দেওয়ালে বিজ্ঞাপন বা পোস্টার লাগানোর আইন ও নিয়ম

Advertisements or Posters Laws in Bengali: যেখানে সেখানে বিজ্ঞাপন বা পোস্টার লাগানো কি আইনিত অপরাধ? | বিনা অনুমতিতে বিজ্ঞাপন বা পোস্টার লাগালে কি করবেন? | জানুন দেওয়ালে বিজ্ঞাপন বা পোস্টার লাগানোর আইনি নিয়ম ও শাস্তি সম্পর্কে এখানে।

যে কোনো কাজের জন্য, যে কোনো প্রডাক্টের বিক্রির জন্য বিভিন্ন রকমের পোস্টার, ব্যানার, বিজ্ঞাপন এর সীমা নেই। আর এই সমস্ত পোস্টার অথবা বিজ্ঞাপন, ব্যানার গুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো বড় বড় দেয়াল অথবা যে কোন ইটের তৈরি বাড়ির দেয়ালে।

এই পোস্টার, বিজ্ঞাপন, ব্যানার এর মাধ্যমে সেই প্রোডাক্ট এর বিক্রি অনেক ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। যার মার্কেটিং খুবই ভালো হয় সমস্ত মানুষের মধ্যে।

তা ছাড়া সেই জিনিস সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা জন্মানোর জন্য এই পোস্টার অথবা বিজ্ঞাপন অনেকখানি কাজে আসে। তাছাড়া রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বা নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ এই পোস্টার অথবা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে জানানো হয়ে থাকে।

আর এমন ঘটনা ভারতে সর্বত্রই চোখে পড়ে। এই অবাঞ্চিত পোস্টার, বিজ্ঞাপন, পার্ক, বাস, রেলওয়ে, মেট্রো স্টেশন, কলেজ, সরকারি ভবন ইত্যাদি সার্বজনীন জায়গাতে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়।

দেওয়ালে বিজ্ঞাপন বা পোস্টার লাগানোর আইন ও নিয়ম
দেওয়ালে বিজ্ঞাপন বা পোস্টার লাগানোর আইন ও নিয়ম

এর একমাত্র কারণ হল রাজ্যের স্থানীয় বিজ্ঞাপন আর নগর পালিকা অধিনিয়ম আছে যা কিনা পোস্টার ব্যানার লাগিয়ে সার্বজনীন সম্পত্তি রক্ষনাবেক্ষনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে এবং সেই সম্পত্তির অনেকটা ক্ষয়ক্ষতি ও হতে পারে।

এক্ষেত্রে বিভিন্ন মামলাতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, পোস্টার অথবা ব্যানার লাগানোতে একটি স্বচ্ছ পর্যাবরণ এর অধিকার কে প্রভাবিত করে থাকে। যা কিনা একটি সুস্থ জীবনযাপনের বিরূদ্ধে অভিন্ন উদাহরণ বলতে পারেন।

স্বচ্ছ পরিবেশ যেমন মানুষের জীবনযাপন এ অনেকটাই সহযোগিতা করে থাকে অথবা পরিবেশ দূষণ থেকে প্রত্যেক মানুষকে বাঁচিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে এই অবাঞ্চিত পোস্টার, ব্যানার, বিজ্ঞাপন, জনবহুল জায়গায়, সরকারি সম্পত্তি, ছাড়া নিজের সম্পত্তি রয়েছে এমন, সেই সম্পত্তিতেও নিজের জিনিসপত্রের বিজ্ঞাপন পোস্টার অথবা ব্যানার লাগিয়ে থাকেন অনেকেই।

সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে জানিয়েছে যে, যেকোনো পোস্টার, বিজ্ঞাপন অথবা ব্যানার জনবহুল এলাকায় এবং নিজের সম্পত্তি দুই জায়গাতেই সব সময়ের জন্য না লাগানোর কথা বলেছে। কেননা দু রকম পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জীবন যাত্রা অনেকটাই প্রভাবিত হতে পারে, এই বিজ্ঞাপন, পোস্টার অথবা ব্যানার এর মাধ্যমে।

দিল্লি উচ্চ বিচারালয় এ একটি কথা বলা হয়েছে যে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত পোস্টার অথবা ব্যানার লাগানোর জন্য ভাষণ আর অভিব্যক্তির স্বতন্ত্রতার অধিকার এর সাথে কোন রকম সমান অন্তর করা হবে না।

ভারতে আইন অনুসারে বিজ্ঞাপন, পোস্টার, ব্যানার লাগানোর আইন:

বিজ্ঞাপন, পোস্টার এবং ব্যানার এর সম্বন্ধে সবথেকে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ প্রতিরোধ সম্পত্তি অধিনিয়ম, 1976 প্রতিরোধ যা কিনা যেকোনো পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই সম্পত্তির রক্ষা করা যাবে।

অধিনিয়ম অনুসারে ছয় মাস পর্যন্ত জেল হতে পারে অথবা কিছু টাকা জরিমানাও হতে পারে, বা দুটো একসাথেও হতে পারে, এমন অবাঞ্ছিত পোস্টার, জনবহুল জায়গায় এবং নিজের সম্পত্তিতে রাখার জন্য। যা কিনা জনসাধারণের অনেকটাই অসুবিধার কারণ হতে পারে।

আইনের মাধ্যমে এমন অপরাধের শাস্তি কি?

সম্পত্তি অধিনিয়ম 2007 দিল্লির প্রতিরোধ অনুসারে সম্পত্তি কে বিজ্ঞাপন, পোস্টার, ব্যানার এর মাধ্যমে বাধাপ্রাপ্ত করার শাস্তি হিসেবে এক বছরের জেল তার সাথে জরিমানা হতে পারে।

সম্পত্তি অধিনিয়ম 1967 অনুসারে সম্পত্তি রক্ষার্থে পশ্চিমবঙ্গ প্রতিরোধ অনুযায়ী অধিনিয়ম এর ধারা 3 অনুসারে চক, রং এবং পেইন্টিং এর মাধ্যমে বা অন্যকোন সামগ্রীর দ্বারা লিখিতভাবে বা অঙ্কন দ্বারা কোন রকম বিজ্ঞাপন করা হয় যদি কোনো দেয়াল অথবা বাড়ির দেয়ালে, সেখানে শাস্তি হিসেবে ৬ মাসের জেল তার সাথে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

বিজ্ঞাপন, ব্যানার বা পোস্টার লাগানোর জন্য যদি কোন রকম অসুবিধা হয়ে থাকে, তাহলে এমন ভাবে সেই পোস্টার লাগাতে হবে যেন কোন রকম পরিস্থিতিতে সেটি তুলে নিয়ে যাওয়া যায় অর্থাৎ আটকানো সিস্টেমে যে পোস্টার গুলো রয়েছে সেগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে।

এছাড়া বলা হতে পারে, যে যদি কোন ব্যক্তির বাড়ির দেয়ালে অথবা লম্বা কোন দেয়ালে পোস্টার, ব্যানার, বিজ্ঞাপন দেয়ার কথা ভেবে থাকেন কোন ব্যাক্তি, তাহলে সেই বাড়ির মালিকের কাছে থেকে অবশ্যই তাদের পারমিশন নিতে হবে।

এছাড়াও অবাঞ্চিত অ – যুক্তিকর বিজ্ঞাপন, পোস্টার মানুষের দৃষ্টিভ্রম করা থেকে শুরু করে পরিবেশ দূষণ করে অনেকটাই। তাই সে ক্ষেত্রে এমন কোন পোস্টার লাগানো ঠিক নয়, যা কিনা সাধারণ মানুষের চলাফেরা তে অসুবিধা এবং মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে।

তবে যাই বলুন না কেন, বিজ্ঞাপন, পোস্টার, ব্যানার নিয়ে যতই আইন থাকুক না কেন, তা সত্ত্বেও আমাদের দেশে এই বিজ্ঞাপন, পোস্টার জনবহুল জায়গায়, রেলস্টেশন, বাস সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যার কারণে পথচলতি মানুষের অসুবিধা তো রয়েছেই, তা ছাড়াও কাগজের পোস্টার গুলি পরিবেশ দূষণ করতে যথেষ্ট সহযোগিতা করে।

সে সমস্ত জায়গাতে ব্যানার-পোস্টার অবাধে লাগানো যেতে পারে, যেখানে কোনরকম এই বিজ্ঞাপন এর বিরুদ্ধে সমস্যা তৈরী হবে না অথবা অনুমতি নেওয়ার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন লাগানো যেতে পারে।

সব দিক থেকে বিচার করে বলা যায় যে, সুন্দর পরিবেশ রক্ষা করার জন্যে যেখানে-সেখানে অবাঞ্চিত পোস্টার, ব্যানার, বিজ্ঞাপন লাগানোর কোনরকম প্রয়োজনীয়তা নেই। তাছাড়া বর্তমান এখন ডিজিটাল যুগ। সে ক্ষেত্রে প্রতিটা বিজ্ঞাপন এখন মানুষের হাতে হাতে।

কেননা প্রায় সকলের হাতে এখন স্মার্টফোন, ঘরে টিভি, ইন্টারনেট সব কিছুর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনও হয়ে গিয়েছে ডিজিটাল। তাই অযথা এই সমস্ত বিজ্ঞাপন গুলি ঘরের দেয়ালে, যেখানে সেখানে দিয়ে পরিবেশ দূষণ করার কোন মানেই হয় না।

তবে হ্যাঁ, আরো অন্যান্য বিষয়েও বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি এই সমস্ত কাগজ এর বিজ্ঞাপন, ব্যানার-পোস্টার প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তখন এমন পোস্টার বিজ্ঞাপন ব্যানার লাগানো যেতে পারে তবে অনুমতি নেওয়ার মধ্যে দিয়ে।

Leave a Comment