বাঘা যতীন জীবনী 2023 – ইতিহাস, পরিবার এবং বিপ্লবী কার্যক্রম

বাঘা যতীন কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? বাঘা যতীন কিভাবে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন? ওনার বাবা-মা কে? ওনার জীবন কেমন ছিল? এছাড়াও বাঘা যতীনের সম্পর্কে জানা-অজানা তথ্য জানুন (Biography of Bagha Jatin in Bengali)।

বিপ্লবী বীর স্বাধীনতা সংগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন বাঙালি ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী নেতা। তার ভালো নাম ছিল যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় তিনি বাঘা যতিন নামে সকলের কাছে বেশি পরিচিত।

বাঘা যতীন জীবন পরিচয় - Bagha Jatin Biography in Bengali
বাঘা যতীন জীবন পরিচয় – Bagha Jatin Biography in Bengali

তবে জানা যায় যে, বাঘাযতিন নামটা তিনি বাঘ মারার মধ্যে দিয়ে পেয়েছিলেন। তবে তিনি শুধুমাত্র বাঘ মেরে জীবনটাকে অতিবাহিত করেন নি, তিনি লড়াই করেছিলেন ব্রিটিশ সিংহের সঙ্গেও।

বাঘা যতীন এর জীবন সম্পর্কে একটু জানা যাক: 

  •  সম্পূর্ণ নাম: যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় অথবা বাঘাযতীন
  • জন্ম: ৭ ডিসেম্বর ১৮৭৯
  • জন্মস্থান: কয়াগ্রাম
  • পিতার নাম: উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
  • মায়ের নাম: শরৎ শশী দেবী
  • অন্যান্য নাম: বাঘাযতীন
  • প্রতিষ্ঠান অথবা দল: যুগান্তর দল আন্দোলন, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, ষড়যন্ত্র,
  • মৃত্যু: ১০ ই সেপ্টেম্বর ১৯১৫

বাঘা যতীনের জন্ম: 

তিনি জন্মেছিলেন ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই ডিসেম্বর নদীয়া জেলার কুষ্টিয়া মহাকুমার ছোট এবং শান্ত কয়াগ্রামে এবং সেটাই ছিল তার মামার বাড়ি, সেখানেই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে এই কয়াগ্রামটি বাংলাদেশের অন্তর্গত।

বাঘা যতীনের পরিবার: 

তার পিতার নাম ছিল উমেশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম ছিল শরৎশশী দেবী। পৈত্রিক বাসস্থান ছিল যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার রিস খালি গ্রামে এবং মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি তার পিতাকে হারান অর্থাৎ তার পিতার মৃত্যু হয়। ছেলের হাত ধরে মা এলেন মামার বাড়িতে। মামার বাড়িতে যতীন্দ্রনাথ বড় হতে শুরু করলেন।

বাঘা যতীনের শৈশবকাল: 

অন্যান্য শিশুদের মত বাঘাযতীনের শৈশবকাল ছিল খুবই দুরন্তপনা আর মিষ্টির স্মৃতিতে ভরা। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন খুবই দুরন্ত প্রকৃতির। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে খুবই খেলাধুলা আর দুষ্টুমি করে বেড়াতেন। আমবাগান থেকে আম চুরি করা, পুকুরের মাছ ধরা, রাতের অন্ধকারে ফুল চুরি করা, গ্রামবাসীরা তাদের জ্বালায় একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতেন।

মাঝে মধ্যে যতীন্দ্রনাথ অথাৎ বাঘাযতীন এর মামার কাছে সেই গ্রামবাসীরা এসে নালিশ জানাতেন। মামা কিন্তু ভাগ্নিকে খুবই ভালোবাসতেন, তার উপরে ছোটবেলাতেই বাবাকে হারানোর ফলে তাকে সবাই ভীষণ স্নেহ করতেন। এছাড়া তিনি দুরন্ত হলেও তার মধ্যে একটা সহজ সরল মনোভাব লুকিয়ে থাকত।

মামা ছিলেন জাতীয়তাবাদের একজন আদর্শ কর্মী, তিনি মনে প্রাণে চাইতেন যে ইংরেজরা একদিন এই দেশ থেকে দূরে চলে যাক। ভাগনাকে রামায়ণ-মহাভারতের অনেক কাহিনী শুনিয়েছেন, তখন থেকেই বাঘাযতীন জাতীয়তাবাদের আদর্শে অভিভূত হয়েছিলেন।

বাঘা যতীনের শিক্ষা জীবন: 

মামার বাড়িতে মামার এবং মায়ের স্নেহ যত্নে বড় হয়ে ওটা বাঘাযতীন পড়াশোনায় ছিলেন খুবই কাঁচা। তবে মন দিয়ে পড়ার বই তিনি কিন্তু পড়তেন। পড়াশোনার চেয়ে বিভিন্ন রকমের খেলাধুলা, শরীর চর্চা এই সমস্ত দিকে তার উৎসাহ ছিল সব থেকে বেশি। স্কুলে পড়ার সময় একদিন পাগলা ঘোড়াকে কব্জা করে অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। কৃষ্ণনগরের এ ভি স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

এরপর তিনি এলেন কলকাতায়, তারপরে কলেজে ভর্তি হলেন কিন্তু তখন থেকেই যতীন্দ্রনাথ ছিলেন খুবই স্বাধীনচেতা মানুষ, তিনি ঠিক করলেন যে পড়াশোনা করে তিনি আর তার জীবনের সময় নষ্ট করবেন না। শর্টহ্যান্ড এবং টাইপ রাইটিং শিখলেন, আর যেটা তখনকার দিনে ছিল খুবই ব্যয়বহুল এবং তখন কার দিনে এই দুটি বৃত্তি শিক্ষার খুবই দাম ও ছিল।

এরপর ১৯০৪ সালের সরকারি চাকরি পান, এই চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই বিপ্লবী দলের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়ে গিয়েছিল। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন কে কেন্দ্র করে দেশাত্মবোধ তার মধ্যে জেগে ওঠে।

বাঘাযতীন এর বিরুদ্ধে হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা: 

তিনি ছিলেন এতটাই সাহসী যে, খুবই অল্প বয়সেই অল্প সময়ের মধ্যে দেশের জন্য কিছু করার চিন্তাভাবনা করে নিয়েছিলেন। বাঘা যতীন এর বিরুদ্ধে তখন হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।

এক বছর ধরে বাঘা যতীন কে নির্জন কারাকক্ষে বন্দী করে রাখা হলো এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল যে তিনি ভারত সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছেন, সরকারি কর্মীকে হত্যা করেছেন। এই ষড়যন্ত্র মামলা থেকে তিনি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু সরকারি চাকরিটা গেল চলে। তখন বাধ্য হয়েই বাঘাযতীন ঠিকাদারের কাজ শুরু করেছিলেন।

তার গতিবিধির উপর ব্রিটিশ গুপ্তচররা নজর রাখত, তবে তাকে অনুসরণ করা সম্ভব ছিল না। তাঁর একটি গুণ ছিল তিনি ৭৫ মাইল সাইকেল চালাতে পারতেন, চলন্ত মেল ট্রেনে ওঠানামা করতে পারতেন। অসাধারণ শক্তি ছিল এই বাঘা যতীনের।

বাঘা যতীনের গেরিলা লড়াই এর প্রস্তুতি: 

যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, বাঘাযতীন গেরিলা লড়াইয়ের জন্য সম্পূর্ণ রূপে প্রস্তুত হতে লাগলেন। চুক্তিবদ্ধ হয়ে জার্মানি ও জাপান থেকে অস্ত্র আমদানি করে সশস্ত্র বিপ্লবের পরিকল্পনা শুরু করেন। ঠিক হয় যে মেবারিক নামক জার্মান জাহাজে অস্ত্র এনে বালেশ্বর এ রেললাইন অধিকার করে ইংরেজ যাতায়াত পথ অবরোধ করবেন তারা।

বাঘাযতীন এবং তার চারজন সহকর্মী কে নিয়ে চলে গেলেন বালেশ্বর এর কাছে কোপাতপোদা গ্রামে। সন্ন্যাসী সেজে সেখানে একটি আশ্রম গড়ে তুললেন আর অপেক্ষা করতে থাকলেন কবে জার্মান যুদ্ধ জাহাজ পৌঁছবে, তার জন্য প্রহার গুনতে থাকলেন। তবে এ থেকে বলাই যায় যে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা দেশের স্বাধীনতা আনার জন্য কতটাই না কষ্ট করেছেন ,ছদ্মবেশ ধরেও অনেক কাজ তারা করেছেন।

তবে এত অপেক্ষার ফল ভালো হয়নি। এই জাহাজ শেষ পর্যন্ত ভারতবর্ষে এসে পৌঁছাতেই পারেনি। বিপ্লবীদের প্রতীক্ষা একেবারে ব্যর্থ হয়ে গেল। তবুও বাঘাযতীন বিন্দুমাত্র হতাশ হননি, তিনি আবার অস্ত্র আমদানীর পরিকল্পনা করতে লাগলেন।

দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টাও বিফলে গেল। এবারেও কিন্তু অস্ত্র পৌছালো না। বিপ্লবীরা মাঝপথেই ধরা পড়ে গেলেন। শুরু হলো পুলিশের তল্লাশি, পুলিশ জানতে পারলো যে, বিপ্লবীদের একটা দল বালেশ্বরে লুকিয়ে আছে।

তারপর পুলিশ কমিশনার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেগার্ড বালেশ্বরে পৌঁছে গেলেন সেখানে এক সাংকেতিক লিপি পাওয়া গেল, ওই লিপিতে বলা হয়েছিল যে, রামানন্দ স্বামী যেন তার শিষ্যদের নিয়ে তখনি তীর্থ ভবনে চলে যান, এখানে অনেক আশ্রমবাসী হয়েছে।

গ্রামবাসীদের মুখে মুখে বাঘাযতীন এই দুঃসংবাদটা পেয়ে গেলেন, শুনতে পেলেন বিরাট পুলিশ বাহিনী ছুটে আসছে তাদেরকেই গ্রেফতার করার জন্য। তখন বাঘাযতীন তার কিশোর চারজন সঙ্গী মনোরঞ্জন, চিত্তপ্রিয়, জ্যোতিষ এবং নীরেন কে বললেন যে তারা যেন বাঘাযতীনের সঙ্গ ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র কোথাও চলে যান। পুলিশ তাদেরকে কাউকেই চেনে না, তাই তারা অনায়াসেই পালাতে পারবে।

বিপ্লবী কিশোররা তার এই নেতা কে ত্যাগ করতে রাজি হলেন না, তারা বললেন যে, “আমরা আপনার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতে পারি, কিন্তু তবু নিজেদের প্রাণ রক্ষা করার জন্য আপনাকে ত্যাগ করতে পারবো না।” সহকর্মীদের এমন সাহস দেখে আর এমন কথা শুনে তিনি অবাক হয়ে গেলেন।

১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বুড়িবালাম নদীর ধারে চাষখন্ড নামে একটা জায়গায় বাঘাযতীন ও তার চার কিশোর সঙ্গীকে নিয়ে খাবারের মধ্যে লুকিয়ে থাকলেন, একদিকে মাত্র ৫ জন কিশোর বিপ্লবী, অন্যদিকে অসংখ্য সৈন্য। বিপ্লবীদের কাছে ছিল দেশী পিস্তল, আর ব্রিটিশদের হাতে ছিল দূর পাল্লার রাইফেল, তো এমন পরিস্থিতিতে শুরু হলো গুলিবর্ষণ।

এক্ষেত্রে বিপ্লবীরা কিন্তু একসঙ্গে গুলি চালাতে থাকলেন, যাতে শত্রুপক্ষ বুঝতে না পারে যে, তারা সংখ্যায় কতজন আছেন। শেষ পর্যন্ত বিপ্লবীদের গুলি শেষ হয়ে যায় হঠাৎ একটি গুলি লেগে আহত হলেন চিত্তপ্রিয়। বাঘাযতীন এর গায়েও কিন্তু গুলি লেগেছিল, তবুও তিনি লড়াই করে চলেছেন, তিনি সংকল্প করেছিলেন যে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন।

মৃত্যু পথযাত্রী চিত্রপ্রিয় কে এক ফোঁটা জলের জন্য ছটফট করতে দেখেছিলেন তার সঙ্গীরা। বাঘা যতীন বুঝতে পারলেন আর লড়াই করা সম্ভব নয়, তখন নিজের গায়ের রক্ত মাখা শার্ট উড়িয়ে যুদ্ধ বিরোধী সংকেত জানিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে টেগার্ট কাছে এগিয়ে এলে, বাঘা যতীন খুবই করুন কণ্ঠে বললেন যে, “শুধু চিত্রপ্রিয়র মুখে এক ফোঁটা জল দেবার জন্য আমি যুদ্ধ বন্ধ করে দিচ্ছি।” টেগার্ড জল এনে আহতদের পান করিয়েছিলেন। চিত্তপ্রিয় তখনই মারা গেলেন এবং বলা যায় যে, যুদ্ধ করতে করতে এই প্রথম কিশোর বিপ্লবী শহীদ হলেন।

যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের “বাঘাযতীন” হয়ে ওঠার গল্প:

নদীয়া জেলার একটি গ্রাম, সন্ধের অন্ধকারে গ্রাম জনশূন্য হয়ে যায়, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সময় সেখানকার গ্রামবাসীদের মনে একটা আতঙ্ক লেগেই থাকতো। বিরাট এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার গ্রামে হানা দিতে শুরু করেছে। বাঘটা এতটাই হিংস যে, গরিব চাষীদের গরু, বাছুর, ছাগল গোয়াল থেকে টেনে নিয়ে যায়, কিন্তু অসহায়ের মতো চাষীরা কিছু করতে না পেরে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। কিভাবে বাঁচবে তারা বাঘের এই অত্যাচার থেকে ?

এমন সময়ে সেই গ্রামে এসেছিলেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় অর্থাৎ এই বাঘাযতীন। কলকাতার সরকারি চাকরি করেছিলেন তিনি, এই গ্রামে মামার বাড়িতে তার ছোটবেলায় দিনগুলো কেটেছিল খুবই সুন্দরভাবে। গ্রামের অনেকের সাথে সম্পর্ক ছিল ভালোই, বিশেষ করে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষদের তিনি খুবই ভালোবাসতেন।

গ্রামে আসার পর তিনি গ্রামবাসীদের মুখে এই বাঘের ঘটনাটি শুনলেন, এরপর তিনি ঠিক করলেন যে বাঘের সঙ্গে লড়াই করবেন, কিন্তু কিভাবে ? কেননা যতীনের কাছে কোনোরকম বন্দুক ছিল না। একটা ভোজালি নিয়ে বাঘের মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্য তিনি প্রস্তুত হতে লাগলেন। গ্রামবাসীরা জানতো যে, যতীন এই কাজটা অসম্ভব সাহসের সাথে করতে পারবেন।

তার দেহে রয়েছে অদ্ভুত শক্তি, হৃদয়ে আছে উপকার  করার প্রবৃত্তি, কেননা আগেই বলেছি যে, যতীন বর্ষার দুরন্ত নদী সাঁতরে পারাপার করতে পারতেন। তাছাড়া চলন্ত ট্রেন থেকে তিনি নেমে পড়তে পারতেন আর এতটাই তিনি দয়াবান যে, অসহায় মানুষদের দুঃখে কেঁদে উঠতেন,  পরিত্যক্ত কলেরা রোগীর সহযোগিতার জন্য হাত বাড়িয়ে দিতেও সংকোচ বোধ করতেন না।

যতীনের মামাতো ভাইয়ের একটি বন্দুক ছিল, মামাতো ভাই বন্ধুক নিয়ে যতীনের সঙ্গে সঙ্গী হলেন, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাঘের সঙ্গে তাদের দেখা হল। মামাতো ভাইয়ের বন্দুকের গুলিতে বাঘ টাকে বধ করার চেষ্টা করলেন। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলিটা চলে গেল অন্যদিকে। বাঘটা আহত হল, আহত বাঘ ভয়ংকর হয়ে ওঠে সেটা আমরা সবাই জানি।

গুলিতে আহত বাঘ যতীন এর দিকে ছুটে আসলে যতীন ও কিন্তু পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। অন্যান্য বারের মতো বিপদের মুখ থেকে তিনি কখনোই সরে যাননি, আর এবারেও তিনি তেমনটাই করলেন। বাঘের গলা চেপে ধরলেন তিনি তার মাথায় ভোজালি দিয়ে বারবার আঘাত করতে থাকেন। বাঘ তাঁকে কামড়াবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তিনিও বাঘকে জাপটে ধরে থেকে বার বার ভোজালি মারতে লাগলেন।

তবে এমনটা নয় যে, তিনি একেবারেই আহত হননি, বাঘ কিন্তু তার দুটো হাঁটুতে কামড় বসিয়েছিল। নখের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল তার শরীর, রক্তাক্ত যতীন তখনও কিন্তু পাগলের মত বাঘ টার সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন। একটা বন্য জন্তুর শক্তির কাছে একটা মানুষের শক্তি কখনোই পেরে ওঠে না, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে পশু শক্তি শেষ পর্যন্ত যতীনের শক্তি ও সাহসিকতার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিল।

নিজের দেহের আঘাত কে অগ্রাহ্য করে সেই ভয়ংকর বাঘকে মাটিতে চেপে ধরলেন এবং শেষ পর্যন্ত ভোজালিটা বাঘের পেটে বসিয়ে তাকে মারতে সমর্থ্য হয়েছিলেন। আর সেদিন থেকে সকলের কাছে তিনি পরিচিত হয়ে গেলেন বাঘা যতীন হিসাবে।

তবে এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে গেছেন তিনি। তার সাথে সাথে তার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক শক্তি বা অসম্ভব কিছু ক্ষমতা তার মধ্যে ছিল। যেগুলো তিনি বাস্তবে অনেকবার প্রয়োগও করেছেন।

বাঘা যতীনের মৃত্যু: 

গুলিবিদ্ধ বাঘাযতীন যখন খুবই গুরুতর আহত, তখন বাঘাযতীন কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। প্রথমেই চিত্তপ্রিয় লড়াই চলাকালীন মৃত্যুবরণ করেছেন, বাকি থাকলো আর দুইজন কিশোর সঙ্গী, মনোরঞ্জন এবং নীরেন কে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল আর জ্যোতিষ কে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড দিয়ে পাঠানো হয়েছিল আন্দামানে। সেখানে তার উপরে অমানসিক অত্যাচার করা হলো, এর থেকে তো ভালো ছিল একেবারে মেরে ফেলা।

এই ভয়ংকর অত্যাচারে তিনি পাগল হয়ে উঠেছিলেন, তখন তাকে বহরমপুর জেলে রাখা হয়। বন্দী অবস্থাতেই জ্যোতিষ এর মৃত্যু হয়। এমন অত্যাচার সত্যি কোন মানুষ মানুষের উপরে করতে পারে না। আর এই ভাবেই শেষ হয়ে গেল বুড়ি বালামের তীরে স্বাধীনতার লড়াই, বুড়িবালামের ধারে এই যুদ্ধ কোপাতপোদার যুদ্ধ নামে খ্যাত।

এইভাবে “কত তরুণ অরুণ গেল অস্তাচলে” খুবই কম বয়সে যেখানে তাদের সব রকম সুখ, স্বাচ্ছন্দ, স্বপ্নকে বিসর্জন করে দেশকে স্বাধীন করার জন্য কচি কচি তাজা প্রাণগুলো উৎসর্গ করে গেছেন হাসিমুখে। তাদেরকে স্মরণ করতেই চোখের কোনে জল যে চিকচিক করবে না এমন ভারতবাসী সত্যিই পাওয়াই যাবে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top