Jagaddhatri Puja 2023: চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার অজানা বিষয় যা এই পুজোকে জনপ্রিয় করে তুলে

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার অজানা বিষয়: বাঙালির জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসব হল দুর্গাপূজা। তবে সেই পূজা আসছে আসছে এমনটাই আনন্দ সবচেয়ে বেশি। তবে পূজা আসতে না আসতেই খুব তাড়াতাড়ি চলেও যায়। তার সাথে সাথে আমাদের আনন্দ, ভালোলাগা সবকিছু নিয়েও যায়।

মন খারাপ হয়ে যায় সকলের, তবে কিছুদিন পরেই কালীপূজাতে আবার সকলে আনন্দ অনুভব করেন তার কিছুদিন পরেই আবার দেবী দুর্গা জগদ্ধাত্রী রূপে ফিরে আসেন এই ধরণীতে সকলের কাছে পূজা পেতে এবং সকলকে আনন্দে মাতিয়ে রাখতে।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার অজানা বিষয় যা এই পুজোকে জনপ্রিয় করে তুলে
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার অজানা বিষয় যা এই পুজোকে জনপ্রিয় করে তুলে

কিন্তু জগদ্ধাত্রী পূজা সব জায়গায় খুব আড়ম্ভর পূর্ণ ভাবে না হলেও নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পূজা প্রথম শুরু হয়েছিল তারপর চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা বর্তমানে এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, সেখানে বহু দূর দূরান্তর থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্তরা এসে ভিড় জমান এখানকার জগদ্ধাত্রী পূজা দেখার জন্য।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা অনেক দিন আগে থেকে হয়ে আসছে এবং এখানকার আলোকসজ্জা সত্যিই সবার নজর কাড়ে। আর সেই কারণে অনেকেই সারা বছর ধরে পরিকল্পনা করে রাখেন যে জগদ্ধাত্রী পূজার সময় চন্দননগরেই কিছুটা সময় কাটাবেন।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার এই অজানা তথ্য আপনার জানা আছে কি?

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা সংক্রান্ত কিছু তথ্য সম্পর্কে:

চন্দননগরের সবচেয়ে পুরানো পূজা:

এখানকার সবচেয়ে পুরনো পূজা বলতে গেলে চাউলপট্টির জগদ্ধাত্রী পূজা। যেখানে জগদ্ধাত্রী দেবীকে আদি মা হিসেবে সকলেই ডাকেন। আনুমানিক প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি পুরানো এখানকার এই চাউলপট্টির জগদ্ধাত্রী পূজা।

আরো অন্যান্য অন্যতম পুরানো জগদ্ধাত্রী পূজা:

চন্দননগরের এই আদি মা ছাড়াও আরো অন্যান্য পুরানো পূজা বলতে গেলে মেজ মা, কাপড়েপট্টি (প্রায় ২৫৩ বছর), বুড়িমা, ভদ্রেশ্বর তেতুলতলা (প্রায় ২২৮ বছর), ছোট মা ভদ্রেশ্বর গঞ্জ (প্রায় ২১২ বছর)।

সর্বোচ্চ প্রতিমা:

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী প্রতিমার মধ্যে সর্বোচ্চ প্রতিমা হল রানীমা (তেমাথা)।

দেবী জগদ্ধাত্রীর বাহন সাদা সিংহ:

চন্দননগরের চাউলপট্টি, কাপড়েপট্টি, লক্ষীগঞ্জ, চৌমাথা ও লক্ষীগঞ্জ বাজার এই চার পূজোতেই কিন্তু দেবীর বাহন সিংহ সাদা রংয়ের হয়ে থাকে। এই সমস্ত বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পূজায় দেবীর বাহন সিংহের রং সাদা থাকে।

জগদ্ধাত্রী দেবীকে সন্তুষ্ট করতে দেওয়া হয় এই সমস্ত ভোগ গুলি

বর্তমানে পূজোর সংখ্যা:

চন্দননগর, মানকুন্ডু ও ভদ্রেশ্বর মিলিয়ে কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি অনুমোদিত মোট পুজোর সংখ্যা ১৭১ টি। এর মধ্যে প্রথমে ১৫ টি বারোয়ারি পূজা ঘট পুজো করবে বলে ঠিক করলেও পরে তারা প্রতিমা পুজোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সর্বশেষ মাত্র ছয়টি বারোয়ারী ঘট পুজো করলেও আড়ম্ভরের কিন্তু কোন কমতি ছিল না।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার আলোকসজ্জা:

আমরা আগেই জেনেছি যে, চন্দননগরের আলোকসজ্জা খুবই বিখ্যাত। বহু জায়গায় এখান থেকে আলোকসজ্জা ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়। চন্দননগরের ব্যাপারে যেটা না বললে সবকিছুই বাদ পড়ে যায়।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো এখানকার আলোকসজ্জা। প্রত্যেক বছর জগদ্ধাত্রী পুজোর আলোকসজ্জায় কিছু না কিছু নতুনত্বের ছাপ দেখা যাবেই তার জন্যই কিন্তু এখানে বহু পর্যটক এবং ভক্তদের সমাগম লেগেই থাকে।

তার উপরে অনেক সময় আলোকসজ্জার মধ্যে দিয়ে সামাজিক বার্তাও দেওয়া হয়। এমনকি অনেক সময় সাধারণ আলো দিয়েও অসাধারণ শিল্প-কর্ম ফুটিয়ে তোলা হয়। যা কিনা এখানকার আলোক শিল্পীরা খুবই দক্ষতার সাথে প্রকাশ ঘটিয়েছেন আলোকসজ্জার মধ্যে দিয়ে।

আর সেই কারণেই স্বাভাবিকভাবেই চন্দননগরে আলোকসজ্জার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় সুন্দর সুন্দর আলোকসজ্জায় এখানকার জগদ্ধাত্রী পূজা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।

জগদ্ধাত্রী পূজার অজানা তথ্য যা আপনি জানেন না

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা দেখার জন্য আপনি কিভাবে যাবেন:

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা এতটাই জনপ্রিয় যে, সকলেই মুখিয়ে থাকেন এখানে গিয়ে একটু যদি এই জগদ্ধাত্রী পূজার আনন্দ উপভোগ করা যেত। তবে সেটা আর এমন কোন বড় কথা নয়।

চন্দননগরের পুজো দেখতে গেলে খুব একটা বেশি ম্যাপ না দেখলেও চলবে। মানকুন্ডু স্টেশন এ নেমে জ্যোতির মোড়ের দিকে এগোতে থাকলেই পরপর এক লাইনে অনেকগুলি জগদ্ধাত্রী পূজা আপনি দেখতে পাবেন।

এরপর জ্যোতির মোড়ে পৌঁছে ডান দিকে গেলেই ভদ্রেশ্বর এবং বাঁদিকে আর সোজা গেলে চন্দননগর শহরতলির আরো অন্যান্য পূজা দেখতে পাবেন। এছাড়া ওখানে পৌঁছে আপনি যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই প্রতিটি পূজা মন্ডপে আপনি সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার উল্লেখযোগ্য দিকগুলি:

আমরা অনেকে কলকাতা দূর্গা পূজার সাথে সম্পর্কিত। তবে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার তুলনায় এগুলি খুবই অল্প মনে হয়, দুর্গাপূজা এবং জগদ্ধাত্রী পূজা দুটি উৎসবে নিজস্ব আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন সুষ্ঠু পরিকল্পনা দিক থেকে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা কলকাতার দুর্গাপূজার চেয়ে একটু তো এগিয়ে থাকবেই।

যেমন ধরুন নবমীর রাতে আপনি রাস্তার উপর কোন প্যান্ডেলে প্রতিমা দর্শন করে এলেন কিন্তু পরদিন অর্থাৎ দশমির সকালে সেখানে গেলে আপনি কিন্তু শুধু রাস্তার উপর খোলা আকাশের নিচে প্রতিমা টাই দেখতে পাবেন কোন প্যান্ডেল চোখে পড়বে না।

কি অবাক লাগছে ! এটাই কিন্তু চন্দননগর, যেখানে পুজোর শেষ দিন এই রাস্তা আটকে করা প্যান্ডেল খুলে ফেলতে হবে। অর্থাৎ পুজো শেষ তো সাধারণ মানুষজনের কর্ম ক্ষেত্রে কোনোরকম আঁচ যেন না আসে।

জগদ্ধাত্রী পূজার থিম:

প্রতিটি পূজা বর্তমানে থিম এর উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। আর তেমনি কিন্তু চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজাও এই থিম থেকে বাদ পড়েনি, পুজোয় সর্বত্র সাবেকিয়ানা ও সাধারণ প্যান্ডেলের মাঝে যখন প্রথম থিমের আবির্ভাব ঘটেছিল তখন মানুষ একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে এই সুন্দর সুন্দর নতুনত্ব থিমের ব্যবহার করতে শুরু করেন।

তবে ঐতিহ্য আর সাবেকিয়ানা কে বাঁচিয়ে রেখে তবেই থিম ব্যবহার করা হয় জগদ্ধাত্রী পূজায়।

দেবী জগদ্ধাত্রীর সিংহ বাহনের পদতলে হাতির মাথা কেন থাকে?

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার দশমীতে সারা শহর অন্ধকার:

লোকমুখে শোনা কথা অনুসারে জানা যায় অনেক আগে দশমী আর একাদশীর দিন সম্পূর্ণ চন্দননগর অন্ধকারে থাকতো। কারণ এত বড় বড় প্রতিমা গুলোকে লরিতে চাপিয়ে ঘোরানোর সময় যাতে রাস্তার এপারে ওপারের মধ্যে সংযোগকারী কারেন্টের তারে আটকে না যায়, আর তাই তার গুলো আগে থেকে কেটে দেওয়া হতো।

তবে এখন আধুনিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে হয়তো তার কাটতে হয় না, শুধু গলি থেকে মূল রাস্তায় ঠাকুর বের করার সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এর ফলে সমগ্র চন্দননগর তো অন্ধকারে থাকবেই। তবে তার জন্য এখন আর আগের মতো একটানা কারেন্ট অফ থাকে না।

প্রতিমা যখন সম্পূর্ণরূপে বিসর্জন দেওয়ার জন্য জলাশয়ের ধারে আনা হয়, তখন আবার বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়। যেমন ধরুন দশমীর দিন দুপুরের দিকে কারেন্ট যদি অফ হয়ে যায় আবার রাত আটটা থেকে নটার মধ্যে কারেন্ট পুনরায় চলে আসে।

প্রতিমা বিসর্জন:

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা যেমন খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হয়, তেমনি বিসর্জন টাও খুবই আকর্ষণীয়। রাতে বিসর্জনের শোভাযাত্রা বের হয় নিয়ম অনুসারে। সাধারণত প্রত্যেক পুজো কমিটির সর্বোচ্চ চারটি লরি শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারে।

যেহেতু আলোক সজ্জায় এই পূজা সবার থেকে এগিয়ে তাই লরিগুলোর সামনে পুরোটাই আলোর বোর্ড দিয়ে সাজানো থাকে। এই অবস্থায় অতো ভিড়ের মাঝেও শুধুমাত্র পুজো কমিটির ভলেন্টিয়ারদের নির্দেশ শুনে লরিচালকরা খুবই সুষ্ঠুভাবে, সুন্দরভাবে লরিগুলোকে আস্তে আস্তে এগিয়ে নিয়ে যান জলাশয়ের দিকে।

দশমীর দিন সকালবেলায় প্রতিটি প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়া হয়। তার মধ্যে রয়েছে খুবই আনন্দ উৎসব এবং মনমরা একসাথে। আর তার সাথে রয়েছে আন্তরিকতার ছোঁয়া।

এরপর ভাসানের পর কিছু সময়ের মধ্যে দেবী জগদ্ধাত্রীর কাঠামো লরিতে তুলে যে যার পুজো মন্ডপের দিকে রওনা হয়ে যান। আর এই কাঠামোতেই আবার আগামী বছরের জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তৈরি করার চিন্তা ভাবনা চলে। তার সাথে চলে দীর্ঘ প্রতীক্ষা।

সব দিক থেকে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা আপনার মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলবেই। যদি একবার আপনি এখানকার জগদ্ধাত্রী পূজার অনুষ্ঠান উপভোগ করেন তাহলে বারবার এখানে এই পূজা দেখতে আসতে ইচ্ছা করবে।

সেই কারণেই তো সারা বছর ধরে অনেকেই অপেক্ষা করে থাকেন চন্দননগরের এই জগদ্ধাত্রী পূজা দেখার জন্য। পূজা শুরু হতে না হতেই ষষ্ঠীর আগে থেকেই অনেকেই এখানে যাওয়ার জন্য রওনা হয়ে যান। চাইলে আপনিও কিন্তু খুবই সহজে চন্দননগরের এই ঐতিহ্যময় জগদ্ধাত্রী পূজা উপভোগ করতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top