দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা পাওয়া যায় মহালয়ার আগের থেকেই। আর পূজা শুরু বলতে গেলে মহালয়ার পরের দিন থেকেই। এই উৎসবে নয় দিন ধরে চলে দেবীর নয়টি রূপের আরাধনা। তারপর বিজয়া দশমীর দিন নবরাত্রি শেষ হয়ে যায়।
ভারতবর্ষের পাশাপাশি বিদেশেও প্রতিটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষেরা নিষ্ঠা সহকারে নবরাত্রি পালন করে থাকেন। সবাই চাইবেন সংসারে উন্নতি সাধন করতে, তাইতো মায়ের সামনে এত ভক্তদের সমাবেশ ঘটে যে, ভিড় ঠেলে আগে এগোনোর কোনরকম উপায়ই নেই।
সংসারের উন্নতি, সন্তানের মঙ্গল কামনা, ধন-সম্পদ বৃদ্ধি, সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি সবকিছুতে যেন মায়ের আশীর্বাদ বজায় থাকে, সেই কারণে দুর্গা পূজার এই কটা দিন অর্থাৎ নবরাত্রিতে বেশ কিছু আচার অনুষ্ঠান, নিয়ম কানুন পালন করাটা উচিত বলে মনে করা হয়।
তবে যদি সন্তানের মঙ্গল কামনা আর সংসারে সুখ শান্তি সমৃদ্ধি পেতে চান, ভুলেও এই কয়েকটি কাজ নবরাত্রিতে করবেন না। কেননা নবরাত্রিতে কাজ গুলি করলে দেব লোকের সর্বশক্তিময়ী তার ভক্তদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। প্রথমত বিশ্বাস অনুযায়ী নবরাত্রিতে এই ধরনের কাজগুলি থেকে বিরত থাকা উচিত সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের।
শুভ দুর্গা পূজা শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে, যেগুলি আপনাকে খুবই নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে:
সুচিপত্র
১) ঘর ও মন্দির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা:
উৎসব মানেই আনন্দ আর উৎসব মানেই চারিদিক পূজো পুজো ভাব। আর পূজোর জায়গা কখনোই অপরিষ্কার থাকতে পারে না, তাই না ! নবরাত্রি সময় অবশ্যই ঘর এবং মন্দির পরিষ্কার করে রাখবেন। বলা হয় মন্দিরে তো দেবতার বাস রয়েছেই। তবে প্রতিটি ঘরও কিন্তু এক একটি মন্দির।
তাই ঘরকেও অবহেলা করবেন না, দেবীর নৈবেদ্য তে দেবেন টাটকা খাবার, কোন খারাপ ফল অথবা বাসি হওয়া খাবার বাড়িতে রাখবেন না। যদি রেখে থাকেন তাহলে সেগুলি খুব তাড়াতাড়ি বাইরে ফেলে দেবেন।
চারিদিকে যত বেশি সতেজ রাখবেন তত আপনার মন ও শরীর সতেজ থাকবে। তার পাশাপাশি দেবীর আশীর্বাদ এর সাথে সাথে ঘরেতে প্রবেশ করবে ইতিবাচক শক্তি। যেটাকে শুভশক্তিও বলা যায়।
দুর্গাপূজার দিন গুলিতে কোন দিন কোন পোশাক পরবেন? চলুন জানা যাক
২) কোনো মূর্তি:
এমন অনেক বাড়ি রয়েছে, যে বাড়িতে অনেক ধরনের দেব-দেবীদের মূর্তি থাকে। সেটা খুবই ভালো কথা, তবে এমনটা নয় যে ঘরেতে ভাঙা কোন দেবদেবীর মূর্তি আপনি যত্ন করে রেখে দিয়েছেন, সেটা কিন্তু মঙ্গল হওয়ার পরিবর্তে আপনার সংসারে দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারে।
তাই নবরাত্রিতে বাড়িতে কোন ভাঙ্গা মূর্তি রাখবেন না, মনে করা হয় দেব-দেবীদের ভাঙ্গা মূর্তি মানুষের জীবনে দুর্ভাগ্য বয়ে নিয়ে আনতে পারে।
তাই নবরাত্রিতে ভাঙ্গা মূর্তিগুলি কাছাকাছি কোন জলাশয়ে বিসর্জন দিয়ে আসতে পারেন উৎসবের অনেক আগেই।
দুর্গাপূজা করুন এই নিয়মে আপনার উপর প্রসন্ন হবেন দুর্গতিনাশিনী
৩) নিরামিষ খাবার:
সারা বছর নিরামিষ, আমিষ সবরকম মিলিয়ে খাবার গ্রহণ করা হয়। আর উৎসবের দিনগুলোতে এমনি থেকেই নিরামিষ খাবারের প্রতি সবারই আগ্রহটা বেশিই থাকে। কেননা এই কটা দিন কোনরকম আমিষ খাবার ঘরে তোলা হয় না বললেই চলে।
আর তাই তো নবরাত্রির দিনগুলি যদি নিরামিষ খাবার খেতে পারেন তাহলে তো আর কথাই নেই, বিশেষ করে পেঁয়াজ, রসুন আর অ্যালকোহল জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন।
নবরাত্রির সময় বাড়িতে পেঁয়াজ, রসুন রাখা অশুভ বলে মনে করা হয়। এই উৎসবের শুভ ক্ষণে ঘরেতে যেন শুভ শক্তির প্রবেশ ঘটে, সেদিকটা খেয়াল রাখা আপনার দায়িত্ব, তাই না !
৪) পুরানো জুতো:
সারা বছর কেনাকাটা কম থাকে না, সেই কারণে নতুন নতুন জামা, জুতো এগুলো চোখে পড়লেই পছন্দ হলেই কিনে নেওয়া হয়। তবে দেখা যায় বছর শেষে গিয়ে বাড়িতে এমন অনেক জামা, জুতো পড়ে থাকে সেগুলো ব্যবহারই করা হয় না। বিশেষ করে জুতোগুলো যখন ছিড়ে যায় সেগুলো একধারে ফেলে রাখা হয়।
এগুলো দেখতে যেমন খারাপ লাগে, তেমনি বাড়ির সৌন্দর্যও নষ্ট করে অনেকখানি। শুধু কি তাই, ছেঁড়া জুতো, পুরানো জুতো, ঘরে নেতিবাচক বিষয়কে প্রাধান্য দেয় বেশি। তাইতো এই উৎসবের শুভক্ষণ উপলক্ষে বাড়িতে ছেঁড়া কোনো জুতো, পুরানো কোন জুতো রাখবেন না।
কারণ নবরাত্রীর এই নয় দিন দেবী দুর্গা বিভিন্ন রূপে ভক্তদের বাড়িতে অধিষ্ঠান করেন। যদি এমন কোন ছেঁড়া জুতো চপ্পল ঘরে থাকে সেগুলির তৎক্ষণাৎ উৎসবের আগেই বাড়ি থেকে বাইরে বের করে দিন। কারণ এর ফলে সংসারের নেতিবাচক শক্তির বৃদ্ধি ঘটে।
তাছাড়া রান্নাঘরে রাখা ভাঙা কোন থালা-বাসন, প্লেট সেগুলিও কখনোই গুছিয়ে রাখবেন না। এগুলি আপনার কাজে না আসার পাশাপাশি অযথা ঘর নোংরা করে। তবে হ্যাঁ, সেগুলি দিয়ে যদি কোন নতুন কিছু বানাতে পারেন, সেটা বানিয়ে নিতে পারেন।
৫) চুল,দাড়ি ও নখ না কাটা:
চুল, দাড়ি ও নখ এগুলি প্রতিনিয়ত কাটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো, তার সাথে সাথে সুন্দর দেখানোর পাশাপাশি ফ্যাশনেবলও বটে।
তবে উৎসবের এই কটা দিন এগুলি যদি না কাটেন তাহলে খুবই ভালো হয়, উৎসবের আগে এগুলি কেটে নিতে পারেন।
৬) উপবাস রাখা:
দুর্গাপূজার এই নবরাত্রি উৎসবে উপবাস রাখেন অনেক ভক্তগন। যদি উপবাস থেকে থাকেন তাহলে গম অথবা চাল থেকে তৈরি কোন খাবার খাবেন না। এটা কখনোই উচিত নয়।
তবে খাদ্য তালিকায় আপনি সাবুদানা, পানি ফলের আটা, বাজরার ময়দা, প্রভৃতি রাখতেই পারেন। তাছাড়া সাধারণ নুনের বদলে ব্যবহার করুন সৈন্ধব লবণ। এছাড়া ফলমূলও আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
এই গাছগুলি দেবীপক্ষের মধ্যে বাড়িতে লাগান মা দুর্গা সকল দুঃখ বিনাশ করবেন
৭) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা:
এ কথাটা নিশ্চয়ই নতুন করে বলার কিছু নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সারা বছরের জন্য খুবই ভালো কথা, তবে নবরাত্রির এই দিনগুলিতে আরো বেশি করে আপনাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে থাকতে হবে।
নতুন জামা কাপড়, শুদ্ধতা, সবকিছুই উৎসবের আনন্দের পাশাপাশি দেবীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়। নবরাত্রির কয়েকটি দিন একেবারেই অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকবেন না, সবসময় পরিষ্কার হয়ে থেকে শুদ্ধ কাপড় পরে থাকার চেষ্টা করুন।
দূর্গা পূজার সময় এই কাজ গুলি ভুলেও করবেন না, সঠিক পদ্ধতি জানুন
৮) শিশুদের সাথে ব্যবহার:
শিশুরা ঈশ্বরের রূপ হয় তা আমরা অনেকের মুখেই শুনেছি। তাই উৎসবের এই দিনগুলিতে তাদের সাথে এমন কোন ব্যবহার করবেন না, যাতে তারা কান্নাকাটি করে অথবা খুবই কষ্ট পায়।
শুধু উৎসবের দিন বলেই নয়, শিশুদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়। তাহলে দেবী অনেক রুষ্ট হবেন। হয়তো এমনও তো হতে পারে, সেই শিশুটির রূপে দেবী আপনার সামনে আবির্ভূতা হয়েছেন। তাই এই দিকটা বিশেষভাবে খেয়াল রাখাটা আপনার জন্য খুবই মঙ্গলজনক।
তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, উৎসবের এই দিনগুলিতে আপনাকে কতটা শান্ত, শিষ্টভাবে থাকতে হবে, দেবীর আশীর্বাদ পেতে গেলে এই নিয়মগুলি পালন করার পাশাপাশি আপনার নিজের দিকেও খেয়াল রাখাটা জরুরী। ঘরবাড়ির সাথে সাথে নিজেকে ও রাখতে হবে পরিপাটি এবং শুদ্ধ।
পূজা মন্ডপে গিয়ে মায়ের সামনে পুষ্পাঞ্জলী, সন্ধ্যা আরতিতে যোগদান, সবকিছুতে যেন আপনি পবিত্র হয়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন। আনন্দে কাটুক সকলের পুজো, সকলের জন্য রইল নবরাত্রির প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।