দুর্গাপূজার আনন্দ বিজয়া দশমীর সাথে সাথে শেষ হয়ে গিয়েছে, তবে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই, কেননা কদিন পরেই তো দেবী লক্ষ্মী সকলের ঘর আলো করে আসতে চলেছেন সকলকে খুশি করার জন্য। দেবী লক্ষ্মীকে খুশি করার জন্য সকলেই বিভিন্ন রকমের নৈবেদ্য এবং আরো অন্যান্য পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।
কি নিবেদন করলে তিনি খুশি হয়ে গৃহস্থের বাড়িতে অধিষ্ঠান করবেন তা নিয়ে সকলের মাথায় বেশ চিন্তা থাকে। লক্ষ্মী পূজা সারা বছর হলেও, এমন কি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজা হয় বলে বৃহস্পতিবার কেও লক্ষ্মী বার বলা হয়। তবে শরৎ পূর্ণিমার এই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা সকলের জন্য একটা আশীর্বাদ বলাই যায়।
নিজেদের ঘরে দেবী লক্ষ্মীকে একেবারে বন্দি করে রাখার জন্য বলতে গেলে আদর যত্নে ভরিয়ে তুলে তাকে নিজের কাছে বেঁধে রাখার জন্য তোড়জোড়ের কম নেই। মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য সকলেই বিভিন্ন রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন এই লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে।
বাংলাতে শারদীয়া দুর্গোৎসবের পর আশ্বিন মাসের শেষে পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার আয়োজন করা হয়। লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা তে মেতে ওঠেন সমগ্র বাঙালি জাতি, প্রতিটি হিন্দুদের বাড়িতে দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়ে থাকে।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় এই পদ্ধতি মানলে হবে মা লক্ষ্মীর প্রচুর কৃপা
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
দেবী লক্ষ্মীর কৃপা সম্পূর্ণ রূপে পাওয়ার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলি এই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন করতে পারলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন আর তার আশীর্বাদ হিসেবে ধনসম্পত্তি, সম্মান বৃদ্ধি পাবে এবং আর্থিক সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
দেবী লক্ষ্মী হলেন আদি শক্তির একটি রূপ। যিনি কিনা বিশ্বকে বস্তুগত সুখ প্রদান করে থাকেন। যেমন ধরুন ধন সম্পত্তি, সংসার শস্য শ্যামলে ভরে ওঠা, জাঁকজমক, সমৃদ্ধি, অর্থ, দ্রব্য, রত্ন এবং ধাতুর অধিপতি দেবীকে বলা হয় লক্ষ্মী। আর সেই কারণেই দেবী লক্ষ্মীকে সকলেই খুবই আদরের সাথে ঘরেতে স্বাগত জানিয়ে থাকেন। লক্ষ্মী দেবীর কৃপায় সকল দারিদ্রতা দূর হয়ে যায়, পরিবর্তে সম্পদ লাভ হয়।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন কি কাজ রয়েছে যেগুলি আপনি এই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন করলে আপনার সমৃদ্ধি বেড়ে যাবে:
সুচিপত্র
১) উজ্জল লাল কাপড় ও নারকেল:
এই লক্ষ্মী পূজার দিন উজ্জ্বল লাল কাপড়ে নারকেল বেঁধে ঘরে রাখলে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায় অনেকখানি, ব্যবসার জায়গাতে আপনি যদি এটি রাখেন, সে ক্ষেত্রে ব্যবসাতে আপনি অনেক উন্নতি করতে পারবেন।
যদি ব্যবসা আপনার একমাত্র পেশা হয়ে থাকে তাহলে সেখানে আপনি তা থেকে অনেকখানি লাভবান হতে পারবেন।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা বিধি: অভাব অনটন দূর হবে এই নিয়ম মেনে পূজা করলে
২) হলুদ কাপড়ের সাথে বিভিন্ন উপাদান:
লক্ষ্মী পূজার দিন একটি নতুন হলুদ কাপড়ে হলুদ, সুপারি, নাগকেশর, একটি মুদ্রা, এক টুকরো তামা অথবা কোন কয়েন রাখতে পারেন, এছাড়া সেই হলুদ কাপড়ে মোড়া এই জিনিসপত্র গুলি শিবের সামনে রাখুন। তারপর ধুপ, প্রদীপ দিয়ে পূজা অর্চনা করতে হবে।
দেবীকে প্রণাম জানিয়ে সেটি আপনার সিন্দুকে তুলে রাখুন। এতে দেবী লক্ষ্মী আপনার উপরে প্রসন্ন হয়ে আপনার সমস্ত আর্থিক কষ্ট দূর করে দেবেন। তাছাড়া আরও যে সমস্যা রয়েছে তার সমাধান হয়ে যাবে।
৩) মাঝরাতে দেবীর আরাধনা:
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন মাঝ রাতের দিকে অথবা দশটার পরে হলেও খুবই ভালো, সেক্ষেত্রে উত্তর দিকে মুখ করে হলুদ একটি আসনে বসতে হবে, তারপর আপনার সামনে নয়টা তেলের প্রদীপ জ্বালান।
প্রদীপের সামনে লাল চালের স্তুপ তৈরি করুন এবং তার উপরে একটি শ্রী যন্ত্র রাখতে পারেন। এছাড়া দেবী লক্ষ্মী কে প্রসন্ন করার জন্য ফুল, ধুপ, কুমকুম, প্রদীপ দিয়ে পূজা করতে হবে। এর ফলে আপনি এই কাজের অলৌকিক ফলাফল হাতেনাতে পেয়ে যাবেন।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা: বাড়িতে পুরোহিত ছাড়াই পূজা করুন এই পদ্ধতিতে
৪) লক্ষ্মী দেবী কে লবঙ্গ অর্পণ:
যেকোনো ব্যক্তির আর্থিক সমস্যা দূর করার জন্য দেবী লক্ষ্মীর পূজা করতে হবে এবং প্রতিদিন পুজোর সময় দেবীর মূর্তির উপরে লবঙ্গ অর্পণ করতে হবে।
এই বিষয়টি আপনার আর্থিক অবস্থার অনেকখানি উন্নতি ঘটাবে। লক্ষ্মী পূজার দিন থেকে সারা বছর যদি আপনি এমনটা করতে পারেন তাহলে আপনার উপরে দেবীর কৃপা সর্বদাই বর্ষিত হবে।
৫) লক্ষ্মী দেবীর সাথে নারায়ণের পূজা:
লক্ষ্মী পূজা বিশেষ করে এই কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবীর আরাধনা করতে সকলেই ব্যস্ত থাকেন, তবে এই কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার দিন যদি দেবী লক্ষ্মীর সাথে সাথে নারায়ণে পূজা করতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনি তাদের কৃপা সারা বছর ধরে পেতে পারেন।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা: মনের মত ফল পেতে এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না
৬) কুমারী বাচ্চা মেয়েকে উপহার:
এই দিন কোন কুমারী মেয়ে অথবা ছোট্ট কোন বাচ্চা পাঁচটি মেয়েকে তাদের পছন্দমত কিছু উপহার দিলেও তারা ভীষণ খুশি হবে আর এই খুশিতে দেবী লক্ষ্মীও আপনার উপরে খুশি হবেন। কেননা ছোট্ট বাচ্চার মধ্যে লক্ষ্মীও বিরাজ করে।
সে ক্ষেত্রে আপনি লক্ষ্মীর কৃপা পাওয়ার জন্য এই কাজটি করলে মা লক্ষ্মীর কৃপা সর্বদাই পেতে পারবেন।
৭) গঙ্গাস্নান:
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন যদি আপনি গঙ্গাস্নান করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে অনেকখানি পুণ্য অর্জন করা যায়। তারপরে পূজায় বসলে দেবী আপনার উপরে সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্বাদ করবেন।
আর যদি গঙ্গায় গিয়ে স্নান করা সম্ভব না হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে স্নানের জলে কয়েক ফোটা গঙ্গা জল দিয়ে সেই জলে স্নান করতে পারেন। এক্ষেত্রেও আপনি গঙ্গা স্নান ঘরে বসেই করতে পারবেন।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা: আর্থিক সমস্যা দূর করতে এই কাজগুলি করুন
৮) গায়ত্রী মন্ত্র জপ:
লক্ষ্মী পূজার দিন সারাদিন আপনি লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়তে পারেন এবং ১০৮ বার গায়ত্রী মন্ত্র জপ করতে পারেন।
এছাড়া প্রতিটি ঘরে মা লক্ষ্মীর আরাধনায় লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করে থাকেন সমস্ত গৃহিণীরা। লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করার সাথে সাথে, সেটা শোনাও কিন্তু অনেকখানি পুণ্যের কাজ।
৯) দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ স্থাপন:
পূজা পার্বণে শাঁখ / শঙ্খ খুবই প্রয়োজনীয় একটি বস্তু। তবে এই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন অবশ্যই বাড়ির দক্ষিণ দিকে শঙ্খ স্থাপন করতে হবে, এক্ষেত্রে খুবই শুভফল লাভ করা যায়।
১০) পাঁচটি কড়ি:
লক্ষ্মী পূজার দিন মা লক্ষ্মীর পায়ের সামনে পাঁচটি কড়ি রেখে পূজা করতে হবে, তারপর সেই কড়ি গুলো আপনার টাকা পয়সা যে জায়গায় রাখেন সেই জায়গাতে রেখে দিন। আপনার আর্থিক সংকট মুছে গিয়ে সেখানে সমৃদ্ধি ঘটবে খুব শীঘ্রই।
প্রতিটি বাঙালি হিন্দু পরিবারে লক্ষ্মী পূজার দিন লক্ষ্মী দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় সকাল থেকেই। তবে এই সমস্ত বিষয়গুলি মানার পাশাপাশি আপনার মনে থাকতে হবে অনেকখানি ভক্তি, তবেই না আপনি ঈশ্বরের কৃপা পাবেন।
আর মন খারাপের সবটা কাটিয়ে উঠে লক্ষ্মীর আরাধনায় মেতে উঠুন, শস্য শ্যামলা চারিদিক ভরে ভরে উঠবে মা লক্ষ্মীর কৃপায়। সমস্ত আর্থিক সমস্যা দূর করার জন্য দেবী লক্ষ্মীকে কোজাগরী পূর্ণিমা অথবা শরৎ পূর্ণিমাতে দেবীর আরাধনা করতে ভুলবেন না কিন্তু।