স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী সমাজের উন্নতির জন্য কি কি করেছিলেন? ওনার বাবা-মা কে? ওনার জীবন কেমন ছিল? এছাড়াও স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী সম্পর্কে জানা-অজানা তথ্য জানুন (Biography of Dayananda Saraswati in Bengali)।
দয়ানন্দ সরস্বতী একজন গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু ধর্মগুরু, সমাজ সংস্কারক এবং আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। মোরভি শহরে একটি ধনাঢ্য নিষ্ঠাবান সামবেদী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম ছিল মূল শংকর তিওয়ারি এবং তার পিতা কর্ষণজী লাল তিওয়ারি এবং মাতা যশোদা বাই এর সঙ্গেই তিনি বসবাস করতেন।
হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত পাঞ্জাবের আর্য সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আর্য সমাজের ধর্মীয় প্রচারের জোরেই হিন্দুরাজ প্রতিষ্ঠার চিন্তা আরো তীব্র হয়ে ওঠে।
স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর জীবনী:
তো চলুন এমনই এক ব্যক্তিত্ব, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর জীবনী সম্পর্কে জানা যাক:
- সম্পূর্ণ নাম: স্বামী দয়া নন্দ সরস্বতী
- আসল নাম: মূলশংকর তিওয়ারি
- জন্মতারিখ: ১২ ই ফেব্রুয়ারি ১৮২৪ সাল
- জন্মস্থান: পশ্চিম ভারতের কাথিয়াওয়ার এর মোরভি শহর
- পিতার নাম: কর্ষণজী লাল তিওয়ারি
- মাতার নাম: যশোদা বাই
- জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয়
- আখ্যা: সিন্ধি মারহু
- প্রতিষ্ঠাতা: আর্য সমাজ এর
- গুরু: বিরজানন্দ দন্ডী
- ভাষা: গুজরাটি
- কর্মজীবন: ধর্ম গুরু, সমাজ সংস্কারক এবং আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা
- সাহিত্যকর্ম: সত্যার্থ প্রকাশ (১৮৭৪) সংস্কার বিধি
- মৃত্যুকালে বয়স ছিল: ৫৯ বছর
- মৃত্যু: ৩০ শে অক্টোবর ১৮৮৩ সাল, আজমীর, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে রাজস্থান, ভারত)
স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর জন্ম এবং পরিবার:
দয়ানন্দ সরস্বতী ১২ ই ফেব্রুয়ারি ১৮২৪ সালে একটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে কাঠিয়ার অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন।
যেটা বর্তমানে গুজরাটের মোরভি জেলা, পিতার নাম ছিল কর্ষণজী লাল তিওয়ারি, মায়ের নাম ছিল যশোদা বাই এবং দয়ানন্দ সরস্বতীর আসল নাম ছিল মূলশংকর তেওয়ারি।
দয়া নন্দ সরস্বতীর শৈশবকাল এবং বৈবাহিক জীবন:
তার পিতা ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান শৈব। শিব ভক্ত পিতার মতো তিনি ছোটবেলা থেকেই শিবভক্ত ছিলেন খুবই। একবার শিবরাত্রি তে উপবাস থাকা কালে তিনি কিছু ইঁদুরকে শিবমূর্তির উপর দিয়ে দৌড়াতে ও ভক্তের দেওয়া নৈবদ্য খেতে দেখেন। তখন তার মনে সংশয় হয়, শিব যদি ইঁদুরের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করতে না পারেন, তাহলে তিনি কিভাবে পৃথিবীর ত্রাণকর্তা হতে পারেন।
ছোটবেলাতেই তার ছোট বোন ও কাকা কলেরাতে মারা যান এবং খুবই মর্মাহতভাবে মূলশংকর অর্থাৎ দয়ানন্দ সরস্বতী মৃত্যু চিন্তা এবং অমরত্ব লাভের উপায় অনুসন্ধান করতে শুরু করে দেন। ফলে তার চিন্তা ভাবনায় বৈরাগ্য ভাব চলে আসে। এই অবস্থা দেখে দয়ানন্দ সরস্বতীর বাবা-মা তাকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেন। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, বিয়ে তার জন্য নয়। ১৮৪৬ সালে ২২ বছর বয়সে বিয়ের দিন তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান, বিয়ে না করার জন্য।
দয়ানন্দ সরস্বতীর শিক্ষা জীবন:
ছোটবেলায় পিতার কাছ থেকেই শিক্ষা লাভ করেছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন সামবেদী ব্রাহ্মণ, ইংরেজি শিক্ষার সুযোগ না হওয়ার জন্য প্রথম থেকেই তিনি সংস্কৃত, শাস্ত্র খুবই ভালোভাবে আয়ত্ত করতে থাকেন। সামবাদী ব্রাহ্মণ হওয়া সত্বেও তিনি ধীরে ধীরে সমগ্র যজুর্বেদ ও কিছুটা অপর তিনটি বেদ, তর্ক, ব্যাকরণ, দর্শন, শাস্ত্র, কাব্য, অলংকার, স্মৃতি, প্রভৃতিতে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।
১৮৮০ সালে বিখ্যাত কাশি শাস্ত্রের ক্ষেত্রে তিনি তৎকালীন পন্ডিতবর্গ কে পরাজিত করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। হিন্দু সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করতে এবং বেদ প্রতিষ্ঠা করতে বেদ ভাষ্য প্রণয়ন করেন এবং গড়ে তোলেন আর্য সমাজ। তার বিখ্যাত একটি গ্রন্থ হল “সত্যার্থ প্রকাশ” যা ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল।
১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে মথুরায় তিনি গুরু বিরজানন্দ দণ্ডিসের শিষ্য হন এবং সেখানে তিনি ছয় বছর অধ্যয়ন করেন। শেষে ১৯৬৩ সালে দয়ানন্দ সরস্বতীর বিরজানন্দ কে দক্ষিনা স্বরূপ প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি বেদ, বিদ্যা ও আর্য সমাজের প্রচার এবং হিন্দু বিশ্বাসের বেদে যথাযথ স্থান পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে নিজেকে উৎসর্গ করবেন।
স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর সত্যান্বেষণ:
তিনি ১৮৪৬ সাল থেকে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর সত্যান্বেষণ ও অমৃতের সন্ধানে নর্মদা নদীর অরণ্য সংকুল তৃণভূমি থেকে আরম্ভ করে হিমালয়ের বরফ আচ্ছন্ন শিখর দেশ পর্যন্ত বিভিন্ন মঠ, মন্দির, সাধু সংঘ ও যোগ সাধনায় নিজের জীবন অতিবাহিত করেন। এই সময়ে তার সাথে বিভিন্ন সাধু সন্ন্যাসীর পরিচয় হয়।
এক ব্রহ্মচারীর কাছে তিনি ব্রহ্মচর্যের দীক্ষা নেন এবং তখন তার নাম হয় “ব্রহ্মচারী শুদ্ধাচৈতন্য”। তারপর একদিন ব্রহ্মচারী বেশে সিদ্ধপুরের মেলাতে যখন তিনি ছিলেন তখন তার পিতা সন্ধান পেয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন, কিন্তু বাড়ি হতে তিনি আবার পালিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর তিনি পূর্ণানন্দ সরস্বতী নামক সন্ন্যাসীর কাছে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। তখন তার নাম হয় দয়ানন্দ সরস্বতী।
সমাজ সংস্কারক হিসাবে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী:
১) আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠা ও আদর্শ:
তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতাবাদ প্রভৃতির বিষয়ের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তিনি মনে করতেন পৃথিবীর সকল ধর্ম, বৈজ্ঞানিক সত্য ও তত্ত্বের সারমর্ম বেদ এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে। কিন্তু সমাজের কিছু স্বার্থপর ব্যক্তি বেদের ভুল ব্যাখ্যা করে সনাতন হিন্দু ধর্মকে কলঙ্কিত / কলুষিত করতে চাইছে।
২) তাঁর কর্মসূচি:
সমাজ সংস্কারক হিসেবে তিনি বিভিন্ন রকমের ভূমিকা পালন করেছেন, যেমন:-
- শুদ্ধি আন্দোলন: আর্য সমাজের অন্যতম কর্মসূচি ছিল শুদ্ধি আন্দোলন, শুদ্ধির প্রধান লক্ষ্য ছিল অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে যাওয়া হিন্দুদের পুনরায় আবার হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনা এবং বিধর্মী প্রভাব রোধ করে ভারতকে এক জাতি এক ধর্ম ও এক সমাজ রূপে প্রতিষ্ঠা করা।
- নারীদের উন্নতি: স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী সমাজে নারীদের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ও স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। স্ত্রী শিক্ষার সার্বিক উন্নতি ঘটানোর কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন তিনি। স্ত্রীদের সম্মান রক্ষা করার জন্য তিনি আওয়াজ তুলেছিলেন।
- হিন্দু ধর্মের কোন প্রতিষ্ঠা: দয়া নন্দ সরস্বতী বেদের উপর নির্ভর করে সমস্ত চিন্তাধারা এবং আদর্শ নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন। যার ফলে বৈদিক যুগের গৌরব এবং পবিত্রতা হিন্দু ধর্মে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
- সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব: তিনি সংস্কৃত ভাষার উপরে আরো বেশি গুরুত্ব আরোপ করেন। তার মর্যাদা বৃদ্ধি করাও ছিল আর্য সমাজের একাধিক কর্মসূচির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি।
- গোমাতা: গোরক্ষা আন্দোলনে প্রথম প্রবক্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী। আর সেই কারণে ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে তিনি “গোকরুণানিধি” নামক গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে গো হত্যার বিরুদ্ধে প্রবল বিরোধিতা করা হয়েছে।
স্বামী দয়া নন্দ সরস্বতী রচিত গ্রন্থের তালিকা:
তিনি সর্বমোট ৬০ টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, তার রচিত সাহিত্য সমূহ প্রকাশনার জন্য তিনি ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম এলাহাবাদে বৈদিক যন্ত্রণালয় স্থাপন করেন, আর পরবর্তীতে তা আজমীরে স্থানান্তর করা হয়। তিনি একটি সংস্থা পরোপকারিনী সভা কে নিজের উত্তরাধিকারী করে যান।
দয়ানন্দ সরস্বতী রচিত গ্রন্থ গুলি হল:-
- সন্ধ্যা,
- গৌতম অহল্যা কি কথা,
- ভাগবত খণ্ডনম,
- ভ্রান্তি নিবারণ,
- ভ্রমচ্ছেদন,
- অদ্বৈতমত খণ্ডনম,
- মবা বৈষ্ণব মত খন্ডনম,
- অনু ভ্রমচ্ছেদন,
- পঞ্চ মহাযজ্ঞ,
- গোকরুনানিধি,
- চতুর্বেদ বিষয় সূচি,
- সত্যার্থ প্রকাশ,
- গর্ধব তাপনি উপনিষদ,
- বেদান্তিধ্বন্ত নিবারণ ইত্যাদি।
স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর অবদান:
তার মতে সাধনার জন্য বাহ্যিক চিহ্ন ধারণ করার কোন প্রয়োজন নেই। তিনি বৈদিক বিদ্যালয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং বিভিন্ন স্থানে বৈদিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। বৈদিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা ও বৈদিক জীবনধারা অনুসরণ করানোই ছিল তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য।
তাছাড়া তিনি একজন মহাপুরুষ হিসেবে নারীদের সম্মান করা এবং তাদের সমান অধিকার ও সম্মানের কথা বলেছেন। লিঙ্গ, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল শিশুর বেদ শিক্ষার পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী। এছাড়া বলি প্রথা, বাল্যবিবাহের মতো এই সমস্ত প্রথার বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলেছিলেন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর ভূমিকা:
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন কে প্রভাবিত করার জন্য দয়ানন্দ সরস্বতী সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য নাম। তার মতামত এবং লেখা বিভিন্ন লেখকও ব্যবহার করেছেন। যারা দয়ানন্দের মতাদর্শে প্রভাবিত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন:-
- ম্যাডাম কামা,
- পন্ডিত লেখরাম,
- কিষান সিং
- ভগৎ সিং
- বিনায়ক দামোদর সাভারকর,
- আশফাক উল্লাহ খান
- লালা লাজপত রায়
- মহাদেব গোবিন্দ রানাডে,
- শ্যাম জি কৃষ্ণ বর্মা,
- রাই সাহেব পুরানচাঁদ,
- রামপ্রসাদ বিসমিল এবং
- যোগমায়া নৃপানে।
এছাড়া জানা যায় যে, বিরজানন্দের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করার পর তিনি বৈদিক মত প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ১৮৬৯ সালে ১৭ ই নভেম্বর বারানসীর কাশিতে অবস্থানকালে ২৭ জন বিদ্বান এবং ১২ জন বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতের সাথে তার বিতর্কের আয়োজন করা হয়। সেই সময় কালে কোন পন্ডিত কত বেশি জ্ঞানী তার জন্য এমন বিতর্কের আয়োজন প্রায়ই করা হয়ে থাকতো। সেই বিতর্কে পঞ্চাশ হাজারেরও (৫০,০০০) বেশি লোকের উপস্থিতি ছিল।
এছাড়া গঙ্গা নদীতে স্নান করা ও বার্ষিকীতে পুরোহিতদের খাওয়ানোর মতো আচার অনুষ্ঠানগুলো করার জন্য সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করা হতো, যা দয়ানন্দ সরস্বতী কুসংস্কার বা সহ পরিচয় প্রথা বলে প্রতিবাদ করেছিলেন। তাদের ছাই মাখা, রুদ্রাক্ষ, তিলক ধারণ, করাকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করতেন। সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলেছিলেন।
স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মৃত্যু:
দয়া নন্দ সরস্বতীর মৃত্যুটা স্বাভাবিক ছিল না, বলা যায় তাকে হত্যা করা হয়েছিলো। প্রখর বুদ্ধি থাকা এবং সমাজ সংস্কারক হিসেবে তিনি সমাজের অনেক মানুষের রোষানলে পড়েছিলেন। সেই কারণে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর অনেক শত্রুও ছিল।
১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে দীপাবলীর সময়ে যোধপুরের মহারাজ দ্বিতীয় যশবন্ত সিংহ গুরুর আশীর্বাদ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীকে রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
দয়া নন্দ সরস্বতী রাজ দরবারের নৃত্য প্রদর্শন বন্ধ করে ধর্ম শিক্ষার নিরিখে জীবন যাপনের উপদেশ দেন। তখন রাজ দরবারের নর্তকী স্বামী দয়ানন্দের উপরে অত্যন্ত রেগে যান, সেই নর্তকী রাজপ্রাসাদের পাচক অর্থাৎ রান্নি বা ঠাকুরও বলেন অনেকে, তার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে দয়ানন্দ সরস্বতীর পান করা দুধের মধ্যে কাচের গুঁড়ো মিশিয়ে দেন।
সেই দুধ পান করে প্রচন্ড যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করতে থাকেন এবং সেখানেই প্রাণ ত্যাগ করেন। ৩০ শে অক্টোবর ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি সেই পাচক কে ক্ষমা করে দিয়ে যান।
পরম্পরা এবং উত্তরাধিকার:
বর্তমানে আর্য সমাজ কেবলমাত্র ভারতেই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ত্রিনিদাদ, কানাডা, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ড, ব্রিটেন, কেনিয়া, উগান্ডা, তানজানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস, মলাউই, মায়ানমাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশেও নিজের কার্য বিস্তার করে চলেছে।
একজন ভালো মানুষের শত্রুর কখনোই অভাব হয় না। আর তাইতো সমাজে ভালো মানুষ খুবই তাড়াতাড়ি মৃত্যুবরণ করেন, আর বলতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই মানুষকে হত্যা করাও হয়। তবে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী নিজের জীবনকে সন্ন্যাস জীবনে অতিবাহিত করে জনসাধারণের জন্য একটি সুন্দর সমাজ উপহার দিয়ে গিয়েছেন।
যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষা অর্জন করতে পারবেন এবং বিভিন্ন কুসংস্কার থেকে দূরে থাকতে পারবেন। তার বিভিন্ন গ্রন্থ পড়ে অনেকেই উপকৃত হয়েছেন এবং অনেক শিক্ষা লাভ করেছেন। আর সেই কারণেই তিনি আজও মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে রয়েছেন সকলের কাছে।