আমরা সবাই চাই সুস্থ ও সুন্দর থাকতে, তবে তার জন্য কিছু তো কষ্ট করতেই হয় তাই না। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এর মাধ্যমে শুধু ভালো থাকা যায় না, তার সাথে কাজ করে আপনার চিন্তাধারা।
কি অবাক লাগছে, একেবারেই ঠিক কথা। সবার মানসিকতা সমান হলে সবাইকে একই রকম লাগতো, স্বাস্থ্য আর সৌন্দর্যের তফাৎ থাকতো না।
কথায় আছে মুখ মনের আয়না, তাই মনের ভিতর চলা কার্যক্রম চাপা দিতে পারলেও মুখ ঢাকবেন কি দিয়ে।
আর যারা মাইন্ড রিডার, তাদের সামনে পড়লে তো আপনি কি ভাবছেন তা আপনার চোখ মুখ দেখেই বলে দেবে।
বাজে চিন্তা যেমন শরীরকে অসুস্থ করে ঠিক তেমনি আপনার বাইরের রুপেও ফুটে ওঠে। আমাদের ব্রেইন আমাদের যা সংকেত দেয় আমাদের শরীর সেটাই করতে বাধ্য।
মনোবিজ্ঞান মতে মানুষের শরীরে ৭৫% রোগ নিজের মানসিকতার কারনে জন্ম নেয়। যার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী।
চলুন এমন কিছু বিষয় জানা যাক যা আমাদের চিন্তাধারার উপর নির্ভর করে –
সুচিপত্র
1. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা:
অনেক ক্ষেত্রে বড়ো রোগের জন্য ডাক্তার ও ওষুধের প্রয়োজন হয়, তবে তার সাথে বেশি প্রয়োজন হয় আপনার মনের জোর।
আপনি যদি কোনো রোগের কারণে এতটাই ভীত হয়ে পড়েন যে মন দুর্বল হয়ে যায় আর সেই রোগের হার অনেকাংশেই বেড়ে যায়।
যত বেশি নেগেটিভ ভাববেন ততই আপনি অসুস্থ হতে থাকবেন। স্বাস্থ্যকর খাবার, শরীর চর্চা, এসবের পাশাপাশি পজিটিভ চিন্তা করুন নিশ্চয় সব কিছু আপনার মনের মতো হবে।
2. স্বপ্ন পূরণ করতে :
স্বপ্ন শুধু দেখলেই হয় না তা পূরণ করতে নিজেকে তার যোগ্য করে তুলতে হয়, স্বপ্ন তো সবাই দেখে, তবে যারা স্বপ্ন কে বাস্তবে দেখতে চায় তারা বসে থাকে না, চেষ্টা করে যথাযথ।
অনেকেই হাল ছেড়ে দেয় তবে যারা নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখে তারা কখনই হার মানে না।
আপনি বার বার চেষ্টা করেছেন কোনো কাজে সফল হওয়ার জন্য তবুও সফল হননি। আশে পাশের মানুষ আপনাকে বলবে, তোমার দ্বারা হবে না এ কাজ ছেড়ে দাও।
কিন্তু সফলতা বলছে আর এক বার চেষ্টা করে দেখ। হয়তো আর একটা বারের চেষ্টায় আপনি সফল হবেন।
যদি আশেপাশের মানুষের কথায় সেই একটা বারের আগেই হাল ছেড়ে দেন? নিজের প্রতি পজিটিভ থাকুন আর অন্যের ক্ষেত্রেও।
3. নতুন কিছু শিখতে :
সহজ বিষয় বার বার মূল্যায়ন করতে সবারই ভীষণ ভালো লাগে তাই না!
তবে আসল মজা তো সেখানে যখন নতুন কিছু শেখা হয় আর সেটা যদি হয় কঠিন কিছু। কোনো কিছুই কঠিন হয় না, আমরা সেটাকে কঠিন করে তুলি।
যে কাজ আমার আপনার কাছে কঠিন মনে হয় সেই কাজ পৃথিবীতে কেউ না কেউ তো অনায়াসে করছে তাই না।
যে বিষয়ে কোনো জ্ঞান থাকে না সেটাই আমাদের কঠিন লাগে, শিখলে, জানলে সেটা আপনি খেলার ছলে করতে পারবেন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্ঞান থাকলে, শিখলে, অনুশীলন করলে সব কাজই সহজ মনে হয়। যেমন, শিখলে প্লেন ও রকেট ওড়ানো যায়, তেমনি না শিখলে সাইকেলও চালানো যায় না।
অনেক বাধা বিপদ আসবে শেখার মানসিকতা থাকলে অবশ্যই শিখবেন। একদিনে কেউ কোনো কাজে সফল হয় না, তার জন্য কঠোর পরিশ্রম লাগে।
4. সমস্যার সমাধান :
সবার জীবনেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকে, সমস্যাটা কে সমস্যা হিসাবে দেখলে তা সমস্যাই থেকে যাবে।
আপনার চিন্তা ভাবনা প্রয়োগ করুন, সমস্যা থেকে পালিয়ে গেলে তো হবে না, তার মুখোমুখি হতে হবে, নিশ্চয় আপনার থেকে আপনার সমস্যা বড়ো নয়।
সমস্যা যখন থাকে, তখন তার সমাধানও থাকে। চুপ চাপ বসে না থেকে সমাধান খুঁজতে হবে। প্রত্যেকটা সমস্যা সবার জীবনে কিছু না কিছু পরিবর্তন এনে দেয়।
আর সেই পরিবর্তন টা কেমন হবে তা নির্ভর করে আপনার মানসিকতার উপর, আপনি কিভাবে চিন্তা করেন তার উপর।
যতদিন মানুষ বাঁচবে সমস্যা থাকবে, তাই স্মার্টভাবে, পজিটিভ চিন্তা করুন, সমাধান ঠিকই পাবেন।
সমস্যা টা বুঝুন, আপনার কোন ভুলের কারনে সমস্যা হচ্ছে দেখুন, ভুল টাকে ঠিক করুন সময় দিন নিজেকে।
আজে বাজে চিন্তা না করে মূল বিষয় টা খুঁজে বের করুন। ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুন দেখবেন সমাধান আপনার হাতের মুঠোয়।
5. সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে :
How Cute… কথাটা শুনতে বেশ লাগে তাই না। তবে এই Cute কথার মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। হ্যান্ডসাম, বিউটিফুল, সেক্সি ইত্যাদি হতে পারে।
শরীরের বয়স বাড়ার সাথে সাথে যদি আপনার মনের বয়স টা থমকে থাকে তাহলে আপনি বাচ্চাদের মতো মনোভাব নিয়ে চলতে পারেন। তাছাড়া বয়সটা একটা সংখ্যা মাত্র।
সবসময় এনার্জি ফুল হয়ে থাকলে আপনার চেহারায় একটা সতেজ ভাব বজায় থাকে। আপনার সুন্দর চিন্তা ভাবনা আপনার তারুণ্য ধরে রাখতে পারে।
পজিটিভ চিন্তাধারা আমাদের ব্রেইন কে সুস্থ্য রাখে হার্টের কার্য ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যা চেহারায় বয়সের ছাপ ফেলতে দেয় না।
ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়াতে অনেকাংশেই সাহায্য করে। তাই পজিটিভ চিন্তা করুন সুন্দর থাকুন।
6. অসম্ভব কে সম্ভব করা :
কোনো কাজ করার আগে, পারবো না বলে পিছিয়ে গেলে সারাজীবন পিছিয়েই থাকতে হবে। কাজটাতে হাত লাগিয়ে তো দেখুন, কঠিন মনে হলে নিজেকে সময় দিন, শিখুন।
চেষ্টার আগে কোনো কিছু নেই। চেষ্টা তো করুন, কম সে কম কি আর হবে আপনি ব্যর্থ হবেন তো! কিন্তু অনেক কিছু শিখতে পারবেন সেই ব্যর্থতা থেকে।
সফল হলে ভালো না হলে অন্য কাউকে বলতে পারেন সেই কাজের বিষয়ে, যার কিছুটা হলেও জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন আপনি।
7 . শত্রু দমনে :
যুদ্ধ তেও অস্ত্রের পাশাপাশি বুদ্ধির প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাস্তব জীবনে শুধু মাত্র বুদ্ধি দিয়ে শত্রু পরাজিত করতে পারেন। তবে কারো কোনো ক্ষতি করে নয়। নিজেকে যোগ্য করে তুলুন।
কোনো কাজে হার না মানার সুন্দর মানসিকতা রাখুন। পজিটিভ ভাবেই জীবন যাপন করুন। হাসি খুশি থাকুন সবসময়, নিজের দুর্বলতা, লক্ষ্য, কারো সাথে শেয়ার না করলেই ভালো।
প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখতে থাকুন। সাধারণ জীবন যাপন করুন। বিপদে সামাল দিতে পারবেন এমন ভাবে গড়ে তুলুন নিজেকে, কেননা বিপদে আপনজনরাই সব থেকে আগে সরে যায়।
ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস আর নিজের কনফিডেন্স আপনার শত্রুর রাতের ঘুম উড়িয়ে দেবে। প্রত্যেকটা জিনিসের ভালো মন্দ দুটোই থাকে।
কোনো ভালো বিষয়কে এতটাও বিশ্লেষণ করতে যাবেন না, যে তার খারাপ দিকটা বেরিয়ে আসে।
ঠিক তেমনি কোনো খারাপ বিষয়কে ততক্ষণই বিশ্লেষণ করুন যতক্ষণ না পর্যন্ত তার ভালো দিক টা সবার সামনে প্রকাশ পায়। ভালো দেখুন, ভালো শুনুন, ভালো বলুন। পজিটিভ থাকুন সুস্থ থাকুন।