আমরা অনেকেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সহজ করার জন্য বাইক ব্যবহার করে থাকি। আর বাইক কথা উঠলেই সবার আগে আমাদের মাথায় আসে সড়ক দূর্ঘটনার কথা। রাস্তায় বের হলেই অথবা পত্রিকার পাতা খুললেই আমাদের চোখে পড়ে বাইক দূর্ঘটনার চিত্র।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাইকারের ক্ষতি না হলেও বাইকের ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। এ ধরণের দুর্ঘটনার কারণে যদি আমাদের বাইকের ক্ষতি হয় তাহলে আমাদের আফসোসের সীমা থাকে না। এ কারণেই আমাদের বাইকের জন্য ইন্স্যুরেন্স করা খুবই প্রয়োজন। তাছাড়া বাইকের ইন্সুরেন্স থাকা ভারতীয় যাতায়াত আইনে অনিবার্য।
দুর্ঘটনাজনিত কারণে আপনার বাইকের কোন ক্ষতি হলে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আপনার বাইক মেরামত করার সমস্ত খরচ বহন করবে, যদি আপনার বাইকটি একটি বৈধ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ইন্স্যুরেন্স করা থাকে। এজন্য আপনাকে একটি বাৎসরিক ফি জমা দিতে হবে।
এর বিনিময়ে দুর্ঘটনাজনিত কারনে আপনার বাইকের বড় ধরণের কোন ক্ষতি হলেও আপনাকে একটি টাকাও খরচ করতে হবে না। ভারতের মোটর সুরক্ষা আইন বাইক ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করে দূর্ঘটনাজনিত কারণে ক্ষতির কারণে মেরামতের ব্যয় বহন করে কয়েক লক্ষ বাইক মালিককে অতিরিক্ত খরচ হতে রক্ষা করে। ভারতের অনেক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর বাইক ইন্স্যুরেন্স পলিসি রয়েছে।
আসুন বাইক ইন্স্যুরেন্সের বিভিন্ন সুবিধাগুলি সম্পর্কে সমস্তকিছু আলোচনা করি। এখানে আপনারা সবকিছু খুঁটিনাটি জেনে নিতে পারবেন।
সুচিপত্র
আর্থিক সুরক্ষাঃ
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
বাইক ইন্স্যুরেন্স আপনার বাইকের আর্থিক সুরক্ষা দান করে যা কোনও দুর্ঘটনা, চুরি অন্যকোন ক্ষেত্রে বাইক মালিকের অনেক অর্থ ব্যয় হতে রক্ষা করে।
এমনকি একটি ছোট দূর্ঘটনায়ও আপনার হাজার হাজার টাকা ব্যয় করা লাগতে পারে। এই বাইক ইন্স্যুরেন্স পলিসি আপনার উপর আর্থিক চাপ তৈরি না করে ক্ষয়ক্ষতিগুলি মেরামত করতে সহায়তা করে থাকে।
দুর্ঘটনাজনিত আঘাতঃ
বাইক ইন্স্যুরেন্স পলিসিটি কেবল কোনও দুর্ঘটনায় আপনার বাইকের ক্ষতিগ্রস্থ হলে সাহায্য করবে তা নয়, আপনার বাইকজনিত যে কোনও দুর্ঘটনাজনিত আঘাতের মুখোমুখি হলে তাও বাইক ইন্স্যুরেন্সের আওতায় থাকবে।
সাধারণ ছোটোখাটো খরচঃ
ভারতে বাইকের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাইকের খুচরা যন্ত্রাংশের ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার বাইকের পরিচালনা খরচও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বাইক ইন্স্যুরেন্স নীতিতে আপনার বাইকের খুচরা যন্ত্রাংশের ব্যয়সহ সাধারন বোল্ট, গিয়ার্স বা ব্রেক প্যাডের মতো অংশগুলিও কভার করে, যাতে করে আপনার বাইক চালনোর ব্যয় আপনার সাধ্যের মধ্যে ধরে রেখেছে।
মানষিক শান্তিঃ
আপনার বাইক ইন্স্যুরেন্স আপনাকে একটি মানসিক শান্তি এনে দেবে যাতে করে আপনি নিশ্চিন্ত মনে বাইক চালাতে পারবেন এবং আপনাকে দূর্ঘটনামুক্ত বাইক চালানোয় সহায়তা করবে।
বাইক ইন্স্যুরেন্স পলিসির মূল বৈশিষ্ট্যঃ
ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীগুলো আজকাল গ্রাহকদের উজ্জীবিত করতে এবং দীর্ঘসময় তাদের সাথে ইন্স্যুরেন্স চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসছে।
আজকাল, ইন্টারনেটের মাধ্যমেও অনলাইনে বাইক ইন্স্যুরেন্স গ্রহন করা যায়। তাই এখন বাইক ইন্স্যুরেন্স কেনা অনেক ঝামেলা-মুক্ত এবং দ্রুত সহজ প্রক্রিয়া। আসুন আমরা বাইক ইন্স্যুরেন্স পরিকল্পনার কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্য একবার দেখে নেই।
ক্ষতিপূরণ এবং দায় কভারেজঃ
বাইকার শুধুমাত্র ক্ষতিপূরণ অথবা দায় পলিসি অথবা দুইটাই বেছে নিতে পারবে। ভারতীয় মোটরযান আইনের অধীনে বাইক ইন্স্যুরেন্স অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং প্রতিটি চালকের এই ইন্স্যুরেন্স থাকা বাধ্যতামূলক।
অন্যদিকে, ক্ষতিপূরন ইন্স্যুরেন্স পলিসি বাইকের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং বাইকের ইন্স্যুরেন্স কভারের পাশাপাশি চালকদের (সাধারণত অ্যাড-অন কভার হিসাবে) ব্যক্তিগত দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরন প্রদান করে থাকে।
ব্যক্তিগত দুর্ঘটনায় ১৫ লক্ষ টাকাঃ
বাইকের মালিকরা এখন ব্যক্তিগত দুর্ঘটনার জন্য ইন্স্যুরেন্স কভারেজ নিতে পারবেন। বাইকাররা ইন্স্যুরেন্সের আওতায় দূর্ঘটনার জন্য ১৫ লক্ষ টাকা পেতে পারেন। ইতিপূর্বে তা ছিল মাত্র ১ লাখ টাকা, তবে সম্প্রতি আইআরডিএ পলিসিতে বাড়িয়ে ১৫ লক্ষ টাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সরল ট্রান্সফারঃ
এখন নতুন বাইক গাড়ি কিনলে এনসিবি সহজেই স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। এনসিবি সাধারনত চালক / মালিককে দেওয়া হয়, গাড়ীতে নয়। নিরাপদ ড্রাইভিং অনুশীলন এবং পূর্ববর্তী বছরে কোনও দূর্ঘটনায় না পড়ার জন্য এনসিবি কোনও কোনও ব্যাক্তিকে পুরস্কৃত করে থাকে।
ছাড় সুবিধাঃ
আইআরডিএ অনুমোদিত ইন্স্যুরেন্স গ্রাহকদের বিভিন্ন স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে। যেমন স্বীকৃত অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছাড়, অনুমোদন দেওয়া যানবাহনের জন্য ছাড় ইত্যাদি।
বাইক ইন্স্যুরেন্স পলিসির আওতায় কী রয়েছে?
আপনি যদি নিজের বাইকের জন্য ইন্স্যুরেন্স পলিসি কিনতে বা নবায়ন করার পরিকল্পনা করে থাকেন তবে আপনাকে অবশ্যই বীমা সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত পলিসিগুলি খতিয়ে দেখতে হবে। আপনি যদি বাইক প্রেমিক হন তবে আপনি যে কোনও সময় সড়ক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে পারেন। বাইক ইন্স্যুরেন্স নীতিটি বাইকের ক্ষতিগুলি কভার করে যার বিস্তারিত তালিকা নীচে দেখুনঃ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নোকসান ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছেঃ
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন বজ্রপাত, ভূমিকম্প, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন, ঝড়, জলাবদ্ধতা, শিলাবৃষ্টি, ভূমিধসের কারণে বীমাকৃত যানবাহনের যে কোনও ক্ষতি হলে বা ক্ষতিপূরন দেওয়া হবে।
মানুষের দ্বারা বিপর্যয়ের কারণে নোকসান ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছেঃ
এটি বিভিন্ন মানুষের তৈরি বিপর্যয়ে কভারেজ সরবরাহ করে, যেমন দাঙ্গা, রাস্তায় ধর্মঘট, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ এবং রাস্তা, রেল, অভ্যন্তরীণ নৌপথ, লিফট, দ্বারা যাতায়াতজনিত যেকোন ক্ষতির কারনে।
অন্যান্য ক্ষতি কভারেজঃ
এই কভারেজটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আগুন ও বিস্ফোরণ, মানবসৃষ্ট বিপর্যয় বা চুরির কারণে যে কোনও ক্ষতি বা ক্ষতির হাত থেকে ইন্স্যুরেন্স করা গাড়িটিকে রক্ষা করে।
ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা কভারেজঃ
একটি ব্যক্তিগত দুর্ঘটনায় রাইডার / মালিকের জখমের জন্য ১৫ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়। সাময়িক বা স্থায়ীভাবে অচল হয়ে যেতে পারে বা অঙ্গ হারাতে পারে এমন ক্ষতি হলে ইন্স্যুরেন্স পলিসিটি প্রযোজ্য হয়।
চুরি বা চুরির ঘটনাঃ
বাইকের ইন্স্যুরেন্স মালিকানাধীন বাইক চুরি হয়ে গেলে মালিককে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।
আগুন এবং বিস্ফোরণঃ
এটি আগুন বা কোনও বিস্ফোরণের কারণে যে কোনও লোকসান বা ক্ষয়ক্ষতি রয়েছে তাও কভার করে থাকে।
তাই আমরা দেখতে পাই যে, আমাদের জন্য বাইকের ইন্স্যুরেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ন। শুধু তাই নয়, ভারতীয় আইনে প্রতিটি বাইকের ইন্স্যুরেন্স করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই আমাদের সবার বাইক চালানোর সময় বাইক ইন্স্যুরেন্স আছে কিনা ব্যাপারটা যাচাই করে নিতে হবে।
ভারতীয় আইন অনুসারে বিনা ইন্সুরেন্সে বাইক চালালে হতে পারে চালান। যদি আপনাদের বাইক ইস্যুরেন্স বা অন্যান্য যে কোনো ইন্সুরেন্স সম্পর্কে জানতে হয় তাহলে আমাদের নিচে কমেন্ট করে জানান। আমরা আমাদের পরবর্তী লেখায় আপনাদের সাহায্য করার চেষ্টা করবো।