ড্রোন নিয়ে ভারতের আইন যা ড্রোন ব্যাবহারের আগে জেনে নেওয়া জরুরি

ড্রোন নিয়ে ভারতের আইন: ড্রোন ব্যাবহার করতে হলে মানতে হবে আইনি নিয়ম। ভারতে ড্রোন নিয়ে রয়েছে বিশেষ নিয়ম ও কানুন, যে কোন ড্রোন ব্যাবহারকারিকে মানতে হবে এই নিয়মগুলি। আসুন জেনে নিন ড্রোন নিয়ে ভারতের আইন সম্পর্কে।

ড্রোন সম্পর্কে আমরা কমবেশি সকলেই জানি, কি তাই তো ! এর মাধ্যমে অনেক রকম কাজ সহজ হবে এবং খুবই কম সময়ের মধ্যে করা যেতে পারে।

ড্রোন নিয়ে ভারতের আইন যা ড্রোন ব্যাবহারের আগে জেনে নেওয়া জরুরি
ড্রোন নিয়ে ভারতের আইন যা ড্রোন ব্যাবহারের আগে জেনে নেওয়া জরুরি

তবে এই ড্রোন ওড়ানো আইনত ভাবে বৈধ হতে হবে, তবেই আপনি সেই ড্রোন এর মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের কাজ করতে পারবেন। আজকে তাহলে জানা যাক ভারতে ড্রোন সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের আইন কানুন।

ভারতের ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রে ন্যূনতম নিয়ম: 

ন্যানো শ্রেণীর মানুষদের ছাড়া সমস্ত ড্রোন এর রেজিস্ট্রেশন হওয়া প্রয়োজন এবং একটি বিশিষ্ট পরিচিতি সংখ্যা ইউ আই এন জারি করতে হবে।

বাণিজ্যিক ড্রোন সঞ্চালনের জন্য একটি পারমিট এর প্রয়োজনীয়তা হবে। তবে কেবল মাত্র ন্যানো শ্রেণীর মানুষদের ছেড়ে যাদের 50 ফিট থেকে নিচে আর মাইক্রো শ্রেণীর 200 ফিট এর নিচে ওড়ানো যেতে পারে।

ড্রোন পাইলট কে সেই ড্রোন ওড়ানোর সময় প্রতিমুহূর্তে প্রত্যক্ষ দৃশ্য রাখা জারি রাখতে হবে।

ড্রোন কে 400 ফিট এর থেকে বেশি প্রবাহিত করা যাবে না।

ড্রোনকে “নো ফ্লাই জোন” রূপে নির্দিষ্ট কোনো ক্ষেত্রে সেই ড্রোন উড়ানো যাবে না। যেখানে আন্তরাষ্ট্রীয় সীমা, দিল্লির বিবেচক রাজ্যের রাজধানী, রাজ্যসভায় এর পরিসরে, রণনীতি স্থানে এবং সৈন্য প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি জায়গায়ও কিন্তু সামিল রয়েছে, এমন নো ফ্লাই জোন হিসেবে।

নিয়ন্ত্রিত উড়ান ক্ষেত্রে  ড্রোন ওড়ানোর সময় অনুমতি হিসেবে উড়ান যোজনা জমা করতে হবে এবং বায়ু রক্ষা মঞ্জুরি এডিসি উড়ান সূচনা কেন্দ্র এফ আইসি নম্বর প্রাপ্ত করতে হবে।

ড্রোন ওড়ানোর সময় ওজনের পরিমাণ স্বরূপ হিসেবে বিভিন্ন নিয়ম: 

  • ন্যানো: 250 গ্রাম এর থেকে কম অথবা সমান সমান (.55 পাউন্ড)
  • মাইক্রো: 250 গ্রাম (.55 পাউন্ড) থেকে 2 কিলোগ্রাম (4.4 পাউন্ড) পর্যন্ত।
  • ছোট: 2 কিলোগ্রাম (4.4 পাউন্ড) থেকে 25 কিলোগ্রাম (55 পাউন্ড) পর্যন্ত।
  • মধ্যম: 25 কিলোগ্রাম (55 পাউন্ড) থেকে 150 কিলোগ্রাম (330 পাউন্ড)
  • বড়: 150 কিলোগ্রাম এর বেশি (330 পাউন্ড) বিভিন্ন ওজনের এর উপর জারি করার নিয়ম স্পষ্ট ভেদাভেদ ও রয়েছে।

ভারতে ড্রোন ওড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ গুলি কি কি?

যে সমস্ত উপকরণ গুলি একটি ড্রোন উড়ানোর জন্য প্রয়োজন পড়বে সেগুলি হল:-

  • জিপিএস (GPS)
  • ঘরে ফেরা আর টি এইচ
  • কোনরকম ধাক্কা নিরোধক আইডি প্লেট
  • ওড়ানোর জন্য ডেটা তার সাথে সাথে ওড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা।
  • আর এফ আই ডি আর সিম
  • কোন অনুমতি নেই টেক অফ (এন পি এন টি)
  • ভারতের নো পার্মিশন নো টেক অফ পলিসি।
  • প্রত্যেক ড্রোন ওড়ানোর আগে ড্রোন পাইলটকে একটি মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে ওড়াতে হবে এবং ওড়ানোর অনুমতি ও অনুরোধ করা হয়ে থাকে।

ড্রোনকে সঞ্চালন করার ক্ষেত্রে আইন কানুন এবং নিয়ম গুলি যদি পালন করা না হয়, সে ক্ষেত্রে শাস্তি কি হতে পারে?

যে কোন আইন ভঙ্গের জন্য শাস্তি অনিবার্য। তাই ভারতীয় দণ্ডবিধি 1860 আই পি সি অনুসারে শাস্তি পেতে হবে, যাতে এই সমস্ত ধারা অনুসারে শাস্তি যুক্ত রয়েছে:-

  • ধারা 287: মেশিনপত্র এর ক্ষেত্রে কোনো রকম উদাসীনতা মূলক আচরণ যদি লক্ষ্য করা যায়, সে ক্ষেত্রে জেলের সাজা হতে পারে 6 মাস পর্যন্ত, তার সাথে সাথে জরিমানা হিসেবে 1,000 টাকা পর্যন্ত দিতে হতে পারে।
  • ধারা 336: কোন ব্যক্তির জীবন অথবা ব্যক্তিগত সুরক্ষাকে বিপদের মুখে ফেলার কাজ করার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিন্তু তিন মাসের জেল এবং জরিমানা হিসেবে 250 টাকা দিতে হতে পারে।
  • ধারা 33 সেকশন: অন্য কারো জীবন অথবা নিজের সুরক্ষাকে বিপদের মুখে ফেলার জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল বাড়ানো যেতে পারে এবং জরিমানা হিসেবে 400 টাকা পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে এবং দুটি একসাথেও হতে পারে জেল এবং জরিমানা।
  • আইপিসি এর বিমান নিয়ম 1939 এর নিয়ম 133 যেখানে ড্রোন’ ওড়ানোর ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করলে 6 মাসের জেল তার সাথে তার সাথে জরিমানা হিসেবে 2 লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হতে পারে।

রিমোট পাইলট প্রশিক্ষণ এর প্রয়োজনীয়তা: 

যেকোনো কাজের জন্য প্রশিক্ষণ আগে থেকে প্রয়োজন। তবেই আপনি সেই কাজটি সঠিকভাবে এবং সুন্দরভাবে করতে পারবেন। তাই ন্যানো এবং মাইক্রো ড্রোন এর পাইলটের অনিয়ন্ত্রিত ওড়ানোর ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে। এবং পাইলট হওয়ার জন্য সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হওয়ার পর তারপরেই এমন ড্রোন ওড়ানো সম্ভব হবে।

সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা:

ন্যানো ড্রোন এর সঞ্চালক দের এই সম্বন্ধিত বিভিন্ন রকমের বিষয়ের উপরে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে কোনো রকম ঘটনা অথবা দুর্ঘটনা না হয়। সেই দিকটা বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কোনো রকম ঘটনা অথবা দুর্ঘটনাকে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তা নে যখন অন্য সমস্ত অপারেটর রা এমন টা করতে চাইবেন।

উপকরণের প্রয়োজনীয়তা: 

অনিয়ন্ত্রিত ড্রোন ওড়ানোর বিষয়টি খেয়াল রাখার মধ্যে দিয়ে 50 ফিট পর্যন্ত সঞ্চালিত করা যেতে পারে।

  • সে ক্ষেত্রে কোনরকম ধাক্কা জনিত বিপদ থেকে বাঁচা,
  • অ্যাপের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা,
  • real-time ট্রাকিং ইউ এন এর সাথে অগ্নি প্রতিরোধ ও পরিচয় পত্র বা প্লেট এবং ক্ষমতা ড্রোন ওড়ানো যেতে পারে।

পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা: 

ন্যানো এবং মাইক্রো ড্রোন 15.25 মিটার এবং 60.96 মিটার পর্যন্ত অনিয়ন্ত্রিত  এয়ার স্পেস অথবা সংলগ্ন পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা রাখার মধ্যে দিয়ে এমন করানো যেতে পারে। 15.24 মিনিটের কম পরিচালন করা ন্যানো ড্রোন অপারেটরের পরিচালন শুরু করার আগে লিখিতভাবে সম্বন্ধিত স্থানীয় পুলিশ কার্যালয়ে সূচিত করার থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

প্রমানপত্র এবং লাইসেন্স: 

ড্রোনকে ডি জি সি এ (GDCA) দ্বারা ইউ আই এন (UIN) জারি করা হতে হবে। যখন ন্যানো এবং মাইক্রো ড্রোন অপারেটরকে এর ছাড়াও সমস্ত অপারেটর কে ডিজিসিএ (GDCA) থেকে ইউ এ ও পি (UAOP) প্রাপ্ত করতে হবে। এর সাথে সাথে ড্রোন ওড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হতে হবে।

প্রমানপত্র এবং লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে ট্যাক্স অথবা ফিস: 

বিভিন্ন রকমের ট্যাক্স হলো:-

  • ইউ আই এন (UIN) এর অনুদানের জন্য:- 1000 টাকা।
  • ইউ এ ও পি (UAOP) এর অনুদানের জন্য 25 হাজার টাকা।
  • ইউ এন ও পি (UNOP) এর নবীকরণের জন্য 10,000 টাকা।

প্রমানপত্র এবং লাইসেন্সের জন্য কারা আবেদন করতে পারবেন?

  • ভারতের নাগরিক
  • কেন্দ্র সরকার অথবা কোন রাজ্য সরকার অথবা কোন কোম্পানি বা নিগম এর কাছে এই অধিকার রয়েছে যে তারা এই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
  • কোন রেজিস্টার করা ব্যবসার ক্ষেত্রে।

ভারতের ড্রোন এর বীমার প্রয়োজনীয়তা:

নিয়ম অনুসারে ড্রোন অপারেটর কে তৃতীয় পক্ষের দায়িত্ব বীমার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ন্যূনতম নির্ধারিত অ্যামাউন্ট নয়, যার বীমা করা যেতে পারে। বীমা কভার এর অ্যামাউন্ট অপারেটর দ্বারা করা হয়ে থাকে।

ভারতের ড্রোন সঞ্চালনের উপর সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানা যাক:

ড্রোন ওড়ানোর আগে ড্রোনের অপারেটরকে সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কে ভালোভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। যেমন ধরুন কোন জায়গায় ধাক্কা লাগার বিষয় থেকে বাঁচানো, টেক অফ অথবা ল্যান্ডিং ক্ষেত্রকে জনবহুল জায়গাতে না করে আলাদা কোনো ফাঁকা জায়গাতে করা উচিত।

নিয়ন্ত্রিত উড়ানের ক্ষেত্রে সঞ্চালনের জন্য পাইলট নিয়ন্ত্রিত উড়ান ক্ষেত্রে প্রবেশ করার আগে এটিসি এর সাথে যোগাযোগ স্থাপিত করতে হবে এবং যোগাযোগ জারি রাখতে হবে। সমস্ত রকম ডেটা, ক্যামেরা ইত্যাদি বিষয়টি ভালোভাবে চেক করে নিতে হবে ওড়ানোর আগে।

তবে অবশ্যই ব্যক্তিগত কোন ডেটা গোপন করে রাখার বিষয়টি সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে ক্ষেত্রে আইন খুবই কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এবং আইন অনুসারে ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রে ডেটাকে গোপন করে রাখাটা জরুরি।

যে কাজের জন্য ব্যবহার করা হোক না কেন, সে ক্ষেত্রে সেই কোম্পানি অথবা সেই কাজের ডেটা সবসময়ের জন্য গোপন থাকাটা জরুরী এবং এই দিকটা ড্রোন ওড়ানোর সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top