উৎসব আনন্দের মধ্যে এমন কিছু নিয়ম ও বিধি নিষেধ থাকে যেগুলির মানলে পূজার অনুষ্ঠানের সাথে সাথে মনের সকল চাওয়া পাওয়াও পূর্ণ হয়। তেমনি একটি পূজা হল ছট পূজা। যে পূজাতে ব্রতী হয়ে যদি আপনি সূর্য দেবের কাছে সকল ইচ্ছা জানিয়ে থাকেন, তাহলে সেগুলি পূর্ণ হতে বেশি সময় নেয় না।
ছট পূজা হল সূর্য দেবের পূজা। এই দিন সূর্য দেবের কৃপায় যেকোন কামনা বাসনা পূর্ণ হয়। এই পুজোর সময় কিছু নিয়ম মেনে চলার মধ্যে দিয়ে সংসারে আসে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।
আমরা আগেই জেনেছি যে, ছট পূজা পালন করার জন্য অথবা ব্রত পালন করার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। বলতে গেলে খুবই কঠিন একটি ব্রত। তবে উপাচার গুলি করার জন্য যে এই ব্রত পালন করতে হবে, বা উপবাসে থাকতে হবে তা কিন্তু নয়, শুধুমাত্র ছট পূজার দিনে সঠিক নিয়ম অনুসারে নিয়ম গুলি অর্থাৎ উপাচার গুলি পালন করলেই এর শুভ ফলাফল পাওয়া যাবে।
সকলের মঙ্গল কামনায়, সংসারের উন্নতিতে যদি কঠিন ব্রত পালন করা যায়, তাহলে তার মধ্যে ব্রত পালন না করেও এই নিয়ম গুলি মানলে সংসারে উন্নতি ঘটে, তাহলে কেনই বা সেই নিয়ম গুলি পালন করা হবে না, তাই না !
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, ছট পূজার সময় কোন উপাচার গুলি আপনাকে মেনে চলতে হবে :
১) সূর্য যন্ত্র স্থাপন:
অনেকেই নিজেদের জন্ম ছক অর্থাৎ কুষ্ঠি তৈরি করে রাখেন। যাদের জন্ম ছকে সূর্য দেবের স্থান অর্থাৎ রবি গ্রহের স্থান খুবই দুর্বল, তারা কিন্তু অবশ্যই ছট পূজার দিন বাড়িতে সূর্যযন্ত্র স্থাপন করবেন এবং বিধি অনুসারে সূর্যদেবের পূজা করবেন।
সূর্য যন্ত্রটি পুরোহিত দিয়ে তবেই কিন্তু স্থাপন করবেন, এর ফলে অত্যন্ত শুভ ফল লাভ করা যায়। এই সূর্য যন্ত্রটি কাঁচা দুধ দিয়ে প্রথমে শোধন করে নিতে হবে স্থাপন করার আগে।
২) সূর্য দেবের মন্ত্র পাঠ:
ছট পূজা যেহেতু সূর্যদেবের পূজা, সেই কারণে এই দিন সূর্য দেবের মন্ত্র পাঠ করার মধ্যে দিয়ে শুভ ফল লাভ করা যায় এবং সংসারে আসে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অনেক উন্নতি।
৩) জল অর্পণ:
উপবাস থেকে ছট পূজায় সূর্যদেবকে জল অর্পণ করতে হয় তা তো আমরা সকলেই জানলাম। তবে এই দিন গঙ্গা জলে দাঁড়িয়ে পূর্ব দিকে মুখ করে সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে তামার ঘটিতে করে জল অর্পণ করতে হবে। এর ফলে আপনি সূর্যদেবের অশেষ কৃপা লাভ করতে পারবেন।
৪) গুড় ও আতপ চাল অর্পণ:
গুড় ও আতপ চাল প্রায় প্রতিটি পূজায় খুবই শুভ নৈবেদ্য। যে কোন প্রবাহিত জলে গুঁড় ও আতপ চাল অর্পণ করতে হয় ছট পূজার দিন।
তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এই কাজটি যে কোন প্রবাহিত জলেই করতে হবে, পুকুর অথবা কোন স্থির জলে করা যাবে না। আশেপাশে কোন প্রবাহিত নদীতে আপনি এই কাজ করতে পারেন।
৫) সূর্যদেবের ভোগ:
ছট পুজোর দিন সূর্য দেবকে গুড়ের ভোগ দান করুন, কারণ গুড় হল সূর্যদেবের অত্যন্ত প্রিয় একটি জিনিস, আর দেব-দেবীদের প্রিয় জিনিস দিয়ে পূজা করলে আরো বেশি শুভ ফল লাভ করা যায়।
৬) গোটা ফল:
ছট পূজায় যারা ব্রতী হবেন অথবা উপবাস পালন করবেন তারা অনেক কিছু নিয়ম-কানুন মেনে থাকেন। তবে ছট পূজার দিন গোটা ফল দিয়ে পুজো দিতে হয়।
পূজার থালায় যে সমস্ত ফলগুলি রাখবেন সেগুলির সমস্ত কিছু গোটা রাখতে হবে, কেটে দেওয়া যাবে না।
৭) দান করা:
শুধুমাত্র কোন পূজা উপলক্ষেই নয়, যদি সারা বছর কোন না কোন কিছু দান করা যায়, তার জন্য পুণ্য অর্জন করা যায়। আর এই ছট পূজা উপলক্ষে গরিব-দুঃখীদের যে কোন কিছু আপনি দান করতে পারেন আপনার নিজের সাধ্যমত।
তাছাড়া আপনার নিজের ইচ্ছা ও সাধ্য অনুসারে গরিব দুঃখী মানুষদের খাওয়াতে পারেন পূজার সময়।
৮) রংবেরঙের পোশাক:
রংবেরঙের পোশাক মানেই উৎসবের ছোঁয়া। তবে ছট পূজার সময় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই রঙিন পোশাক পরে এই পূজায় অংশগ্রহণ করতে হয়।
বিশেষ করে গঙ্গায় গিয়ে সূর্যদেবকে জল অর্পণ করা, প্রদীপ ভাসানো, সবকিছুই কিন্তু সুন্দর এবং চমকপ্রদ রঙবেরঙের পোশাক পরেই করতে হয়।
৯) গুড় ও দুধ দিয়ে ভাত খাওয়া:
অনেকের বাড়িতেই দেখা যায় গরু থাকলে দুধ ও গুড় দিয়ে ভাত খেয়ে থাকেন সারা বছর। তবে এই কাজটা যদি ছট পূজার সময় খুবই সুন্দর ভাবে পালন করা যায়, তাহলে এই পূজার শুভফল লাভ করা যায়।
ছট পূজার দিন ভাত খাওয়ার সময় ভাতের সাথে গুড় ও দুধ মিশিয়ে খেতে হবে বাড়ির সকল সদস্যদের। তাহলে দেখবেন সূর্যদেবের প্রিয় গুড় দিয়ে আপনি ভাত খেয়ে সূর্যদেবে কে প্রসন্ন করার পাশাপাশি তার আশীর্বাদও পাওয়া যায়।
⭐ ছট পূজার জন্য অনেক আগে থেকেই চলে প্রস্তুতি, বলতে গেলে সারা বছর ধরে এই পূজার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন সকল বাঙালি ও অবাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা থেকে শুরু করে কেনাকাটা, পূজার তোড়জোড়, আত্মীয়-স্বজনদের উপহার আদান প্রদান, সবকিছু মিলিয়ে এই ছট পূজা এক আনন্দ উৎসবের আহ্বান জানিয়ে থাকে।
এই পূজা উপলক্ষে কোথাও আবার বড় মেলা বসে, স্থানীয় মানুষজন এবং দূর-দূরান্ত থেকে আগত অতিথি রাও এই মেলার আনন্দে এবং ছট পূজার আনন্দে মেতে ওঠেন।