অ্যাডিনো ভাইরাস থেকে শিশুদের বাঁচাতে এই খাবারগুলি আগে দিন

বর্তমানে অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপে বাচ্চা থেকে বড় সকলেরই জীবন যেন একেবারে নাজেহাল অবস্থা। হয়রানিতে পড়েছেন বাড়ির সকল সদস্য থেকে শুরু করে বাবা মায়েরাও। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং এই সমস্ত ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শিশুদেরকে বিশেষ করে বেশি যত্নে রাখতে হবে।

আর তাদের সুরক্ষিত রাখার জন্য তাদের খাবারের তালিকায় রাখতে হবে এমন কিছু খাবার যা তাদেরকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি ভাইরাস থেকে দূরে রাখবে। নতুন এক আতঙ্কের নাম অ্যাডিনো ভাইরাস। করোনার সম্পূর্ণ সমাধান এখনো পর্যন্ত ভালোভাবে হয়নি। তার মধ্যে দাফিয়ে বেড়াচ্ছে এই অ্যাডিনো ভাইরাস।

অ্যাডিনো ভাইরাস থেকে শিশুদের বাঁচাতে এই খাবারগুলি আগে দিন
অ্যাডিনো ভাইরাস থেকে শিশুদের বাঁচাতে এই খাবারগুলি আগে দিন

এক থেকে দেড় বছরের শিশুরাও এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। শহর থেকে জেলা, সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা দিচ্ছে অসুস্থ শিশুদের, সাথে সাথে বড়দেরও দেখা মিলছে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার জন্য বেশ কিছু পন্থা অবলম্বন করতে হবে তার সাথে সাথে তাদের খাবারের তালিকাতে যুক্ত করতে হবে বিশেষ কিছু খাবার।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক শিশুদের সুরক্ষিত রাখার জন্য বিশেষ কিছু পন্থা সম্পর্কে:

শিশুদের খাবার সম্পর্কে সচেতনতা:

এমন একটা খারাপ পরিস্থিতিতে ছয় মাস থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াবে বাড়ির প্রতিটি সদস্যের জন্য। কিন্তু তাদের খাওয়ানোর জন্য হাজার সমস্যার মুখে পড়তে হয় অভিভাবক দের।

সাধারণ খাবার তারা মুখে তুলতে চায় না, তার সাথে সাথে এই সমস্ত বাড়তি খাবার তাদের খাওয়ানোর জন্য বেশ কষ্ট তো করতে হবে। তবে একটু মুখরোচক করে হলেও রোগ প্রতিরোধকারী খাবারগুলি তাদেরকে তৈরি করে দিতে হবে প্রতিদিন।

১. মাছ মাংস ডিম:

বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর মাছ, মাংস, ডিম আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব মেটায়। তেমনি বাচ্চার প্রতিদিনের খাবারের তালিকাতে রাখুন প্রোটিন জাতীয় খাবার। সয়াবিন, ডালের মত উদ্ভিদ ধরনের খাবারের পাশাপাশি মাছ, মাংস, ডিম, ডাল সেদ্ধ করে খাওয়াতে হবে নিয়মিত।

ভাতের সঙ্গে সেদ্ধ ডিম ও কাঁটা ছাড়িয়ে মাছ ভাতের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। এর পাশাপাশি মাংস সেদ্ধ করে সেটিও ভাতের সঙ্গে মেখে খাওয়াতে হবে। শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি এই সমস্ত ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে তাদের ছোট্ট খুদে শরীরটা।

অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, প্রতিরোধের সঠিক উপায়

২. কাঁচা হলুদ ও মধু:

বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় কাঁচা হলুদ, মধু বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সর্দি, কাশি, জ্বর এইসবের জন্য কাঁচা হলুদ আর মধু খুব উপকারী বলে আমরা সকলেই জানি।

কাঁচা হলুদে থাকে সংক্রমণরোধি উপাদান, কাঁচা হলুদ ছোট্ট টুকরো করে এক ফোঁটা মধু দিয়ে চিবিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে বাচ্চাকে। যদি খাওয়ানো যায় তাহলে খুবই ভালো এছাড়া দুধের সঙ্গেও কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।

৩. মসলা ও মরিচ:

রান্নায় ব্যবহৃত মসলা এবং মরিচ খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেও আরো বেশি দ্বিগুণ করে তোলে। যে কোন রোগ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখতে কাঁচা হলুদ, দারচিনি, লবঙ্গ অথবা গোলমরিচের কোন জুড়ি নেই।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খাবারে ব্যবহার করতে হবে এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ লবঙ্গ, দারুচিনি, কাঁচা হলুদের মত মসলা। বাচ্চাদের মুখে স্বাদ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি তাদের শরীরেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে দ্বিগুণ পরিমানে।

৪. জল ও ফলের রস:

যেহেতু বর্তমান সময়ে গরম পড়ে গিয়েছে, শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ বের হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা প্রায় প্রতিটি মানুষের মধ্যেই থাকবে। তাই অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের সবসময় হাইড্রেট রাখতে বলেছেন ডাক্তাররা।

কেননা শরীর যতটা জলশূন্য হয়ে পড়বে, ততই কিন্তু এই ভাইরাস তার থাবা বসাতে পারবে। শুধু জল, ওআরএস, মেশানো জল এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন ফলের রস করে খাওয়ালে শিশুর এনার্জি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি লড়াই করতে পারবে অ্যাডিনো ভাইরাসের বিরুদ্ধেও।

৫. টক দই:

আমাদের শরীরে সবথেকে বেশি উপকারে আসে টক দই, মিষ্টি দইয়ের তুলনায়। টক দই তে থাকা ফার্মেন্টেড এনজাইম হজম করতে সহায়ক। তাই শিশুর হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে টক দই বিভিন্নভাবে তাকে খাওয়ানো যেতে পারে।

টক দই তে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান যা লিভারকে সুস্থ রাখে। শুধু দই, দই দিয়ে বানানো কোন ঘোল, রায়তা ইত্যাদি বিভিন্নভাবে বাচ্চার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা তে রাখতে হবে অল্প পরিমাণে।

৬. চিকেন স্টু বানিয়ে নিন ঘরে:

চিকেন স্টু খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুবই কমই আছেন। তবে শিশুদের মধ্যে এটি একটি পছন্দের খাবার বলা যেতে পারে। চিকেন স্টু বানিয়ে সেটি বেটে নিতে পারেন অথবা ব্লেইন্ডারে ব্লেইন্ড করে নিতে পারেন।

অনেক শিশুই খেতে পারে না বিভিন্ন কারণে। অনেক ধরনের সবজি দিয়ে মাংসের স্টু বানাতে পারেন, মাংসের হাড় ছাড়িয়ে নিন এবার সেই মাংস ও সবজি বেটে স্টু এর জলে মিশিয়ে দিন সেটা খাইয়ে দিন শিশুকে। দেখবেন অনেকটাই উপকার পাচ্ছে আপনার ছোট্ট খুদে।

৭. তেতো খাওয়াতে ভুলবেন না:

সব সময় মুখোরোচোক খাবার আমাদের শরীরের জন্য কখনোই ভালো নয়, এছাড়া আমাদের পেট কে সুস্থ রাখতে এবং শরীরের বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে আর রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে তেতো খাওয়া খুবই উপকারী। বিশেষ করে গরমের সময় বেশি করে তেতো খেতে হয়। এই সময় শিশুদের খাবারের তালিকায় একটু খেয়াল রেখে তেতো রাখতে ভুলবেন না।

চেষ্টা করুন প্রতিদিনের খাবারের পাতে একটু খানি, সামান্য হলেও তেতো রাখুন। সে ক্ষেত্রে নিমপাতা কিংবা উচ্ছে রাখতে পারেন। সামান্যতম হলেও তার শরীরে যাওয়া খুবই জরুরী। তাই শিশুর খাদ্য তালিকা তে এটি যুক্ত করতে একেবারেই ভুলবেন না।

আমাদের শরীর যত বেশি স্ট্রং হবে তত বেশি বাইরের পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে উপযোগী হয়ে উঠবে। সেক্ষেত্রে শিশুদের জন্য এটি বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য যে, তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম থাকে, তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে আর এই বর্তমান পরিস্থিতিতে।

অ্যাডিনো ভাইরাসের হাত থেকে তাদের কে রক্ষা করতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই সমস্ত খাবার গুলি যুক্ত করুন। প্রতিটি বাড়ির প্রতিটি শিশু থেকে শুরু করে সকল বড়রাও ভালো থাকুক এই ভাইরাস ঘটিত পরিস্থিতিতে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top