুধুমাত্র আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত সময়সীমা পেতে পারেন। এরপর সেই পিতার উপরে ভরণপোষণ নেওয়ার জন্য কোন রকম জোর করা যাবে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top