ইচ্ছামৃত্যু কি? বৈধ না অবৈধ? ভারতে ইচ্ছামৃত্যুর আইন জানুন

Euthanasia Types and Legal Status in Bengali: ইচ্ছামৃত্যু কি? ইচ্ছামৃত্যু বৈধ না অবৈধ? | ইচ্ছা মৃত্যুর প্রকার কি কি? কেন হয়ে থাকে ইচ্ছামৃত্যু | জেনে নিন ভারতে ইচ্ছামৃত্যুর আইন ও এই সম্পর্কে নিয়ম।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমন অনেক রোগী পাওয়া যায়, যারা কিনা এতটাই কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তখন আর বাঁচার ইচ্ছা কোনভাবে থাকে না সেই ব্যক্তির। সে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক বলা হয় যে, তাকে যেন হত্যা করা হয়। কেন না তার বাঁচার ইচ্ছা নেই এবং বেঁচে থাকতে যে কষ্ট অনুভব করছেন সেটা আর সহ্য করতে পারছেন না।

ইচ্ছামৃত্যু কি? বৈধ না অবৈধ? ভারতে ইচ্ছামৃত্যুর আইন জানুন
ইচ্ছামৃত্যু কি? বৈধ না অবৈধ? ভারতে ইচ্ছামৃত্যুর আইন জানুন

এমন ঘটনা ভারতে নেহাত কম নয়। আর এই ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে অনেক পরিবার। যে পরিবারে কোনো ব্যক্তির এমন ইচ্ছা মৃত্যু ঘটানো হয়েছে তার ইচ্ছা অনুযায়ী।

ইচ্ছামৃত্যু আসলে কি এবং এর ব্যাখ্যা:

ইচ্ছা মৃত্যু হল সেই ব্যক্তির শেষ ইচ্ছার জন্য ব্যক্তিকে জেনে বুঝেই হত্যা করা বলতে গেলে এক কথায়। যাতে সেই ব্যক্তি কোনরকম অসহ্য যন্ত্রণা এবং রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন অথবা মুক্তি দেওয়া যেতে পারে তাকে।

আবার অন্য দিকে দেখতে গেলে ইচ্ছামৃত্যু হত্যা, এই হিসেবেও জেনে থাকেন অনেকে। কোন হসপিটালে রোগীর শরীরে বিষ প্রয়োগ করে ধীরে ধীরে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকে। যাতে কোন রকম মৃত্যুযন্ত্রণা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারেন সেই ব্যক্তি।

ইচ্ছা মৃত্যুর বিভিন্ন রকমের প্রকার:

ইচ্ছামৃত্যুর দুটি প্রধান প্রকার হলো সক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু এবং নিষ্ক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু। এই দুই রকম ইচ্ছা মৃত্যু সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:

সক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু:

সক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু কে সকরাত্মক ইচ্ছামৃত্যু ও বলা যেতে পারে। সক্রিয় ইচ্ছামৃত্যুর প্রক্রিয়াতে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ এর মাধ্যমে ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কোন ইনজেকশন অথবা এমন কোন মেডিসিন সেই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটাতে পারে সেগুলো প্রয়োগ করা যেতে পারে।

আর এই প্রক্রিয়াটি খুবই তেজ প্রক্রিয়া হয়ে থাকে। মানবাধিকার কার্যকর তাদের কথা অনুযায়ী সক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু সম্পূর্ণরূপে অনৈতিক হয়ে থাকে। আর এক প্রকার হত্যার সমান সমান বলতে পারেন।

ভারতে এ বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে, ভারতের সংবিধান অনুচ্ছেদ 21 ধারা গ্যারান্টিকৃত মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে। আর ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে ধারা 302 অথবা 304 অনুযায়ী এক রকম অপরাধও বলতে পারেন।

নিষ্ক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু:

নিষ্ক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু কে অথবা বিনা আক্রমণ ইচ্ছামৃত্যু হিসেবে জানা হয়ে থাকে। নিষ্ক্রিয় ইচ্ছামৃত্যুর প্রক্রিয়াতে যেখানে কোন ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ ঘটিয়ে দিয়ে তাকে কোনরকম জীবন প্রদান না করা অথবা জীবন প্রদানের জন্য কোন রকম সহযোগিতা না করা।

এরমধ্যে ভেন্টিলেটর, লাইফ সাপোর্ট, ফিডিং টিউব ইত্যাদি জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলা। জেনে বুঝে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সেখানে উপলব্ধ না করা।

নিষ্ক্রিয় ইচ্ছামৃত্য সম্পূর্ণ পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে অধিক পরিমাণে লক্ষ্য করা যায় এবং এটি আইনী হিসেবে স্বীকার করা হয়ে থাকে। আর এটি খুবই ধীর প্রক্রিয়া। যেখানে তুলনায় এটি খুবই কঠিন প্রমাণিত হতে পারে।

এই প্রক্রিয়া নৈতিক হয়ে থাকে যে, কোনো রোগীকে মরতে দেওয়া হয়ে থাকে কিন্তু জেনে বুঝেও কোনো রোগী অথবা ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য এটি স্বীকার করা হয় না। ইচ্ছামৃত্যু কে সৈচ্ছিক এবং ঐচ্ছিক অথবা অনৈচ্ছিক ইচ্ছামৃত্যুর হিসেবে জানা হয়ে থাকে। 

১) সৈচ্ছিক ইচ্ছামৃত্যু:

যদি সেই ইচ্ছামৃত্যু রোগী অথবা সেই ব্যক্তির ইচ্ছা আর সহমতি অনুসারে করা হয়ে থাকে তাহলে এটা স্বৈচ্ছিক ইচ্ছামৃত্যু হয়। এই ঘটনা তখনই হয়, যখন কোনো রোগীর কাছে তার নিজের জন্য এই বিকল্প পদ্ধতি উপলব্ধ হয়ে থাকে।

যার কারণে কোন রকম রোগের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই বিকল্প নির্বাচন করতে পারেন, যাতে সেই ব্যক্তির অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি পথ খোলা হয়ে যায়।

২) বিনা স্বৈচ্ছিক ইচ্ছামৃত্যু:

যদি সেই ইচ্ছামৃত্যুর নির্ণয় কোন ব্যাক্তি দ্বারা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে, সেটা হতে পারে সেই রোগীর কোন কাছের আত্মীয় এবং পরিবারের কোনো সদস্য, তাকে বিনা স্বৈচ্ছিক ইচ্ছামৃত্যু বলা হয়।

তাছাড়া এটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে, যে ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু সম্বন্ধে কোনো রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মানসিক এবং শারীরিক ক্ষমতা না থাকে তখনই কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের কোনো সদস্য অথবা আত্মীয় স্বজন এমন ইচ্ছামৃত্যুর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

৩) অনৈচ্ছিক ইচ্ছামৃত্যু:

যখন কোন রোগীর জীবন তার সহমতের বিনা সমাপ্ত হয়ে থাকে, তখনই কিন্তু সেই ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে যায়। যদি কোন ব্যক্তি সেই রোগীর সহমতি ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে হত্যা করে থাকে।

ইচ্ছামৃত্যুর আইন কেন অবৈধ হতে হবে?

ভারতে আর কিছু দেশে ইচ্ছামৃত্যু স্বপক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি তর্ক অনুসারে নিচে আলোচনা করা হলো:-

ইচ্ছামৃত্যুর জন্য / স্বপক্ষে যুক্তি:

যদি কোন রোগে এতটাই রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে, তার বেঁচে থাকা আর না থাকার মধ্যে কোনরকম পার্থক্য থাকে না। তার মধ্যে দিয়ে অসহ্য যন্ত্রনা, কষ্ট ভোগ করতে হয় সেই ব্যক্তিকে। যদি এমন অবস্থায় কোনো রোগী কাউকে বলে থাকেন যে, তার মৃত্যু ঘটানোর জন্য, সেটা এক পক্ষে ঠিক বলে মানা হয়।

ইচ্ছামৃত্যুর বিষয়ে সেটা যতই কষ্টকর হোক না কেন, যে এই ইচ্ছামৃত্যুর ফলে সেই ব্যক্তির জীবন সমাপ্ত হয়ে যায় তবুও অসহ্য কষ্ট যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার অবকাশ পেতে পারেন বলতে গেলে। অনেকে মনে করেন যে কষ্ট সেই ব্যক্তিটি পাচ্ছেন, না তো তার সহ্য হচ্ছে, না তো পরিবারের অন্য কোন সদস্যের।

শারীরিক কষ্টের থেকে আরাম পাওয়ার জন্য অনেক কষ্ট করেও কোনো রকম লাভ হয়নি, সে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির নিজের সহমতি এবং পরিবারের কথা অনুযায়ী ইচ্ছা মৃত্যু ঘটাতে পারেন।

ইচ্ছামৃত্যুর বিরুদ্ধে / বিপক্ষে যুক্তি:

আবার অন্যদিক থেকে ভাবতে গেলে ইচ্ছামৃত্যু অনৈতিক হিসাবে মনে করা হয়। আর এই প্রক্রিয়া কোন জীবনের মহত্ব দিয়ে থাকে না। কারণ একটি মৃত্যু কতটা দুঃখ বয়ে নিয়ে আসতে পারে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই।

প্রতিটি মৃত্যুই কষ্টদায়ক, আর তাছাড়া একটি ব্যক্তির কোনরকম অধিকার থাকে না, অন্য কোনো ব্যক্তির জীবন ছিনিয়ে নেওয়ার বা তার বাঁচার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার। কেননা এটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে, এছাড়া ইচ্ছামৃত্যুর জন্য খুবই কঠিন পন্থা অবলম্বন করতে হয়।

যেমন ধরুন ইনজেকশন প্রয়োগ করা বা কোন ওষুধ প্রয়োগ করা যার মধ্যে দিয়ে সেই ব্যক্তির মৃত্যু ধীরে ধীরে অথবা তেজ হিসাবে ঘটতে পারে। তার সাথে সাথে চিকিৎসা নৈতিকতার সাথে সামাজিক মানদণ্ড দ্বারা এই প্রক্রিয়া নৈতিক বলে গণ্য করা হয়।

কারোর কাছে অন্য কারো মৃত্যু নিশ্চিত করার মতো কোনো ক্ষমতা না হওয়াটা জরুরী। তার সাথে সাথে নিজের জন্যও নয়। আর এই বিষয়টি বোঝার জন্য কোনরকম নিশ্চিত সীমা নেই। যে কোন যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি ইচ্ছামৃত্যুর জন্য উপযুক্ত অথবা উপযুক্ত নয়।

যতই ইচ্ছামৃত্যু দেওয়া দুর্লভ, কঠিন তার সাথে খুবই কষ্টদায়ক প্রক্রিয়া, কিন্তু এই বিষয়ের ক্ষেত্রে একটি যুক্তি থেকেই যায় যে, যে কোন ব্যক্তির বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে আর গর্বের সাথে মৃত্যুর অধিকারও।

কঠিন প্রকৃতি আর পরিনাম এর বিষয়টি খেয়াল রাখার সাথে সাথে এই বিষয়টি ভারতে খুবই তর্কবিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এই বিষয়ে আপনার আরো কিছু তথ্য জানার থাকে তাহলে একজন সিভিল উকিল এর সাথে যোগাযোগ করুন।

ভারতে ইচ্ছামৃত্য আইনে আছে কি ?

ভারতের কেবলমাত্র নিষ্ক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু আইনি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু কে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। ভারতে ইচ্ছামৃত্যুর অনুমত্যানুসারে ডাক্তারদের অসহায় যন্ত্রণাদায়ক রোগের সাথে জর্জরিত রোগের জীবনের জন্য প্রয়োজন হবে সেই চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ার এবং তেমন অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

এমন অনেক রোগ রয়েছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। সে যন্ত্রণা অনেক রোগী সহ্য করতে পারেন না। এমন ভাবে আর এই প্রক্রিয়া সেই সমস্ত ব্যক্তিদের জন্য হতে পারে যিনি পরিবর্তনশীল রাজ্য থেকে আছেন।

ভারতে বেঁচে থাকার ইচ্ছার মাধ্যমে ইচ্ছামৃত্যু:

একটি অ্যাডভান্স ডাইরেকটিভ অথবা লিভিং বিল ও একটি ব্যক্তি দ্বারা বানানো যেতে পারে। নিষ্ক্রিয় ইচ্ছামৃত্যুর জন্য সহমতি যা কিনা পরিবর্তে জীবন সমর্থন প্রণালী ফিরে পাওয়ার অধিকার দিতে পারে। যদি ব্যক্তি কোন চিকিৎসা করার উপযুক্ত নয়, এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে এটি করা যেতে পারে।

উন্নত নির্দেশকে সুস্থ মস্তিষ্কে স্বইচ্ছায় জোরজবরদস্তি ছাড়া সে ব্যক্তিকে মৃত্যু দান করা যেতে পারে। আর এই বিষয়টি স্পষ্ট রূপে লিখে দিতে হবে যে, কোনরকম চিকিৎসা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, এবং যতদূর সম্ভব খুব তাড়াতাড়ি এই প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে হবে।

যাতে সেই রোগ সেই ব্যক্তিকে অসহ্য যন্ত্রণা না দিতে পারে। বাঁচার ইচ্ছার মধ্যে দিয়ে নিষ্ক্রিয় ইচ্ছামৃত্যুর অনুমতি সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা 2018 তে ঘোষণা করা হয়েছিল।

কোন কোন দেশে ইচ্ছামৃত্যুর অনুমতি আছে ?

১) নেদারল্যান্ড দুই রকম ইচ্ছামৃত্যু কে বৈধ বানানোর জন্য মামলা দায়ের করা যেতে পারে, তবে ইচ্ছামৃত্যু দেওয়ার জন্য ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোনো রকম মামলা চালানো সম্ভব নয়।

২) বেলজিয়াম 2002 সালে ইচ্ছামৃত্যু কে বৈধ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

৩) কানাডা সৈচ্ছিক সক্রিয় ইচ্ছামৃত্যুর অনুমতি ১৮ বছরের বেশি বয়স যুক্ত ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে।

৪) কলম্বিয়া 2015 তে ইচ্ছামৃত্যু কে বৈধ হিসেবে ঘোষণা করে।

৫) ইউ এস এ (USA) কেবলমাত্র নিষ্ক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু কে কিছু আইনি রূপে দেখা হয়েছে, যেখানে কিছু রাজ্য শামিল আছে।

৬) অস্ট্রেলিয়া, ইসরাইল, ব্রিটেন, তুর্কি এ সমস্ত দেশে ইচ্ছামৃত্যু কে সব দিক থেকে বিবেচনা করে অবৈধ হিসেবে মানা হয়।

তবে ইচ্ছামৃত্যুর বিষয়টি মতবিরোধের মধ্যে পড়ে। কখনো এটা বৈধ, আবার কখনো এটা অবৈধ। তবে হসপিটালের মৃত্যুশয্যায় যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা ব্যক্তি যখন নিজের সম্মতি ও ইচ্ছা অনুসারে নিজের মৃত্যুর জন্য কাউকে বলে থাকেন, সে ক্ষেত্রে অনেকেই এমনটা করেন, যাতে সেই যন্ত্রণা থেকে সেই ব্যক্তি মুক্তি পেতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top