Pohela Baisakh 2024: পয়লা বৈশাখে এই কাজ করলে সংসারে অর্থের অভাব হবে না

বাঙালি দের কাছে পহেলা বৈশাখ একটি সুন্দর, মিষ্টি আর তাৎপর্যপূর্ণ দিন। যা কিনা বাংলা বছরের প্রথম দিন, বাংলা নববর্ষ। বাঙালির জীবনে এই দিনটি খুবই সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত হয়, আবেগ আর ঐতিহ্য দিয়ে সব সময়ের জন্যই পয়লা বৈশাখ একটা অন্য মাত্রা যোগ করে বাঙালির জীবনে। অনেক ঘর থেকেই পয়লা বৈশাখের আয়োজন করা হয়।

কেউবা মন্দিরে পূজা দিতে যান আবার অনেকেই পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি খাওয়া দাওয়া, আড্ডা, হই-হুল্লর এর মধ্যে দিয়ে দিনটি সুন্দরভাবে কাটিয়ে থাকেন। এর পাশাপাশি ব্যবসায়ী দের কাছে এই দিনটির গুরুত্ব আবার অন্যরকম।

কেননা পয়লা বৈশাখে হালখাতার মতো একটা বিষয় জড়িত রয়েছে। এই দিন ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন একটি নতুন খাতা দিয়ে, এক কথায় নববর্ষ প্রতিটি বাঙালির জীবনে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন, তার সাথে আনন্দ যেন সীমাহীন।

পয়লা বৈশাখে এই কাজ করলে সংসারে অর্থের অভাব হবে না
পয়লা বৈশাখে এই কাজ করলে সংসারে অর্থের অভাব হবে না

বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো পয়লা বৈশাখে খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি পূজা পার্বণ যেমন করা হয়, তেমনি অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়, সেই নিয়ম কানুন গুলির মধ্যে এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলি করলে সারা জীবন সংসারে কোনরকম অর্থের অভাব দেখা দেবে না। সকলেই চাইবেন যে সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং ধন-সম্পদ সর্বদাই অটুট থাকুক।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, পয়লা বৈশাখে আপনি কোন কাজ গুলি করবেন নিষ্ঠার সাথে:

১) তামার ঘট, আতপ চাল ও অন্যান্য নৈবেদ্য:

পয়লা বৈশাখ মানেই ভোর থেকেই এই দিনের উৎসব শুরু হয়ে যায়। ঘরে ঘরে এই দিন আনন্দের বন্যা বয়ে যায়, তবে পূজা অর্চনার পাশাপাশি বেশ কিছু নিয়ম চলে। পয়লা বৈশাখে তে তামার ঘটে করে আতপ চাল, একটা গোটা হলুদ, পাঁচটা কড়ি, একটা গোটা সুপারি, হরিতকি, এগুলি নিয়ে পূজার জায়গায় রাখতে হবে।

ঘরের প্রতিদিনের পুজোর জায়গাতেও ওই গুলি রাখা যায়, পুজো হয়ে যাওয়ার পর ঘটটি একটি লাল কাপড়ে বেঁধে আপনার উপার্জিত সম্পদ যেখানে রাখেন সেই জায়গায় রেখে দিতে পারেন, এর ফলে মা লক্ষ্মীর কৃপা সর্বদাই আপনার সম্পদের উপরে থাকবে, যা কখনোই কমবে না পরিবর্তে বাড়তে থাকবে।

২) পাঁচটি কড়ি:

পয়লা বৈশাখের দিন পাঁচটি কড়ি লক্ষ্মী দেবীর ঘট এর উপরে রাখতে হয়, প্রতি বৃহস্পতি বার এই কড়ি সহ দেবী লক্ষ্মীর পূজা করতে হবে। এর ফলে মা লক্ষ্মী প্রসন্ন হন। সংসারে শ্রী বৃদ্ধি ঘটার পাশাপাশি সংসারে আসবে আর্থিক উন্নতি। আর আগে থেকে থাকা আর্থিক অনটন থেকেও মুক্তি মিলবে সম্পূর্ণ রূপে।

পয়লা বৈশাখ ও হালখাতার সম্পর্ক কি? জানুন ইতিহাস

৩) আলপনা দিন:

প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা দিলে তা যেমন দেখতে সুন্দর লাগে, তেমনি ঘরেতে লক্ষ্মীর আগমন ঘটে। পয়লা বৈশাখের দিন বাড়ির ঠাকুর ঘরে আলপনা দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ঘরেও আলপনা দিয়ে ধান ছড়িয়ে মাটির উপর মঙ্গল ঘট স্থাপন করতে হবে। বাড়ির ঠাকুরকে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি ফুল, ফল ও মিষ্টি, নৈবেদ্য নিবেদন করুন, সেখানে অবশ্যই লক্ষ্মী গণেশের মূর্তি রাখতে হবে।

৪) ধুনো ও কর্পূর:

পূজা পার্বণে ধুনো, কর্পূর খুবই মাঙ্গলিক জিনিস, আর পয়লা বৈশাখের দিন সন্ধ্যার সময় ধুনো জ্বালিয়ে তার মধ্যে সাতটা তেজপাতা, সাতটা লবঙ্গ এবং কিছুটা পরিমাণ কর্পূর যদি জ্বালিয়ে দেওয়া যায় এবং সেই ধোঁয়া গোটা বাড়িতে যদি ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে সমস্ত নেগেটিভ শক্তি বাইরে বেরিয়ে গিয়ে সংসারের একটা সুন্দর শান্তি বিরাজ করে।

৫) আম পাতার মাহাত্ম্য:

নববর্ষের সকাল বলেই নয়, বলতে গেলে বছরের প্রতিটি পূজা পার্বণে আম পাতার ভূমিকা অনেকখানি। নববর্ষের সকালে সাতটা আম পাতা গঙ্গা জলে ধুয়ে নিয়ে হলুদ ও সিঁদুর তেলের সঙ্গে মিশিয়ে আম পাতার উপরে ফোটা দিতে হবে, এরপর লাল সুতো দিয়ে আম পাতাগুলো একসঙ্গে বেঁধে দরজার উপরে টাঙিয়ে দিতে হবে।

সেটা সদর দরজা হতে পারে অথবা ঠাকুর ঘরের দরজা অথবা  যে কোন ঘরের দরজা। এরপর পাঁচটা ধুপ দরজার উপরে ঘুরিয়ে ধুপগুলো বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পুঁতে দিতে হবে। এই নিয়ম পালন করলে বাস্তু দোষ কাটানো যায়।

৬) ধন কুবেরের মূর্তি:

নববর্ষ অথবা পয়লা বৈশাখে ধনকুবেরের মূর্তি অথবা ধনকুবের যন্ত্র ঠাকুরের আসনে স্থাপন করতে হবে। এর ফলে আপনার সংসারের সমস্ত আর্থিক অনটন দূর হয়ে গিয়ে সংসারে আর্থিক উন্নতি ঘটবে, ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে।

৭) আরো অন্যান্য সরঞ্জাম:

পূজা পার্বণে বিভিন্ন জিনিস পত্রের প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে সাতটি লক্ষ্মী কড়ি, সাতচি নাভি শঙ্খ, সাতটি পদ্ম বীজ, সাতটি সুপারী লাল কাপড়ে মুড়ে আতর মাখিয়ে আপনার সম্পদ রাখার জায়গায় বা টাকা-পয়সা যে বাক্স তে রাখেন তার ভেতরে রেখে দিন। আপনার ব্যবসা হোক অথবা যেকোনো কাজে উন্নতি আসবে অনেকটাই।

৮) গোমাতার পূজা ও সেবা:

হিন্দু ধর্মে গো মাতার ভূমিকা কতখানি তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। আর সেই অনুযায়ী পয়লা বৈশাখে সকাল সকাল গো-মাতা দের স্নান করিয়ে তাদের গায়ে তেল মাখিয়ে ফুলের মালা গলায় দিয়ে সাজানো হয়। আর তাদেরকে বিশেষ সেবা যত্ন করা হয়।

তাই হিন্দু মতে বছরের প্রথম দিনটিতে গরুকে খুবই ভালো খাবার খাওয়ানো শুভ। আর চারিদিকে এমনটা দেখলে, প্রতিটি গরুর গলা যখন ফুলের মালা থাকে তখন কিন্তু খুবই সুন্দর লাগে চারিদিকের পরিবেশটা।

৯) হালখাতা অথবা নতুন খাতা:

আমরা আগেই জেনেছি পয়লা বৈশাখের সাথে হালখাতা অথবা ব্যবসার নতুন খাতার সম্পর্ক রয়েছে খুবই নিবিড়, প্রতিটি ব্যবসায়ী এই পহেলা বৈশাখের দিনে হালখাতার রীতি পালন করে থাকেন, নতুন খাতায় লাল কালি দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকতে হয়, তার নিচে তিনটি অথবা পাঁচটি কয়েনের ছাপ দিয়ে রাখতে হয়।

আবার সেই নতুন খাতা একটু সিদ্ধি, হলুদ আর চন্দনের ফোঁটা দিয়ে রাখতে হয়। এতে বিশ্বাস করা হয় যে, ব্যবসায় উন্নতি সাধন হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্মী গণেশের আশীর্বাদ থাকে সর্বদাই।

⭐ তো জানা হয়ে গেল কোন কোন বিষয় গুলি আপনি পয়লা বৈশাখের দিন পালন করবেন, যেগুলি সংসারের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি আনার পাশাপাশি ধন সম্পদ বৃদ্ধি এবং মনে প্রশান্তি আনবে। আর খুবই মঙ্গল জনক এই কাজগুলি আপনার অনেক বাধা বিপদও কাটিয়ে দেবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top