সাধারণ হেলথ ইন্স্যুরেন্স কি করোনা ভাইরাসের জন্য কাজে লাগবে? হ্যাঁ কি না জানুন

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত, বিপদজ্নক ও ভয়ানক রোগ হলো করোনা ভাইরাস (Coronavirus Pandemic)। প্রতিদিন ১ লাখের বেশি লোক আক্রান্ত হচ্ছে আর প্রতিদিন মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কি হেলথ ইন্স্যুরেন্স অর্থাৎ স্বাস্থ্য বীমা কোন কাজে আসবে কিনা? (Are Regular Health Insurance Policies Cover Covid-19 Pandemic?)

সাধারণ হেলথ ইন্স্যুরেন্স কি করোনা ভাইরাসের জন্য কাজে লাগবে?
সাধারণ হেলথ ইন্স্যুরেন্স কি করোনা ভাইরাসের জন্য কাজে লাগবে?
আশার কথা এই যে, এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে এগিয়ে এসেছে দেশের বীমা নিয়ামক সংস্থা IRDAI (Insurance Regulatory and Development Authority)। তারা ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছে যে, শুধুমাত্র করোনা ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে আগামী ১৫ জুন ২০২০ সাল থেকে নতুন স্বাস্থ্য পলিসি (Health Insurance Policy) চালু করতে হবে প্রতিটি সাধারণ ও স্বাস্থ্য বীমা প্রতিষ্ঠানকে। এই বীমা যাতে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে তার উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
এই পলিসিতে সর্বনিম্ন ৫০,০০০ টাকার বীমা কভারেজ পাবে আর সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে বীমার মেয়াদকাল হবে ১ বছর । কেউ করোনা সন্দেহে হাসপাতালে থাকলে অথবা কোয়ারেন্টাইনে (Quarantine) থাকলে বীমা সুবিধার আওতায় আসবে। কোন মানুষ ব্যক্তি বা পরিবার উভয়ভাবেই বীমা পলিসির আওতায় আসতে পারে। বীমা গ্রহিতার বয়স হতে হবে ১৮-৬৫ বছর, তবে ৩ বছর বয়সী ডিপেন্ডেন্ট থাকলে সেও বীমার আওতায় থাকবে।
করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগলে বীমাকৃত ব্যক্তি বিমার নানা সুবিধা পাবেন। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের রুম, বোর্ডিং এবং নার্সিং খরচ বাবদ প্রতিদিন মোট বীমা অঙ্কের ২ শতাংশ অর্থ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা টাকা পর্যন্ত বীমা পাবেন।
এ ছাড়া সার্জন, অ্যানাস্থেসিস্ট, কনসালট্যান্ট এবং স্পেশালিস্টের জন্য হাসপাতালকে ফি দিতে হলে এবং রক্ত, অক্সিজেন, অপারেশন থিয়েটার চার্জ, ডায়াগনস্টিক এবং অন্যান্য সমস্ত ব্যায় ওই পলিসির আওতায় কভার করা হবে। এছাড়া করোনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগের ৩০ দিনের এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরের ৩০ দিনের সমস্ত ডে-কেয়ার চিকিৎসার খরচ বিমার আওতায় থাকবে।
এই বিশেষ পলিসির প্রিমিয়াম কী হবে, তা বীমা কোম্পানিগুলি ঠিক করবে। তবে সারা দেশের জন্য একই দর রাখতে হবে। এলাকা ভিত্তিক আলাদা আলাদা মূল্য নির্ধারনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
গ্রাহকদের এই চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে ইতিমধ্যেই ভারতের কয়েকটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী ভারতের নাগরিকদের জন্য বিশেষ করোনা ভাইরাস হেলথ ইন্স্যুরেন্স পলিসি (Coronavirus Health Insurance Policy) চালু করেছে। এই বিশেষ পলিসির গ্রাহকরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও হেলথ ইন্স্যুরেন্স কভারেজ পাবে এবং করোনা ভাইরাস চিকিৎসার যাবতীয় খরচের ব্যয়ভার বহন করে গ্রাহককে হঠাৎ ও বড় আর্থিক দূর্যোগ হতে রক্ষা করবে।
আসুন দেখি ভারতের কোন কোন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর পলিসি গ্রাহকদের করোনা ভাইরাস রোগের চিকিৎসা খরচ বহনে সহায়তা করে থাকে। এখানে তিনটি বীমা কোম্পানীর উল্লেখ করা হয়েছে যারা করোনা ভাইরাসের কাভারেজ দিয়ে থাকে।
১) স্টার হেলথ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড – Star Health Insurance Company Ltd.
২) ডিজিট হেলথ কেয়ার ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড – Digit Health Insurance Ltd.
৩)আইসিআইসিআই লোম্বার্ড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড – ICICI Lombard Health Insurance Ltd.
আসুন, দেখে নি কোন কোম্পানী কি কি শর্তে করোনা ভাইরাসের কভারেজ দেয়।

স্টার করোনা ভাইরাস ইন্স্যুরেন্স পলিসি (Star Coronavirus Insurance Policy):

স্টার করোনা ভাইরাস ইন্স্যুরেন্স পলিসি গ্রাহককে করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় যাবতীয় ঔষধ, হাসপাতাল বিল, নার্সিং হোমের বিল পরিশোধে খরচ যোগাবে।
বৈশিষ্ট ও সুবিধা
১) এটি পেতে হলে ১৬ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
২) এই পলিসি ক্রয়ের পূর্বে কোন স্বাস্থ্য পরিক্ষার প্রয়োজন নেই।
৩) যদি গ্রাহক করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ আসেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তবে পলিসির গ্রাহক বীমা কোম্পানী হতে আর্থিক সুবিধা পাবেন, যা সর্বনিম্ন ২১,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪২,০০০ টাকা।
৪) একবার সুবিধা ভোগের পর এই পলিসিটি বাতিল হয়ে যাবে।
৫) যদি হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন না হয় তবে বীমা কোম্পানী কোনরুপ খরচ বহন করবে না সেটা কোয়ারেন্টাইনে থাকুক আর নাই থাকুক।

ডিজিট হেলথ কেয়ার ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড (Digit Corona Health Insurance Policy):

ডিজিট করোনা হেলথ ইন্সুরেন্স দ্বারা করোনা আক্রান্তদের কাভার দেওয়া হয়ে থাকে। যেখানে সর্বোচ্চ ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত কাভার করার কথা বলা হয়েছে। ১৫ দিনের অপেক্ষার সময় রাখা হয়েছে এই কোম্পানির পলিসির জন্য।
এই পলিসি অন্তর্গত সর্বনিম্ন ২৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত টাকা পর্যন্ত খরচ বহন কোম্পানির দ্বারা করা হবে।

আইসিআইসিআই লোম্বার্ড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড – (ICICI Lombard Corona Health Insurance Policy)

এই ICICI করোনা ইন্সুরেন্স পলিসির দ্বারা করোনা আক্রান্ত পলিসি ধারককে কাভারেজ দেওয়া হয়ে থাকে। এখানে পলিসি ধারককের অপেক্ষার সময় ১৪ দিন রাখা হয়েছে।
বয়সের সীমা ১৮ থেকে ৭৫ বৎসর পর্যন্ত রাখা হয়েছে। এই পলিসি অন্তর্গত ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত টাকা পর্যন্ত খরচের কাভার কোম্পানির দ্বারা দেওয়া হবে।

পলিসি ক্লেমের জন্য কি কাগজ লাগবে (Documents for Claim Policy)

করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে ইন্স্যুরেন্স সুবিধা দাবী করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
১) করোনা ভাইরাস পজেটিভ রিপোর্ট
২) ডাক্তারের দেয়া কাগজপত্র
৩) সকল পরীক্ষার কাগজপত্র
৪) ব্যাংকের কাগজপত্র
৫) পরিচয়পত্র (ভোটার আইডি, আধার কার্ড ইত্যাদি)
৬) সকল বিলের কাগজপত্র
এ সকল আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে হেলথ ইন্স্যুরেন্স করা থাকলে চিকিৎসা সেবার খরচ বীমা কোম্পানী বহন করবে। তাই আমরা বলতে পারি যে, হেলথ ইন্স্যুরেন্স করোনা ভাইরাসের জন্য কাজে লাগে এটা ঠিক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top