যদি কেউ কোন প্রকারের সাইবার বুলিং অপরাধ করে থাকে তাহলে এর বিরুদ্ধে কিভাবে আইনি ব্যাবস্থা নেবেন? সাইবার বুলিং বিরোধী এর জন্য কি কি আইন আছে? জানুন সাইবার বুলিং অপরাধের বিরুদ্ধে সকল আইনি ব্যাবস্থা।
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে বেড়েছে অনলাইন হ্যারাজমেন্টের পরিমাণও। সাইবার বুলিং কথাটির সাথে তাই এখন আমরা সবাই বেশ পরিচিত। কেউ যখন ডিজিটাল ডিভাইস দ্বারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিকটিমকে হুমকি দেয়, হয়রানি করে বা বিব্রত করে তখন তাকে সাইবার বুলিং হয়।
সাইবার বুলিং মূলত কিশোর-কিশোরীদের করা হয়। অপরাধীদের শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্থদের সুরক্ষার জন্য ভারতে সাইবার বুলিং আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এগুলি দমন আইন বিরোধী আইন হিসাবে পরিচিত। এই আইনগুলি ছাড়াও নিজেদেরকে সাইবার বুলিং থেকে রক্ষা করতেও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
কারণ নিজের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজে না নিলে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর তার বিচার হলেও হারানো সম্মান এবং ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয়না। সুপ্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে ভারতে সাইবার বুলিং বিরোধী আইন কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
ভারতে সাইবার বুলিং বিরোধী আইন সম্পর্কে জেনে নিন:-
আমরা কতবার শুনেছি যে কারও একটি ভুয়া প্রোফাইল তৈরি হয়েছে এবং সেই একাউন্ট বা প্রোফাইল থেকে অবমাননাকর ও অশ্লীল এসএমএস, পোস্ট, ছবি পোস্ট বা অন্য কারও ইনবক্সে পাঠানো হচ্ছে।
এর মাধ্যমে অশ্লীল ছবি ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়, প্রোফাইলের ব্যক্তি পরিচয়ে অন্যদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নেওয়া হয় এবং যে ব্যাক্তির প্রোফাইলের আদলে নকল প্রোফাইল খোলা হয়েছে তার সামাজিক মান-মর্যাদা হানি করার জন্যই মূলত এই ন্যাক্কারজনক কাজগুলো করা হয়।
এইসব কাজগুলো হচ্ছে সাইবার বুলিংয়ের আওতাভুক্ত এবং এগুলো সাইবার আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। এটা সামাজিকভাবে ভিকটিমকে এতটাই অপদস্থ করে যে অধিকাংশ ব্যক্তিই ডিপ্রেশনে পড়ে সুইসাইডের চেষ্টা করে, এবং এরমধ্যে অনেকেই মারা যান।
এতে করে ভিকটিমের পরিবারও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হন। আর মূলত সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয় মেয়েরা। তবে শিশু এবং ছেলেরাও এই আওতাভুক্ত।
সাইবার বুলিং বা অ্যান্টি-বুলিং কি?
সাইবার বুলিংয়ের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা হচ্ছে এর মাধ্যমে কাউকে ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক, ক্ষতিকারক, সম্মানহানিকর আচরণ করা। অন্য কেউ সেজে প্রতারণা করে অর্থ আদায়, কিডন্যাপ, শ্লীলতাহানি, গোপন তথ্য ফাস, একাউন্ট হ্যাক ইত্যাদি অপরাধ করা।
সাইবার বুলিংয়ের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে স্যোশাল মিডিয়া,যেমন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব, টুইটার,,ভাইবার, ইমো ইত্যাদি। এছাড়া ইমেইল, ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি মাধ্যমেও সাইবার বুলিং করা হয়।
অনলাইনের বুলিংয়ের পাশাপাশি অফলাইনেও বুলিংয়ের ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন অনলাইনে পরিচিত হয়ে তথ্য সংগ্রহ করে বাস্তবে ধর্ষন, কিডন্যাপ, ব্ল্যাকমেইল, ছিনতাই, অর্থ আদায় ইত্যাদি ঘটে থাকে, যার সূত্রপাত হয় অনলাইনে।
ভারতে সাইবার বুলিং আইন
ভারতে সাইবার আইন সম্পর্কে বোঝার জন্য সাইবার বুলিং কি এবং এর আওতাভুক্ত অপরাধ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। সাইবার বুলিং এ বিভিন্ন ছবিকে এডিট করে অশ্লীল বানিয়ে ভুয়া প্রোফাইলে আপ লোড করা হয়, বিভিন্ন ছবি বা পোস্টে অশ্লীল মন্তব্য করা হয়, ছবি বা পরিচয় দিয়ে ভুয়া একাউন্ট খুলে আজেবাজে পোস্ট করা, একাউন্ট হ্যাক করা, কোন গোপন ছবি বা ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া, অন্যদের কাছে মিথ্যা বদনাম করা ইত্যাদি।
সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তি সামাজিকভাবে প্রচন্ড অবমাননার শিকার হন, যা তাকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলে।
ভারতে নির্দিষ্ট সাইবার বুলিং আইন সম্পর্কিত কোনও নির্দিষ্ট আইন নেই তবে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ধারা ৬৭ এর মতো বিধানগুলি সাইবার বুলিংয়ের মত অপরাধের শাস্তি বিধান করে।
ভারতীয় আইনের ৬৭ ধারা মোতাবেক ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে অশ্লীলতা বা সম্মানহানিকর বিষয় প্রকাশের মাধ্যমে কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করা হলে তার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। এরজন্য ৫ বছরের কারাদন্ড এবং ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। অথবা অপরাধের গুরুত্ব বুঝে উভয়দন্ডে দন্ডিত করা হতে পারে।
ভারতে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে শাস্তির পরিমাণ
ধারা ৫০৭ আইপিসি – বিভাগে বলা হয়েছে যে কেউ যদি বেনামে যোগাযোগের মাধ্যমে হুমকি বা মামলার ভয় দেখায় তবে হুমকি দেওয়া ব্যক্তিকে দুই বছরের কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হবে। বেনামে শব্দের কারণে অ্যান্টি-বুলিং এবং সাইবার বুলিংয়ের অপরাধটি এই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আইটি আইনের ৬৬- ই ধারা – বিভাগে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য শাস্তির বিধান করা হয়েছে। এই বিভাগে বলা হয়েছে যে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যের ব্যক্তিগত ছবি আপলোড, ইন্টারনেটে ভাইরাল, ক্যাপচার বা প্রকাশের মাধ্যমে গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে রাকে সামাজিকভাবে হেয় করা হলে অপরাধী ব্যক্তিকে তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে।
সাইবার অপরাধীদের থেকে নিজেকে রক্ষা করতে শীর্ষ সাইবার অপরাধের আইনজীবীদের পরামর্শ নিন এবং সাইবার অপরাধের অভিযোগ দায়ের করুন।
স্কুল এবং কলেজগুলিতে বুলিং-সাইবার বুলিং আইন
স্কুল কলেজগুলোতে র্যাগিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিটি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যেকোন ধরনের সাইবার বুলিং এড়াতে সাইবার বুলিং এড়াতে এন্টি র্যাগিং কমিটি গঠন করা হয়েছে যাতে অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া সম্ভব হয়।
আর স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মূলত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বুলিং করার মানসিকতা বেশী থাকে। এজন্য এ সময়টাতেই তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা বেশী প্রয়োজন।
এছাড়া বুলিং এড়াতে ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার না করা, যেকোন মেইল বা লিংকে ক্লিক না করা, টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করা একাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে, এই পদক্ষেপগুলো অবশ্যই নেওয়া উচিত।
আপনার নিজের সুরক্ষিত থাকা অনেকটাই আপনার হাতে। অপরাধের পর দোষীদের শাস্তি দেওয়া গেলেও সাইবার বুলিংয়ের শিকার ভিকটিম বা ভিকটিমের পরিবার যে মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়, তা আর ফিরে পাওয়া যায়না।
শেষ কথা
সাইবার বুলিং একটি ডিজিটাল অপরাধ। কারণ এটা ইলেকট্রনিক মিডিয়া, এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে অপরাধ ঘটানো হয়। যেহেতু আমরা সবাই এখন স্যোশাল মিডিয়া, ইন্সট্যান্ট চ্যাটিং, ইমেইল এ খুব ব্যস্ত থাকি, নিজেদের সবকিছু এখানে শেয়ার করি।
তাই কিছু মানুষ এখান থেকে আমাদের দূর্বল দিক চিহ্নিত করে আমাদের সম্মানহানি করে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। এ থেকে বাচতে ভারতে আইন করা হয়েছে। তবে আইন প্রয়োগে শাস্তি দেওয়ার চেয়ে বাড়িতে সবাইকে নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।
যাতে উভয় পক্ষই নিজেদের রক্ষা করতে সমর্থ হয়। কারণ অপরাধ প্রমাণের পর শাস্তি হলে অপরাধী ব্যক্তিও সামাজিকভাবে খুবই হেয় প্রতিপন্ন হয়। তাই শুধু অন্যকে হেয় করতে গিয়ে তার এবং নিজের জীবন নষ্ট করা কোনভানেই উচিত নয়। আশা করি ভারতে সাইবার বুলিংয়ের বিরোধী আইন সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।
সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।ধন্যবাদ সবাইকে।