চন্দ্রশেখর আজাদ কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? চন্দ্র শেখর আজাদ কিভাবে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন? ওনার বাবা-মা কে? ওনার জীবন কেমন ছিল? এছাড়াও চন্দ্রশেখর আজাদের সম্পর্কে জানা-অজানা তথ্য জানুন (Biography of Chandra Shekhar Azad in Bengali)।
স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবীদের সংখ্যা নিহাত কম ছিল না। তবে বেশিরভাগ বিপ্লবীদের বয়স ছিল খুবই কম। যারা খুবই কম বয়সে দেশের জন্য আত্মত্যাগ করে গেছেন। চন্দ্রশেখর আজাদ হলেন তেমনি বিপ্লবীদের মধ্যে একজন অন্যতম বিপ্লবী। এছাড়া আর একজন বিপ্লবী ভগৎ সিং এর আদর্শিক গুরু হিসেবেও চন্দ্রশেখর আজাদের পরিচয় আছে।
তো চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদ সম্পর্কে কিছু তথ্য:
জন্ম: ২৩ শে জুলাই ১৯০৬ বাদারকা জেলা, উন্নাও, উত্তর প্রদেশ, ভারত।
পিতার নাম: পন্ডিত সীতারাম তিওয়ারি
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
মাতার নাম: জাগরণী দেবী
তাঁর মৃত্যু: ২৭ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৩১, আলফ্রেড পার্ক, বর্তমানে যেটা আজাদ পার্ক নামে পরিচিত, এলাহাবাদ, উত্তর প্রদেশ, ভারত।
প্রতিষ্ঠান: হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন, যেটা পরবর্তীতে হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন নামে পরিচিত।
আন্দোলন: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন।
সুচিপত্র
চন্দ্রশেখর আজাদ এর শৈশবকাল:
চন্দ্রশেখর আজাদ মধ্যপ্রদেশের আলিরাজপুর জেলার ভাওরা গ্রামে ১৯০৬ সালে ২৩ শে জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষরা কানপুরের কাছাকাছি বাদারকা গ্রামে বাস করতেন বলে জানা গিয়েছে। তার শৈশবকাল খুবই সাধারণ শিশুর মতোই কেটেছে। যিনি পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।
চন্দ্রশেখর আজাদ এর বিপ্লবী জীবন:
গান্ধীজীর দ্বারা পরিচালিত হওয়া ১৯২২ সালে অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত হওয়ার পর থেকেই চন্দ্রশেখর আজাদ বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। তিনি তরুণ বিপ্লবী মনমোহন নাথ গুপ্তের সাথে দেখা করেন, যিনি তাকে রামপ্রসাদ বিসমিলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের এইচ আর এ (HRA) বিপ্লবী সংগঠন গঠন করেছিলেন।
তারপর তিনি এইচ আর এর সক্রিয় সদস্য হন এবং এইচআর এর জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে শুরু করে দেন। বেশিরভাগ তহবিল সংগ্রহ করা হতো সরকারি সম্পত্তি ডাকাতি করার মধ্যে দিয়ে। কংগ্রেসের সদস্য হওয়ার সত্বেও মতিলাল নেহেরু ও নিয়মিত চন্দ্রশেখর আজাদকে সমর্থন করতেন আর অর্থ প্রদান করতে ভুলতেন না।
চন্দ্রশেখর আজাদের কিছু অনুপ্রেরণামূলক উক্তি:
১) অন্যদের কখনোই ভালো করতে দেখে হিংসা করবেন না, তার পরিবর্তে প্রতিদিন আপনার নিজের গড়া রেকর্ড নিজেই ভঙ্গ করুন। কারণ আপনার সাফল্য সেখানেই, যেখানে আপনার আর আপনার মধ্যে যে লড়াই চলে সেই লড়াইয়ে জীত কিন্তু আপনারই হয়।
২) তিনি বলতেন যে, “আমি এমন একটি ধর্মে বিশ্বাস করি যার স্বাধীনতা সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের পরিচয় দেয়।”
৩) “তারপরও যদি তোমার রক্ত এই সবকিছুর জন্য দ্রুত বেগে না প্রবাহিত হয়, তাহলে তোমার শিরায় প্রবাহিত হচ্ছে জল।”
৪) “একটি বিমান সর্বদা মাটিতে থাকার জন্য কিন্তু নিরাপদ থাকতে পারে। তবে সেই বিমানটিকে কখনোই মাটিতে রাখার জন্য তৈরি করা হয়নি। আর সেই কারণে সব সময় মহান উচ্চতা অর্জন করতে জীবনে কিছু অর্থপূর্ণ ঝুঁকি নেওয়া জরুরী।”
৫) তার উক্তি অনুসারে, “এ জওয়ানি কিসি কাম কি নেহি, যো আপনি মাতৃভূমি কে কাম না আ সকে,” এর বাংলা অর্থ অনুসারে বলা যায়, প্রতিটি মানুষের জীবনে যে যৌবনকাল আসে সেটা কোন কাজের নয়, যদি সেই যৌবন মাতৃভূমির সেবাতে নিয়োজিত না থাকে।
চন্দ্রশেখর আজাদের জীবনের সাথে জড়িত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:
১) প্রতিটি মা চাইবেন তার সন্তান সুশিক্ষায় বড় হোক, আর জীবনে উন্নতি সাধন করে খুবই স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করুক। তেমনি অন্যান্য মায়েদের মতো চন্দ্রশেখর আজাদের মাও সব সময় চেয়েছিলেন তিনি যেন একজন সংস্কৃতি পন্ডিত হন, আর সেই কারণে তাকে আরো পড়াশোনা করার জন্য কাশি বিদ্যাপীঠ এ পাঠানো হয়েছিল।
২) কারাগারে থাকার সময় যুবক চন্দ্রশেখর বলেছিলেন তার নাম “আজাদ” অর্থাৎ স্বাধীনতা তার বাসস্থান ছিল “জেল” এবং পিতার নাম ছিল “স্বতন্ত্রতা” যেটা স্বাধীনতা বলা যায়। আর এই ঘটনা থেকে জানা যায় যে, চন্দ্রশেখরের নামের সাথে এভাবেই কিন্তু “আজাদ” নামটি যুক্ত হয়েছিল, আর সেই থেকেই আজও পর্যন্ত তাকে “চন্দ্রশেখর আজাদ” নামেই সকলেই চেনেন।
গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করার জন্য যখন তাকে প্রথমবার গ্রেফতার করা হয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। তাকে শাস্তি হিসেবে দেওয়া হয়েছিল পনেরোটি বেতের আঘাত।
তারপর মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত করে রাখার পর চন্দ্রশেখর আজাদ এইচ আর এ তে যোগদান করেছেন। সমিতিটি বিসমিল, শচীন্দ্রনাথ বকশি, শচীন্দ্রনাথ সান্যাল এবং যোগেশচন্দ্র চ্যাটার্জি দ্বারা গঠন করা হয়েছিল। চন্দ্রশেখর আজাদ সহ এইচ আর এ, কাকোরি ট্রেন ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
চন্দ্রশেখর আজাদ ১৩ই এপ্রিল ১৯১৯ সালের সংঘটিত জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং ভারতীয় স্বাধীনতার দাবিতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতার জন্য অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত হওয়ার পর আজাদ, লেখক ও বিপ্লবী নেতা রামপ্রসাদ বিসমিল্ গঠিত হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন তে যোগদান করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি এই সমিতির প্রধান কৌশলবিদও হন।
চন্দ্রশেখর আজাদের মৃত্যু:
একজন অজ্ঞাত পরিদর্শক তাকে বলেছিল পুলিশ তাকে পার্কে ঘিরে রেখেছে। তিনি নিজেকে এবং সুখদেব রাজকে রক্ষা করার জন্য গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন এবং তিনটি পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছিলেন।
তার কর্মকাণ্ডে সুখদেব রাজা পালিয়ে যান, তিনি নিজের অর্থাৎ চন্দ্রশেখর নিজের শেষ বুলেট দিয়ে নিজেকেই গুলিবিদ্ধ করে হত্যা করেছিলেন। চন্দ্রশেখর আজাদের সেই কর্ট পিস্তল এলাহাবাদ জাদুঘরে এখনো পর্যন্ত সংরক্ষিত রয়েছে আর প্রদর্শিতও করা হয়।
চন্দ্রশেখর আজাদ এলাহাবাদের জনপ্রিয় আলফ্রেড পার্ক যেখানে তিনি তার শেষ মুহূর্তগুলো কাটিয়েছিলেন, ২৭শে ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ সালে পুলিশের সাথে একটি এনকাউন্টারের সময় তিনি তার রিভলবার দিয়ে নিজেই আত্মহত্যা করেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে জীবিত গ্রেফতার করবে না, আর এই শপথ তিনি নিজেই পূরণ করে দিয়েছেন নিজের রিভলবার দিয়ে নিজেকে হত্যা করে।
পরে পার্কের নামকরণ করা হয় চন্দ্রশেখর আজাদের নাম অনুসারে চন্দ্রশেখর আজাদ পার্ক। মাত্র ২৫ বছর বয়সে এই তরুণ বিপ্লবী দেশের জন্য নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করে গেছেন, আর সেই কারণেই তো তিনি আজও ভারতের সমস্ত জনগণের মনে জীবিত হয়ে আছেন।