রথের দিন খুঁটি পুজো কেন করা হয়? এই দিন এগুলি করলে আপনার ভাগ্য ফিরবে

আরো অন্যান্য পূজা পার্বণের মতো রথযাত্রাও একটি উৎসব। এই রথ যাত্রার জন্য তোড় জোড় শুরু হয়ে যায় প্রায় ছয় মাস আগে থেকে, বলা যেতে পারে সারা বছর ধরেই রথ যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়।

রথযাত্রা নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের রহস্য, পৌরাণিক কাহিনী। রথযাত্রার এই শুভদিনেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের সূচনা হয়ে যায়। বলা যেতে পারে দুর্গাপুজোর খুঁটি পুজো করেই শুভ সূচনা করা হয় এই রথ এর।

রথের উপরে অধিষ্ঠিত জগন্নাথ দেবের দর্শন করলে তার আর পুনর্জন্ম হয় না। তাই রথের দড়ি ধরে টানা কেও অনেক খানি পূণ্যের কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা পালিত হয়। মোট ১১ দিন ধরে জগন্নাথ, সুভদ্রা, বলরামকে উৎসর্গ করে আরাধনা করা হয়।

রথের দিন খুঁটি পুজো কেন করা হয়? এই দিন এগুলি করলে আপনার ভাগ্য ফিরবে
রথের দিন খুঁটি পুজো কেন করা হয়? এই দিন এগুলি করলে আপনার ভাগ্য ফিরবে

রথ নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভগবান শিব। জগন্নাথ এবং বিষ্ণু শ্রী কৃষ্ণরই দুটি রূপ। বলরাম অথবা বলভদ্র শ্রীকৃষ্ণ অথবা জগন্নাথ এবং সুভদ্রা দেবী এই তিনজন একে অপরের ভাই বোন। পুরাণে এমনটা বর্ণিত আছে, তাদের তিন ভাইবোনের ঘনিষ্ঠ এবং স্নেহ পরান সম্পর্কের জন্যই তারা সকলের কাছে পূজনীয়।

এই শুভ দিনে এমন কিছু কাজ করলে ভাগ্য ফিরে যেতে পারে, কারণ রথের দিনটিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। তাই জগন্নাথ দেবের আশীর্বাদ পেতে কি কি করবেন সে সম্পর্কে জেনে রাখাটা খুবই জরুরী।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, আপনার ভাগ্য ফিরিয়ে আনতে রথ এর দিনে কি কি করবেন:

১) ১১ রকমের ফল, মিষ্টি, ১১ টি এক টাকার কয়েন:

কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, রথযাত্রার দিন কয়েকটি কাজ করলে অত্যন্ত শুভ লাভ হয়, পুণ্য লাভ হয়। রথযাত্রার পুণ্য তিথিতে সহজ কিছু নিয়মের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যকে জয় করে নেওয়া যায়। শাস্ত্র অনুসারে ১১ রকমের ফল, মিষ্টি এবং ১১ টি এক টাকার কয়েন একটি হলুদ কাপড় এ মুড়ে জগন্নাথ দেবের আসনে রেখে দিতে হয়। এর ফলে সংসারে সমৃদ্ধি আসে।

২) জগন্নাথ দেবের ব্রত:

বাড়িতে যদি নারায়ন থাকে তাহলে নারায়ণ এর সামনে জগন্নাথের ব্রত পালন করতে পারেন। একটি পেতলের বাটিতে কিছুটা আতপ চাল, দুটো কাঁচা হলুদ এবং এক টাকার একটি পয়েন্ট রেখে দিতে হবে। এছাড়া এর পাশাপাশি গৃহপ্রবেশের দিন হিসেবে রথের দিনটি অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।

৩) ভিত পূজা:

বাড়ি তৈরি করার জন্য প্রথমে ভিত পূজা করতে হয়, সেই জন্য গৃহপ্রবেশ এর মত এই ভিত পূজার দিন হিসেবেও রথের দিনটি অত্যন্ত শুভ। আবার রাজ্যের বিভিন্ন বড় বড় বারোয়ারি দুর্গাপুজোর খুঁটিপুজো এই দিনেই করা হয়।

৪) তুলসী পাতার গুরুত্ব:

আমরা সকলেই জানি প্রায় প্রতিটি পূজা পার্বণে তুলসী পাতার প্রয়োজন পড়ে। তুলসী জগন্নাথ দেবের সবচেয়ে প্রিয়, তাই ১০৮ টি তুলসী পাতা দিয়ে মালা তৈরি করতে হবে, ১০৮ টি তুলসী পাতা না থাকলেও ৫৪ টি পাতা দিয়েও মালা তৈরি করে সেটি নিবেদন করতে পারেন।

৫) বৃক্ষরোপণ:

আমাদের এই পৃথিবী সবুজে ঘেরা, গাছপালা না থাকলে আমরাও বেঁচে থাকব না। সেই কারণে বৃক্ষরোপণ করার মতো উদ্যোগ বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়, তবে শাস্ত্র মতে রথযাত্রার দিন খুবই শুভ বৃক্ষরোপণ করার জন্য। এই দিন কোন গাছ রোপন করলে তা থেকে অত্যন্ত পুণ্য লাভ করা যায়। তার সাথে সাথে এই দিন দান ধ্যান করুন, এতে অপরিসীম পূণ্য লাভ হওয়ার সাথে সাথে আপনার ধন-সম্পত্তিতে আসবে সমৃদ্ধি।

৬) গঙ্গা স্নান ও জগন্নাথ মন্ত্র জপ:

গঙ্গা স্নান  কতটা পুণ্যের কাজ, তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। যে কোন পুণ্য তিথি তে গঙ্গা স্নান করলে পুণ্য লাভ হয়। সেই মতো রথের দিন যেহেতু খুবই শুভ, তাই এই দিন গঙ্গা স্নান করতে পারলে আপনি অনেকখানি পূণ্য অর্জন করতে পারবেন। তার সাথে জগন্নাথ মন্ত্র জপ করলেও পুণ্য লাভ হয়।

৭) খুঁটি পূজার অনুষ্ঠান:

রথযাত্রার দিন খুবই শুভ দিন বলে রথ যাত্রার পুণ্য লগ্নে বাড়িতে যাদের দুর্গা পুজো হয়, তারাও কিন্তু এই দিনে খুঁটি পূজার অনুষ্ঠান করতে পারেন। তবে একাধিক বারোয়ারি পূজোরও খুঁটি পূজা করা হয়ে থাকে এই রথ যাত্রার দিনেই।

৮) ব্রাহ্মণ ভোজন:

ব্রাহ্মণ ভোজন করানো খুবই ভালো শাস্ত্র মতে। আপনার পুণ্য অর্জন করার সাথে সাথে জীবনে আসবে স্বচ্ছতা এবং ব্রাহ্মণদের আশীর্বাদে আপনার জীবনে আসবে অনেকখানি উন্নতি। নিজের সাধ্যমত কয়েকটা ব্রাহ্মণ ভোজন করাতে পারেন রথযাত্রার দিন। এই শুভদিনে এই কাজটি করলে জগন্নাথ দেবের আশীর্বাদও পাবেন।

৯) নারায়ণ পূজা:

যেহেতু রথযাত্রার দিনটি শুভ দিন আর শ্রীকৃষ্ণের রূপ হল জগন্নাথ এবং আরেকটি রূপ হলো বিষ্ণু যার অপর নাম নারায়ণ, তাকে পূজা করলে বিষ্ণুকে সন্তুষ্ট করার পাশাপাশি জগন্নাথ দেব কেও সন্তুষ্ট করা যায়। যার ফলে জগন্নাথ দেবের আশীর্বাদ বজায় থাকবে আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের উপর।

১০) রথ সাজাতে সহযোগিতা:

কথায় আছে দেবতাদের পূজা অর্চনায় সহযোগিতা করলে পুণ্য লাভ করা যায়। তেমনি রথযাত্রা উপলক্ষে রথ সাজানোর ক্ষেত্রে যদি আপনি সহযোগিতা করে থাকেন ভক্তিভরে এবং নিষ্ঠা ভরে, তাহলে জগন্নাথ দেবের আশীর্বাদ আপনার উপরে সর্বদাই থাকবে। রথ গুলি ফুল ও ফুলের মালা দিয়ে সাজানো হয়। সেই কাজে ফুলের জোগান আর সাজানোর কাজে সহযোগিতা তে নিজেকে উজাড় করে দিতে ভুলবেন না কিন্তু।

⭐ রথের দিনে বিভিন্ন শুভ কাজ সম্পন্ন করার জন্য অনেকেই সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকেন। আর তাই তো এই শুভ দিনটিতে দুর্গাপূজার খুঁটি পুজোও হয়ে যায়, কেননা এমন শুভ দিন আর পাওয়া যাবে না। যে সমস্ত বনেদি বাড়িতে অনেকদিন আগে থেকে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে সেই সমস্ত বাড়িতে খুঁটি পূজা ও এই রথের দিনেই করে নেওয়া হয়।

রথের দড়ি টানলে যেমন অনেকটাই পাপ ক্ষয় হয়ে গিয়ে পুণ্য অর্জন করা যায়, তেমনি রথের দিনে এমন কিছু ছোটখাট নিয়ম রয়েছে যেগুলি পালন করলে আপনি আপনার সৌভাগ্যকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন খুবই সহজে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top