ভারতে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে মহিলাদের আইনি অধিকার ও নিয়ম

Arrest of Women Procedure and Rights in Bengali: মহিলাদের কি যখন তখন গ্রেফতার করা যাবে? মহিলাদের গ্রেফতার করতে হলে কি কি আইনি নিয়ম মানতে হবে? মহিলাদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আইনি অধিকার ও নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন।

অপরাধ এর ক্ষেত্রে সব জায়গায় সবার জন্য আইন কিন্তু সবার জন্য সমান ভাবে কাজ করে। তাই যদি কোন ব্যক্তি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে আইন অনুসারে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, সেই অপরাধ অনুযায়ী। তাছাড়া কোন অপরাধমূলক কাজের প্রথম পদক্ষেপ হলো সেই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা।

যার ফলে সেই ব্যক্তি যেন পরবর্তীতে কোনো রকম অপরাধমূলক কাজ করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। কখনো কখনো এমন করার ফলে সেই ব্যক্তিকে জনতার রোশ থেকে বা জনগণের হামলা থেকে বাঁচানোর জন্য গ্রেপ্তার করা যেতে পারে।

তার সাথে নিশ্চিত রূপে গ্রেপ্তার করা সেই অভিযুক্ত কে উপযুক্ত বিচারালয়ের সামনে হাজির করার জন্য সাহায্য করতে পারে। সাধারণত পুলিশ দ্বারা একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার তৃতীয় উদ্দেশ্যের জন্য করা যেতে পারে।

যেখানে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত একজন মহিলা যদি হয়ে থাকেন, অভিযুক্তকে নিশপক্ষ শুনানির জন্য তার সুরক্ষা একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে। তার সাথে সুনিশ্চিত করতে হবে যে 2005 তে অপরাধী প্রক্রিয়া সংহিতা 1973 এর ধারা 46 (4) অনুসারে মহিলা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে, অপরাধমূলক কাজের জন্য। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অসাধারণ পরিস্থিতি ছেড়ে দিয়ে সূর্যাস্তের পর আর সূর্যোদয়ের আগে যে কোনো মহিলাকে গ্রেফতার করা যাবে না।

ভারতে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে মহিলাদের আইনি অধিকার ও নিয়ম
ভারতে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে মহিলাদের আইনি অধিকার ও নিয়ম

আর যেখানে এমন অসাধারণ পরিস্থিতি রয়েছে, মহিলা পুলিশ আধিকারিক একটি লিখিত রিপোর্ট তৈরি করে প্রথম শ্রেণীর বিচারালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট যার অন্তর্গত স্থানীয় ক্ষেত্রে ধরনের অপরাধ করা যেতে পারে বা গ্রেফতার করা যেতে পারে, তা পূর্বে অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে।

মহিলা বলে যে অপরাধ করতে পারে না এমন ধারনা কিন্তু ভুল। মহিলা যেখানেই থাকুন না কেন অপরাধের সম্ভাবনা কিন্তু থেকেই থাকে। এখানে মহিলাকে গ্রেফতার করার জন্য তার সুরক্ষার উপরে জোর দেওয়া হয়ে থাকে, সুরক্ষায় জন্য দেওয়া হয়ে থাকে, যাতে পুলিশের মাধ্যমে কোন রকম দুরাচার বা দুর্ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের থেকে সেই মহিলাকে বাঁচানো যেতে পারে, বা অন্য কোন খারাপ পরিস্থিতিতে যেন তৈরি না হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।

যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দিনের মধ্যে পুরুষ পুলিশ আধিকারিক দ্বারা গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় স্থিতিতে স্পষ্টতা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে প্রচেষ্টা করা যেতে পারে, কিন্তু এমন করার জন্য বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে এবং অনেক কিছু কাজ বাকি থাকতে পারে।

উপরে উল্লেখিত ওই সমস্ত বিষয় ছাড়াও একজন মহিলা যাকে অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার কিছু অধিকার সম্পর্কে জানা যাক: 

১) গ্রেপ্তারের ওপর ভিত্তি করে যে সমস্ত অধিকার গুলি রয়েছে সেগুলি থাকতে হবে অপরাধী প্রক্রিয়া সংহিতা 1973 এর ধারা 50 এক সি আর পি সি।

২) আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবকে সূচিত করার অধিকার, গ্রেপ্তার করবেন এমন পুলিশ আধিকারিক কে এই বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে যে, সেই মহিলার গ্রেফতারি এবং সেই জায়গা সম্পর্কে তার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব সম্পর্কে ধারণা রাখাটাও জরুরি।

যারা কিনা এ বিষয়ে বিশেষ তথ্য প্রদান করতে পারবেন, তাদের কেও এই বিষয়ে শামিল রাখাটা জরুরি। অপরাধী প্রক্রিয়া সঙ্গীতা 1973 এর ধারা 50 A।

৩) এটাও কিন্তু পুলিশ আধিকারিক এর কর্তব্য যে কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার সময় তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

৪) জামিনের অধিকারের সম্পর্কে জানার অধিকার সিআরপিসি ধারা 50 (2)

৫) কোনরকম দেরি না করে ম্যাজিস্ট্রেটের সমক্ষে হাজির হওয়ার অধিকার। ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়া কোন ব্যক্তিকে ২৪ ঘন্টা থেকে অধিক সময় পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখা অবৈধ হিসেবে মনে করা হয়। সিআরপিসি ধারা 56।

৬) ২৪ ঘন্টা থেকে তার অধিক সময়ের জন্য জেল হেফাজতে না রাখার অধিকার, সিআরপিসি ধারা 76।

৭) একজন আইনি বিশেষজ্ঞর থেকে পরামর্শ করার অধিকার আর এই অধিকার গ্রেপ্তার করার সময় থেকেই শুরু হয়ে যায়।

৮) মারপিট করা এবং তার সাথে হাতকড়ি লাগানো, গ্রেফতারের সময় কোন ব্যক্তিকে অযথা মারপিট করা তার হাতে  হ্যান্ডকাফ লাগানো অবৈধ হিসেবে গণনা করা হয়।

৯) গ্রেফতার করা মহিলার সার্চ করার জন্য কেবল মাত্র একজন মহিলা পুলিশ সেই মহিলা অপরাধী কে পরীক্ষা করতে পারবেন অথবা সার্চ করতে পারবেন। তাছাড়া খুবই ভদ্র ভাবে সেই সার্চ করতে হবে, যাতে সেই মহিলা অভিযুক্তর কোনরকম সম্মানহানি না ঘটে।

১০) এছাড়া একজন পুরুষ পুলিশ আধিকারিক একজন মহিলা অপরাধীর সার্চ করতে পারবেন না। তাছাড়া সেই পুলিশ আধিকারিক মহিলা অভিযুক্তর ঘরে গিয়ে কোন কিছু অনুসন্ধান করতেই পারেন।

১১) এছাড়াও একজন ডাক্তার দিয়েও এই অনুসন্ধান করা যেতে পারে এবং তার অধিকারও কিন্তু রয়েছে।

১২) অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনি সহযোগিতা আর নিশপক্ষ রায় পাওয়ার বা নির্ণয় পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

১৩) যদি পুলিশ আধিকারিক কোন মহিলা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার সময় নির্ধারিত নিয়মগুলি পালন করতে না পারেন, তাহলে সেই অভিযুক্ত মহিলা কোন উকিলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

তার সাথে সাথে সেই পুলিশ আধিকারিক কে জানাতে হবে যে, কোন মহিলাকে গ্রেফতার করার আগে যে সমস্ত অধিকার গুলি তার পাওয়া জরুরী, সেই কর্তব্য গুলি সম্পর্কে তাকে আবার নতুন করে জানানো যেতে পারে। যে এগুলি তার সাথে কখনোই আইনত ভাবে করা ঠিক না।

১৪) অভিযোগ এর ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট কেও সম্বন্ধিত করা যেতে পারে। যাতে এতে শামিল পুলিশ আধিকারিক এর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত পরিমাণ একশন অথবা পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও এইরকম মামলাতে মহিলাদের সমস্যা সম্পর্কে স্পষ্টতা থাকতে হবে, আধিকারিক এর নাম আর পদ এর নামাঙ্কন করা যেতে।

১৫) যদি কোন মহিলা অভিযুক্তর  সাথে অবৈধ ভাবে গ্রেপ্তার করা এবং সম্মানহানি ঘটিয়ে সার্চ করা হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু এর পরিবর্তে সেই মহিলা অভিযুক্ত আইনের সহযোগিতা নিয়ে তার অধিকার সম্পর্কে ম্যাজিস্ট্রেট কে জানাতে পারেন।

যেকোনো অপরাধমূলক কাজের জন্য যদি কোন মহিলাকে গ্রেফতার করা হয় তাহলে উপরে দেওয়া সমস্ত অধিকার সম্পর্কে আপনাকে অবগত থাকতে হবে। কেননা এটা আপনার আইনি অধিকার এর বিরুদ্ধাচারণ হলে আপনি কোন উকিলের সাথে যোগাযোগ করে এই বিষয়ের থেকে নিষ্পত্তি পেতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top