ছোট বাচ্চাদের সবথেকে ভালো মালিশ তেলঃ আমরা সবাই জানি যে, শিশুরা কত কোমল ও নমনীয় হয়ে থাকে। আর প্রতিটি শিশু জন্মানোর সাথে সাথে তাদের দেখভাল করার বিষয়টা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তাদের সুস্বাস্থ্য এর দিকটা সব সময়ের জন্য খেয়াল রাখতে হয়। তাছাড়া তারা সবেমাত্র একটা পরিবেশ থেকে আর একটা পরিবেশে আসে। তাই তাদের ত্বকের উপরে বিভিন্ন রকমের টানা পোড়েন হতে থাকে।
সেই কারণে তাদের শরীর আরো বেশি স্ট্রং এবং ত্বকের খেয়াল রাখার পাশাপাশি তাদেরকে মালিশ করার জন্য তেলের প্রয়োজন হয়। তবে আপনি কেমন তেল আপনার ছোট্ট বেবির জন্য সিলেক্ট করবেন, সেটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা থেকেই যায়।
তো আজকের এই লেখাতে ১৪ টি এমন বিভিন্ন রকমের তেল সম্পর্কে জানা যাবে, যে গুলি বাচ্চাদের জন্য খুবই ভালো মালিশ করার ক্ষেত্রে। তবে এর মধ্যে থেকে আপনি অনায়াসেই সিলেক্ট করতে পারবেন কোন তেল আপনার শিশুর জন্য সবথেকে বেশি ভালো।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক:
সুচিপত্র
- ১) ডাবর লাল তেল:
- ২) হিমালয়া বেবি ম্যাসাজ অয়েল:
- ৩) জনসন বেবি অয়েল উইথ ভিটামিন ই:
- ৪) বেবি ডাভ রিচ ময়শ্চার বেবি মেসেজ অয়েল:
- ৫) মামায়ার্থ স্মুথিং মাসাজ অয়েল:
- ৬) মম এন্ড ওয়ার্ল্ড বেবি নারিশিং অয়েল:
- ৭) সেবামেড বেবি মাসাজ অয়েল:
- ৮) ব্লু নেক্টর আয়ুর্বেদিক বেবি ম্যাসাজ অয়েল:
- ৯) সেটাফিল বেবি মাসাজ অয়েল:
- ১০) মাদার কেয়ার অল উই নো বেবি অয়েল:
- ১১) মি মি বেবি অয়েল উইথ ফ্রুট এক্সট্রেক্ট:
- ১২) নেচারস বেদা দাসাপুষ্পম বেবি অয়েল:
- ১৩) বেয় বি বেবি মাসাজ অয়েল:
- ১৪) বেবি বাটন্স এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল:
- বাচ্চাদের তেল মালিশ করার সময় এই সমস্ত সাবধানতা গুলি অবলম্বন করুন:
১) ডাবর লাল তেল:
ডাবর লাল তেল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাবা মায়েরা সিলেক্ট করে থাকেন তাদের শিশুদের জন্য। কেননা এই তেলে আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন রকমের সামগ্রী মেশানো থাকে। যার ফলে এই তেল শিশুদের ত্বক এবং হাড়ের জন্য অনেক বেশি উপযুক্ত।
এই তেলে কর্পূর এর ব্যবহারও করা হয়েছে, যা কিনা ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বলতে গেলে ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। ডাবর কোম্পানি এটা দাবি করে যে, ডাবর লাল তেল দিয়ে যদি শিশুদের শরীর মালিশ করা যায় তাহলে এটি সম্পূর্ণ শারীরিক বিকাশ করার ক্ষেত্রে অনেকখানি সাহায্য করে থাকে (Dabur Lal Tail Baby Massage Oil)।
গুনাগুন:
- শিশুর ভালো ঘুমের জন্য অনেকখানি সাহায্য করে।
- শিশুদের হাড় আর মাংসপেশিকে মজবুত করার জন্য খুবই উপকারী।
- ত্বককে আরও বেশি কোমল ও মোলায়েম করে তোলে।
ক্ষতি:
- যদি কোনো শিশুর ত্বক খুব বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে, তাহলে এই তেল এড়িয়ে চলতে পারেন, কেননা শিশুর ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে।
২) হিমালয়া বেবি ম্যাসাজ অয়েল:
ডাবর লাল তেল এর মত হিমালয়া র প্রোডাক্টও বাচ্চাদের জন্য খুবই লাভ দায়ক। বিগত কয়েক বছরে হিমালয়া বেবি কেয়ার প্রোডাক্ট এ তার জায়গা করে নিয়েছে। যদি এই হিমালয়া বেবি ম্যাসাজ অয়েল এর কথা বলা হয়, তাহলে এই তেল অলিভ অয়েল আর উইন্টার চেরি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।অলিভ অয়েল, ভিটামিন ই আর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণে সমৃদ্ধ। যা কিনা ত্বকে প্রোটিন জুগিয়ে থাকে। তার সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচার জন্য অনেকখানি সহযোগিতা করে থাকে। তার পাশাপাশি উইন্টার চেরি শিশুর ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে, আর ত্বকের নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে (Himalaya Baby Massage Oil)।
গুনাগুন:
- এই তেল ত্বকে খুবই সহজে মিশে যায়, আর ত্বকে পুষ্টি যোগায়।
- এর গন্ধ খুবই হালকা আর মনমুগ্ধকর।
- এই তেলে অবস্থিত অলিভ অয়েল যাতে অলিক এসিড থাকে, যা কিনা ত্বককে নরম, কোমল রাখতে সাহায্য করে।
- এই তেলে এলোভেরার গুণ আছে, যা কিনা অ্যান্টি ইমপ্লোমেটরি গুণাগুনে ভরপুর।
- যেটা ইনফেকশন থেকে শিশুদের ত্বককে রক্ষা করে।
- এই তেল খুবই হালকা হয় যা কিনা বাচ্চার গায়ের রং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।।
ক্ষতি:
- তবে সব রকম ত্বকের জন্য এই তেল উপযোগী নয়, তাই আপনার বাচ্চার ত্বক অনুযায়ী তেল নির্বাচন করতে পারেন।
৩) জনসন বেবি অয়েল উইথ ভিটামিন ই:
জনসন বেবি অয়েল এর নাম শোনেননি এমন মানুষ খুবই কম রয়েছেন, কেননা বাচ্চাদের প্রোডাক্টের সবথেকে জনপ্রিয় নাম হল জনসন এন্ড জনসন। তাছাড়া শুধুমাত্র তেল নয় শিশুদের বিভিন্ন রকমের প্রোডাক্ট এই জনসন কোম্পানি তৈরি করে থাকে। তার সাথে সাথে শিশুর শরীরে মালিশ করার জন্য আলাদা আলাদা তেল তৈরি করে থাকে। যার মধ্যে একটি হলো জনসন বেবি অয়েল উইথ ভিটামিন ই (Johnson Baby Oil with Vitamin E.)।
এই কোম্পানি বলে থাকে যে, এই তেল বাচ্চাদের ত্বক কে পর্যাপ্ত প্রোটিন ভিটামিন দিয়ে তাদেরকে আরো বেশি নরম ও সুন্দর বানানোর জন্য অনেকখানি সাহায্য করে। তার সাথে সাথে মাসাজ এর মাধ্যমে বাচ্চার শরীরে রক্ত সঞ্চালন ও অনেক বেশি উন্নত হয়।
গুনাগুন:
- এই তেল বাচ্চাদের নরম, ত্বক এর উপর খেয়াল রেখেই বানানো হয়েছে।
- এই তেলের গন্ধ খুবই হালকা আর মনোমুগ্ধকর।
- এটি ডর্মেটোলজিস্ট থেকে প্রমাণিত বাচ্চাদের জন্য সুরক্ষিত তেল।
- এই তেল চ্যাটচ্যাটে নয়, খুবই হালকা।
- যার ফলে বাচ্চারা অস্বস্তি বোধ করে না।
ক্ষতি:
- যদি বাচ্চা অসুস্থ হয়ে থাকে, তাহলে এই তেল মালিশ না করাই ভালো।
- বাচ্চাদের শরীরে যেখানে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে, সেই জায়গায় এই তেল লাগাবেন না, এদিকটা খেয়াল রাখবেন।
৪) বেবি ডাভ রিচ ময়শ্চার বেবি মেসেজ অয়েল:
ডাব এর এই বেবি ম্যাসাজ অয়েল ছোট বাচ্চাদের ত্বকের দেখভাল করার জন্য খুবই ভালো বিকল্প প্রমাণিত হয়েছে। এই তেল ত্বকের নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
অনেকবার দেখা যায় ত্বকের নমনীয়তা বজায় না থাকার কারণে ত্বকে চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দেয়, তাছাড়া আরও অন্যান্য ত্বকের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ত্বকের নমনীয়তা বজায় রাখার জন্য এই তেল আপনি ব্যবহার করতে পারেন আপনার ছোট্ট বেবির জন্য (Baby Dove Rich Moisture Baby Message Oil)।
গুনাগুন:
- খুবই সুন্দর গন্ধ।
- ত্বকে গভীর থেকে পুষ্টি জুগিয়ে থাকে।
- সমস্ত রকম ত্বকের জন্য খুবই উপযোগী।
- প্রতিদিন মালিশ করার জন্য উপযুক্ত তেল।
- হালকা তেল চ্যাটচাটে নয়, যার কারণে খুব তাড়াতাড়ি ত্বক শোষণ করে নিতে পারে।
ক্ষতি:
- যদি শিশুর ত্বকে কোনো এলার্জি থাকে তো এই তেল না লাগানোই ভালো।
৫) মামায়ার্থ স্মুথিং মাসাজ অয়েল:
এই তেল বাদাম তিল জোজবা তেলের মিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে, যা কিনা বাচ্চাদের পাচন ক্রিয়াতে খুব বেশি কাজ করে থাকে।
এটি ত্বকে সমন্ধিত কোনোরকম সমস্যাকে খুব তাড়াতাড়ি দূর করতে পারে, তার সাথে সাথে শিশুর ত্বক উজ্জল করার ক্ষেত্রে অনেকখানি সাহায্য করে থাকে (Mamaearth Soothing Baby Massage Oil)।
গুনাগুন:
- এই তেল সালফেট মুক্ত।
- এই তেলে প্যারাবিন এর মত রাসায়নিক পদার্থ থাকে না।
- এই তেলে কোন ধরনের সিনথেটিক সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়নি।
- রুক্ষ ত্বক আর চুলকানি থেকে শিশুদের ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করে।
ক্ষতি:
- লম্বা সময় পর্যন্ত প্রভাব ফেলে না।
- 24 ঘন্টা পর্যন্ত রুক্ষ ত্বক কে নমনীয়তা প্রদান করতে পারে না।
৬) মম এন্ড ওয়ার্ল্ড বেবি নারিশিং অয়েল:
মম এন্ড ওয়ার্ল্ড বেবি নারিশিং অয়েল এর মালিশ বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন রকমের উপকারিতা নিয়ে আসে। এই তেলের নির্মাণে অর্থাৎ এই তেল তৈরি করতে ভার্জিন অলিভ অয়েল, বাদাম তেল, ভার্জিন কোকোনাট অয়েল অর্থাৎ নারকেল তেল, সূর্যমুখীর ব্যবহার করা হয়েছে।
এইজন্য এই তেলে বিভিন্ন রকমের পুষ্টি ভরপুর মাত্রায় পাওয়া যায়। যা কিনা রুক্ষ, শুষ্ক ত্বক ও ত্বকের চুলকানি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এই তেল অনেকখানি সহযোগিতা করে (Mom & World Baby Nourishing Oil)।
গুনাগুন:
- ত্বককে হাইড্রেট আর নরম রাখে।
- শিশুর ত্বকে আলাদা উজ্জ্বলতা আনে।
- আর এই তেল একেবারে কেমিক্যাল ফ্রি।
ক্ষতি:
- কিছু শিশুদের এই তেলের কারণে এলার্জি হতে পারে, এই জন্য ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞাসা করে তবেই এই তেল ব্যবহার করবেন।
৭) সেবামেড বেবি মাসাজ অয়েল:
বাচ্চাদের জন্য সবথেকে ভালো ম্যাসাজ অয়েলের তালিকাতে সেবামেড বেবি মাসাজ অয়েল ও সামিল রয়েছে। এই কোম্পানি দাবি করে যে, এই তেল বানানোর জন্য সোয়া তেল, ভিটামিন ই এর ব্যবহার করা হয়েছে।
নরম ও সুন্দর করতে সাহায্য করে, সুরক্ষিত রাখার জন্য সহযোগিতা করে, তার সাথে সাথে ত্বকের জালা ভাব দূর করতে সাহায্য করে (Sebamed Baby Massage Oil)।
গুনাগুন:
- শিশুর পাচন ক্রিয়াকে আরো বেশি ভালো করে।
- রক্ত সঞ্চালনে অনেক বেশি সহযোগিতা করে।
- শারীরিক বিকাশ এর জন্য এই তেল অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ।
- শিশুর হাড় ও মাংসপেশী মজবুত করে থাকে।
- পেটের ব্যথা, গ্যাসের সমস্যা থেকে খুব তাড়াতাড়ি আরাম প্রদান করতে পারে।
ক্ষতি:
- যদি শিশুর ত্বক খুবই সংবেদনশীল অথবা সেনসিটিভ হয়ে থাকে, তাহলে শিশুর জন্য এই তেল উপযুক্ত নয়।
- আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তেল নির্বাচন করতে পারেন।
- অনেকটা সময় পর্যন্ত ত্বকের নমনীয়তা বজায় রাখতে পারে না এই তেল।
৮) ব্লু নেক্টর আয়ুর্বেদিক বেবি ম্যাসাজ অয়েল:
এই তেল ও শিশুদের শরীর কে মেসেজ করার জন্য বেশ ভালো তেল হিসেবে মনে করা হয়। এই কোম্পানি বলে যে, এই তেল বানানোর জন্য আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
এর মধ্যে অর্গানিক ঘি, শঙ্খপুষ্প, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। আর এটাই কারণ যে, এই তেলকে বাচ্চাদের জন্য ১০০% স্বাস্থ্যকর আর সুরক্ষিত মনে করা যেতে পারে (Blue Nectar Ayurvedic Baby Massage Oil)।
গুনাগুন:
- শরীরের আরষ্ঠ ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
- শিশুর পাচন প্রক্রিয়ার যে সমস্যা থাকে সেটাও নিবারণ করতে পারে।
- ত্বকের মশ্চারাইজ ধরে রাখার ক্ষেত্রে এই তেল সাহায্য করে।
ক্ষতি:
- অন্যান্য বেবি ম্যাসাজ অয়েলের তুলনায় এই তেল অনেকটাই দামি।
- এর প্রভাব অনেকটা সময় পর্যন্ত থাকে না।
- তাছাড়া শিশুদের ক্ষেত্রে সব রকম ত্বকের জন্য এই তেল উপযুক্ত নাও হতে পারে।
৯) সেটাফিল বেবি মাসাজ অয়েল:
সেটাফিল বেবি মাসাজ অয়েল এ সূর্যমুখী তেল, সোয়াবিন তেল, সিয়া বাটার ব্যবহার করা হয়েছে। যা কিনা ত্বকের ময়েশ্চারাইজার এর জন্য সাহায্য করে থাকে।
তার সাথে সাথে ত্বক কে সুরক্ষিত রাখার কাজ করে থাকে। এই তেলের অর্গানিক ক্যালেন্ডুলা ত্বককে বাইরের সমস্ত রকম ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে (Setafil Baby Massage Oil)।
গুনাগুন:
- শিশুর ত্বকের পি এইচ লেভেল (pH Level) এর ভারসাম্য বজায় রাখে।
- এই তেলে কেমিক্যাল একেবারেই নেই।
- নবজাতক শিশুদের উপরেও এই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে নিঃসন্দেহে।
- ডাক্তার এবং কিছু মায়েদের দ্বারা এটি প্রমাণিত করা হয়েছে।
- ডরমেটোলজিস্ট টেস্টেও এই তেল পাস করে গিয়েছে।
ক্ষতি:
২৪ ঘন্টা পর্যন্ত রুক্ষ ত্বক কে নমনীয় করে রাখতে পারে না।
১০) মাদার কেয়ার অল উই নো বেবি অয়েল:
শিশুদের ত্বক সারাটা দিন ময়েশ্চারাইজ করে রাখার জন্য আমরা অনেক কিছুই করি, কেননা এর ফলে শিশুদের ত্বকে কোনরকম সংক্রমণ যেন না হয়।
এর জন্য মাদার কেয়ার অল উই নো বেবি অয়েল এর ব্যবহার সবথেকে ভালো বিকল্প হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। বিভিন্ন রকমের পুষ্টিকর পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই তেল, যা কিনা বাচ্চাদের ত্বকের জন্য খুবই ভালো (Mothercare All We Know Baby Oil)।
গুনাগুন:
ত্বককে নরম করে রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে থাকে।
ত্বকের জ্বালা ও চুলকানি থেকে রেহাই দিয়ে থাকে।
পেটের সমস্যা জনিত কোন অসুবিধা থাকলে সেটাও নিরাময় করতে পারে।
রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে।
ক্ষতি:
অনেকবার ব্যবহার করার ফলে ত্বকে জ্বালা ভাব অনুভব হতে পারে।
খুব বেশি সংবেদনশীল ত্বক হলে শিশুর শরীরে এই তেল ব্যবহার করলে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
১১) মি মি বেবি অয়েল উইথ ফ্রুট এক্সট্রেক্ট:
মিমি বেবি অয়েল তে অলিভ অয়েল আর সূর্যমুখী তেল এর ব্যবহার করা হয়েছে। এই জন্য এটি বাচ্চাদের মালিশ করার জন্য খুবই ভালো তেল, এই তেল ত্বককে নরম ও নমনীয় হতে সাহায্য করে।
তার সাথে সাথে ক্লিনজারের কাজও করে থাকে, যার ফলে ত্বকের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা যায় (Mee Mee Baby Oil)।
গুনাগুন:
ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
এই তেলের গন্ধ খুবই ভালো।
এই তেল মালিশ করার মধ্যে দিয়ে শিশুর পেটের সমস্যা দূর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শিশুর শরীরে রক্ত সঞ্চালন আরো বেশি উন্নত করে।
ক্ষতি:
এই তেল এর প্রভাব 24 ঘন্টা পর্যন্ত থাকে না।
অনেকবার এই তেল ব্যবহার করার ফলে শিশুর শরীরে অ্যালার্জি হতে পারে।
১২) নেচারস বেদা দাসাপুষ্পম বেবি অয়েল:
শিশুর ত্বক ভালো করার জন্য যে সমস্ত ম্যাসাজ অয়েল রয়েছে তার তালিকাতে এটাও শামিল আছে। এই তেল শিশুর ত্বকের জন্য সম্পূর্ণ রূপে সুরক্ষিত।
অনেক ঔষধী গুণে সমৃদ্ধ, যা কিনা শিশুর ত্বকের জন্য অনেক বেশি উপযোগী (Nature’s Veda Dasapushpam Baby Oil)।
গুনাগুন:
- ১০০% প্রাকৃতিক আর আয়ুর্বেদিক।
- শিশুর ত্বককে চকচকে ও নরম, কোমল বানাতে সাহায্য করে।
- ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (USDA) থেকে প্রমাণিত এই তেল।
- ত্বকে বিভিন্ন রকমের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখে।
- এই তেলে প্যারাবিন থাকে না, যা কিনা এক ধরনের কেমিক্যাল, যা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
ক্ষতি:
- কিছু শিশুদের ত্বক এ এই তেল সঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না। যার কারণে এই তেলের উপকার তারা ঠিকমতো পায় না।
- অনেকবার ব্যবহার করার ফলে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন হতে পারে।
১৩) বেয় বি বেবি মাসাজ অয়েল:
এই তেল ও শিশুদের জন্য অনেকখানি উপযুক্ত। এই তেল তৈরি করা কোম্পানি বলে যে, এই তেল নারকেল তেল থেকে তৈরি করা হয়েছে। যা কিনা ১০০ শতাংশ প্রাকৃতিক আর এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর লরিক অ্যাসিড এর ভরপুর মাত্রা থাকে।
এই দুটি গুণ ত্বকের জন্য খুবই লাভদায়ক মনে করা হয়। নমনীয়তা বজায় রাখে আবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রভাব ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
গুনাগুন:
- রুক্ষ, শুষ্ক ত্বককে ঠিক করতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
- এই তেল শিশুর নরম ত্বকের জন্য খুবই ভালো তেল।
- ত্বকের নমনীয়তা হারিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখে ত্বককে।
- সম্পূর্ণ কেমিক্যাল ফ্রি হয়ে থাকে এই তেল।
ক্ষতি:
- এই তেলের প্রভাব লম্বা সময় পর্যন্ত থাকে না।
- কোন কোন শিশুর শরীরে এলার্জির সমস্যা থাকতে পারে, তো তাদের এই তেল দিয়ে মালিশ না করাই ভালো।
১৪) বেবি বাটন্স এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল:
নারকেল তেল আমাদের ত্বকের জন্য কতটা উপযুক্ত সেটা আমরা সকলেই কম বেশি জানি। আরো যদি সেই তেল বাচ্চাদের ত্বকে ব্যবহার করা যায়, সেটা এমনিতেই ভালো হবে আশা করা যায়। তাছাড়া এই বেবি বাটন এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল শিশুদের জন্য খুবই ভালো বলে মনে করা হয়। এই তেলে কোনরকমের কৃত্রিম রং অথবা গন্ধ মেশানো হয়নি।
এর ফলে এই তেল মালিশ করার পরে শিশুর অনেক বেশি আরাম বোধ হয়, ভালো ঘুম হয়, তার সাথে সাথে হাড় ও মাংসপেশি মজবুত বানাতে সাহায্য করে। এই তেল ত্বকের নমনীয়তা ও কোমল ভাব ধরে রাখতে অনেকখানি সহযোগিতা করে থাকে সারাটা দিন।
গুনাগুন:
- ত্বকের ময়েশ্চারাইজ ধরে রাখার কাজ করে থাকে।
- একশ শতাংশ সুরক্ষিত প্রাকৃতিক গুনাগুন এ ভরপুর।
ক্ষতি:
- সব শিশুদের ত্বক একরকম হয় না, তাই সব রকম ত্বকের জন্য এই তেল উপযুক্ত নয়।
- অনেক সময় এই তেলের ব্যবহারের ফলে শিশুর ত্বকে কোনরকম সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
বাচ্চাদের তেল মালিশ করার সময় এই সমস্ত সাবধানতা গুলি অবলম্বন করুন:
যে কোন তেল দিয়ে বাচ্চাদের মালিশ করার আগে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা অনেকখানি জরুরী, যেগুলি কিনা নিচে দেওয়া হল:-
১) ইনজেকশন অথবা টিকা লাগানো জায়গাতে তেল মালিশ কখনোই করবেন না। এর ফলে শিশুর শরীরে ইনফেকশন অথবা কোনরকম সংক্রমণ শরীরের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে।
২) যদি বাচ্চার শরীরে জ্বর থাকে তাহলে তার শরীর কখনোই কোনো রকম তেল দিয়ে মালিশ করবেন না।
৩) প্রচন্ড ঠান্ডা তেল দিয়ে মালিশ করবেন না, তার পরিবর্তে সেই ঠান্ডা তেল ঈষদুষ্ণ গরম করে তারপরে মালিশ করুন।
৪) শিশুর শরীর যদি কোথাও ঘা, ফোঁড়া থেকে থাকে তাহলে সেই জায়গা ছাড়াও আরো অনেকটা জায়গা ছেড়ে দিয়ে তেল লাগাবেন অর্থাৎ এই সময় সেই জায়গাতে তেল না লাগানোই ভালো।
৫) তেল মালিশ করার পর ১৫ মিনিট পরে কিন্তু বাচ্চাদের স্নান করিয়ে দেওয়া উচিত, না হলে সে অস্বস্তিবোধ করতে পারে।
৬) খেয়াল রাখবেন তেল মালিশ করার সময় সেই তেল আপনার শিশুর চোখে যেন কখনোই না যায়।
৭) আপনার শিশুকে যখন খাওয়াবেন অথবা দুধ পান করাবেন, কমপক্ষে তার ৩০ মিনিট পরেই কিন্তু শিশুর শরীর তেল দিয়ে মালিশ করবেন।
তো চলুন তাহলে জানা যাক, বেবি মাসাজ অয়েল কেনার সময় কোন কোন বিষয়ের প্রতি আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে:
শিশুর মাসাজ অয়েল সিলেক্ট করার সময় এই সমস্ত বিষয়গুলি খেয়াল রাখা জরুরী:-
১) শিশুর মালিশ করার তেল যেন রাসায়নিক মুক্ত অথবা কেমিক্যাল ফ্রি হয়।
২) যে কোন তেল কেনার সময় তার expiry date অবশ্যই চেক করে নেবেন।
৩) সেই প্রোডাক্টটি ইউএসডিএ (USDA) থেকে প্রমাণিত হতে হবে, যার তথ্য আপনি প্রোডাক্টের লেভেলে দেখতে পাবেন।
৪) তেলের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত রকম সামগ্রী সম্পর্কে জানতে ভুলবেন না কিন্তু। যা কিনা প্রোডাক্ট এর পিছনের দিকে লেখা থাকে, এইজন্য তেল কেনার আগে এই সামগ্রী গুলি সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নেবেন।
৫) সব সময়ের জন্য বিশ্বস্ত দোকানদারের থেকে শিশুদের ম্যাসাজ অয়েল কিনবেন। কেননা অনেক সময় সম্ভাবনা থাকে যে, কোন অচেনা দোকানদার আপনাকে নকল তেল দিয়ে দিতে পারে, কেননা বাজারে নকল তেলের অভাব নেই।
৬) আর হ্যাঁ, প্রডাক্ট এর প্যাকেজিং ভালো করে চেক করে নেবেন, আগে থেকে সেই প্যাকেট অথবা প্রোডাক্ট খোলা আছে কিনা দেখবেন। এইজন্য প্রোডাক্টের সিল অবশ্যই দেখে নেবেন।
আপনার শিশুর জন্য আপনি অনেক কঠিন কাজও করতে পারেন, তো আশা করি এই সমস্ত বিষয়গুলি খেয়াল রাখার পাশাপাশি আপনি আপনার ছোট্ট শিশুর জন্য সঠিক মাসাজ অয়েল নির্বাচন করতে ভুলবেন না, তাই না ! তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া টা জরুরি, বাচ্চাদের তেল ব্যবহার করার আগে।