এপিজে আব্দুল কালাম কে? কোথায় বাড়ি? জীবনে কিভাবে সফল হয়েছেন? আসুন জেনে নিন এপিজে আব্দুল কালাম এর জীবন পরিচয়, পরিবার, শিক্ষা, মোট সম্পত্তি ও রাজনৈতিক বিবরণ জানুন (APJ Abdul Kalam Biography in Bengali)।
এপিজে আব্দুল কালাম কে চেনেন না এমন ভারতীয় খুবই কম পাওয়া যাবে। এপিজে আব্দুল কালাম ছিলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশ রাষ্ট্রপতি। ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি তার কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করেছেন।
একজন বিজ্ঞানী হিসেবে পরবর্তীতে এপিজে আব্দুল কালাম ঘটনা চক্রে ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পদার্থবিদ্যা বিষয়ে সেন্ট জোসেফ’স কলেজ থেকে এবং বিমান প্রযুক্তিবিদ্যা এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এমআইটি (MIT) থেকে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন।
জীবনযাত্রা খুবই সাধারণ থাকলেও তার কর্ম জীবন ছিল অসাধারণ। প্রধানত তিনি ৪০ বছর রক্ষা অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠন ডি আর ডি ও (DRDO) ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় ইসরো বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রসাশন হিসেবে কাজ করেছেন।
তিনি যেমন একাধারে ছিলেন বিজ্ঞানী তেমনি অন্য হাতে তিনি সামলেছেন দেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার। তাকে অনেকে মিসাইল ম্যান নামে ও চেনেন। তো চলুন তাহলে আজকের এই লেখাতে মিসাইল ম্যান এপিজে আব্দুল কালামের জীবন সম্পর্কে কিছু জানা যাক:
সুচিপত্র
- এপিজে আব্দুল কালাম জীবন পরিচয়:
- এপিজে আব্দুল কালামের জন্ম:
- এপিজে আব্দুল কালামের পরিবার:
- এপিজে আব্দুল কালামের শৈশব কাল:
- এপিজে আব্দুল কালামের শিক্ষা জীবন:
- এপিজে আব্দুল কালামের কর্মজীবন:
- এপিজে আব্দুল কালামের আত্মজীবনী:
- এপিজে আব্দুল কালামের ভারতের ১১ তম রাষ্টপতি নির্বাচিত হওয়া:
- এপিজে আব্দুল কালামের সম্মান গুলি সম্পর্কে জানা যাক:
- এপিজে আব্দুল কালামের মৃত্যু:
- এপিজে আব্দুল কালাম সম্পর্কিত কিছু আকর্ষণীয় তথ্য:
- এপিজে আব্দুল কালামের লেখা কিছু বিখ্যাত পুস্তক অথবা বই:
- আলবার্ট আইনস্টাইনের বাণী ও উক্তি:
- এমন কিছু বাণী ও উক্তি সম্পর্কে চলুন জানা যাক:
এপিজে আব্দুল কালাম জীবন পরিচয়:
- সম্পূর্ণ নাম: আবুল পাকির জয়নুল আবেদীন আব্দুল কালাম অথবা এপিজে আব্দুল কালাম (A.P.J. Abdul Kalam)
- জন্ম তারিখ: ১৫ ই অক্টোবর ১৯৩১
- জন্মস্থান: রামেশ্বরম, তামিলনাড়ু, ভারত
- পিতার নাম: জয়নুল আবেদীন
- মাতার নাম: আসিয়াম্মা
- জাতীয়তা: তিনি ভারতীয়
- প্রাক্তন শিক্ষার্থী: সেন্ট জোসেপ’স কলেজ তিরুচিরাপল্লী, মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি
- ধর্ম: ইসলাম
- জীবিকা: তিনি ছিলেন অধ্যাপক, লেখক, শিক্ষক এবং বিমান প্রযুক্তিবিদ
- কাজের মেয়াদ: ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত
- মৃত্যুর তারিখ: ২৭ জুলাই ২০১৫
- মৃত্যুর কারণ: তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
এপিজে আব্দুল কালামের জন্ম:
এপিজে আব্দুল কালামের জন্ম হয়েছিল ১৯৩১ সালের ১৫ ই অক্টোবর তামিলনাড়ুর রামনাথ পুরম জেলায় রামেশ্বরম দ্বীপসাগরের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে।
এপিজে আব্দুল কালামের পরিবার:
এপিজে আব্দুল কালামের পিতা জয়নুল আবেদিন ছিলেন পেশায় মৎস্যজীবী। বেশি শিক্ষিত তিনি ছিলেন না, তবে মনের দিক থেকে তিনি ছিলেন খুবই উদার মনোভাবের এবং খুবই বড় মাপের একজন মানুষ।
ছোটবেলা থেকে পুত্র আব্দুলের মনে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন পিতা জয়নুল আবেদিন। সব সময়ের জন্য গল্পের মাধ্যমে আব্দুল কে তিনি পরবর্তীকালে একজন মানুষের মত মানুষ হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা জাগাতেন।
এপিজে আব্দুল কালাম ছিলেন তিন ভাই আর এক বোন, ভাই জালাল উদ্দিন আর শামসুদ্দিনের সঙ্গে আব্দুলের ছোটবেলার দিনগুলি কেটেছিল খুবই সুন্দরভাবে। পরবর্তীকালে আব্দুল বলেন যে, তার দুই ভাই এর অনেক উপকার রয়েছে তার উপরে।
তাছাড়া এই তিন ভাইয়ের পিতার আদর্শ ছিল এতটাই মহান যে, সেই আদর্শে তিন ভাই খুবই ভালোভাবে বড় হতে শুরু করলেন। পিতার প্রতিভা সন্তানের মধ্যে কতটা প্রতিক্রিয়া করতে পারে সেটা এপিজে আব্দুল কালাম কে দেখলেই বোঝা যায়।
এদিকে তাঁদের মা আসিয়ানা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংসদের সমস্ত কাজ করতে ব্যস্ত থাকতেন। শত দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা, থাকা সত্বেও তিনি সেগুলি কাউকেই বুঝতে দিতেন না। স্নেহ, ভালোবাসা, সহিষ্ণুতা দিয়ে তাদেরকে আগে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ জাগাতেন।
এপিজে আব্দুল কালামের শৈশব কাল:
এপিজে আব্দুল কালাম এর মায়ের পরিবারের পূর্বপুরুষরা ব্রিটিশ প্রদত্ত বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। কিন্তু মা খুবই বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে হাসিমুখে সেই পরিস্থিতিকে মেনে নিয়েছিলেন তিনটি পুত্র এবং একটি কন্যা সন্তানকে কিভাবে মানুষ করবেন সেই চিন্তা নিয়ে।
তাছাড়া ছোটবেলায় খেলার সাথীদের মধ্যে ছিল রামনাথ শাস্ত্রী, অরবিন্ধন আর সিতাপ্রকাশন তারা সকলেই ছিলেন সনাতনপন্থী হিন্দু পরিবারের সন্তান। আর আব্দুল ছিলেন মুসলমান পরিবারের সন্তান। কিন্তু শৈশবে তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার ভেদাভেদ কোনোভাবেই দাগ কাটতে পারেনি।
তখন তারা সকলেই একসঙ্গে খেলাধুলা করেই বড় হয়েছেন। সাধারণ জীবন যাপনের মত খুবই সুন্দর এবং মিষ্টি ছিল এপিজে আব্দুল কালামের শৈশবকাল। পৃথিবীর কোন সমস্যার বোঝা তখন তাদের মাথার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।
তখনকার দিনে সারা বছরের সবথেকে বড় উৎসব ছিল শ্রী সীতারাম কল্যাণম উৎসব, গোটা পরিবার এই উৎসবে অংশ নিতেন। রাম সীতার মূর্তি মন্দির থেকে নৌকায় করে তুলে বিবাহ মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হতো আবার উৎসব শেষ হলে দুটি মূর্তি ফেরত নিয়ে যাওয়া হতো মন্দিরে। তার কাছাকাছি ছিল একটি পুকুর, রাম তীর্থ। সেখানে এই দুটি মূর্তিকে শ্রদ্ধা সহকারে স্নান করানো হতো।
ভাবতে অবাক লাগে যে, আজ থেকে কত বছর আগে গোড়া মুসলমান পরিবারের সন্তান হওয়ার সত্বেও আব্দুল পরম আগ্রহে ওই বাৎসরিক উৎসবের যোগদান করতেন। চারিদিকের পরিবেশে ছিল খুবই শান্ত এবং সুমধুর যেখানে কোনরকম হিংসা বা ভেদাভেদ ছিল না।
এপিজে আব্দুল কালামের শিক্ষা জীবন:
মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি কিন্তু রামায়ণ, মহাভারতের কাহিনী শুনেছিলেন। তিনি ভর্তি হলেন রামেশ্বরম এলিমেন্টারি স্কুলে। তার পাশাপাশি অনেক ব্রাহ্মণ পুত্রও সেখানে পড়াশোনা করতেন। একই টিফিন বক্সে তারা টিফিন ভাগাভাগি করে খেয়েছেন।
তবে সমাজে খারাপ মানুষের অভাব কখনোই ছিল না, সেই কারণে এমন একটি দিন এসেছিল যেদিন আব্দুল কালামকে খুবই অপমানিত করা হয়েছিল। তখন তিনি ক্লাস ফাইভ অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণীতে পড়েন, তিনি মাথায় টুপি পরতেন।
তিনি পড়াশোনায় সবসময় ভালো ছিলেন বলে প্রথম বেঞ্চে বসতেন, কিন্তু একদিন শিক্ষক মহাশয় তাকে প্রথম বেঞ্চ থেকে সরিয়ে লাস্টের বেঞ্চে বসতে বলেন। এই অপমান আব্দুল কালাম অনেকদিন মনে রেখেছিলেন এবং কোন মতেই এই অপমান মেনে নিতে পারেননি। তবে অবশ্য পরবর্তীকালে সেই মাস্টারমশাই তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং তাকে আবার প্রথম বেঞ্চে ডেকে নিয়েছিলেন।
স্কুল জীবনে শিক্ষকের একটি কথা এপিজে আব্দুল কালামকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। সেই শিক্ষক মহাশয় পড়াতে পড়াতে প্রায়ই বলতেন যে, “বিশ্বাসের জোরে তুমি ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারবে।” সেই কথার উপরে ভিত্তি করে তিনি অনেক অসম্ভবকেও সম্ভব করে ফেলেছেন, একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেও তিনি আজ সকলের মনে বিরাজ করছেন।
ছোটবেলা থেকেই আব্দুল কালাম ছিলেন বিজ্ঞানের একজন অসাধারণ প্রভাবশালী ছাত্র। স্কুলের পরীক্ষাতে তিনি সবসময় খুবই ভালো নম্বর পেয়ে কৃতিত্বের সাথে পাশ করতেন। তার কর্ম জীবনটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯৫০ সালে সেন্ট জোসেফ কলেজে ভর্তি হলেন আব্দুল কালাম, ইন্টারমিডিয়েট কোর্সে সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্নাতক হওয়ার পর মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভর্তি হয়েছেন, এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য।
এপিজে আব্দুল কালামের কর্মজীবন:
এপিজে আব্দুল কালাম যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তো বিজ্ঞান হিসেবে যোগ দিয়েছেন ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) ১৯৬০ সালে। কেরিয়ার শুরু হয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছোট মাপের একটি হেলিকপ্টারের নকশা তৈরি করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু তিনি দ্রুতই অগ্রসর হতে থাকেন। ভারতের মহাকাশ গবেষণার সংস্থা ইসরো এর সঙ্গে তিনি যুক্ত হয়ে পড়েন।
দেশীয় প্রযুক্তিতে উন্নত মানের সামরিক মিসাইল তৈরির প্রকল্পে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হলেন তিনি। মহাকাশযান ও স্যাটেলাইট বহনকারী পি এস এল ভি (PSLV) এবং এস এল ভি থ্রির (SLV 3) রকেট তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল এই ভারতের মিসাইল ম্যান এপিজে আব্দুল কালামের।
পরমাণু শক্তি সম্পন্ন দেশগুলির সঙ্গে একই সারিতে ভারতকে তুলে আনার জন্য তার অবদান আমরা কখনোই ভুলতে পারবো না। ১৯৯৮ সালে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা সংক্রান্ত পোখরান – ২ প্রকল্পের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ও তিনিই ছিলেন। এছাড়া নিজের যোগ্যতা দিয়ে দেশের প্রথম সারির বিজ্ঞানী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিতও করেছিলেন।
রাজনীতির মধ্যে প্রবেশ করা, রাষ্ট্রপতির পদে দাঁড়ানো এবং সেই পদে নির্বাচিত হওয়া, রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিভিন্ন বিতর্কমূলক কাজে জড়িয়ে পড়া, নিজেকে রাজনৈতিক দলাদলির ঊর্ধ্বে রাখা, এমন অনেক আদর্শ স্থানীয় কাজ করে আজ এপিজে আব্দুল কালাম আমাদের কাছে একজন মহান মানুষে পরিণত হয়েছেন। তার অনেক অনুপ্রেরণামূলক বাণী আমাদেরকে উৎসাহিত করে, শরীরে শিহরণ জাগায়।
বিভিন্ন জায়গায় তিনি ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে স্কুল ছাত্র ছাত্রী থেকে আরও অনেকেই তাঁকে অনেক প্রশ্ন করেছেন। তিনি হাসিমুখে, মিষ্টি ভাবে সেইসব প্রশ্নের সুন্দর করে ব্যাখ্যা দিয়ে উত্তরও দিয়েছেন। যেগুলি শুনে সকলের মন প্রাণ জুড়িয়ে গিয়েছে। তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই তার শিক্ষাসুলভ আচরণ, দার্শনিকতার প্রকাশ করতেন, যার ফলে অনেকেই তাকে ভীষণভাবে শ্রদ্ধা করতেন।
এত কিছুর পরেও তিনি জীবন যাপন করতেন খুবই সাধারণ ভাবে। তাকে আমরা একজন ভারতীয় ঋষির সঙ্গে তুলনা করতেই পারি। আজীবন ব্রহ্মচারীর মতোই জীবন কাটিয়েছেন। ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাসে এপিজে আব্দুল কালাম কে একজন উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমরা অবশ্যই চিহ্নিত করতেই পারি।
এপিজে আব্দুল কালামের আত্মজীবনী:
এপিজে আব্দুল কালামের আত্মজীবনী হিসেবে, ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয় তার আত্মজীবনী “উইঙ্গস অফ ফায়ার।” এই গ্রন্থের পাতায় পাতায় উল্লিখিত রয়েছে মানবকল্যাণে উৎস, প্রাণ, এই মহান বিজ্ঞানীর অন্তরের সমস্ত ইচ্ছা।
এপিজে আব্দুল কালামের ভারতের ১১ তম রাষ্টপতি নির্বাচিত হওয়া:
তিনি এতটাই শান্ত স্বভাবের ছিলেন এবং তার মুখ থেকে বলা কথাগুলি এতটাই অমূল্য ছিল যে সমস্ত দিক থেকে ধ্যান সরে গিয়ে শুধু তার কথাই শুনতে মন চাইবে।
২০০২ সালে ভারতের একাদশ তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এপিজে আব্দুল কালাম। ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন, আর খুবই দায়িত্বের সাথে এই রাষ্ট্রপতি পদ কে সামলেছেন। পরবর্তীতে এপিজে আব্দুল কালাম শিলং আই আই এম (IIM) এ ভিজিটিং প্রফেসর হন।
এপিজে আব্দুল কালামের সম্মান গুলি সম্পর্কে জানা যাক:
এমন একটি মহান ব্যক্তি যে সমস্ত সম্মানে ভূষিত হয়েছেন, সেগুলি নিচে দেওয়া হল:-
- পদ্মভূষণ (১৯৮১)
- পদ্মবিভূষণ (১৯৯০)
- ইনস্টিটিউট অফ ডিরেক্টরস ইন্ডিয়া ডিস্টিংগুইসড ফেলো (১৯৯৪)
- ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার (১৯৯৭)
- ভারতরত্ন (১৯৯৭)
- বীর সাভারকর পুরস্কার (১৯৯৮)
- রামানুজন পুরস্কার (২০০০)
- কিং চার্লস টু মেডেল (২০০৭)
- ইংল্যান্ডের উলভারহ্যম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় এর সাম্মানিক ডক্টরেট (২০০৭)
- আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট (২০০৮)
- সিঙ্গাপুরের নানাঙ্গ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট (২০০৮)
- ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ইন্টারন্যাশনাল ভোন কর্মন উইংস অ্যাওয়ার্ড (২০০৯)
- হুভার মেডেল (২০০৯)
- আমেরিকান ওকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট (২০০৯)
- কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় এর সাম্মানিক ডক্টরেট (২০১০)
- ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্সের সাম্মানিক সদস্যপদ (২০১১)
- কানাডার সাইমন ফ্রেজার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট (২০১২)
- ইংল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট (২০১৪)।
এপিজে আব্দুল কালামের মৃত্যু:
তার মৃত্যুতে সমস্ত দেশবাসী একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। ২৭ জুলাই ২০১৫ ভারতের পরমাণু গবেষণার পথিকৃৎ তথা দেশের মিসাইল ম্যান, ভারতের একাদশ তম প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম ৮৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, ২৭ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যের সাড়ে ছটায় শিলং এর আইআইএম (IIM) এর একটি অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য রাখছিলেন, সেখানেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঞ্চের উপরে অসুস্থ হয়ে পড়ে যান, তড়িঘড়ি তাঁকে কাছাকাছি স্থানীয় বেথানি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, তবে শেষ রক্ষা হয়নি, সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এপিজে আব্দুল কালাম সম্পর্কিত কিছু আকর্ষণীয় তথ্য:
এপিজে আব্দুল কালামের জীবনী জানার পর কোন মানুষ যে অনুপ্রাণিত হবেন না, তা হতেই পারে না, তাই নয় কি ! তো চলুন তাহলে আব্দুল কালাম সম্পর্কিত কিছু আকর্ষণীয় তথ্য সম্পর্কে জানা যাক:
এপিজে আব্দুল কালাম শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিলেন। ২০১০ সালের সেই কারণে জাতিসংঘ এর তরফ থেকে এপিজে আব্দুল কালামের জন্মদিন ১৫ অক্টোবর এ বিশ্ব ছাত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এপিজে আব্দুল কালামের আত্মজীবনী উইংস অফ ফায়ার প্রথম দিকে ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছিল।
কিন্তু পরে তা ফরাসি এবং চীনা ভাষা সহ আরো মোট ১৩ টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। এপিজে আব্দুল কালামের সব থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি সবাইকে মুগ্ধ করেছিল সেটা হল, তিনি শুধুমাত্র পুস্তক অথবা বই ছাড়া কারো কাছ থেকে কোন রকম উপহার গ্রহণ করেন নি।
তিনি মনে করতেন একটি সুন্দর বইয়ের থেকে বড় উপহার পৃথিবীতে আর কিছু হতেই পারে না। ২০১১ সালে নীলা মাধব পান্ডা আব্দুল কালামের জীবন ভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল আই এম কালাম (I am Kalam)। এপিজে আব্দুল কালামের পদার্থ এবং গণিত বিজ্ঞান ছিল খুবই প্রিয় বিষয়।
তাছাড়া তিনি দেশের মধ্যে এবং দেশের বাইরে বক্তৃতা রাখার জন্য কোনরকম ফি নেন নি। এপিজে আব্দুল কালাম তিনি ছিলেন একজন নিরামিষ ভোজী ব্যাক্তি। তিনি বিজ্ঞানের সাথে সাথে সাহিত্যের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তার ফলস্বরূপ তিনি তার মাতৃভাষা তামিলে অনেকগুলি কবিতাও রচনা করেছিলেন।
এপিজে আব্দুল কালামের লেখা কিছু বিখ্যাত পুস্তক অথবা বই:
বর্তমানে এই মহান ব্যক্তিটি আমাদের মাঝে আর বেঁচে নেই, তবে তিনি আমাদের জন্য অনেক কিছুই উপহার দিয়ে গেছেন। তার সাথে সাথে তার লেখা এই বইগুলি আমাদেরকে অনেকখানি অনুপ্রেরণা যোগায়, একটি জীবনী সহ একাধিক নির্দেশমূলক এবং অনুপ্রেরণামূলক বইগুলি সম্পর্কে জানা যাক:
- উইংস অফ ফায়ার: (এপিজে আব্দুল কালামের আত্মজীবনী),
- অদম্য সাহস,
- পরিবর্তনের জন্য চিন্তাভাবনা: আমরা এটা করতে পারি,
- টার্নিং পয়েন্টস: চ্যালেঞ্জ গুলোর সাথে যাত্রা
সফলতার দিক থেকে দেখতে গেলে তিনি একটি কথা বলে গিয়েছেন যে কথাটি আজও অনেক সফল মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে রয়েছে– “স্বপ্ন সেটা নয়, যেটা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটা যেটা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।”
আলবার্ট আইনস্টাইনের বাণী ও উক্তি:
এপিজে আব্দুল কালাম যে একজন প্রতিভাশালী ব্যক্তি ছিলেন সেটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তার জীবনের সাথে অনেক কিছু পজিটিভ চিন্তাভাবনা জড়িয়ে ছিল।
এমন কিছু বাণী ও উক্তি সম্পর্কে চলুন জানা যাক:
- “সমগ্র বিজ্ঞান দৈনন্দিন এর একটি পরিশোধন চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়।”
- “সফলতার জন্য লড়াই না করে নিজেকে মূল্যবান মানুষ হিসেবে তৈরি করুন।”
- “অভিজ্ঞতাই হলো জ্ঞানের একমাত্র উৎস।”
- “সবকিছু যতটা সম্ভব সরল করা উচিত, তবে একদম সরল নয়।”
- “যে কখনো ভুল করেনি, সে কখনোই নতুন কিছু করার চেষ্টাই করেনি।”
শান্ত – সুমধুর – স্নিগ্ধ মুখ, চুলগুলি চোখের দুপাশে পড়ে থাকা সেই বুদ্ধিদীপ্ত মুখটা আজও চোখের সামনে ভেসে থাকে। তরুন সমাজকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে কোন সফলতা পেতে গেলে কোন অজুহাত না দেখিয়ে পরিশ্রম, আগ্রহ আর স্বপ্ন থাকলেই সেটা সফল করা সম্ভব হয়। তিনি আজ আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই ঠিকই, কিন্তু আমাদের সকলের মনের মনিকোঠায় তিনি আজও জীবিত।
চিরদিন তাকে এভাবেই দেশবাসীর মনে থাকেবেন, দেশের বাইরেও তিনি তার প্রতিভার আলো জ্বালিয়ে গেছেন। আজও আমরা তাকে অনুভব করতে পারি তার বক্তৃতা এবং উক্তির মধ্যে দিয়ে। আপনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন, আমাদের সকলের পক্ষ থেকে আপনাকে সশ্রদ্ধ প্রণাম।