মানহানি কি? মানহানির সম্বন্ধে ভারতীয় আইন ও নিয়ম জানুন

মানহানি কি? মানহানির জন্য কিভাবে আইনি মামলা করা যায়? আপত্তিজনক অথবা অপমানজনক ঘটনা হলে কিভাবে আইনি সহযোগিতা নেবেন? জেনে নিন কোন কোন বিষয় মানহানির মধ্যে পরে এবং মানহানির আইনি নিয়ম ও কানুন।

একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে সমস্ত জিনিস গুলো প্রয়োজন পড়ে তার সাথে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সসম্মানে বেঁচে থাকা অর্থাৎ তার মান সম্মান। কোন ব্যাক্তি চাইবেন না অন্য কোন ব্যক্তি বা কারো দ্বারা অসম্মানিত হতে বা তার মানবাধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হোক।

সভ্য সমাজে মানব অধিকারের মধ্যে দেওয়া মান-সম্মান আর খ্যাতি কেও অধিকার হিসেবে মনে করা হয়। যেখানে 1 এবং ভারতীয় সংবিধান অনুচ্ছেদ 19 তে অন্তর্গত বাক স্বাধীনতা চাওয়া হয়েছে। সেখানে কিছু নিবন্ধন ও লাগানো হয়েছে। নিবন্ধন হলো সেটি যা আমাদের ব্যক্তি আর রাজ্যের মানহানি করা থেকে প্রতিরোধ করতে পারে।

মানহানি কি? মানহানির সম্বন্ধে ভারতীয় আইন ও নিয়ম জানুন
মানহানি কি? মানহানির সম্বন্ধে ভারতীয় আইন ও নিয়ম জানুন

বিগত কয়েক বছরে ভারতে মানহানির মামলা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে নিরাধার কারণের ওপর মানহানির মামলা দায়ের করে চলেছেন।

কখনো কখনো জেনে-বুঝে নকল বয়ান অথবা লিখিত বা মৌখিক যা কিনা কোন ব্যক্তির সম্মান অথবা আত্মবিশ্বাস কম করতে পারে। এটা কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অস্বীকার শত্রুতা পূর্ণ আর অসহনীয় রায় অথবা ভাবনাকে প্রেরিত করে থাকে।

মানহানি কি?

মান-সম্মান আর খ্যাতি তে যে সমস্ত ক্ষতি হয়ে থাকে সেটাকেই এক কথায় মানহানি বলা হয়। ভারতীয় বিধানে অধিকার দিয়ে মানহানি থেকে ব্যক্তিদের বাঁচানোর জন্য বিধান দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় দণ্ড সঙ্গীতা ধারা 499 থেকে 502 পর্যন্ত মানহানি কে আইন এর বিষয় প্রাবধান করা হয়েছে।

ভারতীয় দণ্ড সংহিতা 1860 এর ধারা 499 মানহানি এর পরিভাষা প্রস্তুত করে থাকে :

বলা এবং পড়ার জন্য সংকেত দ্বারা অথবা কোন চিত্র দ্বারা কোন ব্যক্তিকে বা ব্যক্তি সম্পর্কে লাঞ্ছনা এই উদ্দেশ্যে লাগানো লাগানো হয় অথবা প্রকাশিত করা হয়। যে এমন লাঞ্ছনা থেকে এমন ব্যক্তির খ্যাতি এবং মান সম্মানের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে অথবা সেই ব্যক্তিকে জনসমক্ষে অপমানিত করার জন্য প্রচেষ্টা করা হয়ে থাকে, তখন তাকে সেই ব্যক্তির “মানহানি করা” বলা হয়।

ভারতীয় দণ্ড সংহিতা এর ধারা থেকে মানহানির তথ্য জানা যায়। এই ধারাতে কিছু অপবাদ কেও শামিল করা হয়েছে অথবা এখানে কিছু অপবাদ উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধারার 499 কে অন্তর্গত কিছু অপবাদ ও রাখা হয়েছে আর সেই অপরাধ গুলি সংখ্যা হল 10 টি।

মানহানির কিছুর ব্যাখ্যা:

অপমানজনক টিপ্পনী অথবা বয়ান হতে হবে:

কোনরকম টিপ্পনী এর আপত্তিজনক হওয়াটা জরুরী, মানহানির জন্য। যে কোনো ব্যক্তির সম্পর্কে কোন বয়ান আপত্তিজনক অথবা অপমানজনক কিনা সেটা বিচারালয় দ্বারা সাক্ষ্য-প্রমাণের পরিস্থিতিতে নির্ধারিত করা হবে।

এক্ষেত্রে দুলকালহা এর মামলা ভারতীয় মানহানি বিধানে সবথেকে ঐতিহাসিক মামলা। আর এটি স্বাধীনতার সময় এর মামলা যেখানে একজন বিধবা স্ত্রীর উপর তার ভাইপো ব্যভিচার এর অভিযোগ লাগিয়েছিল এবং বলেছিল যে, সেই মহিলার ঘর থেকে রাত দুটোর পর একজন পুরুষ ব্যাক্তি বের হয়েছিল আর এটা নিশ্চিত যে সেই পুরুষের সঙ্গে সেই মহিলা সহবাস অবশ্যই করেছে।

পরবর্তীতে মামলাকে এই সম্পর্কিত কেস ভ্রাতৃত্ব পঞ্চায়েতে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে সেই মহিলাকে নির্দোষ ঘোষিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে মানহানির জন্য সেই অভিযোগ করা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল, কিন্তু বিচারালয় এই বিষয়টি নিরস্ত করে দিয়েছে।

আর এটা মনে করা হয় যে, ভ্রাতৃত্ব পঞ্চায়েত মহিলাকে নির্দোষ হিসাবে মেনে নিয়েছে। সেই জন্য মহিলার সম্মানে কোনরকম ক্ষতি হয়নি, তথা সেই অভিযুক্তকে নির্দোষ মনে করা হয়।

মৃত ব্যক্তিরও মানহানি হতে পারে কি?

ধারার স্পষ্টকরণ তে মৃতব্যক্তির ও মানহানি হতে পারে অথবা মৃত ব্যক্তির মানহানি কেও যোগ্য বলে মনে করা যেতে পারে। মৃত ব্যক্তির কাছাকাছি কোন আত্মীয়-স্বজন এর প্রতিকারের জন্য মামলা করতে পারে, এমন অপমানজনক কথা বা শব্দের মাধ্যমে কোন মৃত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে যদি অসম্মান করা হয় বা তার সন্মান ও খ্যাতির এর বিষয়ে কোনো রকম ক্ষতি করা হয়, তাহলে সেটাকে মানহানি বলে মনে করা হয়।

রাজ্যের বিরুদ্ধে মানহানি:

রাজ্যের বিরুদ্ধে মানহানি ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ধারা 124a নিহিত আছে যাকে দেশদ্রোহ বলা যেতে পারে। কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মানহানি ভারতীয় দণ্ড সংহিতা এর ধারা 153 তে নিহিত আছে যাকে উপদ্রব ও বলা হয়।

সংগঠন আর লিগাল ব্যক্তির অধিকার ও এই ধারার অন্তর্গত সুরক্ষিত আছে:

এই ধারার অন্তর্গত কোম্পানি আর সংগঠনকেও ব্যাক্তি হিসেবে মনে করা হয়। এ ছাড়াও কোন লিগাল ব্যক্তির ও মানহানি হতে পারে।

কোন কোন মাধ্যমের মাধ্যমে মানহানি হতে পারে:

  • কোন শব্দ উচ্চারণ করার মাধ্যমে।
  • পড়ার জন্য কোন শব্দ দ্বারা।
  • সংকেত এর মাধ্যমে।
  • চিত্র অথবা ছবির মাধ্যমে।

ধারার অন্তর্গত অপবাদ রাখা হয়েছে এই সমস্ত অপবাদ গুলিকে মামলার ক্ষেত্রে মানহানি হিসাব মনে করা হয় না। সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল:- 

১) সত্য কথার লাঞ্ছনা লাগানো অথবা প্রকাশিত করা যে সমস্ত ব্যক্তি কল্যাণ এর জন্য উপেক্ষিত রয়েছেন সেখানে মানহানি হবে না।

২) কোন মানুষের আচার-আচরণ, তার সাথে সাথে পুনরায় সেটা যেকোনো কিছু হতে পারে সদ্ভাব পূর্বক অভিব্যক্ত করে থাকলে সেটা কখনোই মানহানি হয় না।

৩) কোন ব্যাক্তির কল্যাণ প্রশ্নের সম্বন্ধে অন্য কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে আর যতদিন পর্যন্ত সেই ব্যক্তির আচরণ প্রকট হয়ে থাকে, সেখানে তার আগে কোনো রকম রায়, সেটা যেকোনো কিছু হতে পারে সদ্ভাব পূর্বক অভিব্যক্ত করে থাকলে সেটা মান হানি নয়।

৪) কোন আদালত এ কোনরকম কার্যকারিতা তার সত্য রিপোর্ট প্রকাশিত করাও কিন্তু কখনোই মানহানি নয়।

৫) বিচারালয় অথবা আদালতে মামলার গুনবত্তা অথবা সাক্ষ্য-প্রমাণ তথা অন্যান্য ব্যাক্তিদের আচার-আচরণ এর সদ্ভাব পূর্বক অভিজ্ঞতা অথবা প্রকাশিত হওয়া ও মানহানি হতে পারেনা। সেখানে আদালত মামলা নির্ণয় করে থাকলেও।

৬) যেখানে কোন ব্যাক্তি লোক নির্ণয়ের জন্য সদ্ভাব পূর্বক অভিব্যক্ত অথবা প্রকাশিত করার বিষয়টিও মানহানি নয়।

৭) কোন অন্য ব্যক্তির উপর বিধি পূর্বক প্রাধিকার চাপিয়ে দেওয়া ব্যক্তি দ্বারা সদ্ভাব পূর্বক কোনরকম পরনিন্দা মানহানি হতে পারেনা।

৮) কোন অধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তির সমক্ষে সদ্ভাব পূর্বক অভিযোগ দায়ের করা মানহানি হতে পারে না।

৯) নিজের এবং অন্যান্য ব্যক্তির নিজস্ব সংরক্ষণ অথবা সুরক্ষার জন্য কোন ব্যক্তি দ্বারা সদ্ভাব পূর্বক লাগানো লাঞ্ছনা মানহানি নয়।

১০) কোন সাবধানতা যা কিনা ব্যক্তির ভালোর জন্য এবং তার কল্যাণের জন্য করা হয়ে থাকে, সেটাও কখনোই মানহানি হয় না।

যদি কোন ব্যক্তি দ্বারা দেওয়া বয়ান এই পরিস্থিতি থেকে কোন অন্য পরিস্থিতিতে চলে গিয়ে থাকে, তাহলে সেখানে সেই ব্যাক্তি মানহানি না হয়ে তার পরিবর্তে সুরক্ষিত থাকে।

মানহানি সিভিল আর অপরাধমূলক দুটি মামলা ক্ষেত্রে হতে পারে এই অনুসারে ধারা 500 ভারতীয় দণ্ড সংহিতা আর দ্বিতীয় দিওয়ানি হিসাবে প্রাপ্ত করা হয়েছিল।

মানহানির জন্য শাস্তি:

ভারতীয় দণ্ড সংহিতা এর ধারা 500 অন্তর্গত মানহানির জন্য দুই বছর পর্যন্ত সাধারণ কারাবাস আর তার সাথে জরিমানাও করা হয়েছে। আর এটি জামিন যোগ্য অপরাধ। সাধারন পরিবার দ্বারা অপরাধমূলক মামলাতে অভিযোগ দায়ের করার ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top