Kartik 2023: কার্তিক মাসে ভক্তি ভরে করুন এই কাজ গুলি পূর্ণ হবে সকল মনের আশা

বাঙালির জীবনে প্রতিটি মাস যেন এক একটি উৎসবের মাস। তবে আশ্বিন মাস বড় উৎসব দুর্গাপুজোর জন্য খুবই জনপ্রিয়। তবে সেই মাস পার হয়ে পড়েছে কার্তিক মাস। দেবীপক্ষের অবসান হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে গিয়েছে কার্তিক মাসের তোড়জোড়।

শাস্ত্র মতে কার্তিক মাসকে মাঙ্গলিক মাস বলা হয়ে থাকে। কালী পূজা, দীপাবলি, ধনতেরাস, অন্নকুট এই সমস্ত উৎসবের মতো একাধিক মাঙ্গলিক উৎসব ও কাজ হয়ে থাকে এই কার্তিক মাসেই। তাছাড়া দেবতাদের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য একাধিক পূজা করা হয় এই কার্তিক মাসে, সব শুভ কাজও হয়ে থাকে।

do these things with devotion in the month of kartik কার্তিক মাস
কার্তিক মাসে ভক্তি ভরে করুন এই কাজ গুলি পূর্ণ হবে সকল মনের আশা

তবে এই কার্তিক মাসে এমন অনেক কাজ রয়েছে যেগুলি আপনি যদি নিষ্ঠা ভরে পালন করেন তাহলে অনেক পাপ মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি পূণ্য অর্জন করা সম্ভব। জীবনযাত্রা সুষ্ঠুভাবে চলার জন্য এবং আরো অনেক কিছু জীবনে স্বপ্ন পূরণ করার ক্ষেত্রে, পূজা-অর্চনা করে থাকেন সকলেই। তাই কার্তিক মাসে বিশেষ করে পূজা অর্চনা ও আরো অনেক নিয়ম বিধি পালন করার সাথে সাথে মনের সকল ইচ্ছা পূর্ণ হয়ে যায়।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কার্তিক মাসে এমন কোন কোন কাজ গুলি আপনি করবেন:

১) তুলসী পূজা:

তুলসী গাছ থাকবে না এমন কোন হিন্দু বাড়ি পাওয়াই যাবে না। তবে এই তুলসী গাছ নিয়ে আরো অনেক কাহিনী এবং রীতি নীতি জড়িত রয়েছে। তুলসী গাছকে দেবী হিসেবে পূজা করা হয়। প্রতিটি বাঙালি হিন্দু বাড়িতে তুলসী মঞ্চ, তুলসী গাছ থাকাটা বাঞ্ছনীয়।

কার্তিক মাসের পুণ্য তিথিতে তুলসী পুজো করলে শুভ ফল লাভ করা যায় জীবনে। সারা বছর তুলসী গাছে জল দেওয়া, তুলসী মঞ্চে প্রদীপ জ্বালানো, এগুলো তো চলেই থাকে। তবে কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের একাদশী তিথিতে তুলসীর বিবাহের আয়োজন করা হয়।

ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গে তুলসী মাতার বিবাহের আয়োজন করলে সংসার সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে। এছাড়াও কার্তিক মাসের প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বালানো আরো শুভ বলে মনে করা হয় শাস্ত্র মতে। সেই কারণে কার্তিক মাসের প্রতিটি দিন তুলসী পূজা ও তুলসী মঞ্চে প্রদীপ জ্বালাতে ভুলবেন না কিন্তু।

২) যমুনা স্নান:

গঙ্গা স্নান যেমন একটি পুণ্যের কাজ, তেমনি যমুনা স্নান করাও কিন্তু অনেক খানি পূণ্যের কাজ। তবে সেটা কার্তিক মাসের শুভদিনে যমুনা নদীতে স্নান করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। হিন্দু পুরাণে ভগবান বিষ্ণুর স্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে যমুনাকে।

সেই কারণে বলা হয় কার্তিক মাসের প্রতিদিন যদি যমুনা নদীতে ডুব দিয়ে স্নান করা যায়, তাহলে সব রোগ মুক্তি ঘটে, যমুনা সব রোগ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেয় মানব শরীর থেকে। এছাড়াও যম লোকে শাস্তি কমে যায় অনেকখানি। তিথি আর বিশেষ দিনে যমুনা নদীতে স্নান করলে আরো বেশি শুভ ফল লাভ করা যায়।

৩) আমলকি পূজা:

সংসারের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করার জন্য সকলে কত কিছুই না পথ তারা অবলম্বন করে থাকি। তেমনি হল এমন একটি নিয়ম সেটা হলো আমলকি পূজা। যা কিনা কার্তিক মাসে পালিত হয়ে থাকে।

কার্তিক মাসে সংসারের  সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসার আরেকটি উপায় হল আমলকি পূজা। প্রতিদিন আমলকি দান করা এবং আমলকি গাছের পুজো করলে সংসারের সমৃদ্ধি আসে। এর পাশাপাশি কার্তিক মাসে আমলকি খাওয়া যেতে পারলে, রোগ মুক্তি ঘটে বলে মনে করা হয়।

আবার কার্তিক ঠাকুর ও নিজে রোগ মুক্তির আশীর্বাদ দেন বলে এই কার্তিক মাস সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস। কার্তিক মাস জুড়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে একাধিক পূজা পার্বণ এবং মাঙ্গলিক কাজ করা হয়। সেই জন্য কার্তিক মাসকে মাঙ্গলিক মাস বলেও অভিহিত করা হয়।

৪) প্রদীপ দান করা:

আমরা আগেই জেনেছি কালী পূজার এই আলোর উৎসবে প্রদীপ দান করা অনেকখানি শুভ বলে মনে করা হয়। কার্তিক মাসে দীপাবলি উদযাপিত হয়ে থাকে, যাকে দীপদান ও বলা হয়। আবার দেব দীপাবলিও বলা হয়ে থাকে। দীপাবলীর সময় সম্পূর্ণ বাড়ি আলোকিত করে সাজানো হয় প্রদীপ দিয়ে।

আবার দীপাবলীর দিনে সীতাকে সঙ্গে করে রামচন্দ্র অযোধ্যায় ফিরেছিলেন। তাদের আসার জন্য গোটা অযোধ্যা নগরী প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয়েছিল, যা কিনা ছিল খুবই দৃষ্টিনন্দন এবং সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। সেই জন্য এই দিন গোটা দেশে দীপাবলি পালন করা হয়ে থাকে।

এছাড়াও কার্তিক মাসে প্রতিদিন যদি তুলসী মঞ্চের সামনে অথবা কোন নদী ও হ্রদের ধারে প্রদীপ দেওয়া হয়, তাহলে সংসারের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বজায় থাকে আজীবন। কার্তিক মাসে প্রতিদিন প্রদীপ জ্বালালে বাড়ির ইতিবাচক শক্তির আগমন হয় বলে জানা যায়। তার সাথে সাথে বাড়ি থেকে সমস্ত নেতিবাচক শক্তি বিতাড়িত হয়।

৫) গরিব দুঃখীদের আপ্যায়ন:

প্রায় সময় দেখা যায় আমাদের দোর গোড়ায় অনেক গরীব দুঃখীরা ভিক্ষা করতে আসেন। তবে সামান্য কিছু চাল টাকা দিয়ে আমরা তাদের ভিক্ষা দিয়ে থাকি। এমনটা সারা বছরে কম বেশি হয়েই থাকে। তবে কার্তিক মাসে যদি আপনার দরজায় কোন গরিব দুঃখী আসেন তাহলে তাকে কখনোই বিতাড়িত করে দেবেন না।

আপনার সাধ্যমত তাকে আপ্যায়ন করুন, বলা তো যায় না, আপনার দরজায় আসা ওই গরীব দুঃখী হয়তো কোন ভগবানের রূপ। সেই কারণে যতটা আপনি পারবেন ততটাই আপ্যায়ন করুন সেই গরিব দুঃখীদের। চাল, ডাল, টাকা দান করার পাশাপাশি তারা ক্ষুধার্থ কিনা সেটাও জানা দরকার। প্রয়োজনে তাদেরকে পেট ভরে খাওয়াতে পারেন।

⭐ কার্তিক মাস সকলের জীবনে এক সমৃদ্ধিময় সময় নিয়ে আসে। এই মাসে আপনি যত বেশি পুণ্য অর্জন করতে পারবেন ততই আপনার সংসার সব দিক থেকে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। এই মাসে গীতা পাঠ থেকে শুরু করে আরো অন্যান্য মাঙ্গলিক কাজ গুলি সংঘটিত হয়। আর এই কার্তিক মাস আপনার জন্য হয়ে উঠুক সবচেয়ে সুন্দর ও মঙ্গলময়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top