Deepawali 2023: দীপাবলিতে ঘর সাজান শাস্ত্র ও বাস্তু মতে মা লক্ষ্মীর কৃপা থাকবে সব সময়

উৎসব আনন্দে ঘর গোছানোর ধুম পড়ে যায়। তেমনি কালী পূজা অথবা দীপাবলিতে সমস্ত বাঙালি পরিবার গৃহস্থ বাড়ি সাজানো-গোছানোর পাশাপাশি আলোর রোশনাইতে সাজিয়ে তোলা হয়।

দীপাবলির দিন বাস্তু নিয়ম মাথায় রেখে ঘর সাজানো হয়ে থাকে। যার ফলে মা লক্ষ্মী ঘরে প্রবেশ করেন, বিশেষ আশীর্বাদ প্রদান করেন। ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়, ঘরে আসে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।

অমাবস্যার এই উৎসবে চারিদিক আলোয় আলোয় ভরে ওঠে। অনেক আগে থেকেই দীপাবলি অথবা কালী পূজার এই উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায়। বেশিরভাগ বাড়িতেই ঘর পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন এবং সাজানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়।

দীপাবলিতে ঘর সাজান শাস্ত্র ও বাস্তু মতে মা লক্ষ্মীর কৃপা থাকবে সব সময়
দীপাবলিতে ঘর সাজান শাস্ত্র ও বাস্তু মতে মা লক্ষ্মীর কৃপা থাকবে সব সময়

আবার বেশিরভাগ মানুষ ঘর রং করা, নতুন পর্দা কেনা এবং ঘরের সঙ্গে মানানসই পরিবর্তনকারী জিনিসপত্র কিনে ঘরটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পছন্দ করেন, এই দীপাবলির উৎসবের সময়।

অনেকে আবার সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্র কিনে নিয়ে ঘরে সাজিয়ে থাকেন। অনেক কেনাকাটা করলেও এই সময় বাস্তু নিয়ম গুলি মাথায় রাখা জরুরী। মনে করা হয় যে, দীপাবলির দিন বাস্তু নিয়ম মাথায় রেখে ঘর সাজালে লক্ষ্মী বিরাজ করেন ঘরেতে। ঘরেতে প্রবেশ করে শুভ শক্তি, বৃদ্ধি পায় ধনসম্পত্তি এবং সংসারে আসে সুখ শান্তি।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, দীপাবলীর এই শুভ মুহূর্তে আপনি ঘর সাজাবেন কেমন ভাবে:

১) বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন তুলনামূলক ভাবে:

সমস্ত বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করবেন তবে দীপাবলীর আগে বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোনটি সঠিকভাবে পরিষ্কার করুন, সেখানে যেন কোন রকম জঞ্জাল অথবা নোংরা না থাকে।

তবে মনে রাখবেন উত্তর-পূর্ব দেকটিই হলো ঈশ্বরের স্থান যাকে ঈশান কোণ বলা হয়। তাই এই জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কোন অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে যেন ভরা না থাকে এই স্থান। এমনটা করলে দেবী লক্ষ্মী খুবই ক্রুদ্ধ হন এবং আশীর্বাদ ছাড়াই বাড়ির মূল দরজা থেকে নিজের জায়গায় তিনি ফিরে যান। বলা যেতে পারে আপনি সেই ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করার কারণে দেবী লক্ষ্মী আপনার ঘর ছেড়ে চলে যাবেন।

২) বাড়ির ব্রহ্মস্থান:

কথাটা অনেকেরই চেনা আবার অনেকেই হয়তো এই কথা প্রথম শুনছেন। উত্তর-পূর্ব কোনের পর এবার বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্রহ্মস্থান। এই স্থানটি হল ঘরের মাঝখানের অংশ, এই স্থানটি খোলামেলা, পরিষ্কার এবং খালি হওয়া সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেন ঢিপি করা না থাকে। বাড়ির মূল অংশ সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। আর এখানে কোনরকম ভারী আসবাবপত্র রাখলে সেটাও সরিয়ে ফেলুন খুব শীঘ্রই। এই জায়গায় কোনরকম অব্যবহৃত জিনিসপত্রও রাখা যাবে না।

৩) সদর দরজা:

প্রতিটি বাড়িতে প্রবেশ করার জন্য সদর দরজা অথবা মূল দরজা থাকে। সেই দরজাটি যতটাই সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে পারেন ততটাই কিন্তু আপনার সংসারের জন্য মঙ্গল জনক। দীপাবলিতে ঘর পরিষ্কার করার সময় মূল দরজার চারপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখুন।

প্রয়োজনে সেখানে ফুল গাছ দিয়েও সাজাতে পারেন। যদি প্রবেশপথের দরজায় শব্দ হয় তা দ্রুত সারিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। দরজা থেকে কোনরকম শব্দ বের হওয়া মানে অশুভ বলে মনে করা হয়। মূল প্রবেশপথে একটি রুপার কয়েন বা স্বস্তিক চিহ্ন রাখতে পারেন।

এছাড়া বাস্তু অনুযায়ীর রুপোর লক্ষ্মীর মূর্তি আঁকা কয়েনও রাখা যেতে পারে এই সদর দরজায়। এছাড়া আম পাতা দিয়ে মালা তৈরি করে সেই সদর দরজার মাথায় টাঙিয়ে আপনি সাজাতে পারেন। উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি করার সাথে সাথে মা লক্ষ্মী আপনার ঘরে প্রবেশ করবেনই।

৪) যে জিনিস গুলো আপনাকে সরিয়ে ফেলতে হবে দীপাবলীর আগে:

সংসার জীবনে অনেক জিনিসপত্র ভেঙ্গে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। তবে সেগুলো অনেকেই বাড়ির মধ্যেই জড়ো করে রাখেন। দীপাবলীর আগে ঘর থেকে আগে যে জিনিস গুলি আপনাকে সরিয়ে ফেলতে হবে, সেগুলি সম্পর্কে জানা দরকার।

যে জিনিসগুলি দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে ব্যবহার করা হয়নি সেগুলো আপনাকে আগে সরাতে হবে। যেমন ধরুন পুরনো প্লাস্টিকের ফুল, ভাঙ্গা কাঁচ, ঢিপি করা খবরের কাগজ, পুরনো অথবা নোংরা জুতো, পুরনো জিনিসপত্র এগুলি তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেলুন।

কেননা মনে করা হয় যে, পুরানো আবর্জনা, জিনিস থাকা মানে অশুভ এবং নেগেটিভ শক্তি বহন করে ঘরের মধ্যে, এগুলি ঘরের শান্তি বজায় রাখে না। সেই কারণে অবাঞ্ছিত জিনিসপত্র এবং ভাঙ্গাচুরা জিনিসপত্র আপনার সংসারে না রাখাটাই বাঞ্ছনীয়। যা কিনা আপনার গৃহে সুখ, শান্তি এবং উন্নতি আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

৫) সম্পূর্ণ বাড়ি থেকে প্রদীপ এবং মোমবাতির আলোয় সাজিয়ে তুলুন:

আমরা তো সকলেই জানি যে, দীপাবলি এবং কালীপুজো মানেই হল আলোর উৎসব আর এই কটা দিন চারিদিকের অন্ধকার কাটিয়ে তুলতে প্রদীপ, মোমবাতির আলোতে সাজিয়ে তোলা হয়। দেখতে যেমন সুন্দর লাগে, তেমনি ঘরে শুভ শক্তির আগমন ঘটে।

তার সাথে সাথে এখন বর্তমানে সুন্দর সুন্দর লাইট বাজারে পাওয়া যায় অথবা আপনি অনলাইনেও অর্ডার করতে পারেন। সেগুলি দিয়েও ভালো করে ঘরবাড়ি সাজিয়ে তুলুন। দেখবেন মনের প্রশান্তি আসার পাশাপাশি আপনার ঘরকে কত সুন্দর দেখতে লাগছে।

৬) নিজেকেও সুন্দর করে সাজিয়ে তুলুন:

উৎসব মানেই আনন্দ আর সাজগোজ, উপহার আদান প্রদান করা আর এই দীপাবলীর আনন্দ উৎসবের দিনে নিজে কেউ সাজিয়ে তুলতে ভুলবেন না কিন্তু।

সুন্দর শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করার পর নিজেকে সাজিয়ে তুলুন অপরূপ সাজে। আর তার সাথে হাসিখুশি থাকতে কখনোই ভুলবেন না।

এই সমস্ত বিষয়গুলি আপনি যদি সুন্দর করে পালন করে থাকেন তাহলে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ থাকার পাশাপাশি আপনার ঘরে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে ভরে ভরে। দীপাবলীর অনুষ্ঠানে ঘর সাজানোর ধুম সকলের মধ্যেই থাকে।

সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নিজের ঘরকে এবং নিজেদেরকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই কারণে সমস্ত ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েও তারা ঘর সাজাতে ভোলেন না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top